বেনাপোলে গড়ে ওঠা শুল্ক ফাঁকিবাজ চক্র বেপরোয়া- সরিষায় ভূত! আরও এক চালান আটক
বেনাপোল কাস্টমস্ কমিশনারের সহযোগিতায় গড়েওঠা একটি চিহ্নিত শক্তিশালী শুল্ক ফাঁকিবাজ চক্র এখন বেপরোয়া । চক্রটি একের পর এক রাজস্ব ফাঁকির মতো ভয়ানক কারবার চালিয়ে গেলেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না তাদের বিরম্নদ্ধে।
যে কারণে বন্ধ হচ্ছে না শুল্ক ফাঁকির কারবার। বৃহস্পতিবার রাতে ফের বেনাপোল বন্দরে শুল্ক ফাঁকির একটি চালান আটক করা হয়েছে। এ চালানে রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ কি, তা এই রিপোর্ট লেখা পর্যনত্ম জানা না গেলেও আটক মালামালের মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এবারের ঘটনার সঙ্গে কাস্টসমের এক সাবেক বিতর্কিত কর্মকর্তার সহোদর সরাসরি জড়িত। এই ব্যক্তির সঙ্গে আবার কাস্টমসের এক সুপারিনটেনডেন্ট ও এক ইন্সপেক্টর জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। শুল্ক ফাঁকির ঘটনার সঙ্গে কাস্টমস কর্মকর্তারা জড়িত থাকার কারণে বেনাপোল বন্দরে তোলপাড় চলছে।জানা গেছে, বেনাপোল কাস্টম হাউসের বর্তমান কমিশনারের নাম ড. আব্দুল মান্নান শিকদার। তিনি কয়েক মাস আগে ঢাকা থেকে বেনাপোল বন্দরে বদলি হয়ে এসেছেন। তার কর্মস্থলে আগে ছিলেন কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল কাফি। তার আমলেও শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ঘটেছিল। বর্তমান কমিশনার এখানে আসার পর চিহ্নিত একটি শুল্ক ফাঁকিবাজ চক্র তার সঙ্গে অাঁতাত করে শুল্ক ফাঁকির কারবার শুরম্ন করেছে। এই ব্যক্তির সঙ্গে চক্রটির মোটা অঙ্কের অর্থের ভাগাভাগি রয়েছে। যারা শুল্ক ফাঁকি দেয় তারা খুবই শক্তিশালী। এদের জাল এতই গভীরে বিসত্মৃত যে এদের হদিস পাওয়া বড়ই কঠিন। তাছাড়া চক্রটি সব সময়ই কোন না কোন সরকারী দলের ছত্রছায়ায় লালিত হয়। যে কারেণ এরা নিরাপদে-নির্বিঘ্নে শুল্ক ফাঁকির কারবার চালিয়ে যায়। এসব করে তারা রাতারাতি বনে যায় কোটি কোটি টাকার মালিক। আর কাস্টমসে অবৈধ অর্থের লোভে চাকরিতে আসা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হয়ে যায় অঢেল বিত্তবৈভব আর কালো টাকার মালিক। আর মাঝে পড়ে রাজস্ব হারায় সরকার।
বৃহস্পতিবার রাত অনুমানিক সাড়ে ৯ টার দিকে সরকারের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার স্থানীয় প্রতিনিধিদের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বেনাপোল কাস্টম হাউসের সামনে থেকে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের একটি (ঢাকা মেঃ উ-১৪-০৮৫১) কভার্ডভ্যান আটক করা হয়। এই ভ্যানে ৬০০ ড্রাম টেক্সটাইলে ব্যবহৃত রি-এ্যাকটিভ ডাইস পাওয়া যায়, যা বেনাপোল বন্দরে ৩৪ নং শেড থেকে লোড করা হয়েছিল। চালানটির কাস্টমস বি/ই নং- ৬০২৪। চালানে ১৬০ ড্রাম ঘোষণার অতিরিক্ত মাল পাওয়া যায়। পণ্যগুলো আটক করা হয়েছে। আটক মালের মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা। রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ কি, তা নিরূপণ করা যায়নি শুক্রবার ছুটির কারণে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, বিপুল রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা ঘটেছে। কাস্টমস সূত্র মতে, আটক মালের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স রিয়াইন কর্পোরেশন। ঠিকানা ৭৭, মতিঝিল, বা/এ, ঢাকা। আর বেনাপোল বন্দরে চালানটি খালাসের দায়িত্বে ছিল মেসার্স বনো ট্রেডিং কপের্ারেশন। একটি সূত্র জানায়, এই প্রতিষ্ঠানের মালিক কাস্টম হাউসের সাবেক এক বিতর্কিত সুপারিনটেনডেন্টের সহোদর। এ ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে এ রকম শুল্ক ফাঁকির কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, এর আগেও তারা এ ধরনের পণ্যের চালান বন্দর থেকে খালাস করে নিয়ে গেছে। যে সব চালানে ফাঁকি দেয়া হয়েছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। এগুলো তদনত্ম করার দাবি উঠেছে। জানা গেছে, এদের সঙ্গে কাস্টমসের এক সুপারিনটেনডেন্ট ও এক ইন্সপেক্টর দীর্ঘদিন ধরে জড়িত রয়েছে, যাদের কারণে শুল্ক ফাঁকি বন্ধ হচ্ছে না এবং দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এদিকে, চলতি মাসের ৭ তারিখে দৈনিক জনকণ্ঠে বেনাপোলে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি শিরোনামে একটি তথ্যবহুল রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর কাস্টমস, বন্দর ও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের টনক নড়ছে। যার প্রেেিত বৃহস্পতিবার গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে এই চালানটি আটক করা হয়েছে। তবে যে পরিমাণ শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ঘটছে তা আটক বা ধরা পড়ছে না বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। এ ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টম হাউসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদিকদের কাছে বলেছেন, বৃহস্পতিবার একটি পণ্য চালান আটক করা হয়েছে এবং মামলার প্রস্তুতি চলছে।
No comments