বিদেশিদের প্রতি জাপানের উঁচু দেয়াল by হিরোকো তাবুচি
জাপানে অভিবাসীদের জন্য প্রতিবন্ধকতা অনেক। অথচ এঙ্পার্টরা বলছেন, দেশটি দিন দিন নিজেদের জনগণের মেধা হারাচ্ছে। তাই ইন্দোনেশিয়া থেকে জাপানে আসা অতি পরিশ্রমী যুবতী মারিয়া ফ্রান্সিসকার মতো শ্রমশক্তি জাপানে রেখে দেওয়ার কথা।
কিন্তু ২৬ বছর বয়সের ফ্রান্সিসকার এখানে থাকার জন্য রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে। টোকিওর বাইরে একটি হাসপাতালে তাঁকে তিন বছর মেয়াদে থাকতে হলে জাপানের মান অনুসারে নার্সিং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। এ পরীক্ষা এতটাই কঠিন যে ২০০৭ সালে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন থেকে আসা ৬০০ নার্সের মধ্যে মাত্র তিনজন পাস করতে পেরেছেন। কী আর করা, এখন সারা দিন হাসপাতালে কাজ করার পর ফ্রান্সিসকার আট ঘণ্টা করে জাপানি ভাষা শিক্ষা কোর্স করতে হচ্ছে। শব্দার্থ খোঁজার জন্য ডিকশনারি দেখতে দেখতে সেটি নরম হয়ে গেছে। তবে ফ্রান্সিসকা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাঁর এখানে বেতন শুরু হয়েছে দুই হাজার ৪০০ ইউএস ডলার দিয়ে। তাঁর দেশের বেতনের অনুপাতে এ বেতন ১০ গুণ। যদি তিনি পরীক্ষায় ফেল করেন তাহলে তিনি আর কখনো জাপানে ফিরতে পারবেন না এ চাকরি নিয়ে।
জাপানে জনসংখ্যার বয়স অনুযায়ী শ্রমিকের মারাত্মক সংকট থাকা সত্ত্বেও দেশটি অভিবাসীদের দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না। মিসেস ফ্রান্সিসকার মতো অনেকেই লক্ষ করছেন, জাপান সরকার বরং উল্টোটাই করছে। বিদেশি শ্রমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রফেশনাল স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েটদের ব্যাপারে এমন সব ব্যবস্থা নিচ্ছে যাতে তাঁরা ফিরে যেতে বাধ্য হন। স্থানীয় নার্সিং অ্যাসোসিয়েশন আশঙ্কা করছে, এভাবে বিদেশি নার্স স্রোতের মতো এলে তাঁদের বেতন-ভাতা কমে যেতে পারে।
২০০৯ সালে গত ৫০ বছরের রেকর্ড অনুসারে জাপানে সর্বাধিক পরিমাণ অভিবাসী কমে গেছে। ২.১৯ মিলিয়ন সংখ্যা থেকে ১.৪ শতাংশ কমে গেছে। জাপানের ১২৭.৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার মাত্র ১.৭১ শতাংশ হলো এই অভিবাসীর সংখ্যা। এঙ্পার্টরা বলছেন, দুই দশক ধরে জাপানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে যে মন্থর গতি তৈরি হয়েছে তা অভিবাসী বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিকার হতে পারে। কিন্তু এই অভিবাসী গ্রহণ না করে জাপান অর্থনৈতিক গতিসঞ্চার থেকে নিজেকে বঞ্চিত করছে; যে ক্রনিক বাজেট ঘাটতি দেখা দিয়েছে তা থেকে পরিত্রাণের চেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে, সামাজিক নিরাপত্তা সিস্টেমকে দেউলিয়া করে তুলছে। যে হাসপাতালে ফ্রান্সিসকা কাজ করছে, ওই হাসপাতালের চেয়ারম্যান ইয়োকিয়োশি শিনতানির মতে, 'আপনি যদি চিকিৎসা খাতের কথা বিবেচনা করেন তাহলে পরিষ্কার যে জাপানকে বাঁচতে হলে বাইরের শ্রমিক প্রয়োজন। যে পরীক্ষা নার্সদের নেওয়া হচ্ছে তার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হচ্ছে, তাঁরা পরীক্ষায় পাস করতে ব্যর্থ হবেন।'
এঙ্পার্টরা বলছেন, জাপান শিল্পের সর্বক্ষেত্রে মেধা ও দক্ষতা হারাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিনিয়োগ ব্যাংকগুলো চলে যাচ্ছে হংকং ও সিঙ্গাপুরে ঘাঁটি গাড়তে। সেখানে অনেক বিদেশিবান্ধব আয়কর ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে জীবনযাত্রার ব্যয়ভার কম এবং জনসাধারণ ইংরেজিতে অনেক সাবলীল।
২০০৯ সালে যেসব বিদেশি বসবাসের অনুমতি চেয়ে (রেসিডেন্ট পারমিট) আবেদন করেছিল তাদের মধ্যে ৪৯ শতাংশকেই বাদ দেওয়া হয়েছে। অভিবাসনে আরো অনেক সমস্যা রয়েছে। দেশের কৃষি ও ওয়ার্কশপে কাজ করার ক্ষেত্রে অভিবাসন আইনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে আসা শ্রমিকদের ওপর ট্রেনিং-এর নামে রীতিমতো অত্যাচার করা হচ্ছে। কঠিন যোগ্যতার শর্ত বিদেশি দক্ষ শ্রমিকদের পথ রুদ্ধ করে রাখছে। অন্যদিকে জটিল আইনের কারণে এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েও বিদেশিরা স্থায়ীভাবে বসতে পারছে না।
চাকরির সুবিধা সৃষ্টি করতে না পারার কারণে জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সফলভাবে বিদেশি ছাত্রের সংখ্যা বাড়ছে না। স্থানীয় আয় কমে যাওয়ায় এবং বর্তমান অবনতিশীল অর্থনৈতিক অবস্থায় নতুন কলেজ গ্র্যাজুয়েটরাই চাকরির জন্য হিমশিম খাচ্ছে। তাই রাজনৈতিক সদিচ্ছাও তৈরি হচ্ছে না উদার হওয়ার ব্যাপারে।
কিন্তু ওদিকে জাপানের জনসংখ্যার ঘড়িটি টিকটিক করছে। জাপান সরকারের হিসাব অনুযায়ী, আগামী ৫০ বছরে জাপানের জনসংখ্যা কমে ৯০ মিলিয়নে দাঁড়াবে। ২০৫৫ সাল নাগাদ প্রতি তিনজন জাপানির একজনের বয়স হবে কমপক্ষে ৬৫ বছর। এর ফলে জাপানের কর্মক্ষম জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৫২ মিলিয়নে।
অভিবাসন আইন সংশোধনের ব্যাপারে জাপানের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, দেশের মানুষের জাতিসত্তা খাঁটি জাপানি করে রাখতে হবে। ১৯৯০ সালে জাপান বিদেশি নাগরিকদের ভিসা প্রদান শুরু করে যারা জাপানি বংশোদ্ভূত, বিশেষ করে গত শতাব্দীতে যেসব জাপানি ব্রাজিলে কাজের খোঁজে গিয়েছিল তাদের জন্য। কিন্তু সরকার তাদের নতুন অভিবাসিত জনসংখ্যাকে সংহতিপূর্ণ করে তুলতে বিশেষ কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি। যেমন বিদেশি শিশুদের কমপলসারি শিক্ষা থেকে বাদ রাখা হয়েছে। যেসব স্থানীয় স্কুল অ-জাপানি শিক্ষার্থী গ্রহণ করে থাকে তাদের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে কিছুই করেনি। তাই অনেক শিশুকে স্কুল ছাড়তে হয়েছে। টয়োটা শহরের অনেক বিদেশিই এখন আবার ব্রাজিলে ফিরে যাওয়ার কথা চিন্তা করছেন। টয়োটা সিটিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য পরিচালিত স্কুলের মালিক হিরোয়োকি নোমোতো মন্তব্য করেছেন, 'জাপান অভিবাসী এবং জাপানিদের মধ্যে শক্তিশালী সেতু নির্মাণ করতে পারেনি।'
দ্য হিন্দু থেকে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
জাপানে জনসংখ্যার বয়স অনুযায়ী শ্রমিকের মারাত্মক সংকট থাকা সত্ত্বেও দেশটি অভিবাসীদের দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না। মিসেস ফ্রান্সিসকার মতো অনেকেই লক্ষ করছেন, জাপান সরকার বরং উল্টোটাই করছে। বিদেশি শ্রমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রফেশনাল স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েটদের ব্যাপারে এমন সব ব্যবস্থা নিচ্ছে যাতে তাঁরা ফিরে যেতে বাধ্য হন। স্থানীয় নার্সিং অ্যাসোসিয়েশন আশঙ্কা করছে, এভাবে বিদেশি নার্স স্রোতের মতো এলে তাঁদের বেতন-ভাতা কমে যেতে পারে।
২০০৯ সালে গত ৫০ বছরের রেকর্ড অনুসারে জাপানে সর্বাধিক পরিমাণ অভিবাসী কমে গেছে। ২.১৯ মিলিয়ন সংখ্যা থেকে ১.৪ শতাংশ কমে গেছে। জাপানের ১২৭.৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার মাত্র ১.৭১ শতাংশ হলো এই অভিবাসীর সংখ্যা। এঙ্পার্টরা বলছেন, দুই দশক ধরে জাপানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে যে মন্থর গতি তৈরি হয়েছে তা অভিবাসী বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিকার হতে পারে। কিন্তু এই অভিবাসী গ্রহণ না করে জাপান অর্থনৈতিক গতিসঞ্চার থেকে নিজেকে বঞ্চিত করছে; যে ক্রনিক বাজেট ঘাটতি দেখা দিয়েছে তা থেকে পরিত্রাণের চেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে, সামাজিক নিরাপত্তা সিস্টেমকে দেউলিয়া করে তুলছে। যে হাসপাতালে ফ্রান্সিসকা কাজ করছে, ওই হাসপাতালের চেয়ারম্যান ইয়োকিয়োশি শিনতানির মতে, 'আপনি যদি চিকিৎসা খাতের কথা বিবেচনা করেন তাহলে পরিষ্কার যে জাপানকে বাঁচতে হলে বাইরের শ্রমিক প্রয়োজন। যে পরীক্ষা নার্সদের নেওয়া হচ্ছে তার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হচ্ছে, তাঁরা পরীক্ষায় পাস করতে ব্যর্থ হবেন।'
এঙ্পার্টরা বলছেন, জাপান শিল্পের সর্বক্ষেত্রে মেধা ও দক্ষতা হারাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিনিয়োগ ব্যাংকগুলো চলে যাচ্ছে হংকং ও সিঙ্গাপুরে ঘাঁটি গাড়তে। সেখানে অনেক বিদেশিবান্ধব আয়কর ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে জীবনযাত্রার ব্যয়ভার কম এবং জনসাধারণ ইংরেজিতে অনেক সাবলীল।
২০০৯ সালে যেসব বিদেশি বসবাসের অনুমতি চেয়ে (রেসিডেন্ট পারমিট) আবেদন করেছিল তাদের মধ্যে ৪৯ শতাংশকেই বাদ দেওয়া হয়েছে। অভিবাসনে আরো অনেক সমস্যা রয়েছে। দেশের কৃষি ও ওয়ার্কশপে কাজ করার ক্ষেত্রে অভিবাসন আইনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে আসা শ্রমিকদের ওপর ট্রেনিং-এর নামে রীতিমতো অত্যাচার করা হচ্ছে। কঠিন যোগ্যতার শর্ত বিদেশি দক্ষ শ্রমিকদের পথ রুদ্ধ করে রাখছে। অন্যদিকে জটিল আইনের কারণে এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েও বিদেশিরা স্থায়ীভাবে বসতে পারছে না।
চাকরির সুবিধা সৃষ্টি করতে না পারার কারণে জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সফলভাবে বিদেশি ছাত্রের সংখ্যা বাড়ছে না। স্থানীয় আয় কমে যাওয়ায় এবং বর্তমান অবনতিশীল অর্থনৈতিক অবস্থায় নতুন কলেজ গ্র্যাজুয়েটরাই চাকরির জন্য হিমশিম খাচ্ছে। তাই রাজনৈতিক সদিচ্ছাও তৈরি হচ্ছে না উদার হওয়ার ব্যাপারে।
কিন্তু ওদিকে জাপানের জনসংখ্যার ঘড়িটি টিকটিক করছে। জাপান সরকারের হিসাব অনুযায়ী, আগামী ৫০ বছরে জাপানের জনসংখ্যা কমে ৯০ মিলিয়নে দাঁড়াবে। ২০৫৫ সাল নাগাদ প্রতি তিনজন জাপানির একজনের বয়স হবে কমপক্ষে ৬৫ বছর। এর ফলে জাপানের কর্মক্ষম জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৫২ মিলিয়নে।
অভিবাসন আইন সংশোধনের ব্যাপারে জাপানের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, দেশের মানুষের জাতিসত্তা খাঁটি জাপানি করে রাখতে হবে। ১৯৯০ সালে জাপান বিদেশি নাগরিকদের ভিসা প্রদান শুরু করে যারা জাপানি বংশোদ্ভূত, বিশেষ করে গত শতাব্দীতে যেসব জাপানি ব্রাজিলে কাজের খোঁজে গিয়েছিল তাদের জন্য। কিন্তু সরকার তাদের নতুন অভিবাসিত জনসংখ্যাকে সংহতিপূর্ণ করে তুলতে বিশেষ কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি। যেমন বিদেশি শিশুদের কমপলসারি শিক্ষা থেকে বাদ রাখা হয়েছে। যেসব স্থানীয় স্কুল অ-জাপানি শিক্ষার্থী গ্রহণ করে থাকে তাদের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে কিছুই করেনি। তাই অনেক শিশুকে স্কুল ছাড়তে হয়েছে। টয়োটা শহরের অনেক বিদেশিই এখন আবার ব্রাজিলে ফিরে যাওয়ার কথা চিন্তা করছেন। টয়োটা সিটিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য পরিচালিত স্কুলের মালিক হিরোয়োকি নোমোতো মন্তব্য করেছেন, 'জাপান অভিবাসী এবং জাপানিদের মধ্যে শক্তিশালী সেতু নির্মাণ করতে পারেনি।'
দ্য হিন্দু থেকে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর : মহসীন হাবিব
No comments