যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতেই মরিয়া শিবির
সরকারীভাবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারসহ শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন আন্দোলনে মাঠে নামছে।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পৰ থেকে বিসত্মারিত কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। রগ কেটে মানুষ হত্যা করে দেশে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে তারা। যার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। দেশের জন্য হুমকি বিবেচনায় জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদসহ শীর্ষ নেতাদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে বিভিন্ন শিৰাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রশিবিরকর্মীদের বের করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন অনেকেই। এদিকে পুলিশের হাত থেকে রৰা পেতে শিবির ক্যাডাররা দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করছে। ঢাকামুখী অনেকেই। রাজধানীতে শুক্রবার পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রায় শতাধিক শিবিরকর্মীকে গ্রেফতার করে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে শিবিরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মগবাজার, সবুজবাগ, পল্টনসহ বাড্ডা এলাকার বিভিন্ন বাসা ও মেসে আশ্রয় নিয়েছে চিহ্নিত শিবির ক্যাডাররা।মঙ্গলবার মধ্যরাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরীহ ছাত্রদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ছাত্রশিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা। রক্তের খেলায় মেতে ওঠে তারা। শুরম্ন হয় বর্বরোচিত হামলা। পুলিশের প্রহরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগকর্মী ফারম্নককে হত্যা করে ছাত্র শিবিরকর্মীরা। রগ কেটে ২০ জনের বেশি ছাত্রের মৃতু্য নিশ্চিত করার চেষ্টা চালায়। যারা এখনও বিভিন্ন হাসপাতালে মৃতু্যর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। শিবিরের রক্ত খেলায় হতবাক দেশের মানুষ। সেই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত দলের ছাত্র সংগঠনের শক্তির মহড়া দেখে বিস্মিত। এ ঘটনার পরপরই দেশজুড়ে তোলপাড় শুরম্ন হয়। ৰোভে-বিৰোভে ফেটে পড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ শিৰাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা শহরে বিৰোভে নামে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসহ সচেতন মানুষ। বিভিন্ন স্থানে পুড়িয়ে দেয়া হয় জামায়াতের রাজনৈতিক কার্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ঘটনার পরপরই ছাত্র শিবিরের তা-ব নিয়ে শুরম্ন হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এর নেপথ্যে কারা? এছাড়া হঠাৎ করেই ছাত্রশিবির এত বেপরোয়া কেন? ঘটনার মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে ক্যাম্পাসের শহর থেকে সাংগঠনিক সফর করে আসেন জামায়াতের আমির নিজামী। তাহলে কি তিনিই এ নির্দেশ দিয়ে এসেছিলেন? এ নিয়ে আছে নানা কানাঘুষা; বিসত্মর গুঞ্জন। ঘটনার পরদিন জামায়াতের পৰ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা চলে। 'বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই'_ এমন মনত্মব্য করে যিনি সম্প্রতি আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সেই মুজাহিদ সংবাদ সম্মেলনে আবারও মিথ্যাচার করার চেষ্টা চালান। বলেন, তদনত্ম না করে ঢালাওভাবে মিডিয়া রাবির ঘটনার সঙ্গে শিবিরকে দোষারোপ করেছে। তিনি বলতে চান শিবির ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। তারা রগ কাটার রাজনীতি বিশ্বাস করে না। পরদিন দৃশ্যপট আরও পাল্টে যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার নিহত হওয়ার পরপরই কেন্দ্রীয়ভাবে আবারও জামায়াত সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার প্রতিবাদ জানায়। এদিকে শিবিরের বিদ্রোহী গ্রম্নপ অনলাইনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার জন্য জামায়াতের আমিরসহ শীর্ষ নেতাদের প্রত্যৰ মদদের কথা উলেস্নখ করে বার্তা পাঠাচ্ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের জঘন্যতম তা-বের পরেও তারা থেমে নেই। দেশজুড়ে মাঠে নেমেছে জামায়াত-শিবির। প্রকাশ্যে রাজপথে চলছে মহড়া। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের হাতে শিবির ক্যাডাররা গ্রেফতারের প্রতিবাদে আন্দোলন চলছে। চট্টগ্রাম সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যেই মহড়া দিচ্ছে জামায়াত-শিবির। শুক্রবার চট্টগ্রামে জামায়াত-শিবিরের মিছিলে বাধা দিলে পুলিশের ওপর হামলা করে তারা। এক পর্যায়ে রাজপথে শিবিরকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। শুক্রবার দুপুরে খোদ রাজধানীতে জামায়াত-শিবিরের আন্দোলনে আটকে যায় রাষ্ট্রপতির গাড়িবহর! প্রশ্ন উঠেছে, জামায়াত-শিবিরের প্রকাশ্য তৎপরতা নিয়ে? এখানেই শেষ নয়, দেশ অচল করে দেয়ারও হুমকি দিয়েছে তারা। জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলে পাল্টা জবাব দেয়ার হুমকি দিতেও দ্বিধাবোধ করেনি যুদ্ধাপরাধী চক্র।
জামায়াতসহ ছাত্রশিবিরের তা-ব মোকাবেলায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আন্দোলনে মাঠে নামছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের পৰ থেকে ঘটনার পরপরই দেশজুড়ে শুরম্ন হয়েছে তীব্র আন্দোলন। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংসদে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, দিনাজপুরসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর পৰ থেকে শিবিরবিরোধী আন্দোলন শুরম্ন হয়েছে। আন্দোলনের জন্য মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল। জাতীয় পার্টির পৰ থেকে এ ব্যাপারে করণীয় নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা চলছে। কয়েকদিনের মধ্যে এ ব্যাপারে কর্মসূচী ঘোষণা করা হতে পারে। কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, গণফোরাম, বাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলনে মাঠে নামছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বলছেন, জামায়াত-শিবিরকে উৎখাত করতে না পারলে দেশে অরাজকতা বন্ধ হবে না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আশঙ্কায় দিন দিন হত্যা ও রগ কাটার রাজনীতিতে মেতে উঠবে ঘাতক চক্র। প্রাণ খালি হতে পারে হাজারো মায়ের।
সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করার পর টনক নড়েছে জামায়াতের। সরকারী সিদ্ধানত্ম অনুযায়ী এবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পালা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলেই জামায়াতের অভিযুক্ত শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজা নিশ্চিত। এ প্রেৰাপটে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডারদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছে। তাদের কাজ বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনা ঘটানো। নৃশংস হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে দেশজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাকা-ের ঘটনা এরই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জানা গেছে, গত ৩৪ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিৰকসহ ৭৪টির বেশি হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে ফারম্নক হত্যাকা-ের দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দায়িত্বে ছিলেন রাজশাহী পুলিশের উপ-কমিশনার নুরম্নল আমিন। তাঁর বিরম্নদ্ধে একটি মৌলবাদী ছাত্র সংগঠনের বিশেষ ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ আছে। সেই সঙ্গে ঘটনার দিন তার সঙ্গে কর্তব্যরত সহকারী পুলিশ কমিশনারদের মধ্যে ছিলেন এসি জাহাঙ্গীর, এসি তারেক, এসি মাহফুজ, এসি হুমায়ুন কবীর ও এসি মৃণাল কানত্মি। এদের মধ্যে মৃণাল কানত্মি ছাড়া বাকি চার জন বিএনপি_জামায়াত জোট সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত। কর্তব্য পালনে অবহেলায় এসব পুলিশ কর্মকর্তার বিরম্নদ্ধে জামায়াতী সমর্থনের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের দাবি, এসব পুলিশ কর্মকর্তার রাজনৈতিক পরিচয় বের করে বিচারের আওতায় আনা হোক।
No comments