চিকিৎসা সেবার করুণ হাল

চিকিৎসা সেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। বর্তমান সরকার স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও এখনও মানুষের শতভাগ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে অর্থ প্রদানে অক্ষমতার কারণে কোন গরিব রোগী যাতে চিকিৎসা সেবা


থেকে বঞ্চিত না হন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের অভাব, নার্স ও স্বাস্থ্যসহকারী না থাকা, ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদির অভাবে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হওয়ার খবর মাঝেমধ্যেই গণমাধ্যমে আসে।
প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার না থাকায় সঙ্কটে পড়েছে স্বাস্থ্য খাত। সরকারী হাসপাতালগুলোতে হাজার হাজার পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য আছে। এছাড়া নার্স, টেকনিশিয়ান ও হেলথ এ্যাসিস্ট্যান্ট মিলিয়ে শূন্যপদের সংখ্যাও অনেক। জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯ জন ডাক্তারের স্থলে গড়ে ৩ জন ডাক্তার রয়েছেন। এ অবস্থায় রোগীরা এসব হাসপাতালে কি ধরনের চিকিৎসা পাচ্ছেন তা সহজেই অনুমেয়।
এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে একজন চিকিৎসকের কাজে সহায়তার জন্য ৩ জন নার্স, ৫ জন স্বাস্থ্য সহকারী প্রয়োজন। কিন্তু জনবল না থাকায় বর্তমানে দেশে একজন চিকিৎসককে সহায়তা করেন দশমিক ৫৪ নার্স এবং দশমিক ২৭ স্বাস্থ্য সহকারী। দেশের ৫শতাধিক সরকারী হাসপাতালে এভাবেই চিকিৎসা সেবা চলছে। শহরের তুলনায় গ্রামের হাসপাতালের অবস্থা আরও করুণ। সেখানে জনবলসহ ওষুধ এবং অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামের সঙ্কট চরমে। তাই গ্রামে পর্যাপ্ত সেবা না পেয়ে রোগীরা শহরমুখী হচ্ছে। জেলা এবং বিভাগীয় হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। এ কারণে রোগীর চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। স্থানীয় হাসপাতালে নানা ধরনের সঙ্কট থাকায় তাদেরকে সারাক্ষণই একটা শঙ্কার মধ্যে থাকতে হচ্ছে।
দেশে বর্তমানে ২৭৮৫ নাগরিকের জন্য ডাক্তার রয়েছেন মাত্র একজন। এছাড়া সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে ডাক্তারদের অনুপস্থিতির হার বাড়ছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের হাসপাতালে এই হার বেশি। জানা গেছে প্রতিদিন গড়ে ৬ হাজারেরও বেশি ডাক্তার হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকেন। যেখানে সেখানে গজিয়ে উঠছে বেসরকারী হাসপাতাল-ক্লিনিক। এমনকি সরকারী হাসপাতালের কয়েক শ’ গজ দূরেই গড়ে উঠেছে প্রাইভেট ক্লিনিক। ডাক্তাররা এখন সরকারী হাসপাতালে সময় দেয়ার চেয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে অধিক মনোযোগী। এ অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্যসেবার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত নিয়ে অবহেলার কোন সুযোগ নেই। মানুষের এই মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা একটি গণতান্ত্রিক সরকারের দায়িত্ব।

No comments

Powered by Blogger.