মাওলানা আযাদের মৃত্যুদণ্ড-ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় by হাবিবুর রহমান
বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও টিভি উপস্থাপক মাওলানা আবুল কালাম আযাদকে
মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
গতকাল জনাকীর্ণ
ট্রাইব্যুনাল কক্ষে ফাঁসির এ রায় ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী
অপরাধ বিচারের লক্ষ্যে গঠিত ট্রাইব্যুনালের এটিই প্রথম রায়।
মাওলানা আবুল কালাম আযাদ বর্তমানে পলাতক। পলাতক অবস্থায়ই তার বিচার
সম্পন্ন করে এ রায় ঘোষণা করা হলো। তার পক্ষে তার নিযুক্ত কোনো আইনজীবী
ছিলেন না। তবে ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে একজন রাষ্ট্রীয় আইজীবী নিয়োগ দেন।
ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রায় তিন বছরের মাথায় এই প্রথম কোনো অভিযুক্তের
বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হলো এবং এ উপলক্ষে ট্রাইব্যুনালে নিñিদ্র
নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়। বিপুলসংখ্যক সশস্ত্র পুলিশ, গোয়েন্দা
সংস্থার সদস্য ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়
ট্রাইব্যুনাল এলাকায়। আদেশের সংবাদ সংগ্রহের জন্য অনেক দেশী-বিদেশী
সাংবাদিক সকাল থেকে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবী, অ্যাটর্নি
জেনারেল ও অন্যান্য সরকারি আইন কর্মকর্তা, মানবাধিকারকর্মী ও ঘাতক দালাল
নির্মূল কমিটির বহু নেতাকর্মীসহ যুদ্ধাপরাধ বিচারের দাবিতে সোচ্চার
কর্মী-সমর্থকেরাও সেখানে হাজির হন। ফাঁসির রায় ঘোষণার পরপরই রাষ্ট্রপক্ষের
আইনজীবীসহ অনেককে বিজয় চিহ্ন দেখিয়ে উল্লাস করতে দেখা যায়।
রায় ঘোষণা উপলক্ষে বিপুল লোকসমাগমে এবং ট্রাইব্যুনাল-২-এর আদালতকক্ষ
ছোট হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচার কক্ষে রায় ঘোষণা করা হয়।
ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান মাওলানা আবুল কালাম
আযাদের মামলার রায় পাঠ করেন। রায় ঘোষণার শুরুতে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান
বলেন, আবুল কালাম আযাদের মামলার রায় মোট ১১২ পৃষ্ঠার। আমরা পুরো রায়
এখানে পাঠ করব না, রায়ের মূল অংশ (সামারি) পড়ে শোনানো হবে। ১০টা ৪৭
মিনিটে তিনি লিখিত রায় পড়া শুরু করেন। ঠিক এক ঘণ্টার মাথায় ১১টা ৪৭
মিনিটে তিনি ২৪ পৃষ্ঠার সামারি রায় পাঠ শেষ করেন। রায় পড়ে শোনানোর সময়
ট্রাইব্যুনালে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করে। রায় পাঠের সময় ট্রাইব্যুনালের
অপর দুই সদস্য বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারক মো: শাহিনুর ইসলাম
উপস্থিত ছিলেন।
রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নাম : মাওলানা আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে
রায়ে ১৯৭১ সালে সংগঠিত হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট,
নির্যাতন ও মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের বিবরণ তুলে ধরা হয়। রায়ে বলা
হয়, পাকিস্তান রক্ষার নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের প্রতিহত করতে জামায়াতে
ইসলামী প্যারা মিলিটারি বাহিনী গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এতে বলা হয়,
মাওলানা আবুল কালাম আযাদ ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে অধ্যয়ন করেন এবং
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ইসলামি ছাত্রসঙ্ঘের সভাপতি আলী আহসান মোহাম্মদ
মুজাহিদের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে রাজাকার বাহিনী গঠন পর্যন্ত
তিনি পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করেন এবং ফরিদপুরে বিভিন্ন অপরাধের সাথে
জড়িত রাজাকার বাহিনীর একজন সশস্ত্র সদস্য হিসেবে পাকিস্তান বাহিনীকে
সহায়তা করেন।
রায় ঘোষণার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, এ
রায়ের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিজয় হয়েছে। আজকের এ বিজয়
স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিজয়।
রায় কার্যকর প্রসঙ্গ : রায়ের পর সংবাদ ব্রিফিংয়ে ট্রাইব্যুনালের
রেজিস্ট্রার এ কে এম নাসিরউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার পর
৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার বিধান রয়েছে। মাওলানা আবুল কালাম আযাদ যদি এ
সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ করেন অথবা যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার
করতে পারে, তাহলে তিনি চাইলে আপিল করতে পারবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল
বিভাগে; অন্যথায় ৩০ দিনের মেয়াদ পার হওয়ার পর যদি তিনি গ্রেফতার হন,
তাহলে সরকার তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের রায় কার্যকর করার বিষয়ে আইনানুগ
পদক্ষেপ নিতে পারবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৩০ দিনের
মেয়াদ পার হওয়ার পর যদি তিনি গ্রেফতার বা আত্মসমর্পণ করেন এবং তখন যদি
তিনি আপিল করতে চান, সে ক্ষেত্রে বিষয়টির সুরাহা আপিল বিভাগের এখতিয়ার।
যেসব অভিযোগে দণ্ড : মাওলানা আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে মোট আটটি
অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনাল সাতটি অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত
করেন। চারটি চার্জে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। যেসব অভিযোগে তাকে দোষী
সাব্যস্ত করা হয়, সেগুলো হলো মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ,
অপহরণ, আটক রাখা ও নির্যাতন। ১৯৭৩ সালের আইনের ৩(২) (এ) এবং আইনের ৩(২)
(সি) (আই) ধারায় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে আইনের ২০(২)
ধারায় তার বিরুদ্ধে এই দণ্ড দেয়া হয়।
প্রথম অভিযোগ : ১৯৭১ সালের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে মাওলানা আযাদ ও তার
সহযোগীরা ফরিদপুর শহরের খাবাশপুর থেকে রণজিৎ নাথ ওরফে বাবুনাথকে ধরে
নির্যাতন করেন। এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে
ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২) (এ) ধারায় অভিযুক্ত করে আইনের ২০(২) ধারায় সাজা
দেন।
দ্বিতীয় অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই আলফাডাঙ্গা থেকে আবু ইউসুফ
পাখিকে ধরে নিয়ে ফরিদপুর স্টেডিয়ামে আটক রাখা হয়। মাওলানা আযাদ
পাকিস্তানি মেজর আকরামের সাথে আলোচনা করে পাখিকে আটক রাখেন এবং অমানবিক
নির্যাতন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাকে এ অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।
তৃতীয় অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১৪ মে মাওলানা আযাদ ফরিদপুরের বোয়ালমারী
থানার কলারন গ্রামের জমিদার সুধাংশু মোহন রায় ও তার বড় ছেলে মণিময়
রায়কে বাড়ির পাশের রাস্তায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মাওলানা আযাদ পেছন
থেকে রাইফেল দিয়ে গুলি করেন। এতে সুধাংশু নিহত ও মণিময় গুরুতর আহত হন। এ
অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল আইনের
৩(২) (এ) ধারায় অভিযুক্ত করে আইনের ২০(২) ধারায় সাজা দেন।
চতুর্থ অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১৬ মে মাওলানা আযাদ রাজাকারদের নিয়ে সালথা
থানার (সাবেক নগরকান্দা) পুরুরা নমপাড়া গ্রামে মাধবচন্দ্র বিশ্বাসের
বাড়িতে লুটপাট করেন। মাধবকে বাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে মাওলানা আযাদ
গুলি করে হত্যা করেন। এ অভিযোগেও ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের
অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২) (এ) ধারায় অভিযুক্ত করে আইনের ২০(২)
ধারায় সাজা দেন।
পঞ্চম অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ৮ জুন মাওলানা আযাদ ও তার চার-পাঁচজন সহযোগী
বোয়ালমারীর নতিবদিয়াা গ্রামের এক হিন্দু বাড়িতে দুই নারীকে (দেব রানী ও
শুভ রানী) গণধর্ষণ করেন। এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের
অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২) (এ) ধারায় অভিযুক্ত করে আইনের ২০(২)
ধারায় সাজা দেন।
ষষ্ঠ অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ৩ জুন মাওলানা আযাদ ও তার সহযোগীরা সালথা
থানার ফুলবাড়িয়া গ্রামের হিন্দুপাড়ায় লুটপাট শেষে চিত্তরঞ্জন দাসকে
গুলি করে হত্যা করেন। এ অভিযোগেও ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের
অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২) (এ) ধারায় অভিযুক্ত করে আইনের ২০(২)
ধারায় সাজা দেন।
সপ্তম অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১৭ মে মাওলানা আবুল কালাম আযাদ ৩০-৩৫ জন
রাজাকারকে নিয়ে বোয়ালমারীর হাসামদিয়া গ্রাম ও মইনদিয়া বাজারে গুলি করে
শরৎচন্দ্র পোদ্দার, সুরেশ পোদ্দার, শ্যামাপদ পোদ্দার, জতীন্দ্র মোহন সাহা,
নীল রতন সমাদ্দার, সুবল কয়াল ও মল্লিক চক্রবর্তীকে হত্যা করেন। এ অভিযোগে
ট্রাইব্যুনাল গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২) (সি)
(আই) ধারায় অভিযুক্ত করে আইনের ২০(২) ধারায় সাজা দেন।
অষ্টম অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১৮ মে মাওলানা আযাদ সাত-আটজন রাজাকারকে নিয়ে
সালথা থানার উজিরপুর বাজারপাড়া গ্রামের এক সংখ্যালঘু তরুণীকে (অঞ্জলী
দাসকে) অপহরণ করে খাড়দিয়া গ্রামের চান কাজীর বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন
করেন। এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল
আইনের ৩(২) (এ) ধারায় অভিযুক্ত করে আইনের ২০(২) ধারায় সাজা দেন।
আটটি অভিযোগে অভিযুক্ত ঘোষণার পর রায়ে বলা হয়, আবুল কালাম আযাদকে ৩, ৪
ও ৬ নম্বর চার্জে মানবতাবিরোধী অপরাধ অভিযুক্ত করা হলো এবং ৭ নম্বর চার্জে
গণহত্যার অভিযোগেও অভিযুক্ত মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেয়া হলো। ফাঁসিতে
ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেয়া হলো। রায়ে আরো বলা হয়,
আবুল কালাম আযাদ ১, ৫ ও ৮ নম্বর চার্জেও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। তবে
ইতঃপূর্বে চারটি চার্জে তাকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আবুল কালাম
আযাদকে চার্জ ২-এর অপরাধ থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো। রায়ে আরো বলা হয়,
আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে কনভিকশন ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে ও প্রয়োজনীয়
পদক্ষেপ নিতে আইজিপিকে নির্দেশ দেয়া হলো। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে
রায়ের কপি ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানোরও নির্দেশ দেয়া হলো।
মাওলানা আবুল কালাম আযাদ পলাতক থাকায় ট্রাইব্যুনাল স্টেট ডিফেন্স
নিয়োগ করে অতি দ্রুত এ মামলার নিষ্পত্তি করে রায় ঘোষণা করেন। গত ২৬
নভেম্বর মাওলানা আযাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় এবং গত ২৬ ডিসেম্বর
মাত্র এক মাসের ব্যবধানে সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে
ট্রাইব্যুনাল রায়ের জন্য রাখেন। রাষ্ট্রপক্ষের ২২ জন সাক্ষী মাওলানা
আযাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। এরপর মাত্র ২৫ দিনের ব্যবধানে গতকাল
ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করেন।
পলাতক অবস্থায় মাওলানা আযাদের বিচার : গত ৪ নভেম্বর মাওলানা আবুল কালাম
আযাদের বিরুদ্ধে আটটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়।
ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধে ১০টি ঘটনায় ২২টি অভিযোগের ভিত্তিতে মোট ৪৪৮
পৃষ্ঠার অভিযোগ দাখিল করা হয়েছিল। ৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল আবুল কালাম
আযাদের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরুর আদেশ দেন। গত ২৬ জুলাই ট্রাইব্যুনালের
তদন্ত সংস্থা মাওলানা আযাদের বিরুদ্ধে তদন্তকাজ শেষ করে তদন্ত প্রতিবেদন
প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেয়। গত ৩ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-২। এর পর থেকে তিনি পলাতক। ওই দিন উত্তরখানে
মাওলানা আযাদের বাসভবন গিয়ে পুলিশ তাকে পায়নি। ২৫ সেপ্টেম্বর দু’টি
জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আযাদকে সাত দিনের মধ্যে
ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বলা হয়। কিন্তু তিনি হাজির না হওয়ায়
ট্রাইব্যুনাল তাকে পলাতক ঘোষণা করেন এবং তার অনুপস্থিতিতে বিচার শুরু করেন।
তিনি পলাতক থাকায় ৭ অক্টোবর তার পক্ষে মো: আবদুস শুকুর খানকে আইনজীবী
নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় : ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ
ট্রাইব্যুনাল-১ গঠন করা হয়। এরপর ট্রাইব্যুনালের বিচার দ্রুত শেষ করতে
২০১২ সালের ২২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল-১ গঠনের দুই
বছর পর ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করা হলেও দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল থেকেই প্রথম
রায় ঘোষণা করা হলো। একই ট্রাইব্যুনালে গত ১৭ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী
অপরাধ মামলার বিচারকার্যক্রম চূড়ান্তভাবে শেষ করার পর রায়ের জন্য রাখা
হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল-১-এ জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। ট্রাইব্যুনাল-২-এ
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী
সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও বিএনপি নেতা আবদুল আলীমের
বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। ট্রাইব্যুনাল-১-এ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক
আমির অধ্যাপক গোলাম আযম, বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, বিএনপির
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপির মামলার
বিচারকার্যক্রম চলছে।
মাওলানা আবুল কালাম আযাদ : মাওলানা আবুল কালাম আযাদ ১৯৪৭ সালের ৫ মার্চ
ফরিদপুরের সালথা থানার বড়খাড়দিয়া (ছয়আনি) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার
বাবা মৃত আবদুস সালাম মিয়া, মাতার নাম মাগফুরা খাতুন। বর্তমান ঠিকানা
সেক্টর-৭, রোড-৩৩, বাড়ি-৬ উত্তরা এবং আযাদ ভিলা ২৭৯/৬ চানপাড়া, উত্তরখান
ঢাকা। তিনি ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে পড়ালেখা করেন। টেলিভিশনে ধর্মীয়
বিষয় আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর প্রদান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বিখ্যাত হন।
তিনি বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভিতে আপনার জিজ্ঞাসা ও এটিএন বাংলায় ইসলাম
ধর্ম ও মাসলা মাসায়েল বিষয়ে আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান পরিচালনা
করেন। তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ইসলামি এনজিওর সাথে জড়িত। গত
বছরের ৩ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর
তিনি পালিয়ে যান বলে পুলিশ অভিযোগ করেছে।
No comments