পাঠকের মন্তব্য: অনলাইন থেকে- ওরা তরুণ, ওরা পারবে, ওদের পারতেই হবে
প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে (prothom-alo.com) প্রতিদিন রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, খেলা, প্রযুক্তি ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে পাঠকের মতামত প্রকাশিত হয়। তাঁদের মতামত অন্যদের চিন্তার খোরাক জোগায়। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠকদের কিছু মন্তব্য সামান্য সংক্ষেপিত আকারে ছাপা হলো।
এই ছবি! এই পুলিশ!
সোহরাব হাসান তাঁর ‘কালের পুরাণ’ কলামে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ সম্পর্কে মো. আল আমিন হোসেন লিখেছেন: এই যদি হয় স্বাধীন বাংলাদেশের চিত্র! তা হলে কেন ৩০ লাখ তাজা প্রাণের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা? হায়রে বাংলাদেশ!
মাহতাফ হোসেন: সম্মানিত নিবন্ধকার, আপনি শঙ্কার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন যে ‘বাংলাদেশে নিশ্চয়ই পুলিশরাজ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়নি’। কিন্তু চট্টগ্রামের ওই ঘটনাসহ বিভিন্ন সময়ে আমরা পুলিশের যে আচরণ লক্ষ করছি, তার পরও আপনি আমাদের কীভাবে আশ্বস্ত করেন যে দেশে পুলিশরাজ কায়েম হয়ে যায়নি? যে দেশের পুলিশ জনগণকে মারে, যে দেশের পুলিশ সাংসদকে মারে, যে দেশের পুলিশ সাংবাদিককে মারে, যে দেশের পুলিশ শিক্ষককে মারে, যে দেশের পুলিশ ছাত্রকে মারে, যে দেশের পুলিশ প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে মারে, যে দেশের পুলিশ বিচারককে মারে; সে দেশে পুলিশরাজ কায়েম হয়ে যায়নি—এমন অবিশ্বাস্য কথা আপনি আমাদের সামনে কেন উপস্থাপন করলেন, তা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
ইয়াসিন আহমেদ: কিছু বলার ভাষা নেই। ধিক, আমাদের সমাজব্যবস্থাকে। ধিক, চলতি সরকারব্যবস্থাকে, যারা কিনা শিক্ষার ওপর ভ্যাট বসায়, মেধা যাচাই না করে লবিং সুবিধা পাওয়ার জন্য লিখিত পরীক্ষার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে।
জনতা ও অগ্রণীতেও কেলেঙ্কারি
হলমার্কসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। গত শনিবার প্রথম আলোর প্রধান সংবাদের মূল প্রতিপাদ্য ছিল এটি। এ সম্পর্কে সামিয়ুর রহমান লিখেছেন: আমি বেশ কয়েক দিন ধরে মন্তব্যে লিখে আসছিলাম যে শুধু সোনালী নয়, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকেও লুটতরাজ চলছে। কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোবে, কিন্তু রাঘববোয়ালেরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। কয়েক দিন পর দেখবেন সরকার নিজের দোষ ঢাকতে বলবে, এতে বিগত সরকার জড়িত। আমি ১০১% নিশ্চিত, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংকের অবস্থাও ঠিক সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকের মতোই হবে।
খোকন: ব্যাংকিং জগতে হলমার্ক গ্রুপের পাণ্ডিত্য অসাধারণ! আমাদের অর্থ ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এদের হাতে দিয়ে দিলে পদ্মা সেতু এত দিনে তৈরি হয়ে যেত। শাবাশ হলমার্ক! আমাদের মন্ত্রীদের পদত্যাগ করা উচিত।
দেলোয়ার হোসেন: ব্যাংক ডাকাতির খবর এখন আর পত্রিকার পাতায় তেমন চোখে পড়ে না, আর পড়বেই বা কেন। ডিজিটাল পদ্ধতিতে এভাবে যদি ব্যাংক লোপাট-আত্মসাৎ করা যায়, ডাকাতিতে প্রতিনিয়ত ধরা পড়ার ভয়, আর ডাকাতি করে নগদ ‘ছাইপাঁশ’ আর কী পাওয়া যায়।...শেয়ারবাজার লুটের পর লুটেরাদের কুনজর পড়েছে ব্যাংকগুলোর দিকে।
স্বপ্নযাত্রায় একদল তরুণ
তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের সঙ্গে জড়িত বাপেক্সে কর্মরত একদল তরুণের উৎসাহ, নিরলস পরিশ্রম ও দেশপ্রেমের কথা তুলে ধরেছেন অরুণ কর্মকার ও মোছাব্বের হোসেন। এ সম্পর্কে জামাল আহমেদ লিখেছেন: আপনাদের কথা পড়ে চোখে পানি এল, তবে খুশির পানি। কিছু হয়তো করতে পারব না, কিন্তু মন থেকে দোয়া করব আপনাদের জন্য। আমরাও বিদেশে আছি কিছু বাড়তি টাকার আয় হয় বলে। নিজেকে অনেক ছোট মনে হয়, আমরা কিছু করতে পারছি না এ জন্য।
মো. মকসুদুর রহমান: বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষ যদি এমন হতো, তা হলে হয়তো বা আমার সোনার বাংলা হতো। বাপেক্সের প্রত্যেক কর্মীর জন্য শ্রদ্ধায় মনটা ভরে উঠেছে, যাঁরা স্বপ্নময় রুপালি হাতছানি ফিরিয়ে দিয়ে আমাদের দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
শেখ আবুল হাসান: খুব একটি ভালো সংবাদ। গর্বে মনটা ভরে গেল। চারদিকে শুধু লুটপাট আর দুর্নীতি। এর মাঝে কিছু ভালো মানুষ দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান শত বাধা সত্ত্বেও। তোমাদের স্যালুট। বড় বড় বিজ্ঞানী, ডাক্তার, অধ্যাপক, ইঞ্জিনিয়ার টাকার লোভে বিদেশে পড়ে আছেন। আমি নিজেও তাঁদের একজন। আমরা সবাই যদি নিজের দেশের জন্য এ রকম কাজ করতাম, তা হলে দেশের অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যেত।
সৈয়দ কামাল মোহাম্মদ: স্বপ্নযাত্রায় একদল তরুণ! দেশ কিন্তু দ্রুত লয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। একদল তরুণ, ওদের গড় বয়স ৩০ বছর। ওরা আরও ৩০ বছরে দেশকে অনেক অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। ওরা তরুণ, ওরা পারবে, ওদের পারতেই হবে। কোনো বাবা-মা চান না তাঁর মেধাবী সন্তান বিদেশে কাজ করুক। প্রয়োজন দেশে কর্মক্ষেত্র আর কাজ করার পরিবেশ। প্রয়োজন শিক্ষিত আর মেধাবী রাজনীতিবিদের।
মো. তাফিকুল ইসলাম: ধন্যবাদ দিয়ে স্বপ্নযাত্রার তরুণ দলকে আমি ছোট করব না। আমার দেশে সোনার ছেলে আছে, তারা একদিন দেশকে স্বয়ম্ভর করে তুলবেই। কেবল দরকার দেশে রাজনৈতিক সমঝোতা। রাজনীতি, হানাহানি দেশকে পেছনের দিকে নিচ্ছে তা সবাই জানে, কিন্তু প্রতিকারের ব্যবস্থার জন্য কেউ এগোয় না। আসুন, আমরা দেশকে ভালোবেসে সবকিছু ছেড়ে বাংলাদেশ গড়ি, অনেক সময় চলে গেছে।
ইমরান মাসুদ: খবরটি পড়ার সময় মনে একধরনের শিহরণ জেগেছিল। খুব ভালো লেগেছে লেখাটি পড়ে। দেশের প্রতিটি মানুষ যদি তাদের নিজ নিজ মেধা দেশের জন্য কাজে লাগায় তা হলে কার সাধ্য আছে যে আমাদের এ দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে? শাবাশ জানাই এসব তরুণকে, যারা বিত্তবৈভবের লোভ সংবরণ করে দেশের সেবাকে মুখ্য হিসেবে দেখেছে। প্রার্থনা করি যেন তারা দেশসেবার এ মনোভাবকে আমৃত্যু ধরে রাখতে পারে।
এস মিঠুন রায়: প্রযুক্তি নেই বলে বিদেশিরা আমাদের গ্যাস কিংবা কয়লার সিংহভাগ নিয়ে যায়। আর আমাদের রাজনীতিবিদেরা বিদেশি গাড়ির বিনিময়ে এমনই চুক্তি করেন যে এসব কোম্পানি ভুল করলেও ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। কিন্তু এই তরুণ ইঞ্জিনিয়াররা বিদেশি গাড়ি, বাড়ি ও উন্নত জীবনের হাতছানি উপেক্ষা করে যেভাবে কাজ করছে, তা পড়ে খুব ভালো লাগল। একটা স্বীকৃতি তাদের প্রাপ্য।
বিদ্যুতের দাম বাড়ছে ১ সেপ্টেম্বর থেকে
এই সরকারের আমলে বিদ্যুতের ষষ্ঠবারের মতো দাম বাড়ার খবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এ সম্পর্কে পাঠক আনোয়ারুল আজিম লিখেছেন: বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে জেনেছি যে বিদ্যুতের ব্যবহার ৪০০ ইউনিট অতিক্রম করলে ফ্ল্যাট রেটে অধিক বিল হয়। কিন্তু আমি দেখেছি, ৩০০ ইউনিট অতিক্রম করলেই অধিক বিল দিতে হচ্ছে। তাহলে কি পল্লী বিদ্যুৎ এবং ডেসা বা ডেসকোর জন্য আলাদা আইন?
মো. আসাদুজ্জামান সরকার: আমরা যারা ১০০ ইউনিটের নিচে ব্যবহার করি কিন্তু ৭৫ ইউনিটের বেশি ব্যবহার করি, এখন নতুন স্লাব করলে ১০০ ইউনিটের কম ব্যবহার করে ২০০ ইউনিটের বিল দিতে হবে। আমার মতো অনেকেই ধরা খাবে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাগুলোই আওয়ামী লীগকে ডোবাচ্ছে।
শাওন: সবকিছুর দামই তো বাড়ছে—বিদ্যুতের দাম, গ্যাসের দাম, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম, কাপড়ের দাম, চিকিৎসা খরচ, বাসভাড়া ইত্যাদি। আর এসব খরচের ভুক্তভোগী মধ্যবিত্তরা। এত কিছুর দাম বাড়ছে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের আয় তো বাড়ছে না, তাহলে তারা এসব খরচের জোগান দেবে কোথা থেকে?
উৎসাহ পেল হলমার্ক
হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে সরকারকে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সে সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এখতিয়ারের বাইরে। শওকত হোসেন তাঁর সংবাদ বিশ্লেষণে অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ সম্পর্কে শিমুল শাহরিয়ার লিখেছেন: সোনালী ব্যাংকের অপরাধীদের নয়, বরং গ্রামীণ ব্যাংকের ভদ্রলোক আর খেটে খাওয়া নিরীহ নারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই সরকার বেশি উৎসাহী।
ফারহান: অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, বর্তমান সরকার দাগি অপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক। যারা এ কাজ করেছে, তাদের বিচার হবে বলে মনে হয় না। তারা বরং আরও বড় পদ পেয়ে পুরস্কৃত হবে বলে মনে হয়। যেমনটি হয়েছে শেয়ারবাজারের ক্ষেত্রে। কিন্তু আরও একটি জিনিস বুঝতে পারছি না, হলমার্কের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো? এটা কেউ বলছে না কেন?
মো. হাফিজুল ইসলাম: শুধু উৎসাহ পায়নি, অতিমাত্রায় উৎসাহ পেয়েছে। টিভির বিভিন্ন চ্যানেলে বিচরণ করতে করতে হঠাৎ একটি চ্যানেল (অবশ্যই বাংলাদেশি) হলমার্কের গুণকীর্তন বিবরণ নিয়ে একটি প্রচারণা প্রচারিত হতে দেখলাম। তাতে হলমার্ক শিল্পগোষ্ঠীর ৪০ হাজার কর্মীর দিকে তাকিয়ে এ ষড়যন্ত্র (হলমার্কের বক্তব্য) বন্ধের আহ্বান জানানো হচ্ছে। গার্মেন্টসসহ আরও বিভিন্ন শিল্পে তাদের বিচরণ দেখানো হলো। হলমার্ক গ্রুপের একজন উচ্চপর্যায়ের কারও ‘আমার শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত আমি আপনাদের (কর্মীদের) ছেড়ে যাব না’ টাইপের বক্তব্য শুনে বেশ ভালোই লাগল। এ তো গেল হলমার্ক গ্রুপের উৎসাহ পাওয়া। কিন্তু আমাদের অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত কর্মীরা কতটুকু অনুৎসাহিত হলেন, সেটির বিষয়ে আমাদের না দেখলেও চলে বলে ধারণা। বাংলাদেশ ব্যাংক তো সরাসরি সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়নি, ভেঙে দেওয়ার অনুরোধ করেছে মাত্র। সরকার যদি এ সুপারিশ সমীচীন মনে না করে তাহলে পর্ষদ ভাঙবে না। কেন পর্ষদ ভাঙা হবে না, সেটি দেশবাসীর কাছে ব্যাখ্যা দিলেই তো হতো। যেখানে সোজা আঙুলে যে পরিমাণ ঘি ওঠে, সেখানে কেন সেই পরিমাণ ঘি ওঠানোর জন্য আঙুল বাঁকা করব?
(পাঠকের মতামত বিস্তারিত পড়তে ও আপনার মতামত জানাতে ভিজিট করুন prothom-alo.com)
No comments