চারদিক- আলোর ঝরনাধারায় কুয়েট by মনোজ কুমার মজুমদার

১ সেপ্টেম্বরের কথা বলছি। সেদিনই তো আলোর ঝরনাধারায় ভেসে বেড়াল কুয়েট—খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। গ্রাম্য নিস্তব্ধতা, সুশীতল সবুজের অফুরন্ত সমারোহ এই কুয়েটে। ভৈরব আর রূপসী রূপসার আলিঙ্গন। তাদের শান্ত কলতান, পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা সারি সারি বাংলার সোনালি আঁশের কারখানা।


সবুজ ফসলের খেত আর মাছভরা জলাশয়, প্রকৃতির অদ্ভুত সাজ আর সরল-সহজ মানুষের যাপিত জীবন। কাঠবিড়ালির সতর্ক চাহনি, দ্রুত চলে যাওয়া। বর্ণালি পাখির মনোমুগ্ধকর কিচিরমিচির। শিল্পনগর খুলনার এক প্রান্তে গ্রাম্য সরলতার মধ্যেই খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হলো খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। দিনটিকে স্মরণীয় করতে সেজেছিল পুরো বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বত্রই ছিল সাজসাজ রব। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা এককাট্টা হয়ে আনন্দ-উৎসবে মুখরিত হয়েছেন নিজেরা এবং মুখরিত করে তুলেছিলেন ক্যাম্পাস। ছিল প্রীতি সমাবেশ, বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা, বৃক্ষরোপণ, রক্তদান কর্মসূচি, সেমিনার, আলোচনা সভা, জার্নাল অব ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স-এর মোড়ক উন্মোচন, ছাত্র-শিক্ষক প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ, ফিল্ম প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান। শিক্ষার্থীরাও নিজেদের উদ্যোগে আয়োজন করেছেন সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠান সফল করতে যন্ত্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ এন এম মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক এবং পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ হারুনুর রশীদকে সদস্যসচিব করে মূল কমিটি এবং পাঁচটি উপকমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদ্যাপন কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক এবং বিভিন্ন শাখা ও বিভাগের কর্মকর্তারা। সমগ্র অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর।
সকাল ১০টা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, এরপর উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা। ঘোড়া, ঘোড়ার গাড়ি, ঢোল, বাঁশি, বর্ণময় সাজ আর অফুরন্ত আনন্দে শুরু হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রার আগেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর বৃক্ষরোপণ, রক্তদান কর্মসূচি, সেমিনার, আলোচনা ও জার্নালের মোড়ক উন্মোচন—একে একে সবই চলতে থাকে। বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় ছাত্র-শিক্ষক প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ, ফিল্ম প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
খুলনা শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তরে ফুলবাড়ীগেট এলাকায় ১০১ একর এলাকা নিয়ে মনোরম পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। বর্তমানে তিনটি অনুষদের অধীনে ১৪টি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। এ ছাড়া দুই শতাধিক শিক্ষক, প্রায় ১০০ কর্মকর্তা এবং আড়াই শতাধিক কর্মচারী দিয়ে চলছে কুয়েটের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরকৌশল, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল, যন্ত্রকৌশল, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল, ইলেকট্রনিকস ও কমিউনিকেশন কৌশল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা, এনার্জি টেকনোলজি, বায়ো-মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত ও মানবিক বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স রয়েছে। অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই আরও বেশ কয়েকটি বিভাগের কার্যক্রম শুরু হবে এবং অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন, বিভাগ ও লোকবল আরও বাড়বে বলে জানা গেছে।
১৯৬৭ সালে খুলনা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৭৪ সালে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীকালে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে, অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও খুলনাবাসীর ধারাবাহিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি), খুলনা। এরপর সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশের আরও তিনটি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিসহ এ প্রতিষ্ঠানকে ২০০৩ সালে সরকার প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে। যাত্রা শুরু হয় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে কুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘কুয়েট দেশের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের স্বপ্নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আজকের এই দিনে আমি অভিভূত ও আনন্দিত। দেশের এবং শিক্ষার উন্নয়নে কুয়েট সব সময় কাজ করে যাবে।’ বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের উদ্বোধন ঘোষণা করে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। বর্তমানে দেশে এবং দেশের বাইরে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা সফলতার সঙ্গে কাজ করছে, যা আমাদের গর্বিত করে। এর সাফল্য দিন দিন বৃদ্ধি পাবে, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের এই শুভক্ষণে এ প্রত্যাশা করি।’
মনোজ কুমার মজুমদার

No comments

Powered by Blogger.