ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক হামলা by জিবিগ্নিউ ব্রেজিনিস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মনোনয়নকে কেন্দ্র করে আসন্ন পররাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক
কমিটির সভায় বর্তমানের অস্থির বা অনিশ্চিত বিশ্বে আমেরিকার ভূমিকা নিয়ে
ব্যাপক বিতর্ক হবে।
পররাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক শুনানিতে
নিশ্চিতভাবে ইরানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য মার্কিন সামরিক হামলার কৌশলগত
বিচক্ষণতা নিয়ে প্রশ্ন আসবে। সম্প্রতি ইসরাইলি প্রচারমাধ্যমের খবরে
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন সাবেক স্টাফ
সদস্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বছরের মাঝামাঝি মার্কিন হামলার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
ইরানের সাথে যুদ্ধ অথবা শান্তির বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করা অত্যাবশ্যক। বিশেষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থকে মাথায় রেখে এটা করা প্রয়োজন। যদিও প্রেসিডেন্ট একটি নির্দিষ্ট তারিখে সামরিক হামলা চালানোর সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দক্ষতার সাথে এড়িয়ে গেছেন। পরমাণু বিস্তাররোধ চুক্তি মেনে চলার ব্যাপারে ইরানের সম্মতির বিষয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি স্বাক্ষর করা না গেলে মার্কিন সামরিক হামলার ব্যাপারে অবশ্যই দেশে বিদেশে হইচই করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রকে একাকী অথবা ইসরাইলের সাথে সমন্বিতভাবে এই হামলার উদ্যোগ নিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র স্বউদ্যোগে কোনো যুদ্ধ শুরু করলে তার সম্ভাব্য ফলাফল কী হতে পারে তার পাঁচটি দিক অবশ্যই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
ইরানের পরমাণু স্থাপনায় মার্কিন সামরিক হামলা কিভাবে কার্যকর বা ফলপ্রসূ হতে পারে? এই হামলার পরিণতি কী হবে, তাদের সহ্য ক্ষমতা কেমন এবং ইরানের জনগণকে এ জন্য কেমন পরিণতি ভোগ করতে হবে? ইরানের কত লোক মৃত্যুবরণ করতে পারে ইত্যাদি।
মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে ইরান প্রতিশোধমূলক কী ব্যবস্থা নিতে পারে এবং এই হামলার কারণে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে কী প্রভাব পড়তে পারে? হামলার ফলে ইউরোপীয় এবং এশীয় অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির মাধ্যমে কী ক্ষতি হতে পারে?
আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করে মার্কিন হামলা কি যুক্তিসঙ্গত বা ন্যায়সঙ্গত হতে পারে? এ ধরনের হামলার ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ বিশেষত চীন এবং রাশিয়া কি তাদের ভেটো ক্ষমতাকে হামলা অনুমোদন করার জন্য ব্যবহার করবে?
ইসরাইলকে যেখানে শতাধিক পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, সেখানে প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী না হয়ে ইরান ইসরাইলে হামলা করতে পারে বলে যে বিতর্ক করা হচ্ছে কিভাবে তা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে? গত কয়েক বছর ধরে এ ধরনের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
একতরফা শুরু করার উত্তেজনাপূর্ণ আঞ্চলিক পরিবেশের পরিবর্তে সম্ভাব্য ইরানি পরমাণু হুমকিকে প্রশমিত করার জন্য কি অধিকতর টেকসই বা দীর্ঘস্থায়ী এবং হঠকারী নয় এমন কিছু বিকল্প মার্কিন কৌশলগত প্রতিশ্রুতি দেয়া যায় না?
সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বিবেচনা হচ্ছে, নিয়ন্ত্রিত মার্কিন হামলা হলেই কেবল একটি অস্থায়ী প্রভাব পড়বে। বারে বারে হামলা চালানো হবে অধিকতর কার্যকর, কিন্তু এতে বেসামরিক লোক হতাহতের ঘটনা বেড়ে যাবে। শুধু তাই নয়, এর ফলে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। ফলে ইরানি জাতীয়তাবাদ জোরদার হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি তীব্র ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়বে এবং ক্ষমতাসীন ইরান সরকার রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের সুযোগ পাবে।
মার্কিন হামলার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ইরান আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে একটি নতুন গেরিলা ফ্রন্ট সংগঠিত ও সক্রিয় করে মার্কিন সৈন্যদের জীবনকে অতিষ্ঠ ও আরো কঠিন করে তুলতে পারে। তেহরান ইরাকে ব্যাপক সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে, যার পরিণতিতে গোটা অঞ্চলে আগুন জ্বলতে পারে এবং সিরিয়া দিয়ে লেবাননে এমনকি জর্ডানেও সঙ্ঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
মার্কিন নৌবাহিনী হরমুজ প্রণালী খুলে দিতে সক্ষম হলেও তেলপ্রবাহের জন্য ইন্স্যুরেন্স ব্যয় বেড়ে যাবে এবং এতে ইউরোপ ও এশিয়ার অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যাপকভাবে দোষারোপ করা হবে।
জাতিসঙ্ঘে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক দুঃখজনক অবস্থার কথা উল্লেখ করে বলা যায়, ইরানের ওপর অননুমোদিত মার্কিন হামলা বিশ্বব্যাপী উত্তেজনা ও সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটাবে। দুঃখজনক অবস্থানটি হচ্ছে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে জাতিসঙ্ঘ সদস্যপদ দানের বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল জাতিসঙ্ঘের ১৮৮টি রাষ্ট্রের মধ্য থেকে মাত্র সাতটি রাষ্ট্রের সমর্থন আদায় করতে পেরেছে।
এরপর কি জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদ যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা করতে পারে? ইতোমধ্যে গভীরভাবে সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়া আমেরিকার জন্য ওই অঞ্চলে বিপর্যয়ের কারণে নজিরবিহীন আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা দেখা দেবে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিকভাবে আমেরিকা গোটা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
কংগ্রেসকে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে যে, আমাদের মধ্যপ্রাচ্যের এবং ইউরোপের বন্ধুরা যারা ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক হামলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন তারা মধ্যপ্রাচ্যের নতুন যুদ্ধ ও সঙ্ঘাতে নিজেদের রক্ত ঢেলে দেয়ার ব্যাপারে, তাদের প্রস্তুতির ব্যাপারে নীরব রয়েছেন।
আবার যুদ্ধ শুরু হলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে এবং এতে তাৎক্ষণিকভাবে উপকার হবে ভøাদিমির পুতিনের রাশিয়ার। রাশিয়া ইউরোপকে দায়ী করার সুযোগ পাবে, তাদের তেল পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করবে। অপর দিকে জর্জিয়া ও আজারবাইজানকে হুমকি দেয়ারও মোক্ষম সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে।
ইরানের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সন্তোষজনক সমাধানে পৌঁছতে ব্যর্থ হলে নতুন করে মার্কিন উদ্যোগে যুদ্ধ শুরু করার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত নয়, কারণ এই যুদ্ধ শুধু ইরানে সীমাবদ্ধ থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অধিকতর বিচক্ষণ ও ফলপ্রসূ কাজ হবে ইরানের বিরুদ্ধে অবরোধ অব্যাহত রাখা। অপর দিকে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একই নীতি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করতে হবে, যা কয়েক দশক ধরে আমেরিকার, ইউরোপীয় ও এশীয় মিত্রদের স্টালিনের সোভিয়েত রাশিয়া এবং পরে পরমাণু শক্তিসম্পন্ন উত্তর কোরিয়ার হাত থেকে সফলভাবে রক্ষা করেছে। ইসরাইল অথবা মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো মার্কিন বন্ধু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইরানি সামরিক হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের নিজের ওপর হামলা হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যথোপযুক্ত জবাব দিতে হবে।
এই ইস্যুতে পররাষ্ট্র সম্পর্ক কমিটির গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে সহায়ক হতে পারে, যা যুদ্ধের অপরিণামদর্শী পথ থেকে সোজা পথে নিয়ে আসতে পারে। আমেরিকার জনগণ অথবা ইসরাইলি জনশক্তি কেউ এখন যুদ্ধের পক্ষে নয়। যুদ্ধই সম্ভাব্য মারাত্মক সঙ্কটের বিচক্ষণ জবাব নয়।
ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান মির দাগানই সঠিক কথা বলেছেন। তিনি সুস্পষ্ট ও দৃঢ়তার সাথে জানিয়েছেন যে, ইরানের ওপর হামলা চালানো হবে অত্যন্ত বোকামির কাজ। এর অন্য কোনো বিকল্প থাকলে সেটাই হবে অধিকতর ভালো।
লেখক : জিবিগনিউ ব্রেজিনিস্কি ছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও সম্প্রতি প্রকাশিত ‘স্ট্র্যাটিজিক ভিশন’ গ্রন্থের রচয়িতা। ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে
ভাষান্তর : মুহাম্মদ খায়রুল বাশার
ইরানের সাথে যুদ্ধ অথবা শান্তির বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করা অত্যাবশ্যক। বিশেষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থকে মাথায় রেখে এটা করা প্রয়োজন। যদিও প্রেসিডেন্ট একটি নির্দিষ্ট তারিখে সামরিক হামলা চালানোর সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দক্ষতার সাথে এড়িয়ে গেছেন। পরমাণু বিস্তাররোধ চুক্তি মেনে চলার ব্যাপারে ইরানের সম্মতির বিষয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি স্বাক্ষর করা না গেলে মার্কিন সামরিক হামলার ব্যাপারে অবশ্যই দেশে বিদেশে হইচই করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রকে একাকী অথবা ইসরাইলের সাথে সমন্বিতভাবে এই হামলার উদ্যোগ নিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র স্বউদ্যোগে কোনো যুদ্ধ শুরু করলে তার সম্ভাব্য ফলাফল কী হতে পারে তার পাঁচটি দিক অবশ্যই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
ইরানের পরমাণু স্থাপনায় মার্কিন সামরিক হামলা কিভাবে কার্যকর বা ফলপ্রসূ হতে পারে? এই হামলার পরিণতি কী হবে, তাদের সহ্য ক্ষমতা কেমন এবং ইরানের জনগণকে এ জন্য কেমন পরিণতি ভোগ করতে হবে? ইরানের কত লোক মৃত্যুবরণ করতে পারে ইত্যাদি।
মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে ইরান প্রতিশোধমূলক কী ব্যবস্থা নিতে পারে এবং এই হামলার কারণে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে কী প্রভাব পড়তে পারে? হামলার ফলে ইউরোপীয় এবং এশীয় অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির মাধ্যমে কী ক্ষতি হতে পারে?
আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করে মার্কিন হামলা কি যুক্তিসঙ্গত বা ন্যায়সঙ্গত হতে পারে? এ ধরনের হামলার ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ বিশেষত চীন এবং রাশিয়া কি তাদের ভেটো ক্ষমতাকে হামলা অনুমোদন করার জন্য ব্যবহার করবে?
ইসরাইলকে যেখানে শতাধিক পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, সেখানে প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী না হয়ে ইরান ইসরাইলে হামলা করতে পারে বলে যে বিতর্ক করা হচ্ছে কিভাবে তা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে? গত কয়েক বছর ধরে এ ধরনের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
একতরফা শুরু করার উত্তেজনাপূর্ণ আঞ্চলিক পরিবেশের পরিবর্তে সম্ভাব্য ইরানি পরমাণু হুমকিকে প্রশমিত করার জন্য কি অধিকতর টেকসই বা দীর্ঘস্থায়ী এবং হঠকারী নয় এমন কিছু বিকল্প মার্কিন কৌশলগত প্রতিশ্রুতি দেয়া যায় না?
সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বিবেচনা হচ্ছে, নিয়ন্ত্রিত মার্কিন হামলা হলেই কেবল একটি অস্থায়ী প্রভাব পড়বে। বারে বারে হামলা চালানো হবে অধিকতর কার্যকর, কিন্তু এতে বেসামরিক লোক হতাহতের ঘটনা বেড়ে যাবে। শুধু তাই নয়, এর ফলে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। ফলে ইরানি জাতীয়তাবাদ জোরদার হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি তীব্র ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়বে এবং ক্ষমতাসীন ইরান সরকার রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের সুযোগ পাবে।
মার্কিন হামলার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ইরান আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে একটি নতুন গেরিলা ফ্রন্ট সংগঠিত ও সক্রিয় করে মার্কিন সৈন্যদের জীবনকে অতিষ্ঠ ও আরো কঠিন করে তুলতে পারে। তেহরান ইরাকে ব্যাপক সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে, যার পরিণতিতে গোটা অঞ্চলে আগুন জ্বলতে পারে এবং সিরিয়া দিয়ে লেবাননে এমনকি জর্ডানেও সঙ্ঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
মার্কিন নৌবাহিনী হরমুজ প্রণালী খুলে দিতে সক্ষম হলেও তেলপ্রবাহের জন্য ইন্স্যুরেন্স ব্যয় বেড়ে যাবে এবং এতে ইউরোপ ও এশিয়ার অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যাপকভাবে দোষারোপ করা হবে।
জাতিসঙ্ঘে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক দুঃখজনক অবস্থার কথা উল্লেখ করে বলা যায়, ইরানের ওপর অননুমোদিত মার্কিন হামলা বিশ্বব্যাপী উত্তেজনা ও সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটাবে। দুঃখজনক অবস্থানটি হচ্ছে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে জাতিসঙ্ঘ সদস্যপদ দানের বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল জাতিসঙ্ঘের ১৮৮টি রাষ্ট্রের মধ্য থেকে মাত্র সাতটি রাষ্ট্রের সমর্থন আদায় করতে পেরেছে।
এরপর কি জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদ যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা করতে পারে? ইতোমধ্যে গভীরভাবে সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়া আমেরিকার জন্য ওই অঞ্চলে বিপর্যয়ের কারণে নজিরবিহীন আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা দেখা দেবে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিকভাবে আমেরিকা গোটা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
কংগ্রেসকে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে যে, আমাদের মধ্যপ্রাচ্যের এবং ইউরোপের বন্ধুরা যারা ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক হামলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন তারা মধ্যপ্রাচ্যের নতুন যুদ্ধ ও সঙ্ঘাতে নিজেদের রক্ত ঢেলে দেয়ার ব্যাপারে, তাদের প্রস্তুতির ব্যাপারে নীরব রয়েছেন।
আবার যুদ্ধ শুরু হলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে এবং এতে তাৎক্ষণিকভাবে উপকার হবে ভøাদিমির পুতিনের রাশিয়ার। রাশিয়া ইউরোপকে দায়ী করার সুযোগ পাবে, তাদের তেল পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করবে। অপর দিকে জর্জিয়া ও আজারবাইজানকে হুমকি দেয়ারও মোক্ষম সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে।
ইরানের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি সন্তোষজনক সমাধানে পৌঁছতে ব্যর্থ হলে নতুন করে মার্কিন উদ্যোগে যুদ্ধ শুরু করার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত নয়, কারণ এই যুদ্ধ শুধু ইরানে সীমাবদ্ধ থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অধিকতর বিচক্ষণ ও ফলপ্রসূ কাজ হবে ইরানের বিরুদ্ধে অবরোধ অব্যাহত রাখা। অপর দিকে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একই নীতি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করতে হবে, যা কয়েক দশক ধরে আমেরিকার, ইউরোপীয় ও এশীয় মিত্রদের স্টালিনের সোভিয়েত রাশিয়া এবং পরে পরমাণু শক্তিসম্পন্ন উত্তর কোরিয়ার হাত থেকে সফলভাবে রক্ষা করেছে। ইসরাইল অথবা মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো মার্কিন বন্ধু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইরানি সামরিক হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রের নিজের ওপর হামলা হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যথোপযুক্ত জবাব দিতে হবে।
এই ইস্যুতে পররাষ্ট্র সম্পর্ক কমিটির গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে সহায়ক হতে পারে, যা যুদ্ধের অপরিণামদর্শী পথ থেকে সোজা পথে নিয়ে আসতে পারে। আমেরিকার জনগণ অথবা ইসরাইলি জনশক্তি কেউ এখন যুদ্ধের পক্ষে নয়। যুদ্ধই সম্ভাব্য মারাত্মক সঙ্কটের বিচক্ষণ জবাব নয়।
ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক প্রধান মির দাগানই সঠিক কথা বলেছেন। তিনি সুস্পষ্ট ও দৃঢ়তার সাথে জানিয়েছেন যে, ইরানের ওপর হামলা চালানো হবে অত্যন্ত বোকামির কাজ। এর অন্য কোনো বিকল্প থাকলে সেটাই হবে অধিকতর ভালো।
লেখক : জিবিগনিউ ব্রেজিনিস্কি ছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও সম্প্রতি প্রকাশিত ‘স্ট্র্যাটিজিক ভিশন’ গ্রন্থের রচয়িতা। ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে
ভাষান্তর : মুহাম্মদ খায়রুল বাশার
No comments