জ্বালানি খাতে দায়মুক্তি আইন - জাতীয় স্বার্থবিরোধী ও দুর্নীতির সহায়ক

বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বিদেশী কোম্পানিগুলোকে কোনো প্রকার প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ছাড়াই কাজ দেয়া হচ্ছে।
বিদেশী কোম্পানির অংশগ্রহণ নিয়ে যাতে কখনো প্রশ্ন তোলা না যায়, সে জন্য জাতীয় সংসদে পাস করা হয়েছে দায়মুক্তির আইন। এর ফলে জ্বালানি খাতে বিদেশী কোম্পানির অংশগ্রহণের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কতটা স্বচ্ছতা বজায় থাকছে কিংবা জাতীয় স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে, তা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ রয়েছে। এসব কোম্পানি কাজ দেয়ার নামে বড় আকারের দুর্নীতির ঘটনা ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।ইতোমধ্যে অনেক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অভিমত দিয়েছেন, বিদেশী কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে বাংলাদেশ শুধু আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তই হচ্ছে না, জ্বালানি খাতের একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সকে অকার্যকর করে ফেলা হচ্ছে। বিদেশী কোম্পানির মাধ্যমে জ্বালানি খাতের প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ২০১১ সালে ‘দ্রুত জ্বালানি সরবরাহ আইন’ করা হয়। এর আওতায় গত বছরের জানুয়ারি মাসে ভারতীয় কোম্পানি মান ইন্ডাস্ট্রিজের সাথে চুক্তি করে বিবিয়ানা-ধনুয়া সঞ্চালন লাইনের ১৩৩ কিলোমিটার গ্যাস পাইপ সরবরাহের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। অথচ ভারতীয় এই কোম্পানিকে কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি।একইভাবে ১০টি গ্যাস উন্নয়ন কূপ খননের কাজ দেয়া হয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সংস্থা গ্যাজপ্রমকে। এজন্য গ্যাজপ্রমকে দিতে হবে ১৯ কোটি ৩৫ লাখ ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৫৮৬ কোটি টাকা। এগুলোর অন্তত পাঁচটি কূপ থেকে জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা ছিল, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিকে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান না করে বিদেশী কোম্পানির হাতে কূপগুলো তুলে দেয়া হলো। গ্যাজপ্রমকে এসব কূপে গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধানের সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রেও কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি।দেখা যাচ্ছে, জ্বালানি খাতে সম্পূর্ণ অস্বচ্ছতা এবং একধরনের স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে বিদেশী কোম্পানিগুলোকে কাজ করার আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে যেহেতু দায়মুক্তির আইন পাস করা হয়েছে, সে কারণে এ খাতে সরকার ন্যূনতম জবাবদিহিতার নীতিও গ্রহণ করছে না। ধারণা করা হয় যে, বিদেশী কোম্পানিগুলোকে যেভাবে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কাজ দেয়া হচ্ছে তাতে বড় আকারের দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্র। এখন দায়মুক্তি দেয়া হলেও ভবিষ্যতে বিদেশী কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণ নিয়ে জবাবদিহিতার প্রশ্ন উঠবে। আমরা দেখছি, জ্বালানি খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট দেশটির প্রধানমন্ত্রী রাজা আশরাফ পারভেজের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।

আমরা মনে করি, দায়মুক্তি আইনের ওপর নির্ভর করে জ্বালানি খাত বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দেয়ার নীতি জাতীয় স্বার্থের বিরোধী। সরকারের উচিত, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিদেশী কোম্পানির অংশগ্রহণ বন্ধ করা এবং বিশাল বিনিয়োগনির্ভর এ খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
       


No comments

Powered by Blogger.