সংগঠিত হচ্ছে জঙ্গীরা আন্ডারগ্রাউন্ডে জঙ্গীদের সঙ্গে রয়েছে ৪০ উগ্রপন্থী ইসলামী দল || এদের বিষয়ে লাটাই ঘুরাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীরা || মোটা অঙ্কের বাজেট by গাফফার খান চৌধুরী
দেশে জঙ্গী বেজসড আন্ডারগ্রাউন্ড পলিটিক্স তুঙ্গে। লাটাই ঘুরাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীরা। জঙ্গীপন্থী আন্ডারগ্রাউন্ড দলে রয়েছে ৪০ উগ্র ইসলামী দল। আন্ডারগ্রাউন্ড দল সক্রিয় করতে ওয়ান ইলেভেনের পর মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে ২ শতাধিক জঙ্গীকে জামিনে কারামুক্ত করা হয়।
এছাড়া বিচারাধীন থাকা কারাবন্দী ৩ শতাধিক ও সাজাপ্রাপ্ত দুর্ধর্র্ষ প্রকৃতির প্রায় ২শ' জঙ্গীকেও জামিনে মুক্ত করার চেষ্টা চলছে। বড় ধরনের নাশকতা চালানোর চেষ্টা চলছে। এজন্য জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের ১ হাজার ৮২ জন আফগান ফেরত মুজাহিদসহ ৫ শতাধিক ট্রেনিংপ্রাপ্ত জঙ্গী রয়েছে। নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীরকে একযোগে সারাদেশে সক্রিয় করে সরকার ও জনগণের নজর ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে গোপনে জঙ্গীদের সংগঠিত করার পাঁয়তারা চলছে। চলছে চোরাগোপ্তা হামলার প্রস্তুতি। এটি জঙ্গীপন্থী আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির নিয়ন্ত্রক শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের নয়া ফমর্ুলা।গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জঙ্গীপন্থী ও বামপন্থী দু'ধারায় চলা আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতিতে এখন চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। ৪০টি উগ্র ইসলামপন্থী সংগঠন রয়েছে জঙ্গীপন্থী দলে। আর ২৪টি ছোট দল রয়েছে বামপন্থী দলে। তবে বামপন্থীরা এখন অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। জঙ্গীপন্থী দলের লিডিং পর্যায়ে রয়েছে ছাত্র শিবিরের বড় একটি অংশ। এ অংশে রয়েছে ছাত্র শিবিরের আফগান ফেরত ১ হাজার ৮২ মুজাহিদ। হরকত-উল-জিহাদ ও জেএমবি রয়েছে শিবিরের সঙ্গে। পরের সত্মরে রয়েছে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য প্রসত্মাবিত ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির জঙ্গীরা, হিযবুত তাহরীর, ফ্রিডম পার্টি, আলস্নাহর দল, সচেতন নাগরিক সমাজ, ইসলাম ও মুসলিম, পাকিসত্মানের জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা ও খতমে নবুওয়াত আন্দোলন (নুরানী)। এদের সহযোগী হিসেবে খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিশ, ইসলামী আইন বাসত্মবায়ন পরিষদসহ বেশ কয়েকটি ইসলামী দল কাজ করছে।
জঙ্গীপন্থীদের হাতে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারম্নদ। আরও অস্ত্র ও গোলাবারম্নদ সংগ্রহ করতে জঙ্গীপন্থীরা বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বামপন্থীদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। বামপন্থী সন্ত্রাসীরা জঙ্গীপন্থীদের দল না ভিড়লে তাদের অস্ত্র অনত্মত ভাড়ায় পাওয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জঙ্গীপন্থীরা। এজন্য বামপন্থীদের সঙ্গে জঙ্গীপন্থীরা গোপন সমঝোতার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সম্প্রতি জঙ্গীপন্থীদের দল ভারি হয়েছে। সিআইডির জঙ্গী মামলা মনিটরিং সেল সূত্রে জান গেছে, দেশের অনত্মত ৫ হাজার জঙ্গীর বিরম্নদ্ধে মামলা রয়েছে। এসব মামলার আসামিদের মধ্যে বেশিরভাগই পলাতক। মামলার তুলনায় জঙ্গীরা গ্রেফতার হয়নি। দেশে যে পরিমাণ জঙ্গী তৈরি হয়েছে তার শতকরা ২ ভাগও গ্রেফতার হয়নি। পলাতক জঙ্গীরা পুরোপুরি আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া জামিনে মুক্ত জঙ্গীরা পুরোপুরি আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছে।
শিবিরের রাজনীতি অপারেশন ও পলিটিক্যাল দু'ধারায় বিভক্ত। অপারেশন ধারার কর্মীরা দলের নির্দেশমতো মারাত্মক কর্মকা-ে জড়িত থাকে। পলিটিক্যাল ধারাটি সবকিছু সমন্বয় করে থাকে। তারা মাঠে রাজনীতি করে। রাজনীতির ময়দানে থাকা নেতাকর্মীদের সাধারণত অপারেশনে জড়িত করা হয় না। এ ধারাটিই কলকাঠি নাড়ে। হত্যাকা- বা বড় ধরনের অপরাধ ঘটানোর জন্য আন্ডারগ্রাউন্ডের শিবির কর্মীদের ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় অপারেশনে সমমনা বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের জঙ্গীদেরও দায়িত্ব দেয় তারা। অপারেশন শেষে আবার তাদের আন্ডারগ্রাউন্ডে পাঠানো হয়। দীর্ঘ সময় ধরেই এ ধারা অব্যাহত আছে। এ কৌশলের কারণে বড় বড় অপরাধ করার পরও জড়িতদের শনাক্ত করতে বার বার ব্যর্থ হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের হাতে ছাত্রলীগ কর্মী খুনের পর দেশের সব শিবির কর্মী ও জঙ্গীরা এখন ঢাকামুখী। তবে জঙ্গী ও শিবির কর্মীরা পুরনো পরিচিত আসত্মানা ছেড়ে দিয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে আশ্রয় নিয়েছে মসজিদ ও মাদ্রাসায়। ধর্মের দোহাই দিয়ে শৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে নিরাপদ থাকার পুরনো কৌশলে ফিরে গেছে তারা। মসজিদ বা মাদ্রাসায় শৃ্্ঙ্খলা বাহিনী তলস্নাশি চালালে ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষকে দিকভ্রানত্ম করার চেষ্টা করা হয়।
কারাগার সূত্র জানায়, দেশের ৬৭টি কারাগারে প্রায় ৭শ' জঙ্গী বন্দী ছিল। ওয়ান ইলেভেনের পর ২ শতাধিক জঙ্গী জামিনে মুক্ত হয়েছে। বাকি ৫ শতাধিক জঙ্গীর মধ্যে ১শ' ৮২ জঙ্গী বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত। এদের মধ্যে ১শ' ১৫ জঙ্গী খুবই দুর্ধর্ষ প্রকৃতির। এদের মধ্যে ঢাকা-৮, ময়মনসিংহ-১২, গাজীপুরের কাশিমপুর (১)-১০, (২)এ-১৫, রাজবাড়ী-২৫, রংপুর-৪, যশোর-৮, কুমিলস্না-৭, চট্রগ্রাম-৬ ও বরিশাল জেলা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৫ জঙ্গী রয়েছে। বাকি দুর্ধর্ষ জঙ্গীদের গাজীপুর, গোপালগঞ্জ, বগুড়া, নাটোর ও নওগাঁ জেলা কারাগারে রাখা হয়েছে। মাত্র একজন জঙ্গী রয়েছে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে।
আদালত সূত্রগুলো জানায়, জঙ্গীদের মোটা টাকা খরচ করে জামিন করানো হয়েছে। জঙ্গীদের জামিন করতে রয়েছে একটি বিশেষ আইনজীবী প্যানেল। জামায়াতের প্রয়াত কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার কুরবান আলী দীর্ঘ দিন প্যানেলটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কুরবান আলী মারা যাওয়ার পর যুদ্ধাপরাধীদের গঠিত বিশেষ একটি ইসলামিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা বর্তমানে প্যানেলের দায়িত্ব পালন করছেন। আইনজীবী প্যানেলটি বিচারাধীন ৩ শতাধিক কারাবন্দী জঙ্গীকে জামিনে মুক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি সাজাপ্রাপ্ত দুর্ধর্র্ষ জঙ্গীদেরও জামিনে মুক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জঙ্গীদের একত্রিত করতেই আব্দুস সালামকে দিয়ে পিডিপি গঠনের চেষ্টা করা হয়েছিল। এছাড়া ফ্রিডম পার্টিকে সক্রিয় করা হয়েছিল। পিডিপি গঠনে ব্যর্থ হয়ে জঙ্গীদের সংগঠিত করতে হিযবুত তাহরীরকে ব্যবহার করা হয়। সম্প্রতি হিযবুত তাহরীরকে পরিকল্পিতভাবে একযোগে সারাদেশে সক্রিয় করার চেষ্টা চলছে। সরকার ও জনগণের নজর অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিয়ে জঙ্গীদের সংগঠিত করার পাঁয়তারা চলছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে দীর্ঘ দিন ধরেই এ ধরনের প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি জঙ্গীদের দিয়ে চলছে চোরাগোপ্তা হামলার প্রস্তুতি।
No comments