অপশক্তিকে খুঁজে বের করতে তদনত্ম কমিশন দাবি- বঙ্গবন্ধু হত্যার রায় কার্যকর হওয়ায় সংসদে ধন্যবাদ প্রস্তাব গৃহীত
সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় সফলভাবে কার্যকর হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনীত প্রসত্মাব রবিবার জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।
প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে মহাজোটের নেতারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনে দেশী-বিদেশী অপশক্তিকে খুঁজে বের করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানান। তবে এ আলোচনা শুরুর আগেই বিরোধী দল সংসদ থেকে ওয়াক-আউট করে চলে যায়।আলোচনা শেষে স্পীকার এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ বলেন, অনেকেই তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন। এটা এভাবে গঠন করা সম্ভব নয়। আগে নোটিস দেয়ার প্রয়োজন ছিল। কমিশন গঠনের প্রস্তাবটি সঠিক উলেস্নখ করে তিনি বলেন, আগামীতে সঠিক প্রক্রিয়ায় প্রস্তাবটি আনতে পারেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে মহাজোটের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলেছেন, এই রায় কার্যকরের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, কেউ-ই আইনের উর্ধে নয়। আর এই রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পথ উন্মুক্ত হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, রায় কার্যকর সম্পর্কে কোন প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে খালেদা-নিজামীরা আত্মস্বীকৃত খুনীদের প্রতি তাদের সমর্থন স্পষ্ট করেছে। খুনীরা নিজেরাই বলেছেন, জিয়া এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিল। তাই জিয়া বেঁচে থাকলে এ মামলার অন্যতম আসামি হতেন। জিয়া জড়িত ছিলেন বলেই বিএনপি-জামায়াত আলোচনায় অংশগ্রহণের সৎসাহস দেখাতে পারেনি। তাই পরিকল্পিতভাবে আলোচনার আগেই ওয়াক আউটের নাটক করে চলে গেছে।
সংসদের প্রধান হুইপ উপাধ্য আবদুস শহীদের আনীত এই ধন্যবাদ প্রসত্মাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, জাসদের হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, মেজর জেনারেল (অব) সুবিদ আলী ভূঁইয়া, শাজাহান খান, এ্যাডভোকেট কামরম্নল ইসলাম, এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, এ্যাডভোকেট নুরম্নল ইসলাম সুজন, অপু উকিল ও জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, পলাতক খুনী ও তাদের দোসরদের ষড়যন্ত্র এখনও থামেনি। তাই সংসদে দাঁড়িয়ে বিএনপি-জামায়াত আরেকটি ১৫ আগস্টের হুমকি দেয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। শেখ হাসিনাকে মতায় থাকতে দেবে না, তাই আইএসআই-এর ইশারায় তারা ভেতরে- বাইরে গ-গোল করছে। যারা সংসদে এমন হুমকি দিয়েছে তার বিচার এবং খুনী নুর চৌধুরীর প েওকালতকারী আইরিন খান তারেক জিয়ার স্ত্রীর আত্মীয় উলেস্নখ করে তাকেও আনত্মর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন থেকে সরিয়ে দেয়ার দাবি জানান তিনি।
আমির হোসেন আমু আলস্নাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় এবং তদনত্ম কমিশন গঠনের প্রসত্মাব সমর্থন করে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের প্রধান বেনিফিশিয়ারি জিয়া, খালেদা জিয়া ও জামায়াতে ইসলামী। শুধু খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করেই চুপ করে থাকলে চলবে না, পুরো রহস্য উদঘাটন করতে হবে।
তোফায়েল আহমদও বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পেছনে কারা ছিল, কারা এই খুনীদের লালন-পালন, পুরস্কৃত ও সরকারের অংশীদার করেছে; তা খুঁজে বের করতে সংসদীয় কমিশন গঠনের দাবি জানান। তিনি বলেন, খুনীরা নিজেরাই বলেছে, জিয়াউর রহমান এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত। তাই নাটক করে বিরোধী দল সংসদ থেকে চলে গেছে।
কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, রায় কার্যকরের পর অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। তাই তারা নিশ্চুপ। ৩৪টি বছর ধরে শেখ হাসিনা প্রতিহিংসাস্পৃহা নয়, ন্যায়বিচার চেয়েছেন এবং পেয়েছেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বেনিফিশিয়ারি শুধু জিয়াই নন, তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়াও। বিরোধী দলীয় নেত্রী তাঁর স্বামী হত্যার বিচার করেননি।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন সময় এসেছে, একটি কমিশন গঠন করে সামরিক শাসন কারা আনল, ইনডেমনিটি কে আনল, সংবিধান ও বিচার বিভাগকে কারা ধ্বংস করল, খুনীদের কারা মদদ, ইন্ধন ও পুরস্কৃত করেছে; তা খুঁজে বের করা হোক। যাতে আগামীতে বাঙালীর জীবনে এমন নৃশংস ঘটনা না ঘটে, আর যাতে সামরিক শাসনের যাঁতাকলে জাতি পিষ্ট না হয়।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, এ আলোচনায় অংশ না নেয়ার জন্যই বিরোধী দল ওয়াক আউটের নাটক সাজিয়েছে। কেননা, বিএনপির প্রধান জেনারেল জিয়াও বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে প্রত্য-পরোভাবে জড়িত ছিলেন। বিএনপি-জামায়াতের মনে এতই জ্বালা যে, সংসদ থেকে ওয়াক-আউটের সময় হুমকি দিয়ে গেল, একটি ১৫ আগস্ট ঘটিয়েছি, আরেকটি ঘটাব।
আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম আলোচনায় অংশ নিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, কী দোষ করেছিল ছোট্টশিশু রাসেল? অনত্মঃসত্ত্বা বৌ ও বেগম মুজিব? জিয়ার কথা শুনলেই বিরোধী দলের মাথা খারাপ হয়, অথচ এই জিয়া যে এই হত্যাকা-ের কথা জানত তা খুনীরাই বলে গেছে। এর পরে কীভাবে খুনীদের পুরস্কৃত, পুনর্বাসিত করেছে, আক্রানত্ম হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সাহায্য চাওয়ার পরও কেন তৎকালীন সেনাপ্রধান, উপ-প্রধান জিয়া এগিয়ে আসেননি- তা খুঁজে বের করতে তিনি একটি কমিশন গঠনের দাবি জানান।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, দেরিতে হলেও বিচারের রায় কার্যকর হওয়া আইনের স্বাভাবিক পরিণতি। খোন্দকার মোশতাক, জেনারেল জিয়া এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। রায় কার্যকরের পর বিএনপি- জামায়াতসহ কতিপয়, কয়েকটি দল এ নিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তারা নীরবতা পলন করেছে। তারা কি শোকে মুহ্যমান হয়ে বাকরম্নদ্ধ হলেন? এর মধ্য দিয়ে তারা খুনীদের প্রতি শেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ ভুঁইয়া বলেন, পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হওয়ায় '৭৫-এর খুনী চক্র ও বেনিফিশিয়ারিদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। জঙ্গীবাদের বিরম্নদ্ধে বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে বলেই আল কায়েদার ল্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। সবাইকে সতর্ক থেকে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রকে চিরতরে নিমর্ূল করতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে জাতি আজ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।
সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরম্ন বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের নেপথ্য নায়করা ৩৪ বছর এ হত্যাকা-ের বিচার করতে দেয়নি। রায় কার্যকরে প্রমাণ হয়েছে, খুনী ও অপরাধীরা কখনও রা পায় না। আজ শপথ নেব_ বাংলার মাটিতে যেন এ ধরনের কোন খুনী আর জন্ম না নেয়।
নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পথ উন্মুক্ত হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা বেঁচে থাকলে ইনশালস্নাহ বাংলার মাটিতেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে।
No comments