পানির দেশের হাতছানি by আসিফ আহমেদ

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের লবিতে বসলে পুরু কাচের স্বচ্ছতা ভেদ করে চোখ চলে যায় জলাধারে। টলমলে পানি দেখে কার না আনন্দ হয়। মৃদুমন্দ ঝিরঝির শব্দে মনে আসে প্রশান্তির ভাব। রোববার সন্ধ্যায় লবিতে বসে এমন করে মনের ভাব প্রকাশ করেছিলেন যিনি তার জন্ম ও নিবাস সংযুক্ত আরব আমিরাতের ঊষর ভূমিতে।


একাধিক শীর্ষস্থানীয় আর্থিক ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তিনি। তাদের দেশে পানি মহার্ঘ্য। শৈশবে পাঠ্যবইয়ে পড়েছি, মরুর দেশের এক মেয়ের বিয়ে হয়েছিল পানির দেশে। শ্বশুরবাড়ি এসে পাশেই নদীর পানি দেখে যত কলসি আর পাত্র দেখেছে তা ভরে তুলেছে ঘরে। তার ভয় ছিল, নদী যদি শুকিয়ে যায়। আবুধাবি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খামিস মুহাম্মদ বুহারুন স্বদেশে ফিরে যাওয়ার সময় নিশ্চয়ই বাংলাদেশ থেকে পানি নিয়ে যাওয়ার মতো কিছু করবেন না। তবে তিনি যা নিয়ে যাচ্ছেন তা হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এবং তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতি বিষয়ে মুগ্ধতাজনিত আশাবাদ। তিনি জালালেন, এখানের অর্থনীতির অগ্রগতি চীন ও ভারতের মতো সাড়া জাগানো নয় ঠিকই, তথ্যপ্রযুক্তিতেও তাদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার কথা ভাবা যায় না, কিন্তু প্রবৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটালের মধ্যেও ছয় শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং চলতি বছরের প্রথম নয় মাসেই রফতানির ১২ মাসের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ঘটনা ঘটেছে। তিনি ঢাকা এসেছেন ডেটাসফট অ্যারাবিয়া লিমিটেড লাইবিলিটিস কোম্পানির (এলএলসি) আনুষ্ঠানিক সূচনার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। ডাটাসফট নিত্যদিনের জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়ার তৈরিতে সফলতা দেখিয়েছে। তাদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠানটি মোবাইল ফোনের প্রোগ্রাম, ব্রোকারেজ হাউস ও ব্যাংকে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় সফটওয়ার তৈরি করবে। আবুধাবি ইসলামী ব্যাংকের পাশাপাশি বুরুজ প্রোপার্টিজ ও তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান এবং আবুধাবি ফিনান্সিয়াল কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী খামিস মুহাম্মদ বুহারুন ডেটাসফটের সঙ্গে তাদের নতুন উদ্যোগে আগামী তিন বছরের মধ্যে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৭০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করতে ইচ্ছুক। তাদের তৈরি সফটওয়ার বাজার পাবে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে।
বাংলাদেশের সবুজ শ্যামল প্রকৃতি এবং নদনদীর জলরাশি তাকে মুগ্ধ করেছে। তিনি মনে করেন, জ্বালানি ভাণ্ডার ক্রমে সমৃদ্ধ করে তোলার মধ্যেই এ দেশের অর্থনীতির সম্ভাবনার বাস্তবায়ন নিহিত। তথ্য-প্রযুক্তির যে বিপুল বিকাশ, তার খবর তিনি রাখেন। তবে বাংলাদেশের জন্য সুযোগ হচ্ছে এখানে ব্যয় তুলনামূলক কম। নিজের দেশে তিনি দেখেছেন, বাংলাদেশের অনেক কর্মী ক্লিনার বা এ ধরনের পেশায় নিযুক্ত রয়েছে। সৌদি আরব, বাহরাইন, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে যে লাখ লাখ বাংলাদেশি কাজ করে তাদেরও প্রায় সবাই অদক্ষ। এমন দেশে বিশ্ববাজার ধরার জন্য সফটওয়্যার তৈরির উপযুক্ত একদল কর্মী তৈরি হয়ে আছে এবং বিদ্যমান অবকাঠামো সুবিধা কাজে লাগিয়ে আরও কর্মী গড়ে তোলা সম্ভব, সে ধারণা করা কঠিন ছিল। কিন্তু দ্রুতই তিনি নতুন এক বাংলাদেশ আবিষ্কার করেন, যেখানে অর্থ বিনিয়োগে ভরসা মেলে। খামিস মুহাম্মদ বুহারুন মনে করেন তাদের গ্রুপ অব কোম্পানির প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও সে দেশের আরও কিছু প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসতে পারে। ঢাকায় অবস্থানকালে শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা থেকে এখানের পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালো ধারণা পেয়েছেন। এখানে নতুন বিমান বন্দর হতে পারে। প্রয়োজন আধুনিক মানের হোটেল। নতুন রেলপথ স্থাপন ও রেলস্টেশন নির্মাণ, ফ্লাইওভার, বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রভৃতি ক্ষেত্রেও বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। কার্গো বিমান ব্যবসাও সম্ভাবনাপূর্ণ খাত বলে তার ধারণা।
বাংলাদেশের জলপথ সম্পর্কে তার ধারণা নেই। কিন্তু বিমানবন্দর থেকে মূল শহরে প্রবেশের সময় সড়কপথে পড়েছেন যানজটে। তবে নিজের দেশেরও এ সমস্যা রয়েছে। তার এক সহযোগী জানালেন, সকাল সাড়ে ৮টায় রওয়া দিয়ে যে এলাকায় পৌঁছাতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে, সাড়ে ৯টায় পৌঁছাতে লাগে আড়াই ঘণ্টা। এ কারণে তিনি সাড়ে ৯টাতেই প্রতিদিন বের হন। পাঁচ বছর আগে থাইল্যান্ডেও এ ধরনের সমস্যা ছিল। তারা মেট্রো রেলপথ ও ফ্লাইওভার নির্মাণ করে এ সমস্যার সমাধান করেছে। ঢাকায় আরও বেশিসংখ্যক ফ্লাইওভার এবং মাটির নিচে অনেক সড়ক নির্মাণ করে যানজট সমস্যার মোকাবেলা করা সম্ভব। রিকশা ব্যবস্থাপনা করা গেলেও যানবাহনের গতি বাড়বে। বিমানবন্দর থেকে মূল শহরে প্রবেশের পথ যথেষ্ট উন্নত বলেই তার মনে হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.