হলমার্ক কেলেঙ্কারি ॥ সব সম্পত্তি জব্দ- ০ সোনালী ব্যাংক নিয়ে নিচ্ছে হলমার্কের সমুদয় সম্পত্তি- ০ দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে হলমার্কের এমডিসহ ছয়জনকে- ০ জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে- ০ সোনালী ব্যাংক বোর্ড রাতেই চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে
হলমার্ক গ্রুপের নেয়া ২৬শ’ কোটি টাকা উদ্ধারে সোনালী ব্যাংক হলমার্ক গ্রুপের সমুদয় সম্পত্তি বন্ধক নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া হলমার্ক গ্রুপের এমডিসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শীঘ্রই ডাকা হবে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীকে।
এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের বোর্ডের পর্যালোচনা চিঠি গত রাতেই পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে।
দেশজুড়ে আলোচিত রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের অর্থ লুন্ঠনের ঘটনায় শেষ পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কঠোর হতে শুরু করেছে। জালিয়াতির ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি লুণ্ঠিত অর্থ উদ্ধারেও সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংকের একাধিক উর্ধ্বতন সূত্র জনকণ্ঠকে জানিয়েছে, তারা দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। একই চিঠির অনুলিপি সোনালী ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়েও পাঠিয়েছে। অপরদিকে লুট হওয়া অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে লুন্ঠনের ঘটনায় দায়ী প্রতিষ্ঠান হলমার্কের সকল প্রতিষ্ঠানের সমুদয় সম্পত্তিও বন্ধক রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অপরদিকে এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপের মুখে পড়ে জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত প্রতিষ্ঠান হলমার্ক ইতোমধ্যেই সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে দায় স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ সব ঘটনা পর্যালোচনা করতে এবং পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে পুরো পর্ষদ নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছে। রবিবারও এ ঘটনায় পর্ষদের বৈঠক হয় বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, বৈঠক শেষে জালিয়াতির ঘটনায় গৃহীত ব্যবস্থার বিষয়টি লিখিতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করা হয়।
সূত্র আরও জানায়, পর্ষদের বৈঠকে হলমার্ক গ্রুপের ব্যবসায়িক অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এবং এসব প্রতিষ্ঠানে কি পরিমাণ সম্পদ ও এ্যাকাউন্টে কি পরিমাণ অর্থ রয়েছে এসব নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। ওই বৈঠকে পর্ষদের কাছে হলমার্ক গ্রপের ২৫টি ব্যবসায়িক অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানা যায়।
বৈঠকে পর্ষদ হলমার্ক গ্রুপের সকল প্রতিষ্ঠানের সম্পদ মর্টগেজে নেয়ার পক্ষে সর্বসম্মতভাবে মত দেয়। যার মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নেয়া ২১শ’ কোটি টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। পর্ষদের একটি সূত্র জানায়, সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দুইভাবে লুণ্ঠিত অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে লুণ্ঠিত অর্থের অন্তত ২৫ শতাংশ নগদে এবং সেটি যত দ্রুত সম্ভব আদায় করতে চায়। আর বাকি অর্থ হলমার্কের স্থাবর সম্পত্তি জামানতের মাধ্যমে উদ্ধারের চেষ্টা।
সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে ঋণের নামে হলমার্ক গ্রুপের অর্থ সরানোর ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রবিবার দুদকের কমিশনার মোঃ বদিউজ্জামান সাংবাদিকদের এ কথা জানান। একইদিন হলমার্কের চেয়ারম্যান, এমডি এবং জিএমসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসবাদ করেছে দুদক। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রুপের এমডি সোনালী ব্যাংকে থেকে ২৬শ’ কোটি টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে নিয়ম মেনে টাকা নিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। সময় দিলে তিনি টাকা ফেরত দেবেন বলে জানান।
রবিবার সোয়া ২টায় নম্বরবিহীন একটি পাজেরো গাড়িতে চড়ে হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ ও একই গ্রুপের চেয়ারম্যান তানভীরের স্ত্রী জেসমিন ইসলাম দুদকে আসেন। তবে তার গাড়ির কোন নম্বর অথবা অনটেস্ট লেখা ছিল না। তানভীর দম্পতি ছাড়াও দুদকে একই সময়ে হলমার্কের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) তুষার আহমেদকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুপুর আড়াইটা থেকে তাদের তিনজনকে জিজ্ঞাবাদ শুরু করেন দুদকের এ সংক্রান্ত তদন্ত কর্মকর্তারা। বিকেল ৫টায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তানভীর দম্পতি নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করে বক্তব্য দিলেও সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির নথি দুদক পেয়েছে। এছাড়া এইদিন সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অর্থ আত্মসাতকারী প্রতিষ্ঠান ডিএন স্পোর্টসের চেয়ারম্যান মোতাহার উদ্দিন চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাহমিদা আক্তার চৌধুরী শিখা ও পরিচালক শফিকুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আজ সোমবার একই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি কাজী ফখরুল আসলাম এবং মাইনুল হককে। পরের দিন মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সোনালী ব্যাংকের সাবেক জিএম হুমায়ুন কবিরকে। এর আগে হলমার্ক অর্থ কেলেঙ্কারীর বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ৩২ জনকে । জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া আরও চলবে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের দুদক কমিশনার মোঃ বদিউজ্জামান বলেন, যেহেতু তার (স্বাস্থ্য উপদেষ্টা) নাম এসেছে, তাই অবশ্যই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দুদক তার নিজস্ব গতিতে তদন্ত করছে। এখন পর্যন্ত শুধু স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নাম এসেছে। তদন্ত কাজের সময় যদি সরকারের উচ্চপর্যায়ের আরও কোনও ব্যক্তির নাম আসে তাহলে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে, বলেন দুদক কমিশনার। কবে নাগাদ মোদাচ্ছের আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে জানতে চাইলে বদিউজ্জামান বলেন, যত দ্রুত সম্ভব, তাঁকে তলব করা হবে।
হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদ দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদরে কাছে স্বীকার করেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর হলমার্কে যাতায়াত ছিল। তিনি বলেন, হলমার্কের কারখানা পরিদর্শনে দুবার গিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। একবার গিয়েছেন হলমার্কের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার হলমার্কে যাওয়া অন্যায় নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী তিনি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে আমি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে যোগযোগ করতে পারি।
ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের উপদেষ্টা-মন্ত্রী-এমপির কোন সুপারিশ ছিল না বলে তিনি দাবি করেন।
তানভীর মাহমুদ সাংবাদিকদের আরও বলেন, সোনালী ব্যাংক থেকে ২৬শ’ কোটি টাকা ঋণ নিলেও এর বিশগুণ সম্পদ বর্তমানে তাঁর আছে। ঋণ নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তিনি কখনও ঋণ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেননি। তাঁকে সময় দেয়া হলে টাকা ফেরত দেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সরকার আমার ৭০ থেকে ৮০ প্রতিষ্ঠান খুলে দিলেই আমার ব্যবসার স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে। এছাড়া ব্যাংকের নিয়ম মেনেই ঋণ নিয়েছেন বলে দাবি করেন কোম্পানির এমডি। কোন অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেয়া হয়নি দাবি করে বলেন, যে টাকা ঋণ নিয়েছি তার বিশগুণ সম্পদ আমার আছে। ব্যাংকের সব টাকা আমি পাই টু পাই দিয়ে দেব। তিনি বলেন, ২৪ মে থেকে আমার প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় বন্ধ। ৪০ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীকে বেতন দিতে পারছি না। আগামী মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে হলমার্ক সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে বলে তিনি জানান।
জানা গেছে, হলমার্কের বাইরে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আরও পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পায় দুদক। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তি বিশেষ আর ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের যোগসাজসে হাতিয়ে নিয়েছে ৩ হাজার ৬শ’ ৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- ডিএন স্পোর্টসের চেয়ারম্যান মোতাহার উদ্দিন চৌধুরী; প্যারাগন নিট কম্পোজিট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম; টিএ্যান্ড ব্রাদার্স গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ তসলিম হাসান; নকশী নিট কম্পোজিট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ খালেক এবং খান জাহান আলী সোয়েটার্স লিমিটেড, যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল হালিম শেখ। এসব অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, হলমার্ক গ্রুপ, অন্য পাঁচটি গ্রুপ ও সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ পর্যায়ে। শীঘ্রই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।
উল্লেখ্য, হলমার্ক গ্রুপ দুর্নীতির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল কর্পোরেট শাখা থেকে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দুদক। দুদকের সিনিয়র উপ-পরিচালক মীর মোঃ জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে কমিটিতে আরও রয়েছেন- উপ-পরিচালক এ এস এম আখতার হামিদ ভূঞা, সহকারী পরিচালক নাজমুস সাদাত ও মোঃ মশিউর রহমান, উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ মজিবুর রহমান ও মোঃ জয়নুল আবেদীন।
দেশজুড়ে আলোচিত রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের অর্থ লুন্ঠনের ঘটনায় শেষ পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কঠোর হতে শুরু করেছে। জালিয়াতির ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি লুণ্ঠিত অর্থ উদ্ধারেও সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে সোনালী ব্যাংকের একাধিক উর্ধ্বতন সূত্র জনকণ্ঠকে জানিয়েছে, তারা দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। একই চিঠির অনুলিপি সোনালী ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়েও পাঠিয়েছে। অপরদিকে লুট হওয়া অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে লুন্ঠনের ঘটনায় দায়ী প্রতিষ্ঠান হলমার্কের সকল প্রতিষ্ঠানের সমুদয় সম্পত্তিও বন্ধক রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অপরদিকে এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপের মুখে পড়ে জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত প্রতিষ্ঠান হলমার্ক ইতোমধ্যেই সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে দায় স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ সব ঘটনা পর্যালোচনা করতে এবং পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে পুরো পর্ষদ নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছে। রবিবারও এ ঘটনায় পর্ষদের বৈঠক হয় বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, বৈঠক শেষে জালিয়াতির ঘটনায় গৃহীত ব্যবস্থার বিষয়টি লিখিতভাবে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করা হয়।
সূত্র আরও জানায়, পর্ষদের বৈঠকে হলমার্ক গ্রুপের ব্যবসায়িক অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এবং এসব প্রতিষ্ঠানে কি পরিমাণ সম্পদ ও এ্যাকাউন্টে কি পরিমাণ অর্থ রয়েছে এসব নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। ওই বৈঠকে পর্ষদের কাছে হলমার্ক গ্রপের ২৫টি ব্যবসায়িক অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানা যায়।
বৈঠকে পর্ষদ হলমার্ক গ্রুপের সকল প্রতিষ্ঠানের সম্পদ মর্টগেজে নেয়ার পক্ষে সর্বসম্মতভাবে মত দেয়। যার মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নেয়া ২১শ’ কোটি টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। পর্ষদের একটি সূত্র জানায়, সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দুইভাবে লুণ্ঠিত অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে লুণ্ঠিত অর্থের অন্তত ২৫ শতাংশ নগদে এবং সেটি যত দ্রুত সম্ভব আদায় করতে চায়। আর বাকি অর্থ হলমার্কের স্থাবর সম্পত্তি জামানতের মাধ্যমে উদ্ধারের চেষ্টা।
সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে ঋণের নামে হলমার্ক গ্রুপের অর্থ সরানোর ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রবিবার দুদকের কমিশনার মোঃ বদিউজ্জামান সাংবাদিকদের এ কথা জানান। একইদিন হলমার্কের চেয়ারম্যান, এমডি এবং জিএমসহ ছয়জনকে জিজ্ঞাসবাদ করেছে দুদক। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রুপের এমডি সোনালী ব্যাংকে থেকে ২৬শ’ কোটি টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে নিয়ম মেনে টাকা নিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। সময় দিলে তিনি টাকা ফেরত দেবেন বলে জানান।
রবিবার সোয়া ২টায় নম্বরবিহীন একটি পাজেরো গাড়িতে চড়ে হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ ও একই গ্রুপের চেয়ারম্যান তানভীরের স্ত্রী জেসমিন ইসলাম দুদকে আসেন। তবে তার গাড়ির কোন নম্বর অথবা অনটেস্ট লেখা ছিল না। তানভীর দম্পতি ছাড়াও দুদকে একই সময়ে হলমার্কের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) তুষার আহমেদকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুপুর আড়াইটা থেকে তাদের তিনজনকে জিজ্ঞাবাদ শুরু করেন দুদকের এ সংক্রান্ত তদন্ত কর্মকর্তারা। বিকেল ৫টায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তানভীর দম্পতি নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করে বক্তব্য দিলেও সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির নথি দুদক পেয়েছে। এছাড়া এইদিন সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অর্থ আত্মসাতকারী প্রতিষ্ঠান ডিএন স্পোর্টসের চেয়ারম্যান মোতাহার উদ্দিন চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফাহমিদা আক্তার চৌধুরী শিখা ও পরিচালক শফিকুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আজ সোমবার একই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি কাজী ফখরুল আসলাম এবং মাইনুল হককে। পরের দিন মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সোনালী ব্যাংকের সাবেক জিএম হুমায়ুন কবিরকে। এর আগে হলমার্ক অর্থ কেলেঙ্কারীর বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ৩২ জনকে । জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া আরও চলবে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের দুদক কমিশনার মোঃ বদিউজ্জামান বলেন, যেহেতু তার (স্বাস্থ্য উপদেষ্টা) নাম এসেছে, তাই অবশ্যই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দুদক তার নিজস্ব গতিতে তদন্ত করছে। এখন পর্যন্ত শুধু স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নাম এসেছে। তদন্ত কাজের সময় যদি সরকারের উচ্চপর্যায়ের আরও কোনও ব্যক্তির নাম আসে তাহলে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে, বলেন দুদক কমিশনার। কবে নাগাদ মোদাচ্ছের আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে জানতে চাইলে বদিউজ্জামান বলেন, যত দ্রুত সম্ভব, তাঁকে তলব করা হবে।
হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদ দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদরে কাছে স্বীকার করেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর হলমার্কে যাতায়াত ছিল। তিনি বলেন, হলমার্কের কারখানা পরিদর্শনে দুবার গিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। একবার গিয়েছেন হলমার্কের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার হলমার্কে যাওয়া অন্যায় নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী তিনি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে আমি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে যোগযোগ করতে পারি।
ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের উপদেষ্টা-মন্ত্রী-এমপির কোন সুপারিশ ছিল না বলে তিনি দাবি করেন।
তানভীর মাহমুদ সাংবাদিকদের আরও বলেন, সোনালী ব্যাংক থেকে ২৬শ’ কোটি টাকা ঋণ নিলেও এর বিশগুণ সম্পদ বর্তমানে তাঁর আছে। ঋণ নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তিনি কখনও ঋণ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেননি। তাঁকে সময় দেয়া হলে টাকা ফেরত দেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সরকার আমার ৭০ থেকে ৮০ প্রতিষ্ঠান খুলে দিলেই আমার ব্যবসার স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে। এছাড়া ব্যাংকের নিয়ম মেনেই ঋণ নিয়েছেন বলে দাবি করেন কোম্পানির এমডি। কোন অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেয়া হয়নি দাবি করে বলেন, যে টাকা ঋণ নিয়েছি তার বিশগুণ সম্পদ আমার আছে। ব্যাংকের সব টাকা আমি পাই টু পাই দিয়ে দেব। তিনি বলেন, ২৪ মে থেকে আমার প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় বন্ধ। ৪০ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীকে বেতন দিতে পারছি না। আগামী মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে হলমার্ক সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে বলে তিনি জানান।
জানা গেছে, হলমার্কের বাইরে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আরও পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পায় দুদক। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তি বিশেষ আর ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের যোগসাজসে হাতিয়ে নিয়েছে ৩ হাজার ৬শ’ ৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- ডিএন স্পোর্টসের চেয়ারম্যান মোতাহার উদ্দিন চৌধুরী; প্যারাগন নিট কম্পোজিট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম; টিএ্যান্ড ব্রাদার্স গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ তসলিম হাসান; নকশী নিট কম্পোজিট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ খালেক এবং খান জাহান আলী সোয়েটার্স লিমিটেড, যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল হালিম শেখ। এসব অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, হলমার্ক গ্রুপ, অন্য পাঁচটি গ্রুপ ও সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ পর্যায়ে। শীঘ্রই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।
উল্লেখ্য, হলমার্ক গ্রুপ দুর্নীতির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল কর্পোরেট শাখা থেকে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দুদক। দুদকের সিনিয়র উপ-পরিচালক মীর মোঃ জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে কমিটিতে আরও রয়েছেন- উপ-পরিচালক এ এস এম আখতার হামিদ ভূঞা, সহকারী পরিচালক নাজমুস সাদাত ও মোঃ মশিউর রহমান, উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ মজিবুর রহমান ও মোঃ জয়নুল আবেদীন।
No comments