জবানবন্দিতে আসামিপক্ষের প্রথম সাক্ষী- সাঈদীর বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করেনি

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামিপক্ষের প্রথম সাক্ষী মো. শামছুল আলম তালুকদার (৬৮) জবানবন্দিতে বলেছেন, ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে তিনি পিরোজপুরের পারেরহাটে গিয়েছিলেন।


ওই সময় স্থানীয় লোকজন অনেক রাজাকারের অত্যাচারের কথা বললেও সাঈদীর বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করেনি।
বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ গতকাল রোববার শামছুল আলমের জবানবন্দি নেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মনজুর আহমেদ আনসারী। শারীরিক কারণে সাঈদী ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন না।
বর্তমানে বাগেরহাটের বিএনপির নিষ্ক্রিয় নেতা শামছুল আলম জবানবন্দিতে বলেন, ‘৮ ডিসেম্বর মেজর জিয়াউদ্দিনসহ পারেরহাটে যাই। মেজর জিয়াউদ্দিন সেখানে ১০-১৫ মিনিট ছিলেন। আমাকে উনি সব অবস্থা জেনে দুই-তিন ঘণ্টা পর পিরোজপুর যেতে বলেন। সেখানে আমাদের কমান্ডার খসরু, মোকাররম, লিয়াকত আলী, বাতেন, মুনাম, সানু খন্দকারসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা এবং স্থানীয় মানুষ মোসলেম মাওলানা, দানেশ মোল্লা, সেকেন্দার শিকদার, রাজ্জাক, দুজন চৌকিদারসহ আরও কয়েকজনের অত্যাচারের বর্ণনা দেন। ওই সময় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সম্পর্কে আমাকে কেউ কিছু বলেনি।’ পরে তিনি বলেন, সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী তাঁকে অনুরোধ করেছেন, যা সত্য তিনি যেন তাই বলেন। তিনি সাক্ষ্যে কোনো মিথ্যা বলেননি।
প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টার জবানবন্দিতে এই সাফাই সাক্ষী বলেন, ১৯৬৯ সালে তিনি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপে যোগ দেন। তিনি দাবি করেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মেজর জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন এবং সুন্দরবনে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প স্থাপন করেছিলেন।
জবানবন্দি শেষে শামছুল আলমকে জেরা করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি সৈয়দ হায়দার আলী। জেরায় কয়েকটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ন্যাপ থেকে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট হয়ে ১৯৭৯ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তবে এখন নীরব আছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপিতে থাকা অবস্থায় তিনি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কারণে মামলা করেছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মত (সাজেশন) দেন, বিএনপি ও জামায়াত জোটবদ্ধ থাকায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ডে সাঈদীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ থাকলেও এই সাক্ষী তা গোপন করে অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন। সাক্ষী বলেন, এটা সত্য নয়। কৌঁসুলি মত দেন, ওই সময় সাঈদী সম্পর্কে কেউ কিছু বলেনি, এমন কথা সাঈদীর ছেলে শিখিয়ে দেওয়ায় তিনি তা বলেছেন। সাক্ষী এ মতেরও বিরোধিতা করেন।
ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় আসামিপক্ষের দ্বিতীয় সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।
সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলায় দশম সাক্ষীকে জেরা: একই ট্রাইব্যুনালে গতকাল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের দশম সাক্ষী কাজী মো. নুরুল আবছারকে জেরা করেন আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী আহসানুল হক। সাকা চৌধুরী এ সময় আসামির কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। আজ সোমবার আবছারকে আবার জেরা করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.