ডাচ ফুটবলের ছোঁয়ায় জাগবে কি লাল-সবুজ? by তোফায়েল আহমেদ রবিন
১৬তম বিদেশী কোচ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের দায়িত্ব নিয়েছেন হল্যান্ডের লোডডিক ডি ক্রুইফ। দুই বছরের জন্য বাফুফের সঙ্গে চুক্তি বদ্ধ হয়েছেন তিনি।
চুক্তি স্বাক্ষার করেই জানিয়েছেন, ফিফা র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশকে ১৬৫ থেকে ১০০-১২০ এর মধ্যে নিয়ে যেতে চান তিনি। সেই লক্ষ্যে জুন থেকে দায়িত্ব নেয়ার কথা তাঁর। তবে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপকে সামনে রেখে ফেব্রুয়ারিতেই এক দফা ঢাকায় আসছেন ডাচ ফুটবলের এই ধারক। তাঁর আগমনের প্রতীক্ষায় এখন জাতীয় দলের ফুটবলাররা। ডাচ ফুটবলের ছোঁয়া পেতে যেন উন্মুখ হয়ে আছেন তাঁরা। কিন্তু সত্যিকার অর্থে ডাচ ফুটবলের ছোঁয়া কি লাগবে লাল-সবুজের জার্সিধারীদের খেলায়? উত্তর খুঁজেছেন তোফায়েল আহমেদ রবিন। ডাচ ফুটবল মানেই শিল্পিত ফুটবল। সুবুজ গালিচায় কমলা জার্সিধারীরা টোটাল ফুটবলের মাধ্যমে হৃদয় হরণ করেন ফুটবল রোমান্টিকদের। যাদের খেলার রক্ষণ- মাঝমাঠ-আক্রমণ আলাদা বলে কিছু নেই। যিনি সামনে আছেন তিনিই এ্যাটাকার, তিনিই মিডফিল্ডার, তিনিই ডিফেন্ডার। আর এ জন্যই সেটি টোটাল ফুটবল। সেই টোটাল ফুটবলেরই ছোঁয়া লাগতে যাচ্ছে এবার বাংলাদেশের ফুটবলে। যা ফুটে ওঠবে এমিলি-মামুনুলদের পায়ের কারুকাজে। কারণ ডাক্স আউটে যে থাকবেন টোটাল ফুটবলের জনক দেশ হল্যান্ড থেকে আসা লোডডিক ডি ক্রুইফ ও তাঁর সহকারী রেনে কোস্টার। ক’দিন আগেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুকে) তাদের সঙ্গে করেছেন দুই বছরের চুক্তি। চুক্তি অনুযায়ী জুন থেকে দায়িত্ব নেয়ার কথা এই দুই ডাচ ফুটবল কোচের। যার মধ্যে একজন (রেনে কোস্টার) বাফুফে ফুটবল একাডেমীর প্রধান কোচও। সেপ্টেম্বরে সাফ ফুটবলকে সামনে রেখে জুন থেকেই ডাচ কোচের অধীনে দীক্ষা নেয়া শুরু করবেন। এমিলি-মামুনুল- ওয়ালি ফয়সালরা। তবে ফেব্রুয়ারিতেই ফুটবলাররা ডাচ ফুটবলের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন। কারণ চ্যালেঞ্জ কাপকে (এএফপি চ্যালেঞ্জ কাপ) সামনে রেখে জাতীয় দলের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন প্রধান কোচ লোডডিক ডি ক্রুইফ ও তাঁর সহকারী রেনে কোস্টার।দুই ডাচ কোচ বাংলাদেশের ফুটবলের দায়িত্ব নিলেন। ডাচ ফুটবলের ছোঁয়া পাওয়াই কি বাংলাদেশ ফুটবলের প্রধান লক্ষ্য ছিল। মোটেই না। আসলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চাচ্ছিল একজন হাই প্রোফাইল কোচের হাতে জাতীয় দলের দ্বায়িত্ব তুলে দিতে। ডি ক্রুইফ তেমনই একজন। ফুটবলার হিসেবে তেমন সফল না হলেও কোচ হিসেবে বেশ সফল এই ৪৩ বছর বয়সী। ১৮ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে নাইজিরিয়ান ক্লাব হার্টল্যান্ডকে পর পর দুইবার এফএ কাপ ও সুপার কাপে চ্যাম্পিয়ন করা। হয়েছিলেন দেশটির বর্ষসেরা কোচও। বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম বারের মতো তিনি কোন দেশের জাতীয় দলে দায়িত্ব নিলেন। বাফুকের সঙ্গে চুক্তি বদ্ধ হওয়ার পর নিজের লক্ষ্যের কথা বলতে গিয়ে ডি ক্রুইফ বলেছিলেন ‘আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে, কীভাবে ফুটবলে উন্নতি করতে হয় আমরা তা জানি। রেনে কোস্টার আর আমি ডাচ ফুটবল স্কুলের পণ্য। এক কথায় আমরা ডাচ ফুটবলের ধারক। ফুটবলের কিছু নতুন জিনিস আমরা এখানে বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা বাংলাদেশের ফুটবলকে উচু পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই।’
ডাচ ফুটবলের দুই ফেরিওয়ালি বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ফুটবলারদের খেলার ডাচ ফুটবরের ছোঁয়া লাগা কতটা সম্ভব হবে? ১১ ফুটবলাররা বলছেন, এটা নির্ভর করবে অনেটাই কোচের উপর। কোচ, জাতীয় দলের দায়িত্ব নেবেন। ফুটলারদের সামর্থ্য সম্পর্কে জানবেন। তারপর তিনি তাঁর কৌশল অবলম্বন করবেন। সেই কৌশলের উপরই নির্ভর করবে বাংলাদেশের ফুটবলে ডাচ ফুটবলের ছোঁয়া লাগার বিষয়। সেই সঙ্গে দরকার হবে দীর্ঘ মেয়াদী সময়ের। দেশ সেরা স্টাইকার জাহিদ হাসান এমিলি তাই বলছেন, ‘আমাদের যে সামর্থ্য তাতে কম সময়ে ডাচ ঘরনার ফুট আয়ত্ত করা আমাদের জন্য কঠিন হবে। দীর্ঘ মেয়াদী সময় যদি আমরা এই কোচের অধীনে কাজ করতে পারি তবে অবশ্যই ডাচ ফুটবলের ছোঁয়া আমাদের ফুটবলেও লাগবে।’ বন্ধু এমিলির সঙ্গে একমত মিডফিল্ডার মামুনুল। তবে তিনি সবার চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। ‘আসলে কোচ যেহেতু ডাচ, তাই ডাচ ফুটবলের ছোঁয়া আমাদের ফুটবলেও লাগবে। সময় ও সুযোগ পেলে সেটা করে দেখানোর সামর্থ্য আমাদের আছে’ এমনটাই ভাবছেন মামুনুল।
ফুটবলাররা আগ্রহ নিয়ে বসে আছেন। ডাচ ফুটবলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কোচও আগ্রহী ডাচ ফুটবল বাস্তবায়নে। কিন্তু দুই পক্ষেরই প্রযোজন র্দীঘ মেয়াদী সময়। কথা হচ্ছে তারা কি পাবেন সেটা? বাংলাদেশের বিদেশী কোচ পর্বের ইতিহাস কিন্তু শঙ্কা ছুড়ে দিচ্ছে।
বাংলাদেশের বিদেশী কোচের পর্ব মানেই, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কোচকে বিদায় করে দেয়া, কোচের কাজে ফেডারেশন কর্তাদের হস্তক্ষেপ করা, রাতের আধারে কোচের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া। ডাচ কোচের পর্বটা ওরকম হলে অন্তত ডাচ ফুটবলের ছোঁয়া পাওয়া সম্ভব নয়। দেখার বিষয় দুই ডাচ কোচ কতটা সময় পান জাতীয় দলের উন্নয়নে কাজ করার জন্য।
No comments