মুনাফা বৃদ্ধি বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করবে না by ড. এম শামসুল আলম
বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ প্লান্ট গণস্বার্থবিরোধী, তার একটি পরিমাণগত বিশ্লেষণ এ লেখায় উপস্থাপন করব_এমন কথা গত ২৬ ডিসেম্বরের লেখায় উল্লেখ ছিল। তবে তার আগে এ ব্যাপারে বলা দরকার, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইনে জ্বালানি কিংবা বিদ্যুতের মূল্যহার নির্ধারণের একক এখতিয়ার বিইআরসির।
এ আইনে গণশুনানি ব্যতীত এ মূল্যহার নির্ধারণের কোনো আইনি সুযোগ বিইআরসির নেই। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ভারী জ্বালানি তেল ও সিএনজির মূল্যহার নির্ধারণে গণশুনানি ছাড়াই সরকারের সিদ্ধান্ত এবং পরবর্তী সময়ে প্রস্তাবে যথাক্রমে সম্মতি ও অনুমোদন দিয়ে বিইআরসি নিজেই নিজের আইন লঙ্ঘন করে তার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সত্তাকে বিতর্কিত করেছে। সে ঘটনা আজকের প্রেক্ষাপটে শুধু স্মরণই নয়, বিবেচনায় এনে বলা দরকার, বাণিজ্যিক প্লান্টে সরবরাহকৃত জ্বালানি এবং উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্যহার নির্ধারণের একক এখতিয়ার সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী বিইআরসির। বিইআরসি এই ক্ষমতাবলে যে বাণিজ্যিক প্লান্টের বিদ্যুৎ কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দেবে, সে প্লান্ট কারিগরিভাবে উপযুক্ত কি না, বিইআরসিকে নিশ্চিত হতে হবে। অতঃপর এ প্লান্টে সরবরাহকৃত জ্বালানির এবং উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্যহার গণশুনানির ভিত্তিতে কেসওয়াইজ নির্ধারিত হতে হবে। ইন্ডিকেটিভ বেঞ্চমার্ক মূল্যহার নির্ধারণ করে তা ঢালাওভাবে সব প্লান্টের জন্য ব্যবহার করা হলে ভোক্তাদের প্রতি অবিচার হবে। এমন অভিমত ব্যক্ত করে ভোক্তারা ইন্ডিকেটিভ বেঞ্চমার্ক মূল্যহার নির্ধারণের প্রস্তাবে আনুষ্ঠানিক আপত্তি দেয়।
২০১১ সালের ১ জানুয়ারি নতুন বছর আমার জন্য সুখী ও সফল হোক কামনা করে বহু শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে মোবাইলে বার্তা পাঠিয়েছেন। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে এ দিন দেশবাসীর জন্য বার্তা ছিল, '...গ্যাসের অভাবে জ্বালানি সংকট তীব্রতর হচ্ছে_বিদ্যুৎ, সার, শিল্প উৎপাদন দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে, চাপ কম থাকায় অনেক এলাকায় বাসাবাড়ির চুলা জ্বলে না, নতুন সংযোগ দেওয়া বন্ধ। এলপিজি দুষ্প্রাপ্য ও দুর্মূল্য, সিএনজি স্টেশনে রেশনিং চলছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি...।' এ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি দৈনদিন জীবনযাত্রাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। অথচ কার্যকর কোনো বিকল্প নেই। এ অবস্থায় নতুন বছর আমার বা দেশবাসীর জন্য সফল ও সুখের হবে কিভাবে? এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেছেন, 'দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত অবহেলা, অদক্ষতা ও অপরিণামদর্শিতা জ্বালানি খাতকে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে এসেছে। এলপিজির ব্যবহার বাড়ানো এবং তা সহজলভ্য করার ব্যাপারে সরকার আলোচনা করছে।'
গত ২০ নভেম্বর এ পত্রিকায় প্রকাশিত 'পেট্রোবাংলার ভূমিকা এবং কিছু প্রশ্ন' এ শিরোনামের লেখায় গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির কৌশলগত পরিকল্পনা এবং ভোক্তার অর্থে গঠিত গ্যাস উন্নয়ন তহবিল ব্যবহারের ব্যাপারে যেসব তথ্য প্রকাশ পেয়েছে, তাতে বোঝা যায়, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের বক্তব্য কতটা অন্তঃসারশূন্য ও বিভ্রান্তিকর। ফলে জ্বালানি খাতের বর্তমান বিপর্যয় মোকাবিলার ব্যাপারে নতুন বছর কোনো আশার আলো নিয়ে এসেছে বলে মনে হয় না। তবে আগ্রহী ব্যক্তি খাত বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ করার আগে ঝুঁকিমুক্ত পর্যাপ্ত মুনাফা অর্জনের নিশ্চিয়তা যেন পেতে পারে, সে জন্য ১৫ অক্টোবর ২০০৯ তারিখে জ্বালানি মন্ত্রণালয় বিইআরসিকে ইন্ডিকেটিভ বেঞ্চমার্ক মূল্যহার নির্ধারণের অনুরোধ জানায়। ফলে গত ২১ নভেম্বর বিইআরসি এক আদেশে ওই মূল্য নির্ধারণ করেছে। তাতে নতুন বছরে জ্বালানির বিপর্যয় মোকাবিলা করা সম্ভব হবে কি না তা নিশ্চিত না হলেও বিদ্যুৎ ব্যবসায় ব্যক্তি খাতের যে পর্যাপ্ত মুনাফা নিশ্চিত হয়েছে, বিইআরসির ওই আদেশে তা সহজেই বোঝা যায়। কারণ গ্যাসের অভাবে বর্তমানে সরকারি খাতে ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হলেও প্রয়োজনে এ খাতের আরো বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রেখে বাণিজ্যিক উৎপাদনে ব্যক্তি খাতে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। ফলে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি না হলেও ব্যক্তি খাতে বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি হবে। সেই সঙ্গে ব্যক্তির মুনাফাও বৃদ্ধি পাবে। ভোগান্তিতে থাকা মানুষ বাড়তি বিদ্যুৎ না পেলেও মুনাফার অর্থ জোগান দিতে বাড়তি দামে বিদ্যুৎ কিনবে। ফলে বাড়তি বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য নয়, অত্যধিক মুনাফার জন্য মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় বেশি বেশি বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে। তাতে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় মানুষ আর্থিক কষ্টে পড়বে। যে বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধিতে দারিদ্র্য হ্রাস হবে, সেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধি না পাওয়ায় ঘাটতি পূরণ হবে না। অথচ তার মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি হবে। এমন পরিস্থিতি দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক নয়।
বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরকার যেন ক্রয় করতে পারে সে জন্য বিইআরসি ইন্ডিকেটিভ মূল্যহার নির্ধারণের আদেশে বাণিজ্যিক প্লান্টে ব্যবহৃত ফুয়েল (জ্বালানি) ও উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্য নিম্নরূপভাবে নির্ধারণ করেছে : ১. ফার্নেস অয়েলভিক্তিক প্লান্টের বিদ্যুতের মূল্যহার ৭.৭৫ টাকা। তন্মধ্যে ফুয়েল খরচ ৫.৬৩ টাকা এবং নন-ফুয়েল খরচ ২.১২ টাকা; ২. দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক (গ্যাস/ফার্নেস অয়েল) প্লান্টের বিদ্যুতের মূল্যহার (ক) গ্যাস প্লান্টের ক্ষেত্রে ২.৭৭ টাকা। তন্মধ্যে ফুয়েল খরচ ০.৬৬ টাকা এবং নন-ফুয়েল খরচ ২.১১ টাকা; (খ) ফার্নেস অয়েল প্লান্টের ক্ষেত্রে ৭.৮৩ টাকা। তন্মধ্যে ফুয়েল খরচ ৫.৬৩ টাকা এবং নন-ফুয়েল খরচ ২.২০ টাকা; ৩. কয়লা প্লান্টের বিদ্যুতের মূল্যহার (ক) খনিসংলগ্ন (দেশীয় কয়লা) প্লান্টের ক্ষেত্রে ৪.০৯ টাকা। তন্মধ্যে ফুয়েল খরচ ২.১৩ টাকা এবং নন-ফুয়েল খরচ ১.৯৬ টাকা; (খ) উপকূলীয় অঞ্চলের (আমদানীকৃত কয়লা) প্লান্টের ক্ষেত্রে ৪.৫১ টাকা। তন্মধ্যে ফুয়েল খরচ ২.৫৪ টাকা এবং নন-ফুয়েল খরচ ১.৯৭ টাকা; (গ) দেশের অভ্যন্তরীণ (আমদানীকৃত কয়লা) প্লান্টের ক্ষেত্রে ৪.৯৭ টাকা। তন্মধ্যে ফুয়েল খরচ ২.৯৯ টাকা এবং নন-ফুয়েল খরচ ১.৯৮ টাকা। যদিও আলোচ্য নীতিমালায় বিনিয়োগকারী নিজেই তার উৎপাদিত বাণিজ্যিক বিদ্যুতের ক্রেতা খুঁজে নেবে। এখানে সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। যদি সরকার কোনো বাণিজ্যিক প্লান্টের বিদ্যুৎ কেনায় আগ্রহী হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট প্লান্ট কারিগরিভাবে উপযুক্ত কি না, বিইআরসিকে নিশ্চিত হতে হবে। তাই ওই ইন্ডিকেটিভ মূল্যহার নির্ধারণে বিইআরসি বাণিজ্যিক প্লান্টের পারফরম্যান্স নিম্নে বর্ণিত মানদণ্ডে মূল্যায়ন করেছে : সব প্লান্টের ক্ষেত্রে প্লান্ট ফ্যাক্টর ধরা হয়েছে ৮০ শতাংশ এবং রিটার্ন অন ইকুইটি ১৫ শতাংশ । ফার্নেস অয়েল ও দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক উভয় প্লান্টের জন্য ধরা হয়েছে হিটরেট (কিজু/কিওআ) আট হাজার ২৪৪, ডেট ইকুইটি অনুপাত ৭০:৩০ এবং সুদের হার ৯.৫০ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে কয়লাভিত্তিক প্লান্টের জন্য ধরা হয়েছে হিটরেট আট হাজার ৯৮৭, ডেট ইকুইটি অনুপাত ৭৫:২৫ এবং সুদের হার ৮ শতাংশ।
তুলনামূলক পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশে উৎপাদনে রয়েছে বিশ্বমানের এমন আইপিপির গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল প্লান্টের প্রাপ্ত তথ্যাদিতে দেখা যায়, ২০০৯ সালে গড় হিটরেট ছিল ৭০৫৩ এবং ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তা ছিল ৭০৯৬। কিন্তু বিইআরসি বিবেচনায় নিয়েছে ৮২৪৪। হিটরেট বেশি হলে জ্বালানি খরচ বাড়ে। প্লান্ট যত উন্নতমানের হয়, হিটরেট তত কম হয়। কারিগরি বিবেচনায় বিইআরসি কর্তৃক গৃহীত হিটরেট বাণিজ্যিক প্লান্ট বিশ্বমানের হবে এমন নিশ্চিয়তা দেয় না। এত বেশি হিটরেট সংগতিপূর্ণ ও যৌক্তিক বলা চলে না। তা ছাড়া আলোচ্য আইপিপি নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে স্থাপিত। তখনকার তুলনায় বিশ্ববাজারে সুদের হার এখন অনেক কম। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, আলোচ্য আইপিপির ক্ষেত্রে উৎসভেদে সুদের হার ৭.৭০, ৮.৯৫ ও ১১ শতাংশ এবং রেট অব রিটার্ন ১০ শতাংশ। কিন্তু বিইআরসির বিবেচনায় এসেছে সুদের হার ৯.৫০ শতাংশ এবং রেট অব রিটান ১৫ শতাংশ। এ বিষয়টিও যৌক্তিক বলা যায় না।
বাংলাদেশে কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন অভিজ্ঞতা খুবই অপ্রতুল। তাই প্লান্ট পারফরম্যান্স মূল্যায়নে ভারতীয় মানদণ্ড বিবেচনা করা যায়। ভারতীয় মানদণ্ডে দেখা যায়, কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ছোট আকারের প্লান্ট অপেক্ষা বড় আকারের প্লান্টে হিটরেট কম। প্লান্টের উৎপাদনক্ষমতা ৮০০-২০০ মেগাওয়াট হলে হিটরেট হয় যথাক্রমে ৯৭২০-১০৪৫০। বিইআরসির বিবেচনায় তা ৮৯৮৭। এ মানদণ্ড মতে অধিক উৎপাদনক্ষমতার প্লান্ট বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, যা যৌক্তিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হয়।
সবচেয়ে বড় সামঞ্জস্যহীনতা লক্ষ করা যায় বিদ্যুতের ইন্ডিকেটিভ মূল্য নির্ধারণে। এ ক্ষেত্রে উৎপাদনে ব্যবহৃত আমদানীকৃত জ্বালানির মূল্যহার নিয়ে কথা চলে না। তবে অভ্যন্তরীণ জ্বালানি অর্থাৎ গ্যাস ও কয়লার মূল্যহার ব্যক্তিমালিকানাধীন বাণিজ্যিক প্লান্টের জন্য কত হবে, তা বিধিবদ্ধভাবে বিইআরসিকে নির্ধারণ করতে হবে। সে জন্য কারিগরি মানদণ্ড ও আর্থিক সূচকসমূহ স্ট্যান্ডার্ডাইজড হতে হবে। ভোক্তাদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময় বিইআরসির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তাগাদা দেওয়া হয়েছে গ্যাসের কমার্শিয়াল ও কস্ট প্রাইস নির্ধারণের জন্য। সরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে মূল্যে গ্যাস দেওয়া হয়, বাণিজ্যিক প্লান্টে ব্যবহৃত প্রতি একক গ্যাসেরও সেই একই মূল্য অর্থাৎ ৭৯.৮২ টাকা ধরা হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রতি একক গ্যাসের সরবরাহ ব্যয় গড়ে ১০৯ টাকা। গ্যাসস্বল্পতার অজুহাতে সরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রেখে ব্যক্তির মুনাফা অর্জনে জনগণ ভর্তুকিতে কেন বাণিজ্যিক প্লান্টে গ্যাস দেবে? এ প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি উপদেষ্টা কী বলবেন?
বিইআরসির আদেশে গ্যাসভিত্তিক বাণিজ্যিক প্লান্টের বিদ্যুতের ইন্ডিকেটিভ মূল্যহার ২.৭৭ টাকা। তাতে ফুয়েল খরচ ০.৬৬ টাকা। নন-ফুয়েল খরচ ২.১১ টাকা। এ খরচের যৌক্তিক কারিগরি ভিত্তি আছে বলে মনে হয় না। আলোচ্য আইপিপির ক্ষেত্রে প্রতি একক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ০.৫৬ থেকে ০.৬২ টাকা। নন-ফুয়েল খরচ ০.৪১ থেকে ০.৪৯ টাকা। অতঃপর মোট উৎপাদন ব্যয় ০.৯৭ থেকে ১.১১ টাকা। গত অক্টোবরের হিসাবে সে বিদ্যুৎ পিডিবি ক্রয় করে গড়ে ১.৩১ টাকা মূল্যহারে। অথচ বিইআরসির নির্ধারিত ইন্ডিকেটিভ মূল্যে তা ২.৭৭ টাকা।
নন-ফুয়েল খরচ নির্ধারণে যেসব খরচ হিসাবে আনা হয়েছে, তা স্বচ্ছ নয়। প্রকৃত খরচের তুলনায় অনেক বেশি। বিইআরসির ইন্ডিকেটিভ মূল্য নির্ধারণে সে খরচ ধরা হয়েছে ২.১১ টাকা। আইপিপির ক্ষেত্রে এ খরচ অনধিক ০.৪৯ টাকা। এ ধরনের অসামঞ্জস্যতা কয়লা ও তেলভিত্তিক প্লান্টের ক্ষেত্রে একইভাবে প্রযোজ্য। আশা করি, এতক্ষণে পাঠকরা অনুধাবন করেছেন, বাণিজ্যিক প্লান্টে বিনিয়োগের আগেই বিনিয়োগকারীর জন্য ঝুঁকিমুক্ত পর্যাপ্ত মুনাফা লাভের সুযোগ কিভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে।
সার্বিক পর্যালোচনায় বোঝা যায়, বিদ্যমান গ্যাস সংকট এবং তেল-বিদ্যুতের অত্যধিক উৎপাদন ব্যয়_এই দুই কারণে ওই দুই জ্বালানিভিত্তিক বাণিজ্যিক প্লান্টের বিদ্যুৎ সরকারি খাতে ক্রয় করা যৌক্তিক ও জনস্বার্থসম্মত নয়। তবে নিজ দায়িত্বে বিনিয়োগকারী দীর্ঘমেয়াদি কয়লা আমদানি নিশ্চিত করে উপকূলীয় অঞ্চলে বাণিজ্যিক প্লান্ট যদি নির্মাণ করে, তাহলে কারিগরি উপযুক্ততা নিশ্চিত করা সাপেক্ষে সে প্লান্টের বিদ্যুৎ সরকার ক্রয় করতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে প্রতি একক বিদ্যুতের জন্য নন-ফুয়েল খরচ কোনোভাবেই এক টাকার অধিক হওয়া যৌক্তিক নয়। কিন্তু জ্বালানি উপদেষ্টা স্বপদে বহাল থাকা অবস্থায় এমন অবস্থা বাস্তবে হতে পারে, সে সৌভাগ্য কি দেশবাসীর হবে?
লেখক : শিক্ষাবিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ
২০১১ সালের ১ জানুয়ারি নতুন বছর আমার জন্য সুখী ও সফল হোক কামনা করে বহু শুভাকাঙ্ক্ষী আমাকে মোবাইলে বার্তা পাঠিয়েছেন। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে এ দিন দেশবাসীর জন্য বার্তা ছিল, '...গ্যাসের অভাবে জ্বালানি সংকট তীব্রতর হচ্ছে_বিদ্যুৎ, সার, শিল্প উৎপাদন দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে, চাপ কম থাকায় অনেক এলাকায় বাসাবাড়ির চুলা জ্বলে না, নতুন সংযোগ দেওয়া বন্ধ। এলপিজি দুষ্প্রাপ্য ও দুর্মূল্য, সিএনজি স্টেশনে রেশনিং চলছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি...।' এ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি দৈনদিন জীবনযাত্রাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। অথচ কার্যকর কোনো বিকল্প নেই। এ অবস্থায় নতুন বছর আমার বা দেশবাসীর জন্য সফল ও সুখের হবে কিভাবে? এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেছেন, 'দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত অবহেলা, অদক্ষতা ও অপরিণামদর্শিতা জ্বালানি খাতকে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে এসেছে। এলপিজির ব্যবহার বাড়ানো এবং তা সহজলভ্য করার ব্যাপারে সরকার আলোচনা করছে।'
গত ২০ নভেম্বর এ পত্রিকায় প্রকাশিত 'পেট্রোবাংলার ভূমিকা এবং কিছু প্রশ্ন' এ শিরোনামের লেখায় গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির কৌশলগত পরিকল্পনা এবং ভোক্তার অর্থে গঠিত গ্যাস উন্নয়ন তহবিল ব্যবহারের ব্যাপারে যেসব তথ্য প্রকাশ পেয়েছে, তাতে বোঝা যায়, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের বক্তব্য কতটা অন্তঃসারশূন্য ও বিভ্রান্তিকর। ফলে জ্বালানি খাতের বর্তমান বিপর্যয় মোকাবিলার ব্যাপারে নতুন বছর কোনো আশার আলো নিয়ে এসেছে বলে মনে হয় না। তবে আগ্রহী ব্যক্তি খাত বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ করার আগে ঝুঁকিমুক্ত পর্যাপ্ত মুনাফা অর্জনের নিশ্চিয়তা যেন পেতে পারে, সে জন্য ১৫ অক্টোবর ২০০৯ তারিখে জ্বালানি মন্ত্রণালয় বিইআরসিকে ইন্ডিকেটিভ বেঞ্চমার্ক মূল্যহার নির্ধারণের অনুরোধ জানায়। ফলে গত ২১ নভেম্বর বিইআরসি এক আদেশে ওই মূল্য নির্ধারণ করেছে। তাতে নতুন বছরে জ্বালানির বিপর্যয় মোকাবিলা করা সম্ভব হবে কি না তা নিশ্চিত না হলেও বিদ্যুৎ ব্যবসায় ব্যক্তি খাতের যে পর্যাপ্ত মুনাফা নিশ্চিত হয়েছে, বিইআরসির ওই আদেশে তা সহজেই বোঝা যায়। কারণ গ্যাসের অভাবে বর্তমানে সরকারি খাতে ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হলেও প্রয়োজনে এ খাতের আরো বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রেখে বাণিজ্যিক উৎপাদনে ব্যক্তি খাতে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। ফলে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি না হলেও ব্যক্তি খাতে বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি হবে। সেই সঙ্গে ব্যক্তির মুনাফাও বৃদ্ধি পাবে। ভোগান্তিতে থাকা মানুষ বাড়তি বিদ্যুৎ না পেলেও মুনাফার অর্থ জোগান দিতে বাড়তি দামে বিদ্যুৎ কিনবে। ফলে বাড়তি বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য নয়, অত্যধিক মুনাফার জন্য মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় বেশি বেশি বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে। তাতে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় মানুষ আর্থিক কষ্টে পড়বে। যে বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধিতে দারিদ্র্য হ্রাস হবে, সেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধি না পাওয়ায় ঘাটতি পূরণ হবে না। অথচ তার মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি হবে। এমন পরিস্থিতি দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক নয়।
বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরকার যেন ক্রয় করতে পারে সে জন্য বিইআরসি ইন্ডিকেটিভ মূল্যহার নির্ধারণের আদেশে বাণিজ্যিক প্লান্টে ব্যবহৃত ফুয়েল (জ্বালানি) ও উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্য নিম্নরূপভাবে নির্ধারণ করেছে : ১. ফার্নেস অয়েলভিক্তিক প্লান্টের বিদ্যুতের মূল্যহার ৭.৭৫ টাকা। তন্মধ্যে ফুয়েল খরচ ৫.৬৩ টাকা এবং নন-ফুয়েল খরচ ২.১২ টাকা; ২. দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক (গ্যাস/ফার্নেস অয়েল) প্লান্টের বিদ্যুতের মূল্যহার (ক) গ্যাস প্লান্টের ক্ষেত্রে ২.৭৭ টাকা। তন্মধ্যে ফুয়েল খরচ ০.৬৬ টাকা এবং নন-ফুয়েল খরচ ২.১১ টাকা; (খ) ফার্নেস অয়েল প্লান্টের ক্ষেত্রে ৭.৮৩ টাকা। তন্মধ্যে ফুয়েল খরচ ৫.৬৩ টাকা এবং নন-ফুয়েল খরচ ২.২০ টাকা; ৩. কয়লা প্লান্টের বিদ্যুতের মূল্যহার (ক) খনিসংলগ্ন (দেশীয় কয়লা) প্লান্টের ক্ষেত্রে ৪.০৯ টাকা। তন্মধ্যে ফুয়েল খরচ ২.১৩ টাকা এবং নন-ফুয়েল খরচ ১.৯৬ টাকা; (খ) উপকূলীয় অঞ্চলের (আমদানীকৃত কয়লা) প্লান্টের ক্ষেত্রে ৪.৫১ টাকা। তন্মধ্যে ফুয়েল খরচ ২.৫৪ টাকা এবং নন-ফুয়েল খরচ ১.৯৭ টাকা; (গ) দেশের অভ্যন্তরীণ (আমদানীকৃত কয়লা) প্লান্টের ক্ষেত্রে ৪.৯৭ টাকা। তন্মধ্যে ফুয়েল খরচ ২.৯৯ টাকা এবং নন-ফুয়েল খরচ ১.৯৮ টাকা। যদিও আলোচ্য নীতিমালায় বিনিয়োগকারী নিজেই তার উৎপাদিত বাণিজ্যিক বিদ্যুতের ক্রেতা খুঁজে নেবে। এখানে সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। যদি সরকার কোনো বাণিজ্যিক প্লান্টের বিদ্যুৎ কেনায় আগ্রহী হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট প্লান্ট কারিগরিভাবে উপযুক্ত কি না, বিইআরসিকে নিশ্চিত হতে হবে। তাই ওই ইন্ডিকেটিভ মূল্যহার নির্ধারণে বিইআরসি বাণিজ্যিক প্লান্টের পারফরম্যান্স নিম্নে বর্ণিত মানদণ্ডে মূল্যায়ন করেছে : সব প্লান্টের ক্ষেত্রে প্লান্ট ফ্যাক্টর ধরা হয়েছে ৮০ শতাংশ এবং রিটার্ন অন ইকুইটি ১৫ শতাংশ । ফার্নেস অয়েল ও দ্বৈত জ্বালানিভিত্তিক উভয় প্লান্টের জন্য ধরা হয়েছে হিটরেট (কিজু/কিওআ) আট হাজার ২৪৪, ডেট ইকুইটি অনুপাত ৭০:৩০ এবং সুদের হার ৯.৫০ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে কয়লাভিত্তিক প্লান্টের জন্য ধরা হয়েছে হিটরেট আট হাজার ৯৮৭, ডেট ইকুইটি অনুপাত ৭৫:২৫ এবং সুদের হার ৮ শতাংশ।
তুলনামূলক পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশে উৎপাদনে রয়েছে বিশ্বমানের এমন আইপিপির গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল প্লান্টের প্রাপ্ত তথ্যাদিতে দেখা যায়, ২০০৯ সালে গড় হিটরেট ছিল ৭০৫৩ এবং ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তা ছিল ৭০৯৬। কিন্তু বিইআরসি বিবেচনায় নিয়েছে ৮২৪৪। হিটরেট বেশি হলে জ্বালানি খরচ বাড়ে। প্লান্ট যত উন্নতমানের হয়, হিটরেট তত কম হয়। কারিগরি বিবেচনায় বিইআরসি কর্তৃক গৃহীত হিটরেট বাণিজ্যিক প্লান্ট বিশ্বমানের হবে এমন নিশ্চিয়তা দেয় না। এত বেশি হিটরেট সংগতিপূর্ণ ও যৌক্তিক বলা চলে না। তা ছাড়া আলোচ্য আইপিপি নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে স্থাপিত। তখনকার তুলনায় বিশ্ববাজারে সুদের হার এখন অনেক কম। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, আলোচ্য আইপিপির ক্ষেত্রে উৎসভেদে সুদের হার ৭.৭০, ৮.৯৫ ও ১১ শতাংশ এবং রেট অব রিটার্ন ১০ শতাংশ। কিন্তু বিইআরসির বিবেচনায় এসেছে সুদের হার ৯.৫০ শতাংশ এবং রেট অব রিটান ১৫ শতাংশ। এ বিষয়টিও যৌক্তিক বলা যায় না।
বাংলাদেশে কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন অভিজ্ঞতা খুবই অপ্রতুল। তাই প্লান্ট পারফরম্যান্স মূল্যায়নে ভারতীয় মানদণ্ড বিবেচনা করা যায়। ভারতীয় মানদণ্ডে দেখা যায়, কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ছোট আকারের প্লান্ট অপেক্ষা বড় আকারের প্লান্টে হিটরেট কম। প্লান্টের উৎপাদনক্ষমতা ৮০০-২০০ মেগাওয়াট হলে হিটরেট হয় যথাক্রমে ৯৭২০-১০৪৫০। বিইআরসির বিবেচনায় তা ৮৯৮৭। এ মানদণ্ড মতে অধিক উৎপাদনক্ষমতার প্লান্ট বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, যা যৌক্তিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হয়।
সবচেয়ে বড় সামঞ্জস্যহীনতা লক্ষ করা যায় বিদ্যুতের ইন্ডিকেটিভ মূল্য নির্ধারণে। এ ক্ষেত্রে উৎপাদনে ব্যবহৃত আমদানীকৃত জ্বালানির মূল্যহার নিয়ে কথা চলে না। তবে অভ্যন্তরীণ জ্বালানি অর্থাৎ গ্যাস ও কয়লার মূল্যহার ব্যক্তিমালিকানাধীন বাণিজ্যিক প্লান্টের জন্য কত হবে, তা বিধিবদ্ধভাবে বিইআরসিকে নির্ধারণ করতে হবে। সে জন্য কারিগরি মানদণ্ড ও আর্থিক সূচকসমূহ স্ট্যান্ডার্ডাইজড হতে হবে। ভোক্তাদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময় বিইআরসির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তাগাদা দেওয়া হয়েছে গ্যাসের কমার্শিয়াল ও কস্ট প্রাইস নির্ধারণের জন্য। সরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে মূল্যে গ্যাস দেওয়া হয়, বাণিজ্যিক প্লান্টে ব্যবহৃত প্রতি একক গ্যাসেরও সেই একই মূল্য অর্থাৎ ৭৯.৮২ টাকা ধরা হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রতি একক গ্যাসের সরবরাহ ব্যয় গড়ে ১০৯ টাকা। গ্যাসস্বল্পতার অজুহাতে সরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রেখে ব্যক্তির মুনাফা অর্জনে জনগণ ভর্তুকিতে কেন বাণিজ্যিক প্লান্টে গ্যাস দেবে? এ প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি উপদেষ্টা কী বলবেন?
বিইআরসির আদেশে গ্যাসভিত্তিক বাণিজ্যিক প্লান্টের বিদ্যুতের ইন্ডিকেটিভ মূল্যহার ২.৭৭ টাকা। তাতে ফুয়েল খরচ ০.৬৬ টাকা। নন-ফুয়েল খরচ ২.১১ টাকা। এ খরচের যৌক্তিক কারিগরি ভিত্তি আছে বলে মনে হয় না। আলোচ্য আইপিপির ক্ষেত্রে প্রতি একক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ০.৫৬ থেকে ০.৬২ টাকা। নন-ফুয়েল খরচ ০.৪১ থেকে ০.৪৯ টাকা। অতঃপর মোট উৎপাদন ব্যয় ০.৯৭ থেকে ১.১১ টাকা। গত অক্টোবরের হিসাবে সে বিদ্যুৎ পিডিবি ক্রয় করে গড়ে ১.৩১ টাকা মূল্যহারে। অথচ বিইআরসির নির্ধারিত ইন্ডিকেটিভ মূল্যে তা ২.৭৭ টাকা।
নন-ফুয়েল খরচ নির্ধারণে যেসব খরচ হিসাবে আনা হয়েছে, তা স্বচ্ছ নয়। প্রকৃত খরচের তুলনায় অনেক বেশি। বিইআরসির ইন্ডিকেটিভ মূল্য নির্ধারণে সে খরচ ধরা হয়েছে ২.১১ টাকা। আইপিপির ক্ষেত্রে এ খরচ অনধিক ০.৪৯ টাকা। এ ধরনের অসামঞ্জস্যতা কয়লা ও তেলভিত্তিক প্লান্টের ক্ষেত্রে একইভাবে প্রযোজ্য। আশা করি, এতক্ষণে পাঠকরা অনুধাবন করেছেন, বাণিজ্যিক প্লান্টে বিনিয়োগের আগেই বিনিয়োগকারীর জন্য ঝুঁকিমুক্ত পর্যাপ্ত মুনাফা লাভের সুযোগ কিভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে।
সার্বিক পর্যালোচনায় বোঝা যায়, বিদ্যমান গ্যাস সংকট এবং তেল-বিদ্যুতের অত্যধিক উৎপাদন ব্যয়_এই দুই কারণে ওই দুই জ্বালানিভিত্তিক বাণিজ্যিক প্লান্টের বিদ্যুৎ সরকারি খাতে ক্রয় করা যৌক্তিক ও জনস্বার্থসম্মত নয়। তবে নিজ দায়িত্বে বিনিয়োগকারী দীর্ঘমেয়াদি কয়লা আমদানি নিশ্চিত করে উপকূলীয় অঞ্চলে বাণিজ্যিক প্লান্ট যদি নির্মাণ করে, তাহলে কারিগরি উপযুক্ততা নিশ্চিত করা সাপেক্ষে সে প্লান্টের বিদ্যুৎ সরকার ক্রয় করতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে প্রতি একক বিদ্যুতের জন্য নন-ফুয়েল খরচ কোনোভাবেই এক টাকার অধিক হওয়া যৌক্তিক নয়। কিন্তু জ্বালানি উপদেষ্টা স্বপদে বহাল থাকা অবস্থায় এমন অবস্থা বাস্তবে হতে পারে, সে সৌভাগ্য কি দেশবাসীর হবে?
লেখক : শিক্ষাবিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ
No comments