স্বপ্নের ছোঁয়া রান্নাঘর

কারও মন জয় করতে ভাল খাবারের জুড়ি নেই। আর সেই খাবার তৈরি হয় রান্নাঘরে বা হেঁশেলে। তাই খাবারের কর্মশালাটি হতে হবে নিখুঁত, পরিপাটি অর্থাৎ হেঁশেলকে করে তুলতে হবে বাড়ির প্রাণকেন্দ্র। কারণ গৃহিণীর সকালের ব্যস্ততার শুরু এখান থেকেই। ঘুম থেকে উঠেই চা করার প্রস্তুতি।
চা পর্ব মিটতে না মিটতেই শুধু নাস্তা ও ছেলেমেয়ের টিফিন বানানো। এসব মিটে গেলে পরের পূর্ব দুপুরের খাবার তৈরি করার। এভাবেই কখনও ব্রেকফাস্ট, কখনও লাঞ্চ, কখনও ডিনারের জন্য দিনের বেশ অনেকটা সময়ই বাড়ির যে অংশের ব্যস্ততা থাকে সব থেকে বেশি তা হলো রান্নাঘর। বাড়ির গৃহকর্ত্রীকে যেখানে দিনের অনেকটা সময়ই কাটাতে হয়, সেই জায়গাটিকেও তো হতে হবে কেতাদুরস্ত। হতে হবে ওয়েল ইক্যুইপড। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাই ভোল বদল হয়েছে রান্না ঘরেরও। এখন যে কোন রান্নাঘরেই জায়গা করে নিয়েছে মিক্সার, মাইক্রোওয়েভ, টোস্টার, স্যান্ডউইচ মেকার, কফি মেশিন, থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক চিমনি। এই সবই কাজ সহজ করার উপায়। সেই সঙ্গে রান্নাঘরও হয়ে গিয়েছে অনেক বেশি কমপ্যাকট। ওয়ার্ক ফ্রেন্টলি। নিজের সুবিধে এবং প্রয়োজনমতো গুছিয়ে নিন আপনার রান্নাঘর। দেয়া হলো কয়েকটি টিপস।
১. ঠিকমতো বাতাস চলাচল : রান্নাঘরে একজস্ট ফ্যান থাকা আবশ্যক। রান্নার সময় যে ধোঁয়া বের হয় তা ঘরের বাইরে বের করে দেয়াটাই এই ফ্যানের কাজ। সাধারণ একজস্ট ফ্যানে কাজ হলেও, ঠিক চুলার ওপর ইলেক্ট্রিক চিমনি লাগালে সবচেয়ে কার্যকর হয়। তেলকালি এবং ধোঁয়া শুধুমাত্র এই পথেই বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। রান্নাঘর তেলকালি ধোঁয়া এবং গন্ধমুক্ত থাকে। এই চিমনিতে লাইট লাগানো থাকে যাতে রান্নার সুবিধা হয়।
সঠিক আলোর ব্যবস্থা : রান্না স্বাভাবিক আলো যেন থাকে সেটা সর্বাগ্রে দেখা প্রয়োজন। আর যদি তা না থাকে তাহলে কৃত্রিম আলো লাগাতেই হবে। অন্তত তিনটি লাইটের পয়েন্ট থাকতেই হবে। ক) রান্নার জায়গায়, খ) কাটাকুটি বা অন্যান্য প্রস্তুতির জায়গায়, গ) ধোঁয়ার জায়গায়।
ডবল সিংক
পাশাপাশি দু’টি সিংক থাকলে অনেক রকম সুবিধা হয়। একটিতে বাসন মাজা আর অন্যটিতে বাকি ধোয়াধুয়ির কাজ করা যেতে পারে। তাই দু’টি সিংক এবং তার দু’পাশে যথেষ্ট কাউন্টার স্পেস থাকা দরকার। কোনটিতে কী কাজ হবে তাও নির্দিষ্ট থাকা উচিত।
কাজের ত্রিভুজ
রান্নাঘরের প্রধান তিনটি আসবাব হলো ফ্রিজ, কুকার, সিংক। এই তিনটি আসবার যদি ত্রিভুজাকারে থাকে যাতে সবচেয়ে কম চলাফেরা করে রান্নার কাজ করা যায়, তাহলে সবচেয়ে ভাল হয়। গ্যাস কুকার থেকে সিংক-৪ থেকে ৬ ফুট, ফ্রিজ থেকে গ্যাস কুকার-৪ থেকে ৯ ফুটÑ এভাবে থাকলে সবচেয়ে সুবিধাজনক হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্রিভুজে সব কটি ভুজের যোগফল ১৫ ফুটের কম বা ২২ ফুটের বেশি হওয়া উচিত নয়।

ইলেকট্রিক্যাল সরঞ্জাম
আধুনিক যুগে রান্নার কাজ সহজ করার জন্য নানা রকম সরঞ্জম রয়েছে। এতে সহজে কম সময়ে কাজ করা সম্ভব। এতে খাবারেও অনেক বৈচিত্র্য আসে। রাইস কুকার, মিক্সার গ্রাইন্ডার, আভেন-গ্রিল, মাইক্রোওয়েভ, ওয়াটার পিউরি ফায়ার ইত্যাদি। তবে এগুলো শোকেসে না রেখে রান্নাঘর অথবা ডাইনিং স্পেসের একদিকে রাখবার ব্যবস্থা করা উচিত। যাতে সময়মতো ব্যবহার করা যায়। এবং সব ক’টি ইলেকট্রিক্যাল পয়েন্ট যেন কাজ করে সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। বাড়িতে ছোট বাচ্চা থাকলে ইলেকট্রিক পয়েন্ট উপরে করে নেবেন। কলের ওপর ওয়াটার (পিউরিফায়ার) থাকা উচিত।

স্টোর
এখনকার ফ্ল্যাট বাড়িতে আলাদা স্টোর রাখা সম্ভব হয় না। সেজন্য রান্নাঘরে যথেষ্ট সংখ্যক দেয়াল আলমারি থাকা উচিত। চাল, ডাল, মসলাপাতি রাখা যায়। যাতে তালা বন্ধ করে রাখা যায়। এ ছাড়া স্পেস থাকলে অ্যাডজাস্টেবল শেলফ বা আলমারি (ফ্রিজের মতো) রাখতে পারেন। এতে বাড়তি জায়গা পাওয়া যায়। বেশি এবং কম দরকারী জিনিসপত্রের জন্য আলাদা আলাদা জায়গা থাকা দরকার।

উষ্ণ রং
রান্নাঘরের দেয়াল উষ্ণ অর্থাৎ উজ্জ্বল রঙের হওয়া উচিত।
তবে আধুনিক রান্নাঘরে টাইলস ব্যবহার করা হয়। এগুলো ব্যবহার করলে রান্নাঘর পরিষ্কার রাখার সুবিধা হয় আপনার বাজেট অনুযায়ী টাইলস ব্যবহার করুন। অপেক্ষাকৃত কম দামেও ভাল জিনিস পাওয়া যায়। টাকার থেকেও যেটা বেশি দরকার তা হলো আধুনিকভাবে রান্নারঘর সাজানোর ইচ্ছে এবং মানসিকতা। ছোট বড় যাই হোক রান্নাঘরে থাকবে আপনার নিজস্ব ছাপ।
এখানে একটা কথা বলা দরকারÑ বর্তমানে ফ্ল্যাটগুলোতে জায়গার খুব সমস্যা তাই আলাদা করে, ডাইনিং রুমের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। স্পেসের এই সমস্যা মেটানোর জন্যেই আপনি ‘ওপেন কিচেন’ অথবা ডাইনিং ইন কিচেন করার ব্যবস্থা রাখতে পারেন।
কিচেনের ডে কার কাঠ থেকে শুরু করে সিøক স্টিলও ব্যবহার করতে পারেন। আর রান্নাঘরে কাজ করার সময়েও যাতে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন তার জন্যও ‘ওপেন কিচেন’ ধারণা একেবারে সঠিক। এছাড়া ঘর আর রান্নাঘরের মধ্যে পাটিশন হিসেবে অনায়াসেই ব্যবহার করতে পারেন স্বচ্ছ কাঁচ বা ফাইবার। এতে একদিকে যেমন রান্নাঘরকে আলাদাও রাখা যাবে তেমনই রান্নাঘরে থাকলে মনে হবে না যে বাড়ির অন্য সব কিছুর থেকে আপনি বাদ পড়ে যাচ্ছেন। সামান্য এক্সপেরিমেন্ট আর অনেকটা ফ্যাশনÑ এই দুটোর যোগ ফলে তৈরি হবে আপন স্বপ্নের ছোঁয়া রান্নাঘর।
শেখ মিলন

No comments

Powered by Blogger.