আহা আজি এ বসন্তে- বসন্ত মুখর আজি- দণি সমিরণে- মর্মর গুঞ্জনে- বনে বনে বিহ্বল- বাণী ওঠে বাজি by তৌফিক অপু
জাতীয় কবির রচিত এ চরণগুলোর মতোই আমাদের ঋতুবৈচিত্র্যের জীবন দরজায় কড়া নাড়ছে বসন্ত। ঋতুরাজ বসন্তকে নিয়ে রচিত হয়েছে কত গান, কবিতা নাটক।
এ ঋতুর বন্দনায় কবি- সাহিত্যিকরা সব সময় মুখরিত হয়ে থাকেন। আর হবেই বা না কেন। প্রকৃতিকে নতুনরূপে সাজিয়ে চারপাশ রঙিন করে আগমন ঘটে বসন্তের, যা দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। সেই সঙ্গে যোগ হয় কোকিলের সুর, নানা রকম পাখির কলতান। এ যেন এক মন মাতানো আবহ সৃষ্টি হয় চারিদিকে। এ ঋতুর রূপময় বৈচিত্র্যে মনের আকাশও যেন রঙিন হয়ে ওঠে। বসনত্ম ঋতুকে আরও বর্ণিল করে তোলে বাঙালীর কৃষ্টি-কালচারের উৎসবগুলো। বাঙালীর নিজস্ব কৃষ্টি-কালচার বা উৎসবের বেশির ভাগই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এই সময়ে। চারপাশ যেন উৎসব মুখরিত হয়ে থাকে। ভোজনরসিক হিসেবে বাঙালীর একটা নিজস্ব পরিচয় আছে। ইদানীং ফ্যাশন সচেতন হিসেবেও আবির্ভাব ঘটছে বাঙালীর। অধিকাংশ মানুষই এখন বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানের সাথে সঙ্গতি রেখে পোশাক-পরিচ্ছদ নির্বাচন করে থাকে। তেমনি এক উৎসব হচ্ছে পহেলা ফাল্গুন। ফাল্গুনের প্রথমটির সাথে নিজেকে একাত্ম প্রকাশ করতেই চলে ব্যাপক আয়োজন। এ যেন মনের বসনত্মকে চিরজাগ্রত করার একটি প্রয়াস। গেস্নাবালাইজেশনের যুগে যতই দিন গড়াচ্ছে ততই ব্যসত্ম হয়ে পড়ছে মানুষ। তা সত্ত্বেও বাঙালী তাদের নিজস্ব উৎসবগুলো উদ্যাপন করতে ভোলে না। এ ধরনের উৎসবে নিজেকে জড়াতে চলে ব্যাপক আয়োজন। ঠিক তেমনি পহেলা ফাল্গুন নিয়ে বাঙালীদের উৎসাহ-উদ্দীপনার কোন কমতি নেই।ফয়সাল আহমেদ একজন চাকরিজীবী। শত ব্যসত্মতায় থেকেও তিনি বাঙালীর নিজস্ব উৎসবগুলোতে অংশ নেয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। সামনে পহেলা ফাল্গুনের উৎসবে অংশ নেয়ার জোর প্রস্তুুতি তিনি আগে থেকেই নিয়ে রেখেছেন। যে কারণে অফিসে কাজের সিডিউল আগে থেকেই সেট করে রেখেছেন। তাঁর স্ত্রী কর্মজীবী হওয়াতে দু'জন মিলেই অবসর বের করার সিদ্ধানত্ম নিয়েছেন বেশ আগে থেকেই। আর এ জন্য পোশাক-পরিচ্ছদ কেনাকাটার কাজ আগেভাগেই সেরে রাখতে চান। নিজের জন্য বাসনত্মী কালারের পাঞ্জাবি, স্ত্রীর জন্য বাসনত্মী শাড়ি সেই সাথে ম্যাচ করে ব্যাগ, অর্নামেন্ট কেনাকাটার কাজ দু'জন মিলেই সারবেন। এ জন্য অবশ্য আলাদা বাজেটও রয়েছে তাঁদের। সারাদিন কাজ সেরে বিকেল বেলাতে ঘুরতে বেড়ানোর পস্নান প্রোগ্রাম সব ঠিক করে রেখেছেন। এখন শুধু সময়ের অপো। এতসব কিছুর পেছনে মূল কারণ হচ্ছে দৈনন্দিন কাজে যেন ব্যাঘাত না ঘটে। উৎসবের আমেজ যেন কর্মেেত্র না পড়ে এ জন্য দু'জনই সিডিউল মিলিয়ে কাজ করতে চান এবং এটাই বুদ্ধিমানের কাজ। বারো মাসে তেরো পার্বণ কথাটির যথার্থতা রাখতেই পহেলা ফাল্গুন উৎসবের আবির্ভাব। এ উৎসবের বড় একটা আকর্ষণ হচ্ছে পোশাক বসনত্মের সাথে সঙ্গতি রেখে বাসনত্মী রঙকে প্রাধান্য দেয়া হয় পোশাকে। এ নিয়ে অবশ্য ফ্যাশন হাউজগুলোর তৎপরতাও চোখে পড়ার মতো। মানুষের রম্নচি ও চাহিদাভেদে নানা রকম পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন তাঁরা। পোশাকের এ তালিকায় ছেলেদের জন্য রয়েছে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, টি-শার্ট, শর্ট পাঞ্জাবি, শার্ট, চাদর ইত্যাদি। মেয়েদের জন্য রয়েছে শাড়ি, সেলোয়ার-কামিজ, ফতুয়া, কুর্তা, শর্ট কামিজ, শাল ইত্যাদি। এর সবটাতেই রয়েছে বাসনত্মী রঙের ছোঁয়া। নানা রকম ডিজাইন এবং সাইজ দিয়ে পূর্ণ ফ্যাশন হাউজগুলো। শুধুমাত্র পোশাকেই পহেলা ফাল্গুন সীমাবদ্ধ নয়। এর সাথে ম্যাচ করে ফুলের গহনা, মাটি ও পাথরের গহনা, ব্রেসলেট ইত্যাদির বাজারও বেশ রমরমা। মানুষ যতই ফ্যাশন সচেতন হয়ে উঠছে ততই বাড়ছে ফ্যাশন হাউজগুলোর সংখ্যা। যার ফলে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে পোশাক-পরিচ্ছদ। ইচ্ছে হলেই নিজেকে সাজাতে পারেন বসনত্মের রঙে। তবে উৎসবের আমেজটা রাজধানী ঢাকাতেই একটু বেশি। যার ফলে ঢাকার অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অনেক নামী-দামী ফ্যাশন হাউজ। প্রতিটি সত্মরের উৎসবেই এরা ক্রেতাদের চাহিদা এবং উৎসবের রঙকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। বর্তমানে দেশীয় লোকজ ও কারম্নশিল্প বেশ সমাদৃত। দেশীয় ঐতিহ্য রায় এই ফ্যাশন হাউজগুলো একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে অঞ্জনস, কে ক্রাফট, রঙ, বাংলার মেলা, প্রবর্তনা, নগরদোলা, ওজি, আড়ং, দেশাল, বিবিয়ানা উলেস্নখযোগ্য। দেশীয় সামগ্রী ব্যবহার করে আধুনিক সাজে সজ্জিত এসব ফ্যাশন হাউজে রম্নচিসম্মত পোশাকের সমাহার রয়েছে। ইচ্ছে হলেই নিজের পদন্দের পোশাক সংগ্রহ করতে পারেন। বয়সের কোন ভেদাভেদ নেই এ উৎসবে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দই যেন আলাদা। হাজারো ব্যসত্মতায় হয়ত বের হওয়া যায় না সব সময়। সেদিক থেকে পহেলা ফাল্গুন যেন আমাদের সামনে মন প্রফুলস্ন করার সুযোগ এনে দেয়। প্রকৃতির কাছে গেলে এমনিতেই মন ভাল হয়ে যায়। আর সেই প্রকৃতি যদি আরও রঙিন হয়ে ধরা দেয় আপনার সামনে তাহলে তো কথাই নেই। মানুষ বসনত্মের সন্ধান পায় প্রকৃতির কাছ থেকেই। একটি দিনের জন্যও যদি প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়া যায় তাতে তি কি? মনের আকাশকে রঙিন করে তোলার অন্যতম উৎসব পহেলা ফাল্গুন। ঢাকাতে যত উদ্যান চোখে পড়ে তার সব জায়গাতেই দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানোর উপচে পড়া লোক চোখে পড়ে। এ যেন উৎসব উদ্যাপনের বহির্প্রকাশ। আর এ ধরনের উৎসবে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতেই পোশাকের প্রতিই সবাই জোর দেয়। এ কারণে পহেলা ফাল্গুনের ফ্যাশন নিয়ে রীতিমতো হুড়োহুড়ি চলে। ফ্যাশন জগতে অবশ্য এই হুড়োহুড়ি ইতিবাচক। বসনত্মের রঙে যদি নিজেকে রাঙানোই না যায় তাহলে পুরো উৎসবটাই যেন বৃথা। যার ফলে বসনত্ম উৎসবটা অনেকাংশেই ফ্যাশনকে প্রভাবিত করে। প্রতিনিয়তই প্রকৃতি নাড়া দিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশীয় ফ্যাশনকে।
ছবি : আরিফ আহমেদ
মডেল : সাথি, ইমতু
মেক আপ : পারসোনা
পোষাক : ধানসিড়ি, মেঠোপথ, ঢাকাঢোল
No comments