মামলা প্রত্যাহার হলে পরীক্ষার মাধ্যমেই মেডিক্যালে ভর্তি- ভর্তিচ্ছুদের সঙ্গে মন্ত্রীর বৈঠকে সিদ্ধান্ত

অবশেষে এবার পরীক্ষার মাধ্যমেই মেডিক্যালে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের প্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী বছর থেকে মেধার ক্রমানুসারে মেডিক্যালে ভর্তির কার্যক্রম চলবে। সরকারের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন স্থগিত করেছে।


আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে ভর্তি পরীক্ষা পরিবর্তনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদনকারী আইনজীবী ইউনুস আলী তার আবেদন প্রত্যাহার করে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। রিট আবেদন প্রত্যাহার হলে মেডিক্যালে ভর্তি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার অবসান ঘটবে।
রবিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আন্দোলনরত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আফম রুহুল হক সাংবাদিকদের বলেন, মামলা প্রত্যাহার করে নিলে এবার পরীক্ষার মাধ্যমে মেডিক্যালে ভর্তি সম্পন্ন করা হবে। আগামী বছর থেকে মেধার ভিত্তিতে মেডিক্যালে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। আর মামলা প্রত্যাহার করা না হলে আদালতের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
মন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রচলিত পদ্ধতিতে মেডিক্যালে ভর্তির আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন র্কমসূচী স্থগিত করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মধুর ক্যান্টিনে ভর্তিচ্ছুদের এক সংবাদ সম্মলেনে তাদের প্রতিনিধি মোমিনুল ইসলাম বলেন, একটু দেরিতে হলেও মন্ত্রী আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়ে আমরা আমাদের কর্মসূচী স্থগিত করছি। এবার ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিতে পারব জেনে আমরা খুশি। আগামীতে কীভাবে ভর্তি করা হবে সে বিষয়ে সরকার পরে সিদ্ধান্ত নেবে। সরকার গত ১২ আগস্ট ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ’র ভিত্তিতে মেডিক্যালে ও ডেন্টাল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির ঘোষণা দিলে আন্দোলন শুরু করে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। তারা রাজপথে অবস্থান কর্মসূচী পালনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপিও দেয়। সরকারের ঘোষণার পর পুরনো পদ্ধতিতে ভর্তি চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন ইউনুস আলী আকন্দ নামে এক অভিভাবক। ওই রিট আবেদনে গত ২৭ আগস্ট হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে বিভক্ত আদেশ দেয়। এখন অন্য বেঞ্চে এর শুনানি হবে। এছাড়া আরকেটি রিট আবদেনে একটি রুল জারি করে হাইকোর্ট। পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না সরকারের কাছে তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ওই মামলা প্রত্যাহার করা হবে কি না জানতে চাইলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি মোমিনুল ইসলাম সংবাদ সম্মলেনে বলনে, যে কেউ চাইলে জনস্বার্থে যে কোন বিষয়ে রিট করতে পারেন। ইউনুস আলীও করেছেন। তবে আমরা তাঁকে ওই রিট আবেদন প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করেছি। তিনি তা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সকালের বৈঠকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অংশ নেয় আটজন প্রতিনিধি। মন্ত্রীর বক্তব্যের পর তারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। এদের পাঁচজন সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়। বাকি তিনজন অবস্থান নেয় পরীক্ষা ছাড়াই মেডিক্যালে ভর্তির পক্ষে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হক, প্রতিমন্ত্রী মুজিবুর রহমান ফকির ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। এছাড়া সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলাম লেখক, সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ। বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা ভর্তির প্রক্রিয়ায় কোন পরিবর্তন আনিনি। মামলা প্রত্যাহার হলে এবার ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেডিক্যালে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে। এ জন্য খুব শিগগির ভর্তি ফরম ছাড়া হবে।
মেডিক্যালে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী মঞ্চ ব্যানারে আন্দোলন চালিয়ে আসা ভর্তিচ্ছুরা শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে এক নাগরিক সমাবেশে জানায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে তাদের আপত্তি নেই। তবে সে আলোচনা প্রকাশ্যে হতে হবে। তাদের ওই ঘোষণার পরই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বৈঠকের ব্যবস্থা করা হয়।
সরকার গত বছর থেকে বাংলাদেশের সব ধরনের মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে যৌথভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া শুরু করে। সারাদেশে ২০টি কেন্দ্রে ৪০ হাজারের বেশি ছাত্র গত বছর পরীক্ষায় অংশ নেয়। তখন পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ন্যূনতম যোগ্যতা ছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার যে কোন একটিতে জিপিএ ৩.৫সহ মোট জিপিএ-৮। বাংলাদেশের সব মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ মিলিয়ে মোট ৮ হাজার ৪৯৩ আসন রয়েছে। এর মধ্যে ২২ সরকারী মেডিক্যাল কলেজে আসন সংখ্যা ২ হাজার ৮১১। আর ৫৩টি বেসরকারী মেডিক্যালে ৪ হাজার ২৪৫ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ৯ ‘পাবলিক’ ডেন্টাল কলেজ ও মেডিক্যাল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে ৫৬৭ আসন রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.