লালমনিরহাট সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে গরু ব্যবসায়ী নিহত- আজ লাশ হস্তান্তর

জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর সংলগ্ন বুড়িবাড়ী সীমান্তে শনিবার আনুমানিক রাত সোয়া দশটায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশী নাগরিক বাবুল হোসেন নামের এক গরু ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। বিএসএফের হাতে নিহত বাবুল হোসেন ওরফে ভেড়া বাবুল একই সীমান্তের ডাঙ্গাপাড়া গুচ্ছগ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে।


প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র ও সীমান্ত গ্রামবাসী জানান, বাংলাদেশী কয়েকজন গরু ব্যবসায়ীর সঙ্গে বুড়িমারী সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শনিবার রাতে গরু আনতে যায় সে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গরু ব্যবসায়ী জানান, বুড়িমারী স্থলবন্দর ও ভারতীয় চ্যাংড়াবান্ধা বিএসএফ ক্যাম্পের মধ্যস্থল ৮৪৩ নম্বর মেইন পিলারের কাছে গেলে বাংলাদেশী গরু ব্যবসায়ীর দলটি ভারতীয় চ্যাংড়াবান্ধা বিএসএফ ক্যাম্পের টহল দলের সামনে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে বিএসএফ জওয়ানরা তাদের লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে। ১টি বুলেট বাবুলের দেহে এসে লাগে। গুলিবিদ্ধ হয়ে বাবুল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অন্য সঙ্গীরা প্রাণ বাঁচাতে যে যেদিকে পেয়েছে দৌড়ে পালিয়ে গেছে। বাবুল ঘটনাস্থলেই মারা যায়। বিএসএফ নিহত বাবুলের লাশ গুম করতে ধরলা নদীতে ফেলে দেয়। বাবুলের অন্য সঙ্গীরা দেশে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। রবিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত গ্রামবাসীরা ধরলা নদীর তীরে ভারতীয় এলাকায় নিহতের লাশ পড়ে থাকতে দেখেছে।
লালমনিরহাট ৩১ বর্ডার গার্ডের (বিজিবির) অধিনায়ক লে. কর্নেল খান মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, বেলা ১১টার পর লাশটি ভারতীয় চ্যাংড়াবান্ধা বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পরে বুড়িমারী সীমান্তে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে নিহতের স্বজনরা লাশটি শনাক্ত করেছে।
বর্তমানে লাশটি ভারতীয় পুলিশের মাধ্যমে বিএসএফ পোস্টমর্টেম করছে। সোমবার কোন এক সময়ে দু’দেশের সীমান্ত বাহিনীর ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের পর হস্তান্তর করবে বলে বিএসএফ জানিয়েছে। সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
এেিদক ভারতীয় গরু ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশী গরু ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৫-৬ মাস ধরে গরু ব্যবসার কোটি কোটি টাকা লেনদেন নিয়ে মন কষাকষি চলছে। এ কারণে লালমনিরহাটে বেশ কয়েক প্রভাবশালী গরুর ব্যবসা থেকে সাময়িক অব্যাহতি নিয়েছে। সেসব ব্যবসায়ীর জায়গা দখল করে নিয়েছে অন্য একটি গ্রুপ। এ ব্যবসার দ্বন্দ্ব হিসেবে বিএসএফকে কাজে লাগিয়ে গরু ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হতে পারে বলে গরু ব্যবসায়ীদের কয়েকজন মন্তব্য করেছে। সামনে কোরবানির ঈদ। এ ঈদে ভারত থেকে কয়েক হাজার গরু লালমনিরহাট সীমান্ত দিয়ে আসবে। গরুর ব্যবসা হবে কয়েক শত কোটি টাকার। এ ব্যবসার আধিপত্য নিয়েও এ হত্যাকা-টি ঘটতে পারে। কারণ গরুর ব্যবসা ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে ওপেন সিক্রেট। গরু ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত সরকার ধর্মীয় কারনে রাজনৈতিক ভাবে বাংলাদেশে গরু রফতানি করতে পারছে না তাই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রচ্ছন্ন মদদে বাংলাদেশে গরু আসছে। তেমনি বাংলাদেশে মুসলমানদের খাদ্যাভাসের কারণে গরুর মাংসের চাহিদা বেশি। এ ছাড়াও সামনে কোরবানির ঈদ। গরুর চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিজিবিও সীমান্তে গরু ব্যবসাকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.