হাত ও পা মানুষের রুচির আয়না

মানুষের হাতের ত্বক খুব পাতলা হয়। যদিও তার নমনীয়তা নির্ভর করে বিভিন্ন পেশাগত বৈশিষ্ট্যের ওপর। তালুতে কোন অয়েল গ্ল্যান্ড বা তৈলগ্রন্থি থাকে না। যার ফলে একটু অযতœ হলেই হাতের উপরের ত্বকে কুঞ্জন বা রিঙ্কলস দেখা দেয়। তা ছাড়া রঙ হারিয়ে ফেলা কিংবা ডিস কালারেশও একট বড় সমস্যা।


হাতের সমস্যা আলোচনা করতে হলে হাতের চেটো বা তালু, নখ ও হাতের করতলের উপরিভাগের সমস্যার কথা বলতে হয়।
হাতের তালু : সারা দিনের হাত শ্রমসাধ্য কাজ তা সবই আমাদের এই দুটি হাতের দ্বারা সম্পন্ন হয়। ঘর পরিষ্কার, কাপড় কাচা বা রান্না করা থেকে শুরু করে লেখালেখি, অফিসের কাজ, কম্পিউটার চালানো, গাড়ি চালানোÑসব ধরনের কাজেই হাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই অত্যাধুনিক ডিটারজেন্ট ধুলো-ময়লা, রান্না করার সময় আগুনের তাপ এসব কিছুই আমাদের হাতের ত্বক সহ্য করে।
নখ : প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে নখ আমাদের হাতের সৌন্দর্য বজায় রাখে। নানা রকম সাজে হাতের নখকে সাজানো আমাদের চিরকালীন ক্রেজ। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেলপলিশ ব্যবহার করা নখের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই মাঝে মাঝে নখকে তার স্বাভাবিক অবস্থায় রাখা উচিত। এতে নখের স্বাস্থ্য বজায় থাকে।
হাতের যতœ নিতে হলে আমাদের কতগুলো অনুষঙ্গিক জিনিসের দরকার যেমন কোন ম্যাসাজ অয়েল। ক্রিম ও ময়েশ্চারাইজার। এছাড়া ভাল লিকুইড সোপ ডিউমিস স্টোন নেল ব্রাশ বা একটি নতুন সফট টুথব্রাশ লাগবে। যদিও আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি, কাপড় কাঁচা বা বাসন মাজার সময় গ্লাভস পরা উচিত। কিন্তু অধিকাংশ সময়টা সম্ভব হয় না। সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহারের পরপরই হাত ভাল করে ধুয়ে ভেজা হাতেই ম্যাসাজ অয়েল মেখে নিন। এরপর খানিকটা লিকুইড সোপ নরম ব্রাশে নিয়ে নখের কোণের জমা ময়লা বা মরা চামড়া কোষ ভালভাবে পরিষ্কার করে নিন। ভাল কোন ক্রিম লাগিয়ে নিন দু’হাতে। এভাবে হাতের প্রাথমিক যতœ নিয়ে ত্বকের নিম্ন ভাগের জমে থাকা ময়লা সহজেই নরম হয়ে উপরে উঠে আসে ও ত্বক পরিষ্কার হয়ে যায়। বাইরে বেরোবার সময় শীতকালে হাতে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার মেখে বেরোবেন। এছাড়া শীতকালে সপ্তাহে একদিন ম্যানিকিউর করলে ত্বক ভাল থাকবে। গোসলের সময় হাতে সাবান মেখে পামিস স্টোন দিয়ে হাতের তালু ও উপরিভাগ দু’তিন মিনিট ঘষে নিন। এতে হাতের দাগ ধীরে ধীরে হালকা হবে। সপ্তাহে অন্তত একদিন হাতে প্যাক লাগান। সমপরিমাণে মুলতানি মাটি চন্দন, পাউডার ও মিল্ক পাউডার মিশিয়ে কৌটা ভরিয়ে ফ্রিজে রাখুন। এর সঙ্গে আস্ত একটা পাকা কলা, দুই চামচ মধু ও একটু পাতি লেবুর রস মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে পুরো হাতে লাগাতে পারেন। খানিকটা শুকিয়ে গেলে ভেজা হাতে ঘষে ঘষে তুলে ফেলুন।
পায়ের যতœ : অনেকেই পায়ের সমস্যায় ভোগেন। হাতের মতই পায়ের যতœ নিতে আমাদের কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস দরকার যেমন ভাল ম্যাসাজ অয়েল, পামিস স্টোন, লেন ব্রাশ ও ফ্রুট স্কাবার। প্রতিদিন গোসলের আগে তেল মেখে নিন। তারপর সাবান মেখে স্ক্রাবার দিয়ে পায়ের চামড়া, গোভলি, আঙ্গুলের কোন ও ধারগুলো পরিষ্কার করে নিন। নেল ব্রাশ দিয়ে নখেন চারপাশ এবং মাঝখানের অংশ পরিষ্কার করে নিতে ভুলবেন না। এতে আপনার পায়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি হবে ও পা ফাটার সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন। সপ্তাহে অন্তত দু’দিন উষ্ণ ও একদিন ঠা-া পানিতে পা ভেজাবেন। এতে ব্লাড সারকুলেশন ভাল হয়। এ ছাড়া হাতের জন্য বলা প্যাকে একটা আস্ত ডিম মিশিয়ে নেবেন আর প্যাক বেশি ঘন মনে হলে একটু দুধ মিশিয়ে পাতলা করে নিয়ে এই প্যাক মাখুন। পায়ের সমস্যার অন্যতম হলো কড়া বা কর্ণ। সাধারণত ভুল জুতো দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে এই সমস্যার মুখোমুখি হন অনেকেই। এই উপায়ে পায়ের যতœ নিলে কোন সমস্যাই থাকবে না। সিকি চা চামচ লবণ, অর্ধেক পাতি লেবুর রস ও দু’কোয়া রসুন পেস্ট একসঙ্গে মিশিয়ে কড়ার ওপর দিয়ে তুলা দিয়ে আটকে দিতে হবে। রাতের ঘুমানোর আগে বা দিনে সম্ভব না হলে সাত-আট ঘণ্টা এভাবে রেখে দিতে হবে। এভাবে কিছু দিন যতœ নিলে কড়া নরম হবে এবং ব্যথাও কমবে। পায়ে অনেকেরই কালো ছোপ পড়ে বা জুতোর দাগ থাকে। আগে যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবে যতœ নিলে এ সমস্যা থেকে অচিরেই মুক্তি মিলবে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় কখনই মোজা পড়ে শোবেন না।
একান্তই দরকার হলে নাইলেন বা সিনথেটিক মোজা ব্যবহার না করে সুতির মোজা পরুন। খাওয়া-দাওয়া ক্ষেত্রে আলু, মটরশুঁটি, দুধ, ডিম, নটেশাক, বাঁধাকপি, পেঁয়াজ, রসুন আমলকী, পেঁপে, পেয়ারা আপেল নিশ্চয় খাবেন। শীতের সময় এভাবে হাত ও পায়ের যতœ নিলে হাত পায়ের সৌন্দর্য বজায় থাকবে।
রূপা আলম

No comments

Powered by Blogger.