পাগলা কুকুরের পিপার স্প্রে মানুষের ওপর ব্যবহার - ক্ষোভ দমনে ঘাতক অস্ত্র প্রয়োগ বন্ধ করুন
জনগণের মধ্যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও আন্দোলন দমনে সরকার
জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মকভাবে বিপজ্জনক অস্ত্র প্রয়োগ শুরু করেছে।
এমপিওবঞ্চিত শিক্ষকদের শান্তিপূর্ণ অনশন কর্মসূচিতে এ ধরনের একটি নিপীড়ক
অস্ত্র পিপার ¯েপ্র বা মরিচের গুঁড়া ¯েপ্রর ব্যবহার উদ্বোধন করা হয়েছে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জনগণের ক্ষোভ-বিক্ষোভ দমনে নতুন নতুন
অস্ত্র প্রয়োগ শুরু করেছে। একাধিক পত্রিকার খবর অনুযায়ী, নতুন সংযোজিত
এসব নিপীড়ক অস্ত্রের মধ্যে আরো রয়েছেÑ টিয়ার গ্যাস স্প্রে, গ্যাস
গ্রেনেড, কালার স্মোক গ্যাস গ্রেনেড, সাউন্ড হ্যান্ড গ্রেনেড প্রভৃতি। এর
বাইরে বিক্ষোভ দমনে পুলিশের ব্যবহারের নতুন অস্ত্রের মধ্যে অত্যাধুনিক
মেশিনগান, স্নাইপার রাইফেল, নেইগান, ট্রাংকুলাইজারগান ও ফ্যাশ ব্যাং
সংযোজিত হচ্ছে। বিক্ষোভ দমনে ব্যবহার করা এসব সরঞ্জামের ওপর বিশ্বের
বিভিন্ন দেশে বিধিনিষেধ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পিপার গ্যাস স্প্রে করার
পর এর মরিচের গুঁড়ার মতো উপাদান শরীরের যে অংশে লাগবে, সেখানে জ্বালাপোড়া
করবে। এটি চোখে পড়লে কর্নিয়া তিগ্রস্ত ও ঝাপসা দৃষ্টি হতে পারে। একই
সাথে ত্বকেরও তি হবে। সাধারণত পাগলা কুকুর ও ভয়ঙ্কর জীবজন্তুকে পরাস্ত
করতে বিভিন্ন দেশে পিপার স্প্রে ব্যবহার করা হয়। এ গ্যাসে শুধু সাময়িক
যন্ত্রণাই নয়, চিরস্থায়ী শ্বাসকষ্ট, স্ট্রোকের ঝুঁকি, অন্ধত্ব ও
স্থায়ীভাবে ত্বক আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে
অতীতে দাঙ্গা দমনে পিপার স্প্রে ব্যবহার করা হলেও স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ
তিকর বিধায় তা নিষিদ্ধ করা হয়। আমেরিকার দ্য লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের এক
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জনতার ওপর পুলিশ পিপার স্প্রে
প্রয়োগ করায় কমপে ৬১ জনের মৃত্যু ঘটে। দি আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস
ইউনিয়নের (এসিএলইউ) এক তথ্যপ্রমাণে বলা হয়, ১৯৯৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায়
পুলিশ হেফাজতে পিপার ¯েপ্রতে আক্রান্ত ২৭ জনের মৃত্যু হয়।অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অত্যন্ত উল্লসিত কণ্ঠে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পিপার ¯েপ্র ব্যবহারে মৃত্যুর কোনো আশঙ্কা নেই। তবে এটি ব্যবহারে কেউ অন্ধ হবে কি না সেটি তিনি নিশ্চিত নন বলে জানান। নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের সাথে সাথে দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিবর্তে অথবা সহায়ক হিসেবে বিরোধী জোটের অংশীদার দল জামায়াত ও শিবিরের লোকদের গ্রেফতার ও দমন করার জন্য নির্দেশনা দেন ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডারদের। দেশের প্রচলিত সংবিধান ও আইনবিরোধী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ নির্দেশনার সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই তিনি ক্ষোভ-বিক্ষোভ দমনের অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার শুরু করেছেন। এর মধ্যে মরিচের গুঁড়া ¯েপ্রর মতো মারাত্মক এক অস্ত্র ব্যবহার শুরু করলেন মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে পরিচিত শিক্ষকদের ওপর। শান্তিপূর্ণভাবে অনশনরত শিক্ষকদের ওপর মরিচের গুঁড়া ¯েপ্র করার কারণে ইতোমধ্যে একজন শিক্ষকের মৃত্যু এবং একাধিক শিক্ষকের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়ার খবর বেরিয়েছে। এসব মানুষ গড়ার কারিগর আর কোনো দিন হয়তো দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন না। মানুষ গড়তে তারা ছাত্রদের কাসেও হয়তো আর ফিরতে পারবেন না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর যুক্তি হলো, তাদের তো আর মৃত্যু ঘটছে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো একজন শিক্ষিত ডক্টরের মানবতাবিধ্বংসী এ কথার জবাব কী-ই বা হতে পারে! পিপার ¯েপ্র ছাড়াও আরো উদ্বেগের বিষয় হলো আন্দোলনরতদের ওপর ব্যবহারের জন্য পুলিশকে স্নাইপারগানের মতো নীরব ঘাতক অস্ত্র তুলে দেয়ার খবর। স্নাইপারগান দিয়ে অনেক দূর থেকে নীরবে বক্ষভেদ করা যায়। বুঝে ওঠার আগে হতভাগাকে ঢলে পড়তে হয় মৃত্যুর কোলে।
আমরা মনে করি, রাজনৈতিক সঙ্ঘাত উসকে দিয়ে, নিপীড়ন ও মৃত্যু ঘটিয়ে, আর পোড়ামাটি নীতির মাধ্যমে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা কোনো দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। যেসব শাসক ক্ষমতায় থাকার জন্য এ ধরনের উপায় অবলম্বন করেছে, তারা নিজেদের লক্ষ্যে শেষ পর্যন্ত পৌঁছতে তো পারেইনি বরং এসব পদক্ষেপের শিকারে পরিণত হতে হয়েছে তাদের নিজেদেরই। সময় থাকতেই গণতন্ত্র ও সহিষ্ণুতার পথে ফিরে আসা সবার জন্যই মঙ্গলজনক হবে।
No comments