যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে অদৃশ্য লড়াই by ফ্রেড হিয়েট
সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য গত ২৫ আগস্ট সোমবার রিপাবলিকানদের সমাবেশ ঘটল টম্পায়। সেদিনই উইন্ডসরের ক্রিস্টোফার জে বার্ডওয়েল নিহত হলেন আফগানিস্তানে। তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন সার্জেন্ট। আফগানিস্তানে তৃতীয়বারের মতো দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার যখন সম্মেলন শুরু হলো, সেনাবাহিনী আরেকজন সদস্যকে হারিয়েছে বলে নিশ্চিত হলো। তিনি ম্যাব্রি জে অ্যান্ডার্স। ঠিকানা, বেকার সিটি। বয়স ২১ বছর। সেসময় মিত্রবাহিনীর আরেকজন সৈন্যকেও হারাতে হয়েছে সেখানেযদিও তার নাম-ঠিকানা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি তারা। এগুলো ঘটিয়েছে পূর্ব আফগানিস্তানে বিদ্রোহী বাহিনীর সদস্যরা। সবই হয়েছে তাদের অতর্কিত হামলায়।
সম্মেলনের শেষদিন বৃহস্পতিবার মিত্রবাহিনীর আরো তিনজনকে খুন করা হয়েছে আফগানিস্তানে। ওই দিনই সকালে যখন মিট রমনি তাঁর বক্তৃতা প্রদান করছিলেন, তখন করোনার শ্যান কানটুর মরদেহ ডোভার বিমান ঘাঁটিতে এসে পৌঁছেছে। তিনি আফগানিস্তানে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মৃত্যুর মুখে পতিত হন। তিনি নিহত হন সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বোমার আঘাতে, যা ঘাঁটির দেওয়াল ঘেঁষে তারা নিক্ষেপ করেছিল। এই তথ্য ডেট্রয়েট ফ্রি প্রেসকে সরবরাহ করেছেন শ্যান-এর এককালের ফুটবল কোচ।
বৃহস্পতিবার রাতে রমনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেন। বলা হয়ে থাকে, এই বক্তৃতাটি ছিল তাঁর জীবনের সেরা ভাষণ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে জানিয়েছেনকোন্ কারণে তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে চান। আর কিভাবেই বা তিনি দেশকে পরিচালনা করতে চান। একইসঙ্গে তিনি আফগানিস্তানযুদ্ধের শেষ সময় নিয়েও কথা বলেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় এ ধরনের যুদ্ধ পরিস্থিতি কি উহ্য থাকতে পারে? সেপ্টেম্বরের শেষাংশে ৬৮ হাজার সৈন্য মোতায়েন থাকবে সেখানে। এটা সহজেই অনুমান করা যায়, এই সৈন্যদের অধিকাংশই আফগানিস্তানের দুর্গম এলাকায় বিপদের মুখোমুখি হচ্ছে। প্রায় ২১০০ সেনা নিহত হয়েছে আফগানিস্তানে। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই মারা গেছে সাম্প্রতিক বছরগুলোয়।
যদিও মনে করা হচ্ছে, আমেরিকানদের অনেকেই সেই যুদ্ধের কথাগুলো ভুলে যেতে বসেছে, তবু বিতর্ক তো রয়েই গেছে। পরবর্তীকালে তারা কিভাবে পরিচালিত হবে, তা নিয়ে। ২০০৯ সালে বারাক ওবামা আফগানিস্তান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেন। আফগানরা তখন থেকে যুদ্ধকে নিজেদের মনে করতে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রত্যাহারের আগে প্রাপ্তির বিষয়টি কি চিন্তা করা হয়েছে? অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন কি সম্ভব হয়েছে এতে?
গত গ্রীষ্মে বারাক ওবামা তাঁর জেনারেলদের নির্দেশ দিয়েছেন ২০১১ সালেই সেখান থেকে ১০ হাজার সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য। এই গ্রীষ্মে তিনি অতিরিক্ত ২৩ হাজার সেনা প্রত্যাহার করে নিতে বলেছেন। তিনি বলেছিলেন, আফগান যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা এখন কমে এসেছে। বরং তারা দেশে এসে জাতিগঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রকে গত জানুয়ারিতে ৩৪, ফেব্রুয়ারিতে ২৪, মার্চ ৩৯, এপ্রিলে ৩৯, মে'তে ৪৫, জুনে ৩৯, জুলাইয়ে ৪৬ ও আগস্ট মাসে ৫৩ জন সেনা হারাতে হয়েছে।
সেনা প্রত্যাহারের সময় দেওয়া ঘোষণার সমালোচনা করেছেন রমনি। তিনি চূড়ান্ত লক্ষ্য নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন। ন্যাটো বাহিনী হালে সেই ধারণাকেই গ্রহণ করেছে। তারা মনে করছে, ২০১৪ সালের শেষের দিকে তাদের প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।
বড় একটি প্রশ্ন কিন্তু দেখা দিয়েছে এরই মধ্যে। প্রশ্নটা হচ্ছে, আগামী বছরে কত দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের সেখান থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ও টম্পা সম্মেলনে যোগ দেওয়ায় অনেকেই আমাকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র মিশন এখনো সেখানে সফলজনক অভিযান পরিচালনা করে চলেছে। তবে ঝুঁকি কিন্তু ক্রমবর্ধমান। এ কারণে পরবর্তী গ্রীষ্মে সেনা প্রত্যাহার করা ঠিক হবে কি না, ভেবে দেখতে হবে।
২০১৪ সালের পর সেখানে সন্ত্রাস দমন ও প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য কী পরিমাণ সেনা অবস্থান করবে?
আমেরিকানরা যুদ্ধ নিয়ে ভাবতে চান না। এটাও সত্য, প্রার্থীরাও বিষয়টি নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করতে চান না। কিন্তু তার পরও কথা থেকে যায়, তাঁরা কি বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে পারবেন? রমনি কিন্তু তাঁর ভাষণে ঠিকই আফগান প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। কিন্তু দেশের সেনাদের যুদ্ধে পাঠিয়ে তা নিয়ে বিতর্ক করাটা কতটা যৌক্তিক? আমি মনে করি, প্রেসিডেন্টের উচিত বিষয়টি সম্পর্কে জাতিকে স্পষ্টভাবে জানানো।
লেখক : এডিটরিয়েল পেইজ এডিটর, ওয়াশিংটন পোস্ট।
ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন।
সম্মেলনের শেষদিন বৃহস্পতিবার মিত্রবাহিনীর আরো তিনজনকে খুন করা হয়েছে আফগানিস্তানে। ওই দিনই সকালে যখন মিট রমনি তাঁর বক্তৃতা প্রদান করছিলেন, তখন করোনার শ্যান কানটুর মরদেহ ডোভার বিমান ঘাঁটিতে এসে পৌঁছেছে। তিনি আফগানিস্তানে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মৃত্যুর মুখে পতিত হন। তিনি নিহত হন সশস্ত্র বিদ্রোহীদের বোমার আঘাতে, যা ঘাঁটির দেওয়াল ঘেঁষে তারা নিক্ষেপ করেছিল। এই তথ্য ডেট্রয়েট ফ্রি প্রেসকে সরবরাহ করেছেন শ্যান-এর এককালের ফুটবল কোচ।
বৃহস্পতিবার রাতে রমনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেন। বলা হয়ে থাকে, এই বক্তৃতাটি ছিল তাঁর জীবনের সেরা ভাষণ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে জানিয়েছেনকোন্ কারণে তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে চান। আর কিভাবেই বা তিনি দেশকে পরিচালনা করতে চান। একইসঙ্গে তিনি আফগানিস্তানযুদ্ধের শেষ সময় নিয়েও কথা বলেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় এ ধরনের যুদ্ধ পরিস্থিতি কি উহ্য থাকতে পারে? সেপ্টেম্বরের শেষাংশে ৬৮ হাজার সৈন্য মোতায়েন থাকবে সেখানে। এটা সহজেই অনুমান করা যায়, এই সৈন্যদের অধিকাংশই আফগানিস্তানের দুর্গম এলাকায় বিপদের মুখোমুখি হচ্ছে। প্রায় ২১০০ সেনা নিহত হয়েছে আফগানিস্তানে। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই মারা গেছে সাম্প্রতিক বছরগুলোয়।
যদিও মনে করা হচ্ছে, আমেরিকানদের অনেকেই সেই যুদ্ধের কথাগুলো ভুলে যেতে বসেছে, তবু বিতর্ক তো রয়েই গেছে। পরবর্তীকালে তারা কিভাবে পরিচালিত হবে, তা নিয়ে। ২০০৯ সালে বারাক ওবামা আফগানিস্তান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেন। আফগানরা তখন থেকে যুদ্ধকে নিজেদের মনে করতে থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রত্যাহারের আগে প্রাপ্তির বিষয়টি কি চিন্তা করা হয়েছে? অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন কি সম্ভব হয়েছে এতে?
গত গ্রীষ্মে বারাক ওবামা তাঁর জেনারেলদের নির্দেশ দিয়েছেন ২০১১ সালেই সেখান থেকে ১০ হাজার সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য। এই গ্রীষ্মে তিনি অতিরিক্ত ২৩ হাজার সেনা প্রত্যাহার করে নিতে বলেছেন। তিনি বলেছিলেন, আফগান যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা এখন কমে এসেছে। বরং তারা দেশে এসে জাতিগঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রকে গত জানুয়ারিতে ৩৪, ফেব্রুয়ারিতে ২৪, মার্চ ৩৯, এপ্রিলে ৩৯, মে'তে ৪৫, জুনে ৩৯, জুলাইয়ে ৪৬ ও আগস্ট মাসে ৫৩ জন সেনা হারাতে হয়েছে।
সেনা প্রত্যাহারের সময় দেওয়া ঘোষণার সমালোচনা করেছেন রমনি। তিনি চূড়ান্ত লক্ষ্য নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন। ন্যাটো বাহিনী হালে সেই ধারণাকেই গ্রহণ করেছে। তারা মনে করছে, ২০১৪ সালের শেষের দিকে তাদের প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।
বড় একটি প্রশ্ন কিন্তু দেখা দিয়েছে এরই মধ্যে। প্রশ্নটা হচ্ছে, আগামী বছরে কত দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের সেখান থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ও টম্পা সম্মেলনে যোগ দেওয়ায় অনেকেই আমাকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র মিশন এখনো সেখানে সফলজনক অভিযান পরিচালনা করে চলেছে। তবে ঝুঁকি কিন্তু ক্রমবর্ধমান। এ কারণে পরবর্তী গ্রীষ্মে সেনা প্রত্যাহার করা ঠিক হবে কি না, ভেবে দেখতে হবে।
২০১৪ সালের পর সেখানে সন্ত্রাস দমন ও প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য কী পরিমাণ সেনা অবস্থান করবে?
আমেরিকানরা যুদ্ধ নিয়ে ভাবতে চান না। এটাও সত্য, প্রার্থীরাও বিষয়টি নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করতে চান না। কিন্তু তার পরও কথা থেকে যায়, তাঁরা কি বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে পারবেন? রমনি কিন্তু তাঁর ভাষণে ঠিকই আফগান প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। কিন্তু দেশের সেনাদের যুদ্ধে পাঠিয়ে তা নিয়ে বিতর্ক করাটা কতটা যৌক্তিক? আমি মনে করি, প্রেসিডেন্টের উচিত বিষয়টি সম্পর্কে জাতিকে স্পষ্টভাবে জানানো।
লেখক : এডিটরিয়েল পেইজ এডিটর, ওয়াশিংটন পোস্ট।
ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন।
No comments