শিক্ষা- ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করলেই কোচিং বন্ধ হবে না by সালমা আখতার
মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে প্রথম আলোতে প্রকাশিত লেখাগুলো, বিশেষ করে মুহম্মদ জাফর ইকবাল, তারিক আদনান, সৌরভ শিকদার এবং অনলাইনে পাঠানো পাঠকদের মতামত বিশ্লেষণ করলে যেসব কারণে ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করা হচ্ছে, তা আর ধোপে টেকে না।
প্রত্যেকের লেখাতেই সমস্যা এবং কারণ বিশ্লেষণ করে সমাধানের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারিক আদনানের লেখায় চমৎকারভাবে বর্তমান মূল্যায়ন তথা গ্রেডিং, বিষয়ভিত্তিক নম্বর বা মূল্যমান যাচাই, তাতে কত সংখ্যক শিক্ষার্থীর কী গ্রেড ও নম্বরপ্রাপ্তি এবং তার ফলাফল কী হতে পারে, তা উঠে এসেছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গেলেও কেবল জিপিএ নয়, আরও অনেক কিছুর মানদণ্ডে টিকে যেতে হয়, তা ভর্তি পরীক্ষারই নামান্তর!
শিক্ষাবিজ্ঞানে অধ্যাপনার সঙ্গে বহুদিন সম্পৃক্ত থাকার ফলে বলতে চাই, বাংলাদেশে পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি এখন পর্যন্ত অতটুকু একক গুণগত মানসম্পন্ন হয়ে ওঠেনি যে কেবল জিপিএর ভিত্তিতেই ভর্তি করা যায়! যে সৃজনশীল পরীক্ষার (আসলে যা কাঠামোবদ্ধ মূল্যায়ন/ পরীক্ষা পদ্ধতি) মাধ্যমে পাবলিক তথা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় মূল্যায়ন করা হয়, তা কতখানি সৃজনশীল? তাতে শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, বিশ্লেষণধর্মী এবং সমস্যা সমাধানের কুশলতার মূল্য যাচাই কতখানি থাকে? সৃজনশীল মূল্যায়নের মাধ্যমে সৃজনশীল শিক্ষা কার্যক্রমের (ক্রিয়েটিভ টিচিং লার্নিং) মূল্য যাচাই করা হয়। আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ধরনের পঠন-পাঠন একেবারে নেই বললেই চলে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার সার্বিক মান আশাব্যঞ্জক নয়! যেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভালো ফলের রেকর্ড গড়ে, সেসব প্রতিষ্ঠানেও মূলত নোটনির্ভর মুখস্থবিদ্যা, সাজেশনস, বাড়তি কোচিংনির্ভর পঠন-পাঠন চলে থাকে। এর জন্য দায়ী কারা? আমরা সবাই! বিদ্যালয়, শিক্ষক, অভিভাবক ও সরকার, দায়বদ্ধতা এখানে পারস্পরিক! সৃজনশীল মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে অনেক আলোচনার অবকাশ থাকলেও এখানে শুধু এটুকু বলতে চাই, সব বোর্ডের পরীক্ষার প্রশ্ন সমমানের নয়, মূল্যায়নও সমমানের নয়! শিক্ষকদের সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরিতে দক্ষতার অভাব রয়েছে। মাদ্রাসাশিক্ষার পদ্ধতি ও মূল্যায়ন সাধারণ শিক্ষার মতো নয়, ইংরেজি মাধ্যমের মূল্যায়ন তো একেবারেই ভিন্ন।
সাধারণ বিদ্যালয়ের পরীক্ষায় এখনো সাজেশন-নির্ভরতা রয়েছে, যার প্রতিফলন বিশ্ববিদ্যালয়েও দেখা যায়। আমার প্রথম বর্ষের অনার্স ক্লাসের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কথা বললে তারা অজান্তে কিংবা জেনেশুনেই বলে থাকে, ‘ম্যাডাম, সব পড়তে হবে? সাজেশনস দেবেন না?’ এই যদি আমাদের শিক্ষা ও পরীক্ষার বাস্তব চিত্র হয়, তা হলে পাবলিক পরীক্ষার প্রাপ্ত জিপিএ কীভাবে কেবল ভর্তির জন্য একমাত্র বিবেচ্য বিষয় হবে? যে শিক্ষার্থী ন্যূনতম যোগ্যতায় ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে, ভর্তি পরীক্ষায় সে উত্তীর্ণও হতে পারে, যদি ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র মানসম্পন্ন হয়; মুখস্থনির্ভর না হয়ে জ্ঞান, দক্ষতা, অ্যাপটিটিউট, বুদ্ধি যাচাই, যুক্তিসম্পন্ন ইত্যাদি হয়।
স্বীকার করে নিচ্ছি যে বাংলাদেশে ভর্তি পরীক্ষা এক দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার, তা সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ই হোক আর উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানই হোক। এর প্রধান কারণ হচ্ছে চাহিদা অনুপাতে প্রতিষ্ঠান এবং ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের অভাব। মেডিকেল শিক্ষার ক্ষেত্রেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব খুব তীব্র। সুতরাং, বাছাই করার জন্য ভর্তি পরীক্ষা অনিবার্য। পৃথিবীর নানা দেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নানা নামে স্ক্রিনিং তথা ভর্তি পরীক্ষা হয়ে থাকে। ব্রিটিশ সিস্টেমে দেখা যায়, ভালো জিপিএ নিয়ে আবেদন করেও ইন্টারভিউতে বাদ পড়ে ভর্তি হতে পারে না নামকরা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও। যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থাতেও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রধানত চারটি বিষয় যেমন, ভালো রেজাল্ট (স্কলাসটিক অ্যাবিলিটি), সৃজনশীল দক্ষতা (ক্রিয়েটিভ অ্যাবিলিটি), খেলাধুলা, নেতৃত্ব, কমিউনিটি সার্ভিস ইত্যাদি প্রধান নিয়ামক বা নির্ধারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তা ছাড়া রয়েছে সাক্ষাৎকার। সুতরাং, কেবল জিপিএ মেডিকেলে ভর্তির একমাত্র নির্ণায়ক হতে পারে না।
ভর্তিবিষয়ক কোচিং একটি রমরমা বাণিজ্য, কেবল মেডিকেল নয়। সব ধরনের ভর্তি পরীক্ষার জন্য এই কোচিং চলে আসছে। প্রশ্ন হলো, এই অবস্থার সৃষ্টি হলো কীভাবে এবং কেনই বা? পাশের দেশ ভারতেও কোচিংবাণিজ্য রয়েছে। আমাদের উপমহাদেশ বাদ দিলে কোচিং কোনো না কোনোভাবে এশিয়ার প্রায় দেশেই নানা ফর্মে দেখা যায়, তবে আমাদের দেশের মতো এত ব্যাপক নয়। সিঙ্গাপুরে রয়েছে, চীনে রয়েছে। চীনে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অভিভাবকেরা বছরের পুরো আয়টাই ছেলেমেয়েদের কোচিংয়ের পেছনে ব্যয় করে থাকেন! আমাদের দেশে কোচিংবাণিজ্য অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এবং এর জন্য অনুষঙ্গ নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। কেবল ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করলেই কোচিং বন্ধ হবে, তা নয়। অন্য ফর্মে তা আবার রূপ নেবে। সুতরাং, কেন কোচিং হয়ে থাকে—তা অনুসন্ধান করে এ সমস্যার সমাধানে যেতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থাপনা একটি সমস্যা বলে ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করার একটি যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল ভর্তি পরীক্ষাযজ্ঞ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার চিত্র ফুটে উঠেছে। আজকের এই ডিজিটাল যুগে ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থাপনা সমস্যা হওয়ার প্রশ্নই আসা উচিত নয়। যে প্রক্রিয়ায় বর্তমানে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়, ভবিষ্যতে তা সহজ করতে হবে। মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষার প্রকৃতি ও স্বরূপ পাল্টাতে হবে। কেবল জিপিএনির্ভর না করে অন্য আরও কিছু দিকের ওপর দৃষ্টি দিতে হবে। এ ব্যাপারে জাতীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করে রূপরেখা নির্ধারণ করতে হবে। সর্বোপরি জাতীয় পর্যায়ের যে সিদ্ধান্ত বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য নেওয়া হবে, তা যত কল্যাণকরই হোক না কেন, যাদের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত সময় হাতে রেখে তাদের জানিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় ভালো সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া রাজপথের যুদ্ধে গড়াতে পারে, যা বাংলাদেশে মাঝেমধ্যেই ঘটে চলেছে।
সালমা আখতার: অধ্যাপক ও সাবেক পরিচালক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষাবিজ্ঞানে অধ্যাপনার সঙ্গে বহুদিন সম্পৃক্ত থাকার ফলে বলতে চাই, বাংলাদেশে পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতি এখন পর্যন্ত অতটুকু একক গুণগত মানসম্পন্ন হয়ে ওঠেনি যে কেবল জিপিএর ভিত্তিতেই ভর্তি করা যায়! যে সৃজনশীল পরীক্ষার (আসলে যা কাঠামোবদ্ধ মূল্যায়ন/ পরীক্ষা পদ্ধতি) মাধ্যমে পাবলিক তথা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় মূল্যায়ন করা হয়, তা কতখানি সৃজনশীল? তাতে শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, বিশ্লেষণধর্মী এবং সমস্যা সমাধানের কুশলতার মূল্য যাচাই কতখানি থাকে? সৃজনশীল মূল্যায়নের মাধ্যমে সৃজনশীল শিক্ষা কার্যক্রমের (ক্রিয়েটিভ টিচিং লার্নিং) মূল্য যাচাই করা হয়। আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ধরনের পঠন-পাঠন একেবারে নেই বললেই চলে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার সার্বিক মান আশাব্যঞ্জক নয়! যেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভালো ফলের রেকর্ড গড়ে, সেসব প্রতিষ্ঠানেও মূলত নোটনির্ভর মুখস্থবিদ্যা, সাজেশনস, বাড়তি কোচিংনির্ভর পঠন-পাঠন চলে থাকে। এর জন্য দায়ী কারা? আমরা সবাই! বিদ্যালয়, শিক্ষক, অভিভাবক ও সরকার, দায়বদ্ধতা এখানে পারস্পরিক! সৃজনশীল মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে অনেক আলোচনার অবকাশ থাকলেও এখানে শুধু এটুকু বলতে চাই, সব বোর্ডের পরীক্ষার প্রশ্ন সমমানের নয়, মূল্যায়নও সমমানের নয়! শিক্ষকদের সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরিতে দক্ষতার অভাব রয়েছে। মাদ্রাসাশিক্ষার পদ্ধতি ও মূল্যায়ন সাধারণ শিক্ষার মতো নয়, ইংরেজি মাধ্যমের মূল্যায়ন তো একেবারেই ভিন্ন।
সাধারণ বিদ্যালয়ের পরীক্ষায় এখনো সাজেশন-নির্ভরতা রয়েছে, যার প্রতিফলন বিশ্ববিদ্যালয়েও দেখা যায়। আমার প্রথম বর্ষের অনার্স ক্লাসের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কথা বললে তারা অজান্তে কিংবা জেনেশুনেই বলে থাকে, ‘ম্যাডাম, সব পড়তে হবে? সাজেশনস দেবেন না?’ এই যদি আমাদের শিক্ষা ও পরীক্ষার বাস্তব চিত্র হয়, তা হলে পাবলিক পরীক্ষার প্রাপ্ত জিপিএ কীভাবে কেবল ভর্তির জন্য একমাত্র বিবেচ্য বিষয় হবে? যে শিক্ষার্থী ন্যূনতম যোগ্যতায় ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে, ভর্তি পরীক্ষায় সে উত্তীর্ণও হতে পারে, যদি ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র মানসম্পন্ন হয়; মুখস্থনির্ভর না হয়ে জ্ঞান, দক্ষতা, অ্যাপটিটিউট, বুদ্ধি যাচাই, যুক্তিসম্পন্ন ইত্যাদি হয়।
স্বীকার করে নিচ্ছি যে বাংলাদেশে ভর্তি পরীক্ষা এক দক্ষযজ্ঞ ব্যাপার, তা সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ই হোক আর উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানই হোক। এর প্রধান কারণ হচ্ছে চাহিদা অনুপাতে প্রতিষ্ঠান এবং ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের অভাব। মেডিকেল শিক্ষার ক্ষেত্রেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব খুব তীব্র। সুতরাং, বাছাই করার জন্য ভর্তি পরীক্ষা অনিবার্য। পৃথিবীর নানা দেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নানা নামে স্ক্রিনিং তথা ভর্তি পরীক্ষা হয়ে থাকে। ব্রিটিশ সিস্টেমে দেখা যায়, ভালো জিপিএ নিয়ে আবেদন করেও ইন্টারভিউতে বাদ পড়ে ভর্তি হতে পারে না নামকরা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও। যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থাতেও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রধানত চারটি বিষয় যেমন, ভালো রেজাল্ট (স্কলাসটিক অ্যাবিলিটি), সৃজনশীল দক্ষতা (ক্রিয়েটিভ অ্যাবিলিটি), খেলাধুলা, নেতৃত্ব, কমিউনিটি সার্ভিস ইত্যাদি প্রধান নিয়ামক বা নির্ধারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তা ছাড়া রয়েছে সাক্ষাৎকার। সুতরাং, কেবল জিপিএ মেডিকেলে ভর্তির একমাত্র নির্ণায়ক হতে পারে না।
ভর্তিবিষয়ক কোচিং একটি রমরমা বাণিজ্য, কেবল মেডিকেল নয়। সব ধরনের ভর্তি পরীক্ষার জন্য এই কোচিং চলে আসছে। প্রশ্ন হলো, এই অবস্থার সৃষ্টি হলো কীভাবে এবং কেনই বা? পাশের দেশ ভারতেও কোচিংবাণিজ্য রয়েছে। আমাদের উপমহাদেশ বাদ দিলে কোচিং কোনো না কোনোভাবে এশিয়ার প্রায় দেশেই নানা ফর্মে দেখা যায়, তবে আমাদের দেশের মতো এত ব্যাপক নয়। সিঙ্গাপুরে রয়েছে, চীনে রয়েছে। চীনে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অভিভাবকেরা বছরের পুরো আয়টাই ছেলেমেয়েদের কোচিংয়ের পেছনে ব্যয় করে থাকেন! আমাদের দেশে কোচিংবাণিজ্য অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এবং এর জন্য অনুষঙ্গ নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। কেবল ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করলেই কোচিং বন্ধ হবে, তা নয়। অন্য ফর্মে তা আবার রূপ নেবে। সুতরাং, কেন কোচিং হয়ে থাকে—তা অনুসন্ধান করে এ সমস্যার সমাধানে যেতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থাপনা একটি সমস্যা বলে ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করার একটি যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল ভর্তি পরীক্ষাযজ্ঞ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার চিত্র ফুটে উঠেছে। আজকের এই ডিজিটাল যুগে ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থাপনা সমস্যা হওয়ার প্রশ্নই আসা উচিত নয়। যে প্রক্রিয়ায় বর্তমানে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়, ভবিষ্যতে তা সহজ করতে হবে। মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষার প্রকৃতি ও স্বরূপ পাল্টাতে হবে। কেবল জিপিএনির্ভর না করে অন্য আরও কিছু দিকের ওপর দৃষ্টি দিতে হবে। এ ব্যাপারে জাতীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করে রূপরেখা নির্ধারণ করতে হবে। সর্বোপরি জাতীয় পর্যায়ের যে সিদ্ধান্ত বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য নেওয়া হবে, তা যত কল্যাণকরই হোক না কেন, যাদের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত সময় হাতে রেখে তাদের জানিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় ভালো সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া রাজপথের যুদ্ধে গড়াতে পারে, যা বাংলাদেশে মাঝেমধ্যেই ঘটে চলেছে।
সালমা আখতার: অধ্যাপক ও সাবেক পরিচালক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments