লাশ ফেলে ইস্যু সৃষ্টি- চট্টগ্রামে সর্বশেষ নৃশংসতার বলি মেধাবী ছাত্র মহিউদ্দিন ॥ পুলিশের সঙ্গে জঙ্গী ক্যাডারদের সংঘর্ষ, অর্ধশত আহত গ্রেফতার ৮৫, মামলা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পৈশাচিক ঘটনার পর রাজনীতির মাঠে উত্তাপ ছড়িয়ে দিতে জামায়াতের আর্মড ক্যাডার বাহিনীর দল ইসলামী ছাত্র শিবির নতুন একটি ইসু্য তৈরির হীন চক্রানত্মে অত্যনত্ম সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের মেধাবী ছাত্র এএএম মহিউদ্দিন ওরফে মাসুমকে (২৫)।
বহু প্রচেষ্টা চালিয়ে শিবিরের রাজনীতিতে জড়িত করতে ব্যর্থ হয়ে এবং রাজশাহীর ঘটনার পর রীতিমতো কোণঠাসা অবস্থায় পড়ে গিয়ে নিজেদের সক্রিয় করে তুলতে জামায়াত-শিবিরের অপরাজনীতির টার্গেট হয়ে নির্মম খুনের শিকার হয়েছে আওয়ামী লীগদলীয় রাজনীতির সক্রিয় সমর্থক গরিব পরিবারের সনত্মান মহিউদ্দিন মাসুম। বিগত জোট সরকারের কৃষিমন্ত্রী কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর রোষানলে পড়ে নিহত মহিউদ্দিনের পিতা বিএডিসির কর্মকর্তা ফজলুল কাদের চাকরিচু্যত হয়েছিলেন। গেল বছর হাইকোর্টের রায়ে তিনি পুনরায় চাকরিতে পুনর্বহাল হয়েছেন। চাকরিচু্যত অবস্থায় দীর্ঘ সাত বছর ফজলুল কাদের চকরিয়ার ফাসিয়াখালি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। নিহত মহিউদ্দিনের কনিষ্ঠ ভাই মোঃ ছগির চকরিয়ার মালুমঘাট ডুলাহাজারা কলেজের ছাত্রলীগ কমর্ী এবং এবারের এইচএসসি পরীাথর্ী। এমন একটি পরিবারের মেধাবী ছাত্রকে নৃশংসভাবে হত্যা করে তাকে বানানো হয়েছে শিবির কমর্ী। এ মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াত শিবির।বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ৯টার দিকে নগরীর ষোলশহর রেল স্টেশন চত্বরে ৭/৮ জনের অজ্ঞাতনামা একটি সন্ত্রাসী গ্রম্নপ মহিউদ্দিনকে উপযর্ুপরি ছুরিকাঘাত ও কুপিয়ে হত্যা করার পর উল্টো তাকে শিবির কমর্ী বলে দাবি করে যাচ্ছে জামায়াত-শিবির। নিহত মহিউদ্দিনের ময়নাতদনত্ম পূর্ব এবং শেষতক ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে তার লাশ না পেয়ে গায়েবানা জানাজা শেষে জামায়াত-শিবির দুপুর ১২টার দিকে বের করে একটি জঙ্গী মিছিল। 'নারায়ে তাকবীর-আলস্নাহু আকবর', 'মহিউদ্দিনের রক্ত বৃথা যেতে দেব না' 'শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না' ইত্যাদি সেস্নাগানে প্রকম্পিত করা মিছিলে বাধা দিতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে ব্যাপক। সাড়ে ১২টার দিকে মিছিলটি প্রবর্তক মোড় থেকে জামালখান এলাকায় এসে পেঁৗছার পর বাধাপ্রাপ্ত হয়ে জামায়াত শিবিরের জঙ্গী কমর্ীরা পুলিশকে ল্য করে ব্যাপক ইটপাটকেল নিপে শুরম্ন করলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ালশেল নিপে করে। এতে আহত হয়েছে পুলিশসহ অর্ধশতাধিক। পুলিশ গ্রেফতার করেছে জামায়াতের নগর নায়েবে আমীর অধ্যাপক আহসান উলস্নাহসহ প্রায় এক শ' জামায়াত শিবির কমর্ীকে। পরে ৮৫ জনের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ ঘটনার পর জামায়াত শিবির পুনরায় আন্দরকিলস্না শাহী জামে মসজিদ চত্বরে জুমার নামাজ শেষে মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে কঠোর ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। ফলে দ্বিতীয় দফায় জামায়াত শিবিরের জঙ্গী তৎপরতার প্রয়াস ব্যর্থ হয়।
এদিকে, নিহত মহিউদ্দিনের লাশ পুলিশী নিরাপত্তায় পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজন সহকারে তার গ্রামের বাড়ি চকরিয়ার ফাসিয়াখালিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় দফায় জানাজা শেষে বিকেলে তাকে তার নোয়াপাড়া গ্রামের সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মহিউদ্দিনের অকাল ও হৃদয়বিদারক মৃতু্যর ঘটনায় পুরো চকরিয়া জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অশ্রম্ন বিসর্জন করেছে এলাকার আপামর নারী পুরম্নষ।
মহিউদ্দিনের লাশ নিয়ে পরবতর্ী রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে ব্যর্থ হয়ে চট্টগ্রামে জামায়াত-শিবির শুক্রবারের এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সিএমপি সূত্রে দাবি করা হয়েছে। সিএমপির উর্ধতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃতদের বিরম্নদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
মহিউদ্দিন হত্যার নেপথ্যে ॥ গরিব পরিবারের মেধাবী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র মহিউদ্দিন মাসুম সুবিধাজনক কোথাও সিট না পেয়ে থাকত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির অধু্যষিত আলাওল হলে। ক্যাম্পাস জীবনে সে ওতপ্রোতভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে না থাকলেও আনত্মরিকভাবে তার সমর্থন ছিল ছাত্রলীগ রাজনীতির প্রতি। যে কারণে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সভা ও মিছিলে সে প্রায়শ যোগ দিত। আর এ কারণে শিবির ক্যাডারদের রোষানলে ছিল মহিউদ্দিন। তার সহপাঠীদের বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, মহিউদ্দিনের ওপর শিবির কমর্ীদের বিভিন্ন ধরনের হুমকির কথা সে বহু আগে থেকে তাদের জানিয়েছে। সর্বশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের পৈশাচিক ঘটনার পর আলাওল হলের শিবির কমর্ীরা মহিউদ্দিনকে হল ছেড়ে দেয়ার জন্য হুমকি দেয়। হুমকি পেয়ে মহিউদ্দিন চবি ছাত্রলীগেরসহ সভাপতি আনিসুজ্জামান ইমনের সঙ্গে দ্রম্নত যোগাযোগ করে। আনিসুজ্জামান শুক্রবার জনকণ্ঠকে জানান, মহিউদ্দিন তাকে শিবিরের প েহল ছেড়ে দেয়ার জন্য হুমকি দিয়েছে বলে জানিয়ে তার জন্য যে কোনভাবে সুবিধাজনক স্থানে একটি সিটের ব্যবস্থা করে দেয়ার আকুতি জানায়। ইমন জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ বর্তমানে কাউকে নতুন করে সিট বরাদ্দ দিচ্ছে না, এ কারণে তাকে কোন রকমে সাবধানতা অবলম্বন করে আলাওল হলের ঐ সিটে থেকে যাবার পরামর্শ দেয়া হয়। ফলে মহিউদ্দিন বাধ্য হয়ে শিবির অধু্যষিত আলাওল হলেই থেকে যায়।
এদিকে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে মহিউদ্দিন নগরীর শুলকবহর এলাকায় একটি টিউশনি নিয়েছিল। গত ১ ফেব্রম্নয়ারি থেকে সন্ধ্যার পর শুরম্ন হয়েছিল তার এ টিউশনি। বৃহস্পতিবার যথারীতি টিউশনি শেষে বিশ্ববিদ্যালয় হলে ফিরে যাবার জন্য মহিউদ্দিন রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ ষোলশহর রেলস্টেশনে পেঁৗছায় ৮টা ৫০ মিনিটের শাটল ট্রেন ধরার জন্য। এ সময় স্টেশনে মহিউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শাহজালাল হলের মোহাইমেনুল ইসলামের সঙ্গে। মোহাইমেনুল ইসলাম ঘোর শিবির কমর্ী। তার সঙ্গে মহিউদ্দিন স্বাভাবিকভাবে কথা বলার একপর্যায়ে ৭/৮ জনের দুর্বৃত্ত দল হামলে পড়ে। এ সময় মোহাইমেনুল ইসলাম সেখান থেকে লাপাত্তা হয়ে গেলেও দুর্বৃত্তরা মহিউদ্দিনকে স্টেশনের পাশর্্ববতর্ী মসজিদ সংলগ্ন পুরনো রেল লাইনের ওপরে টেনেহেঁচড়ে নিয়ে গিয়ে উপযর্ুপরি কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে। দুর্বৃত্তরা পাথর দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেয়। ফলে ঘটনাস্থলেই মহিউদ্দিনের জীবন প্রদীপ নিভে যায়। দুর্বৃত্তরা রেলস্টেশনের পস্ন্যাটফরমের পশ্চিম দিক দিয়ে উধাও হয়ে যায় বলে প্রত্যদশর্ীরা জানায়। ঘটনার আকস্মিকতায় পস্ন্যাটফরম সংলগ্ন দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হলে যেতে আসা বেশকিছু ছাত্রছাত্রী প্রাণভয়ে যে যেভাবে পারে নিরাপদ স্থানে চলে যায়। ঐ সময় চট্টগ্রাম শহরের বটতলী স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শাটল ট্রেন ষোলশহর স্টেশনে মাত্র মিনিট খানেকের জন্য দাঁড়িয়ে পুনরায় ছেড়ে যায়। কিন্তু অন্যান্য সময় ৪/৫ মিনিট ট্রেন পস্ন্যাটফরমে অবস্থান করে। এ কারণে অনেক ছাত্রছাত্রী হলে যাবার জন্য ট্রেনে উঠতেও ব্যর্থ হয়। ঘটনার খবর পেয়ে পাঁচলাইশ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মহিউদ্দিনকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চমেক হাসপাতালের জরম্নরী বিভাগে এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অজ্ঞাতনামা এক ছাত্রী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেছে, মহিউদ্দিনের ওপর যখন হামলা হয় তখন সে তার সহপাঠী মোহাইমেনুল ইসলামকে মোবাইলে ফোন করেছিল। এ সময় মোহাইমেনুল ফোন রিসিভ করলেও অন্য কারও সঙ্গে কথা বলা অবস্থায় তাকে পায় এবং ঐ ছাত্রী শুনতে পেয়েছে, মোহাইমেনুল ইসলাম বলছিল, 'আমি না, আমি না, ও (মহিউদ্দিনের দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে)। এরপরই মোহাইমেনুলের ফোন বন্ধ হয়ে যায়। পরে ঐ ছাত্রী রেল স্টেশনের ঘটনা জানতে পেরে চমেক হাসপাতালে এসেছে বলে উপস্থিত সাংবাদিকসহ অন্যদের জানায়। এরপর অজ্ঞাত কারণে ঐ ছাত্রীর আর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
ঘটনার পর তাৎণিক তদনত্মে পুলিশ দুর্বৃত্ত দলের মধ্যে চবির দু'ছাত্রের নাম পেয়েছে। সিএমপি সূত্রে জানানো হয়, এদের একজন শিবির কমর্ী ও অন্যজন সাধারণ ছাত্র। ঘটনার সঙ্গে এরা জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের ধরার জন্য অভিযান চলছে। সিএমপির ডিসি (নর্থ) বনজ কুমার মজুমদার জানান, এ দু'জনকে ধরা গেলে হত্যার নীলনক্সার মূল রহস্য বের হবে বলে তাঁরা আশা করছেন।
মহিউদ্দিনের লাশ নিয়ে জামায়াত-শিবিরের টানাটানি ॥ নিহত মহিউদ্দিনের লাশ হাতে পাবার জন্য শুক্রবার সকাল থেকে জামায়াত-শিবিরের শত শত নেতাকমর্ী চমেক মর্গ চত্বরে জমায়েত হয়। এ সময় চমেক ক্যাম্পাস ও মর্গ চত্বরে মোতায়েন করা হয় বিপুলসংখ্যক পুলিশ। সকাল ১১টার পর সাতকানিয়ার এমপি জামায়াত নেতা শামসুল ইসলাম, সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম নগর ও জেলার জামায়াত শিবিরের শীর্ষ নেতা ও কমর্ীরা পুলিশের ওপরে চাপ সৃষ্টি করে মহিউদ্দিনের লাশ তাদের কাছে হসত্মানত্মরের জন্য। কিন্তু পুলিশ তাদের এ চাপে নতি স্বীকার করেনি। পুলিশ তাদের জানিয়ে দেয়, লালদীঘি ময়দানে জানাজা যেমন হবে না, তেমনি লাশও তারা পাবে না। এ লাশ দেয়া হবে তার পরিবারকে এবং নিয়ে যাওয়া হবে নিহতের গ্রামের বাড়িতে। ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে লাশ পেতে ব্যর্থ হয়ে মর্গের সামনের চত্বরে (প্রবর্তক মোড়) বেলা ১২টার দিকে জামায়াত শিবির গায়েবানা জানাজার নামাজ সম্পন্ন করে। এমপি শামসুল ইসলাম জানাজায় নামাজে ইমামতি করেন। জানাজা শেষে জামায়াত শিবিরের শত শত নেতাকমর্ী জঙ্গী কায়দায় মিছিল শুরম্ন করে। মিছিল প্রবর্তক মোড় ত্যাগ করার পর পুলিশ কড়া নিরাপত্তায় আত্মীয়স্বজন সহকারে মহিউদ্দিনের লাশ সড়কযোগে গ্রামের বাড়ি চকরিয়ার ফাসিয়াখালির উদ্দেশে যাত্রা করিয়ে দেয়।
এদিকে জামায়াত শিবিরের জঙ্গী মিছিলটি মেহেদীবাগ, আলমাস হল, কাজীর দেউরি হয়ে জামালখান গোল চত্বরে এসে পৌঁছার পর পুলিশ বাধা দেয়। বাধা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে জামায়াত শিবিরের ক্যাডাররা জঙ্গী মনোভাবে পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়। তারা ইটপাটকেল নিপে করে অনত্মত ১০ পুলিশকে আহত করে। ফলে পুলিশ পাল্টা আক্রমণ চালায়। জঙ্গী ক্যাডারদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রায় ১৫ রাউন্ড টিয়ারশেল নিপে করে। এতে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরপর শুরম্ন হয় গ্রেফতারি পর্ব। পুলিশ চতুর্দিক থেকে ঘেরাও দিয়ে প্রায় এক শ' জামায়াত শিবিরের নেতাকমর্ীকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন নগর জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক আহসান উলস্নাহ, চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মরত ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি এসএম লুৎফর রহমান। এছাড়া রয়েছে জাহির হোসেন, ইদ্রিস আলী, আমিনুল ইসলাম, শিবির কমর্ী জাহিদুল ইসলাম, ইকবাল হোসেন, মোঃ আলমগীর, শহীদুল আলম, নাসির উদ্দিন, জয়নাল আবেদিন, ইব্রাহিম, খুরশীদ আলম, সরোয়ার হোসেন, জাহাঙ্গীর আলমসহ ৯৬ জন। এদের মধ্যে ৮৫ জনের বিরম্নদ্ধে বিশেষ মতা আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। অপরদিকে আহত পুলিশের মধ্যে রয়েছে সিএমপির এসিডিবি জাহাঙ্গীর আলম, এসআই সদীপ, কনস্টেবল আলমগীর, আকাশ, জাহিদ, হেলাল, আলতাফ, গৌতম, নিজাম, নিজাম হোসেন, নজরম্নল ও অনুদ্র। এদের কারও অবস্থা গুরম্নতর নয়। এছাড়া অন্যান্য আহত শিবির কমর্ীদের নাম জানা যায়নি।
মূল পরিকল্পনা চবির খতিব মঞ্জিলে ॥ বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে মহিউদ্দিনকে হত্যা করার আগে সকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পেঁৗছায় শিবিরের তিন কেন্দ্রীয় নেতা। এরা হচ্ছেন সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মওলা শিমুল ও আরিফ মাঈনুদ্দিন। এ সময় তাদের সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ছিল বলে ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে। দিনভর চবির বিভিন্ন আবাসিক হলের নেতাকমর্ীদের সঙ্গে কথা বলেন এরা। পরে বিকেল ৫টায় খতিব মঞ্জিলে এক গোপন বৈঠকে মিলিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতা এবং বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব। বৈঠক শেষে শিবির নেতারা চবির শাহজালাল হলে অবস্থান করে। এ বৈঠকের খবর চবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নজরম্নল ইসলাম প্রক্টরকে অবহিত করলেও প্রক্টর তা আমলে নেয়নি। নজরম্নল ইসলাম জানান, প্রক্টরকে অভিযোগ করলে তিনি জানান, 'শিবির নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। তারা সার্টিফিকেট তোলার জন্য ক্যাম্পাসে এসেছে। এ নিয়ে চিনত্মিত হবার কোন কারণ নেই'। একাধিক শীর্ষ ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ জনকণ্ঠকে জানান, এ গোপন বৈঠক থেকেই একটি লাশের পরিকল্পনা নেয়া হয়। উলেস্নখ্য, চবিতে বর্তমান প্রক্টর জসিম উদ্দিন ২০০৮ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃতু্যবার্ষিকীতে শোকর্যালি বের করার কারণে ছাত্রলীগ নেতাদের বিরম্নদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ নেতাদের হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরম্নদ্ধে। প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের মূল আসত্মানা খ্যাত খতিব মঞ্জিল। দীর্ঘদিন ধরে এ মঞ্জিলে গোপন বৈঠক করে শিবির ক্যাম্পাসের আধিপত্য ধরে রেখেছে।
শিবির না করার খেসারত দিল মহিউদ্দিন ॥ মহিউদ্দিন এমন একটি হলে অবস্থান করত যে হলে ছিল শিবিরের নিরাপদ আসত্মানা। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে অবস্থান করার কারণে শিবির তাকে প্রতিনিয়ত সংগঠনের কার্যক্রমে যুক্ত হওয়ার জন্য চাপ দিত। কিন্তু সে এ চাপ গ্রাহ্য না করে তার পড়ালেখায় মনোযোগী ছিল। অন্যদিকে পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে ছাত্রলীগের সভা সমাবেশে অংশগ্রহণ করত প্রায় সময়। শিবিরের কর্মকা-ে অংশগ্রহণ না করা ও ছাত্রলীগের কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করার কারণে তাকে নিয়মিত হুমকি-ধমকি দেয়া হতো। সর্বশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কমর্ী মেধাবী ছাত্র ফারম্নকের নির্মম হত্যাকা-ের পর তাকে হল ত্যাগ করার হুমকি দেয় শিবির নেতারা।
রক্তে ঢেকে গেল সোনালি স্বপ্ন ॥ মহিউদ্দিনের মুখম-ল ঢেকে গিয়েছিল রক্তে। এ যেন একটি সোনালি স্বপ্ন ঢাকা পড়া। মহিউদ্দিনের মৃতু্যতে থেমে গেছে একটি পরিবারের স্বপ্ন দেখা। নিম্নবিত্ত গরিব পরিবারে জন্মগ্রহণ মহিউদ্দিনের। ৩ ভাই ১ বোনের মধ্যে সে ছিল সবার বড়। বাবা ফজলুল কাদের বান্দরবান জেলার লামার আলী কদমে বিএডিসিতে কর্মরত । জোট সরকারের রোষানলে পড়ে ২০০২ সালে তাকে চাকরি হারাতে হয়। শুরম্ন হয় সংসারে চরম অভাব অনটন। তারপর থেকে মহিউদ্দিনের পড়ালেখার দায়িত্ব নেন মামা হেলাল উদ্দিন। তার সহযোগিতায় ধাপে ধাপে এসএসসি ও এইচএসসি পরীায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগে। সে এসএসসিতে জিপিএ-৫ ও এইচএসসিতে জিপিএ ৪.৯ অর্জন করে। বিশ্ববিদ্যালয়েও কৃতিত্বের সঙ্গে প্রথম তিনটি শিাবর্ষে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। সর্বশেষ চতুর্থ বর্ষের ফল এখনও প্রকাশিত হয়নি। তবে প্রথম তিন শিাবর্ষে সে খুবই ভাল ফল করে বলে জানান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সিদ্দিক আহমদ। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, তার মতো ভদ্র ছেলে আর হয় না। পড়ালেখা ছাড়া কিছুই বুঝত না। মেধাবী এ ছাত্রের মৃতু্যতে বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতির অপূরণীয় তি হয়ে গেল। একদিকে ছাত্র শিবির কমর্ীরা মহিউদ্দিনকে নিজেদের কমর্ী বানানো অপচেষ্টায় লিপ্ত, অন্যদিকে তার পরিবারের সদস্যরা শিবিরের এ অপরাজনীতির ধিক্কার দিয়ে জানান, মহিউদ্দিন কোনভাবেই স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃত্ত ছিল না। বরং সে ছাত্রলীগ রাজনীতির সমর্থক। তার খালাত ভাই চবির আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মতিউর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, আমাদের পরিবার বংশগতভাবে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ করার অপরাধে তার পিতা ফজলুল কাদেরকে বিএডিসি থেকে চাকরিচু্যত করে। এ দফতর তৎকালীন জোট সরকারের নিজামীর নিয়ন্ত্রণাধীন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন ছিল। এ পরিবারের সদস্য কোনভাবে ছাত্র শিবিরের জঘন্য রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে না। মতিউর রহমান বৃহস্পতিবার রাতে চমেক ইমার্জেন্সিতে সাংবাদিকদের যখন এসব কথা বলছিলেন তখন সেখানে উপস্থিত কতিপয় শিবির কমর্ী বার বার বাধার সৃষ্টি করে। এমনকি তাকে পাগল আখ্যায়িত করে। জানা গেছে, মহিউদ্দিনের বাবা ফজলুল কাদের স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতিও ছিলেন। ২০০২ সালে জোট সরকারের কৃষিমন্ত্রী জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর রোষানলে পড়ে মহিউদ্দিনের পিতা চাকরি হারিয়ে চকরিয়ায় শাহ আমিন পরিবহনের কাউন্টারে লাইনম্যানের স্বল্প বেতনে চাকরি করে পরিবারের জন্য জীবিকা নির্বাহ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। চমেক হাসপাতাল মর্গে প্রিয় পুত্রের লাশ নিতে এসে আহাজারি করে ফজলুল কাদের বলেন, আমি কিছুই চাই না, শুধুমাত্র পুত্র হত্যার দৃষ্টানত্মমূলক শাসত্মি চাই। পরবতর্ীতে ২০০৯ সালে রিট করে তিনি চাকরি পুনর্বহাল হন। বর্তমানে তিনি বান্দরবানের লামার বিএডিসি অফিসের স্টোর কীপার পদে কর্মরত। নিহত মহিউদ্দিনের আরেক খালাত ভাই রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্নকারী মোঃ জালাল জানান, মহিউদ্দিন ছিল স্কুলজীবন থেকে মেধাবী। সে পড়ালেখার বাইরে অন্য কোন কিছুতেই যুক্ত ছিল না। পড়ালেখায় ছিল তার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান। এমনকি সে প্রচলিত ছাত্ররাজনীতিও পছন্দ করত না। তার খালু জয়নাল আবেদিন জনকণ্ঠকে জানান, মহিউদ্দিনের মতো ছেলে এলাকায় বিরল। সে সকলের যেমন স্নেহধন্য ছিল, তেমনি ছিল প্রিয়। এদিকে, হাসপাতালের জরম্নরী বিভাগে বৃহস্পতিবার রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার আত্মীয়স্বজনের ভিড়ও বাড়ে। তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে হাসপাতালের পরিবেশ। প্রিয় স্বজনহারা এসব আত্মীয়কে সানত্ম্বনা দেয়ার ভাষা ছিল না কারও মুখে। সবাই শুধু একবার মহিউদ্দিনকে এনে দেয়ার আকুল আকুতি জানান। কিন্তু মহিউদ্দিন সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার জগতে। একাত্তরের ঘাতকদের আরেকটি নীলনক্সা বাসত্মবায়িত হলো মহিউদ্দিনকে খুনের মাধ্যমে_ এ অভিমত মুক্তিযুদ্ধের সপরে শক্তির সূত্রসমূহের।
ক্যাম্পাস পরিস্থিতি ॥ মহিউদ্দিন হত্যা ঘটনার জের ধরে চবিতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার রাতে শিবির হাটহাজারী, সাতকানিয়া ও নগরীর বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে কয়েক হাজার ক্যাডার জড়ো করে ক্যাম্পাসে। শিবির এসব ক্যাডার নিয়ে ক্যাম্পাসে সশস্ত্র মিছিল বের করে। মিছিল থেকে ফাঁকা গুলি ছোড়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। মিছিল থেকে শিবির ক্যাডাররা প্রক্টরের গাড়ি ভাংচুর করে। তবে প্রক্টর গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা অস্বীকার করেছেন। এ সময় সারা ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হলে অবস্থানরত সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রাত যাপন করে। রাত ১টার দিকে জেলা পুলিশ সুপার জেড এম মোরশেদের নেতৃত্বে এএফ রহমান হলে তলস্নাশি অভিযান চালায়। ৬ পস্নাটুন পুলিশ নিয়ে এ নিষ্ফল অভিযান পরিচালিত হয়। অপরদিকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে উপাচার্যের সভাপতিত্বে জরম্নরী সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী ১৮ ফেব্রম্নয়ারি পর্যনত্ম সকল কাস ও পরীা স্থগিত করা হয়েছে।
বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ ॥ মহিউদ্দিনের মৃতু্যতে ছাত্রলীগের সর্বসত্মরের নেতাকমর্ীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। তারা এ ঘটনার জন্য পরোভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায়ী করেছে। ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ জানান, প্রক্টর ড. জসিম উদ্দিন ও ছাত্র উপদেষ্টা ড. তৌহিদ হোসেন চৌধুরী গত এক বছরে ক্যাম্পাসে শিবিরের শক্ত অবস্থান তৈরিতে ব্যসত্ম ছিলেন। তারা সামান্য অজুহাতে ছাত্রলীগ নেতাকমর্ীদের বিরম্নদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতেন। তাদের রহস্যজনক ভূমিকার কারণে চবি ছাত্রলীগে চরম হতাশা বিরাজ করছে। অনেকেই রাগে ােভে সংগঠন থেকে দূরে সরে গেছে ইতোমধ্যে। যার খেসারত হিসেবে পুরো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের আধিপত্যে রয়েছে এবং মেধাবী ছাত্র মহিউদ্দিনের নৃশংস হত্যাকা- ঘটেছে। ছাত্রলীগের আরও অভিযোগ, বর্তমান ভিসি ও প্রশাসন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোকে মিছিল সমাবেশ করতে দেয় না। অথচ শিবির প্রতিনিয়ত তাদের কর্মকা- প্রকাশ্যে চালিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনা প্রগতিশীল শক্তির সকলকে রীতিমতো হতবাক করে রেখেছে। সংশিস্নষ্ট সূত্রসমূহের মতে, ভিসি তার পদ ধরে রাখতে সরকার বিরোধী শক্তিকে মানিয়ে চলার নীতি অবলম্বন করেছেন। পানত্মরে, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সংগঠনকে দাবিয়ে রাখায় সচেষ্ট রয়েছেন-যা সামগ্রিকভাবে চরম দুর্ভাগ্যজনক বলে ছাত্রলীগসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দের অভিমত।
মহিউদ্দিন হত্যাকা-ের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ শুক্রবার বিকেলে লালদীঘি চত্বরে প্রতিবাদ মিছিল করেছে। নগর সভাপতি এমআর আজিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশ ও মিছিলে ছাত্রলীগ সমর্থক মহিউদ্দিন হত্যাকা-ের বিচার দাবি করে জড়িতদের বিরম্নদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। নেতৃবৃন্দ শিবিরের রাজনীতি বন্ধ করার দাবি জানান। অপরদিকে, চবি ছাত্রলীগ বিকেলে ষোলশহর রেল স্টেশন চত্বরে মিছিল ও সমাবেশ করেছে। সমাবেশে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার এবং শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে বিােভ মিছিল বের করা হয়। ছাত্রলীগ নেতারা চবির বিভিন্ন হল থেকে বহিরাগত শিবির সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার এবং সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানান।
চবি প্রশাসনের শোক ॥ মহিউদ্দিন ওরফে মাসুমের মর্মানত্মিক হত্যাকা-ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গভীর শোক দুঃখ প্রকাশ করেছে। ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তথ্য) স্বারিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার জানানো হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছে। যারা এ নির্মম হত্যাকা- ঘটিয়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনার অনুরোধ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। এতে বলা হয়, প্রশাসন মনে করে মহিউদ্দিনের পরিচয় যাই হোক সে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্রছাত্রীকে কোনরকম অনাকাঙ্ৰিত পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে ধৈর্য সহকারে শানত্ম থাকার আহবান জানানো হয়েছে।
শোকাবহ পরিবেশ মহিউদ্দিনের বাড়িতে ॥ জনকণ্ঠের কক্সবাজার ও চকরিয়া সংবাদদাতারা জানান, দুপুরে মহিউদ্দিনের লাশ পুলিশী নিরাপত্তায় ফাসিয়াখালির নোয়াপাড়া গ্রামে পেঁৗছালে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সেখানে আত্মীয়স্বজন, পরিচিতজন ও শুভাকাঙ্ৰীরা রীতিমতো মাতম ও বিলাপ করতে থাকেন। এলাকার নারী-পুরম্নষ নির্বিশেষে সকলেই ছিল অশ্রম্নসজল। এ ধরনের একজন মেধাবী ছাত্রকে অকালে ঝরে যেতে হবে_ এ কল্পনা তাদের কারও মনে ছিল না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মহিউদ্দিন হয়েছেন শিবিরের অপরাজনীতির শিকার। মহিউদ্দিনের লাশ নিয়ে চকরিয়া ও ফাসিয়াখালিতে জামায়াত-শিবির সুবিধা করতে পারেনি। চট্টগ্রামে মর্গে জামায়াত-শিবির মহিউদ্দিনের লাশ যেভাবে তাদের দাবি করে জিম্মি করতে চেয়েছিল তা হতে পারেনি নিহতের গ্রামের বাড়িতে। এলাকার মহিলা এমপি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগেরসহ সভাপতি সাফিয়া খাতুন, আওয়ামী লীগ নেতা সালাউদ্দিন সিআইপি, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ মরহুমের বাড়িতে গিয়ে তাদের শোক জ্ঞাপন করেন এবং জানাজায় অংশ নেন। দাফন কাজে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকমর্ীরা অংশ নেয়।
মামলা ॥ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে গ্রেফতারকৃত জামায়াত-শিবিরের ৮৫ জনের বিরম্নদ্ধে বিশেষ মতা আইনে মামলা করা হচ্ছে। সিএমপির ডিসি (নর্থ) বনজ কুমার মজুমদার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জানান, মামলার প্রস্তুতি চলছে। অপরদিকে, মহিউদ্দিন হত্যাকা-ে বৃহস্পতিবার রাতেই চট্টগ্রাম জিআরপি থানায় একটি মামলা হয়েছে। মহিউদ্দিনের পিতা ফজলুল কাদের অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনকে আসামি করে এ মামলা দায়ের করেছেন। অপরদিকে, ছাত্রলীগের প থেকে পাঁচলাইশ থানায় এ ঘটনা নিয়ে একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে এ রিপোর্ট লেখার সময় জানা গেছে।
No comments