পবিত্র কোরআনের আলো-মানবিক চৈতন্য ও দায়িত্ববোধ উন্মোচনের লক্ষ্যে
২৭। আল্লাজি-না ইয়ানকুদ্বু-না আহদাল্লাহি মিম্ বা'দি মিসাকিহি; ওয়াকত্বাউ'না মা-আমারাল্লাহু বিহি আইঁউছ্বালা ওয়া ইউফছিদু-না ফিল আরদ্বি; উলা-ইকা হুমুল খাছিরূন।২৮। কাইফা তাকফুরূনা বিল্লাহি ওয়া কুনতুম আমওয়াতান ফাআহইয়াকুম; ছুম্মা ইউমি-তুকুম ছুম্মা ইউহ্ঈকুম ছুম্মা ইলাইহি তুরজাউন।
২৯। হুয়াল্লাজি খালাকা লাকুম্ মা ফিল আরদ্বি জামিয়া'ন; ছুম্মাস্তাওয়া ইলাছ্ ছামা-য়ি ফাছাওয়্যাহুন্না ছাবআ' ছামাওয়াতিন; ওয়া হুয়া বিকুলি্ল শাইয়িন আলিম।
[সুরা বাকারা : আয়াত-২৭-২৯]
অনুবাদ
২৭। (এরা হচ্ছে সেসব লোক) যারা আল্লাহর ফরমান মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর তা ভঙ্গ করে (ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে), আল্লাহ তায়ালা যেসব সম্পর্ক মজবুত করতে বলেছেন তা তারা ছিন্ন করে, জমিনে অহেতুক ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে; এরাই হচ্ছে আসল ক্ষতিগ্রস্ত।
২৮। তোমরা আল্লাহকে কিভাবে অস্বীকার করবে? অথচ তোমরা ছিলে মৃত, তিনিই তোমাদের জীবন দিয়েছেন, পুনরায় তিনি তোমাদের মৃত্যু দেবেন, অতঃপর তিনিই আবার তোমাদের জীবন দান করবেন এবং এভাবেই তোমাদের একদিন তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে।
২৯। তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি এ পৃথিবীর সব কিছু তোমাদের জন্য তৈরি করেছেন, অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করলেন এবং তাকে সাত আকাশে বিন্যস্ত করলেন, তিনি সব কিছু সম্পর্কেই সম্যক অবগত।
ব্যাখ্যা
এই আয়াতগুলো নাজিল হয়েছে কোরাইশ সম্প্রদায় ও ইহুদি সম্প্রদায়কে তাদের আদি ইতিহাসের প্রতি ইঙ্গিত করে তাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে। কোরাইশরা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর বংশধর। ইব্রাহিম (আ.)-এর পুত্র ইসমাইল ও ইসরাইল (আ.) আল্লাহর প্রিয় নবী ছিলেন। আল্লাহতায়ালার প্রিয়পাত্র ও সম্মানিত সেই নবীদের বংশধররা তাদের পূর্বপুরুষের মহান শিক্ষা মেনে চলার অঙ্গীকার করেছিল। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর যখন জন্ম হয় তখনো মক্কার কোরাইশদের মধ্যে এমন কিছু পুণ্যবান মানুষ ছিল, যারা মহাপয়গম্বর হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর দ্বীনে হানিফের অনুসরণ করত। কিন্তু মূল কোরাইশ সম্প্রদায় ইব্রাহিম (আ.)-এর মূল শিক্ষা থেকে সম্পূর্ণভাবেই সরে গেছে তত দিনে। তা ছাড়া কোরআনের আগে নাজিল হওয়া কিতাবগুলোতে, যেগুলো ইহুদি ও খ্রিস্টানরা অনুসরণ করত সেগুলোতেও মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাবের ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে এবং তাঁর সত্য ধর্ম ও সমাজসংস্কারকে মেনে নেওয়ার অঙ্গীকার রয়েছে। এ আয়াতগুলোতে সেই ইতিহাসের সূত্র ধরেই আরো কিছু উপদেশ দেওয়া হয়েছে। ২৮ নম্বর আয়াতে মানুষকে জীবনের বাস্তবতা উপলব্ধি করে চৈতন্য লাভের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এখানে দৃশ্যত মৃত্যু এবং জীবনের পুনরাবৃত্তির কথা বলা হলেও ইসলাম প্রকৃত অর্থে পুনর্জন্মবাদে বিশ্বাস করে না। এখানে একটাই মানবজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহর কাছে মানুষকে জবাবদিহি করতে হবে। তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে_এটাই হচ্ছে মূল কথা।
২৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা পৃথিবীর বুকে মানবজাতির একক কর্তৃত্বের মহান সত্য ঘোষণা করেছেন। তিনি এই ঘোষণা দিয়ে মানবজাতিকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, মানুষের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। মানুষের প্রতি আল্লাহর এমন মহান দানের প্রেক্ষাপটে মানুষের উচিত সত্যের আনুগত্য করা এবং দায়িত্বনিষ্ঠ হওয়া। এই আয়াতটির শেষাংশে আকাশের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। আকাশকে তিনি সাতটি স্তরে বিন্যস্ত করার কথা উল্লেখ করেছেন এবং অবশেষে বলেছেন তিনি সব কিছু সম্পর্কেই সম্যক অবহিত। অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা, তিনি সবই জানেন, তবে মানুষকে তাঁর সৃষ্টিরহস্য সবই এই কোরআনের মাধ্যমে জানাবেন এমন নয়। আয়াতে বলা হয়েছে, আকাশ সাত স্তবক। সাত স্তবক আকাশ বলতে কী বোঝানো হয়েছে তা একমাত্র তিনিই জানেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
[সুরা বাকারা : আয়াত-২৭-২৯]
অনুবাদ
২৭। (এরা হচ্ছে সেসব লোক) যারা আল্লাহর ফরমান মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর তা ভঙ্গ করে (ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে), আল্লাহ তায়ালা যেসব সম্পর্ক মজবুত করতে বলেছেন তা তারা ছিন্ন করে, জমিনে অহেতুক ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে; এরাই হচ্ছে আসল ক্ষতিগ্রস্ত।
২৮। তোমরা আল্লাহকে কিভাবে অস্বীকার করবে? অথচ তোমরা ছিলে মৃত, তিনিই তোমাদের জীবন দিয়েছেন, পুনরায় তিনি তোমাদের মৃত্যু দেবেন, অতঃপর তিনিই আবার তোমাদের জীবন দান করবেন এবং এভাবেই তোমাদের একদিন তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে।
২৯। তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি এ পৃথিবীর সব কিছু তোমাদের জন্য তৈরি করেছেন, অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করলেন এবং তাকে সাত আকাশে বিন্যস্ত করলেন, তিনি সব কিছু সম্পর্কেই সম্যক অবগত।
ব্যাখ্যা
এই আয়াতগুলো নাজিল হয়েছে কোরাইশ সম্প্রদায় ও ইহুদি সম্প্রদায়কে তাদের আদি ইতিহাসের প্রতি ইঙ্গিত করে তাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে। কোরাইশরা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর বংশধর। ইব্রাহিম (আ.)-এর পুত্র ইসমাইল ও ইসরাইল (আ.) আল্লাহর প্রিয় নবী ছিলেন। আল্লাহতায়ালার প্রিয়পাত্র ও সম্মানিত সেই নবীদের বংশধররা তাদের পূর্বপুরুষের মহান শিক্ষা মেনে চলার অঙ্গীকার করেছিল। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর যখন জন্ম হয় তখনো মক্কার কোরাইশদের মধ্যে এমন কিছু পুণ্যবান মানুষ ছিল, যারা মহাপয়গম্বর হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর দ্বীনে হানিফের অনুসরণ করত। কিন্তু মূল কোরাইশ সম্প্রদায় ইব্রাহিম (আ.)-এর মূল শিক্ষা থেকে সম্পূর্ণভাবেই সরে গেছে তত দিনে। তা ছাড়া কোরআনের আগে নাজিল হওয়া কিতাবগুলোতে, যেগুলো ইহুদি ও খ্রিস্টানরা অনুসরণ করত সেগুলোতেও মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাবের ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে এবং তাঁর সত্য ধর্ম ও সমাজসংস্কারকে মেনে নেওয়ার অঙ্গীকার রয়েছে। এ আয়াতগুলোতে সেই ইতিহাসের সূত্র ধরেই আরো কিছু উপদেশ দেওয়া হয়েছে। ২৮ নম্বর আয়াতে মানুষকে জীবনের বাস্তবতা উপলব্ধি করে চৈতন্য লাভের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এখানে দৃশ্যত মৃত্যু এবং জীবনের পুনরাবৃত্তির কথা বলা হলেও ইসলাম প্রকৃত অর্থে পুনর্জন্মবাদে বিশ্বাস করে না। এখানে একটাই মানবজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহর কাছে মানুষকে জবাবদিহি করতে হবে। তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে_এটাই হচ্ছে মূল কথা।
২৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা পৃথিবীর বুকে মানবজাতির একক কর্তৃত্বের মহান সত্য ঘোষণা করেছেন। তিনি এই ঘোষণা দিয়ে মানবজাতিকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, মানুষের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। মানুষের প্রতি আল্লাহর এমন মহান দানের প্রেক্ষাপটে মানুষের উচিত সত্যের আনুগত্য করা এবং দায়িত্বনিষ্ঠ হওয়া। এই আয়াতটির শেষাংশে আকাশের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। আকাশকে তিনি সাতটি স্তরে বিন্যস্ত করার কথা উল্লেখ করেছেন এবং অবশেষে বলেছেন তিনি সব কিছু সম্পর্কেই সম্যক অবহিত। অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা, তিনি সবই জানেন, তবে মানুষকে তাঁর সৃষ্টিরহস্য সবই এই কোরআনের মাধ্যমে জানাবেন এমন নয়। আয়াতে বলা হয়েছে, আকাশ সাত স্তবক। সাত স্তবক আকাশ বলতে কী বোঝানো হয়েছে তা একমাত্র তিনিই জানেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments