ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসছেন ২৮ জানুয়ারি-ইন্দিরা মুজিব চুক্তি বাস্তবায়নে সাড়া নেই ভারতের by শওকত ওসমান রচি
ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধের আসন্ন ঢাকা সফরকালে আলোচনার এজেন্ডায় রয়েছে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা। নানা সমস্যা বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার সীমান্তকে ঘিরে।
সীমান্ত সমস্যার সমাধান ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই দেশের মন্ত্রী, সচিব ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। এসব বৈঠকে বিভিন্ন সীমান্ত সমস্যা সমাধানে নানা ধরনের প্রস্তাব বিশেষ করে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। পাশাপাশি ১৯৮২ সালে এরশাদ-ইন্দিরা চুক্তির বিষয়টি বাস্তবায়ন নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। সুশীল কুমার সিন্ধের ঢাকা সফরকালে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি নিয়ে ফের আলোচনা হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান। সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীপর্যায়ে এ চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও এটি বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই। তারা জানান, যেখানে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে সমাধান হয়নি, মন্ত্রী-পর্যায়ের বৈঠকে এর সমাধান কতটুকু তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চাপ থাকলেও ভারতের পক্ষ থেকে সাড়া মিলছে না। এ চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন হওয়ার ওপরই দুই দেশের সীমান্তের অনেক সমস্যা সমাধান নির্ভর করছে বলে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর মিডিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এমআরটি)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মহাজোট সরকারের চার বছরে ২৫০ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বিএসএফ। চলতি বছরও শুরু হয়েছে হত্যাকাণ্ড দিয়ে। প্রথম দুই দিনেই খুন হন চারজন বাংলাদেশী। ২০১২ সালে বিএসএফের হাতে খুন হয়েছেন ৪২ জন। ২০১১ সালে ৩৪ জন, ২০১০ সালে ৭৪ জন এবং ২০০৯ সালে ৯৬ জন। দুই দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত এর আগের প্রতিটি বৈঠকেই ‘সীমান্ত হত্যাকাণ্ড’ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এ অবস্থায় ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় আসার কথা। তিন দিনের এই সফরকালে তিনি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীরের সাথে বৈঠক ছাড়াও দুটো চুক্তি সম্পাদন করবেন। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অতীতের বৈঠকগুলোর মতো আবার সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবি জানানো হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সীমান্তে বহু সমস্যার মধ্যে একটি হচ্ছে, বিএসএফের হাতে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা। সর্বশেষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবপর্যায়ের বৈঠকেও বিএসএফের নিরীহ-নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের হত্যা বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া চোরাচালানের মাধ্যমে অস্ত্র-গোলাবারুদ ও মাদকদ্রব্য প্রবেশ বন্ধে বাংলাদেশ দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। আন্তর্জাতিক সীমানার ১৫০ গজের মধ্যে ৪৬টি পয়েন্টে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে বারবার। তাতেও ভারতের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। দীর্ঘ দিন ধরে ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার সীমান্ত চিহ্নিত হয়নি। বেশ কয়েকটি ছিটমহল বিনিময় ও অপদখলীয় ভূমি বিনিময় ইস্যু নিয়ে দুই দেশের মধ্যে এখনো সমাধান হয়নি। এ সমস্যাগুলো থাকায় সীমান্ত ব্যবস্থাপনাও সঠিকভাবে হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
বাংলাদেশবিরোধী সংগঠন স্বাধীন বঙ্গভূমি আন্দোলন, নিখিল বঙ্গ সঙ্ঘ, বাংলাদেশ উদ্বাস্তু উন্নয়ন সংসদ, সংযুক্ত উদ্বাস্তু সংগ্রাম পরিষদ, নতুন বাংলা মুভমেন্ট, ক্যাম্পেইন এগেইনেস্ট অ্যাটরোসিটিজ অন মাইনরিটি ইন বাংলাদেশ নাগরিক, হিন্দু রিপাবলিক অব বীরবঙ্গ, লিবারেশন টাইগারস অব বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশের এজেন্ডায় ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশইন বন্ধ করার বিষয়টিও স্থান পেয়েছে বারবার। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরকালে অপরাধ দমনে আইনি সহায়তা চুক্তি ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ সংঘটিত অপরাধ ও অবৈধ মাদকদ্রব্য প্রতিরোধ চুক্তি অনুস্বাক্ষর হয়।
বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে সম্পাদিত ইন্দিরা-মুজিব চুক্তিটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনী এনে বেরুবাড়ি এলাকাটি ভারতের কাছে হস্তান্তর করে। অন্য দিকে ভারতীয় পার্লামেন্টে চুক্তিটি পাস করাতে ব্যর্থ হয় সে দেশের সরকার। পর সময়ে তিনবিঘা সংক্রান্ত কলকাতা হাইকোর্টে পরিচালিত মামলাটি ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত রায় পায়। ১৯৯০ সালের ৩ জুন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, তিনবিঘা এলাকাটি বাংলাদেশকে লিজ প্রদানের ক্ষেত্রে ভারতের সংবিধান সংশোধনের কোনো প্রয়োজন নেই। এ রায় অনুযায়ী ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ তিন বিঘার ওপর দিয়ে চলাচলের স্বীকৃতি পায়।
এর আগে ১৯৫৮ সালের সেপ্টেম্বরে স্বাক্ষরিত হয় নেহরু-নুন চুক্তি। এ চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যকার সব ছিটমহল বিনিময় করার কথা। চুক্তি অনুযায়ী যখন পঞ্চগড় জেলার বোদা থানা এলাকার ১২ নম্বর দক্ষিণ বেরুবাড়ি ছিটমহল বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়, সেই সময় ওই এলাকার জনসাধারণ প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। এরপর সিদ্ধান্ত হয়, দক্ষিণ বেরুবাড়ি ভারতের কাছেই থাকবে। অন্য দিকে তিনবিঘাকে প্রতিবেশীর কাছে হস্তান্তর বা লিজ দেয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এরপর বেরুবাড়ির রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অবস্থান পূর্ব পাকিস্তান আমলেই বিতর্কিত থেকে যায়। তবে তিনবিঘা হস্তান্তরের বিষয়টি কাগজপত্রেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অপদখলীয় ভূমি একটি দীর্ঘ দিনের সমস্যা বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এ সমস্যার সূত্রপাত ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। ব্রিটিশ সরকার সরেজমিনে না গিয়েই ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত নির্ধারণ করে। ফলে সীমান্ত এলাকায় জনবসতির ঐতিহ্যগত অবস্থান, সীমান্ত অনির্ধারণ, অভিন্ন নদীর গতি পরিবর্তন, অর্পিত সম্পত্তি স্থানান্তরসহ বিভিন্ন কারণে ভারতীয় জনগণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জমি ভোগদখল করছে। একইভাবে ভারতের কিছু জমি বাংলাদেশীরা ভোগদখল করছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা-মুজিব বা ল্যান্ড বাউন্ডারি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যাতে উভয় দেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত ছিটমহল, অচিহ্নিত সীমান্ত, অপদখলীয় ভূমি স্থানান্তরের বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়া আছে।
পরবর্তীকালে ২০০২ সালে অপদখলীয় ভূমিসংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের জন্য উভয় দেশের যুগ্মসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি জয়েন্ট বাউন্ডারি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। গ্রুপের অনতিবিলম্বে অপদখলীয় জমির সমস্যা সমাধান করার কথা থাকলেও তা আর হয়নি। সর্বশেষ ২০০৬ সালে গ্রুপের তৃতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকেও অপদখলীয় ভূমি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এরই রেশ ধরে সীমান্ত চিহ্নিতকরণের সমস্যা সমাধানের জন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি অনুযায়ী দ্রুত সমাধানের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
সীমান্ত সমস্যার সমাধান ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দুই দেশের মন্ত্রী, সচিব ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। এসব বৈঠকে বিভিন্ন সীমান্ত সমস্যা সমাধানে নানা ধরনের প্রস্তাব বিশেষ করে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। পাশাপাশি ১৯৮২ সালে এরশাদ-ইন্দিরা চুক্তির বিষয়টি বাস্তবায়ন নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। সুশীল কুমার সিন্ধের ঢাকা সফরকালে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি নিয়ে ফের আলোচনা হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান। সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীপর্যায়ে এ চুক্তি নিয়ে আলোচনা হলেও এটি বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি নেই। তারা জানান, যেখানে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে সমাধান হয়নি, মন্ত্রী-পর্যায়ের বৈঠকে এর সমাধান কতটুকু তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চাপ থাকলেও ভারতের পক্ষ থেকে সাড়া মিলছে না। এ চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন হওয়ার ওপরই দুই দেশের সীমান্তের অনেক সমস্যা সমাধান নির্ভর করছে বলে সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর মিডিয়া রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এমআরটি)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মহাজোট সরকারের চার বছরে ২৫০ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বিএসএফ। চলতি বছরও শুরু হয়েছে হত্যাকাণ্ড দিয়ে। প্রথম দুই দিনেই খুন হন চারজন বাংলাদেশী। ২০১২ সালে বিএসএফের হাতে খুন হয়েছেন ৪২ জন। ২০১১ সালে ৩৪ জন, ২০১০ সালে ৭৪ জন এবং ২০০৯ সালে ৯৬ জন। দুই দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত এর আগের প্রতিটি বৈঠকেই ‘সীমান্ত হত্যাকাণ্ড’ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এ অবস্থায় ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় আসার কথা। তিন দিনের এই সফরকালে তিনি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীরের সাথে বৈঠক ছাড়াও দুটো চুক্তি সম্পাদন করবেন। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অতীতের বৈঠকগুলোর মতো আবার সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবি জানানো হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সীমান্তে বহু সমস্যার মধ্যে একটি হচ্ছে, বিএসএফের হাতে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা। সর্বশেষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবপর্যায়ের বৈঠকেও বিএসএফের নিরীহ-নিরস্ত্র বাংলাদেশীদের হত্যা বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া চোরাচালানের মাধ্যমে অস্ত্র-গোলাবারুদ ও মাদকদ্রব্য প্রবেশ বন্ধে বাংলাদেশ দাবি জানিয়ে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। আন্তর্জাতিক সীমানার ১৫০ গজের মধ্যে ৪৬টি পয়েন্টে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে বারবার। তাতেও ভারতের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। দীর্ঘ দিন ধরে ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার সীমান্ত চিহ্নিত হয়নি। বেশ কয়েকটি ছিটমহল বিনিময় ও অপদখলীয় ভূমি বিনিময় ইস্যু নিয়ে দুই দেশের মধ্যে এখনো সমাধান হয়নি। এ সমস্যাগুলো থাকায় সীমান্ত ব্যবস্থাপনাও সঠিকভাবে হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
বাংলাদেশবিরোধী সংগঠন স্বাধীন বঙ্গভূমি আন্দোলন, নিখিল বঙ্গ সঙ্ঘ, বাংলাদেশ উদ্বাস্তু উন্নয়ন সংসদ, সংযুক্ত উদ্বাস্তু সংগ্রাম পরিষদ, নতুন বাংলা মুভমেন্ট, ক্যাম্পেইন এগেইনেস্ট অ্যাটরোসিটিজ অন মাইনরিটি ইন বাংলাদেশ নাগরিক, হিন্দু রিপাবলিক অব বীরবঙ্গ, লিবারেশন টাইগারস অব বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশের এজেন্ডায় ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশইন বন্ধ করার বিষয়টিও স্থান পেয়েছে বারবার। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরকালে অপরাধ দমনে আইনি সহায়তা চুক্তি ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ সংঘটিত অপরাধ ও অবৈধ মাদকদ্রব্য প্রতিরোধ চুক্তি অনুস্বাক্ষর হয়।
বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে সম্পাদিত ইন্দিরা-মুজিব চুক্তিটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনী এনে বেরুবাড়ি এলাকাটি ভারতের কাছে হস্তান্তর করে। অন্য দিকে ভারতীয় পার্লামেন্টে চুক্তিটি পাস করাতে ব্যর্থ হয় সে দেশের সরকার। পর সময়ে তিনবিঘা সংক্রান্ত কলকাতা হাইকোর্টে পরিচালিত মামলাটি ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত রায় পায়। ১৯৯০ সালের ৩ জুন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, তিনবিঘা এলাকাটি বাংলাদেশকে লিজ প্রদানের ক্ষেত্রে ভারতের সংবিধান সংশোধনের কোনো প্রয়োজন নেই। এ রায় অনুযায়ী ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ তিন বিঘার ওপর দিয়ে চলাচলের স্বীকৃতি পায়।
এর আগে ১৯৫৮ সালের সেপ্টেম্বরে স্বাক্ষরিত হয় নেহরু-নুন চুক্তি। এ চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যকার সব ছিটমহল বিনিময় করার কথা। চুক্তি অনুযায়ী যখন পঞ্চগড় জেলার বোদা থানা এলাকার ১২ নম্বর দক্ষিণ বেরুবাড়ি ছিটমহল বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়, সেই সময় ওই এলাকার জনসাধারণ প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। এরপর সিদ্ধান্ত হয়, দক্ষিণ বেরুবাড়ি ভারতের কাছেই থাকবে। অন্য দিকে তিনবিঘাকে প্রতিবেশীর কাছে হস্তান্তর বা লিজ দেয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এরপর বেরুবাড়ির রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অবস্থান পূর্ব পাকিস্তান আমলেই বিতর্কিত থেকে যায়। তবে তিনবিঘা হস্তান্তরের বিষয়টি কাগজপত্রেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অপদখলীয় ভূমি একটি দীর্ঘ দিনের সমস্যা বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এ সমস্যার সূত্রপাত ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। ব্রিটিশ সরকার সরেজমিনে না গিয়েই ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত নির্ধারণ করে। ফলে সীমান্ত এলাকায় জনবসতির ঐতিহ্যগত অবস্থান, সীমান্ত অনির্ধারণ, অভিন্ন নদীর গতি পরিবর্তন, অর্পিত সম্পত্তি স্থানান্তরসহ বিভিন্ন কারণে ভারতীয় জনগণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জমি ভোগদখল করছে। একইভাবে ভারতের কিছু জমি বাংলাদেশীরা ভোগদখল করছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা-মুজিব বা ল্যান্ড বাউন্ডারি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যাতে উভয় দেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত ছিটমহল, অচিহ্নিত সীমান্ত, অপদখলীয় ভূমি স্থানান্তরের বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়া আছে।
পরবর্তীকালে ২০০২ সালে অপদখলীয় ভূমিসংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের জন্য উভয় দেশের যুগ্মসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি জয়েন্ট বাউন্ডারি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। গ্রুপের অনতিবিলম্বে অপদখলীয় জমির সমস্যা সমাধান করার কথা থাকলেও তা আর হয়নি। সর্বশেষ ২০০৬ সালে গ্রুপের তৃতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকেও অপদখলীয় ভূমি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এরই রেশ ধরে সীমান্ত চিহ্নিতকরণের সমস্যা সমাধানের জন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি অনুযায়ী দ্রুত সমাধানের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
No comments