যশোরে ধান-চাল সংগ্রহে দুই কোটি টাকা ঘুষ আদায়! by মনিরুল ইসলাম
যশোরে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে চালকলের মালিকদের কাছ থেকে দুই কোটি টাকার বেশি ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। খাদ্য বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, দারোয়ান ও ঝাড়ুদারের মাধ্যমে জেলার ৩৯০ জন চালকল-মালিকের কাছ থেকে এই টাকা আদায় করা হয় বলে মিলমালিকেরা দাবি করেছেন।
তবে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি-ফুড) মনিরুল ইসলাম ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
যশোর খাদ্য বিভাগের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, জেলার আট উপজেলার ৮ থেকে ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাধ্যমে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি-ফুড) টাকা আদায় করছেন। সরকারের একাধিক সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি তদন্ত করে তারা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে।
যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার আট উপজেলা থেকে ১৮ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন চাল ও চার হাজার ৮৩৩ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। ২৭ মে থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৬ হাজার ৬২৯ মেট্রিক টন ৮৯৫ কেজি চাল ও এক হাজার ২৩ মেট্রিক টন ৫০ কেজি ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। চাল ২৮ টাকা ও ধান ১৮ টাকা কেজি দরে সংগ্রহ করা হচ্ছে।
ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান মনিটরিং কমিটির উপদেষ্টা স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক। উপজেলা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। সদস্যসচিবের দায়িত্বে রয়েছেন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা।
সূত্রমতে, এই ধান-চাল সরকারি খাদ্যগুদামে সরবরাহের জন্য চুক্তি করার সময়ই জেলার ৩৯০ জন চালকল-মালিকের কাছ থেকে টনপ্রতি ৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এ হিসাবে খাদ্য বিভাগকে দিতে হয়েছে ৮৩ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টাকা।
সূত্র বলছে, খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে কার্যাদেশ নেওয়ার পর সরকারি বস্তা সংগ্রহের সময় দুই শতাধিক চালকল-মালিককে আবার টনপ্রতি এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়েছে। তবে এই পর্যায়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থক চালকল-মালিকদের অনেককে ছাড় দেওয়া হয় বলে সাধারণ চালকল-মালিকেরা দাবি করেছেন। তাঁদের হিসাবে দুই শতাধিক চালকল-মালিককে এই টাকা দিতে হয়েছে। এই হিসাবে তাঁদের কাছ থেকে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করা হয়েছে। (চুক্তিবদ্ধ অর্ধেক চালকল-মালিক সরবরাহ করা মোট চালের অর্ধেক দিয়েছেন ধরে টনপ্রতি গড়ে এক হাজার ৪৫০ টাকা করে আনুমানিক এই হিসাব বের করা হয়েছে)। ফলে দুই দফায় চালকল-মালিকদের দিতে হয়েছে দুই কোটি টাকার বেশি।
সূত্র জানায়, যশোর সদর উপজেলায় ঘুষের এই অর্থ সংগ্রহ করছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের দারোয়ান সত্যেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। দীর্ঘদিন ধরে তিনি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সেকশন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
সদর উপজেলার বারীনগর গ্রামের একতা রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী তবিবর রহমান বলেন, ‘এই মৌসুমে ৪৬ টন চাল খাদ্যগুদামে সরবরাহ করেছি। টনপ্রতি এক হাজার ৪০০ টাকা করে ৬৪ হাজার ৪০০ টাকা ঘুষ নির্ধারণ করা হয়। দারোয়ান সত্যেনের কাছে ৬৪ হাজার টাকা দিয়ে রফা করেছি।’
সূত্র জানায়, জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের বারীনগর গ্রামের ভাই ভাই রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী আবু সাঈদ ৪১ টন চাল খাদ্যগুদামে সরবরাহের জন্য কার্যাদেশ আনতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে যান। দারোয়ান সত্যেন্দ্রনাথ সাঈদকে জানিয়ে দেন, প্রতি টনে এক হাজার ৪০০ টাকা করে দিতে হবে। সে হিসাবে ৪১ টন চাল সরবরাহের জন্য তাঁকে দিতে হয়েছে ৫৭ হাজার ৪০০ টাকা। আবু সাঈদ ৫৭ হাজার টাকা দারোয়ানের হাতে দিয়ে বলেন, ‘ভাই, বাকি ৪০০ টাকা মাফ করে দেন।’ দারোয়ান সত্যেন্দ্রনাথ বলে ওঠেন, ‘৪০০ টাকা কি আমি নিজের পকেট থেকে দেব? ৪০০ টাকা না দেওয়া পর্যন্ত বস্তা দেওয়া হবে না।’
আবু সাঈদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি সদর আসনের সাংসদ খালেদুর রহমান টিটোকে জানাই। সাংসদ মুঠোফোনে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে এ বিষয়ে ভৎর্সনা করেন।’
তবে সাংসদ খালেদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘না, আমাকে তো কেউ কিছু বলেনি! মিলমালিকদের কাছ থেকে টনপ্রতি ঘুষের টাকা লেনদেনের ব্যাপারে আমার কিছুই জানা নেই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দারোয়ান সত্যেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, ‘আমি ক্ষুদ্র চাকরি করি। কিছু জানার থাকলে আপনি ডিসি-ফুডের সঙ্গে কথা বলেন।’
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘টাকা আদায়ের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।’ তবে তিনি বলেন, লোকবলসংকটের কারণে দারোয়ান সত্যেনকে দিয়ে সেকশনের কাজ করানো হচ্ছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এই টাকা খাদ্য কর্মকর্তাদের বাইরেও কিছু লোকের মধ্যে বণ্টন করা হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব পালন করছেন যশোর সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেলিম সরদার। তিনি মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকেরও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে সেলিম সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে তেমন কিছু জানি না। তবে ডিসি-ফুডের নেতৃত্বে দারোয়ান সত্যেনের মাধ্যমে টাকা আদায় ও বণ্টন করা হচ্ছে বলে শুনেছি। আমাকে কর্নার (কোণঠাসা) করে তাঁরা ঘুষ-বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। আমি ওই টাকার কোনো ভাগ পাইনি।’
খাদ্য বিভাগের সূত্র বলছে, মনিরামপুর উপজেলায় টাকা সংগ্রহের দায়িত্বে আছেন উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজউদ্দীন ও ঝাড়ুদার মোক্তার হোসেন। অন্য ছয় উপজেলায় একজন করে কর্মচারীকে টাকা তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মনিরামপুর উপজেলার একজন চালকল-মালিক বলেন, তিনি ১৬৪ টন চাল মনিরামপুর খাদ্যগুদামে সরবরাহ করেছেন। টনপ্রতি দেড় হাজার টাকা হিসাবে দুই লাখ ৪৬ হাজার টাকা ঝাড়ুদার মোক্তার হোসেনের কাছে দিয়েছেন।
তবে বিএনপির রাজনীতি করায় একই উপজেলার আরেক চালকল-মালিককে টনপ্রতি দুই হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অন্যদের কাছ থেকে টনপ্রতি দেড় হাজার টাকা করে ঘুষ নিলেও আমি বিএনপির লোক বলে আমার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। ৭১ টন চালের বিপরীতে এক লাখ ৪২ হাজার টাকা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজউদ্দীনের কাছে জমা দিতে হয়েছে।’
তাজউদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এভাবে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। তবে যেটা ওরা দিয়েছে, সেটা লেবার (শ্রমিক) খরচ।’ অপর অভিযুক্ত মোক্তার হোসেনের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ঝিকরগাছা উপজেলার আরেকজন মিলমালিক প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, চাল সরবরাহ চুক্তির সময়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে টনপ্রতি ৫০০ টাকা করে দিতে হয়েছে। ওই কার্যালয়ের এক নারী কর্মচারী ওই টাকা আদায়ের দায়িত্বে ছিলেন। টাকা নিয়ে প্রকাশ্যে একটি চটের বস্তায় রাখা হচ্ছিল।
ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের নামে কেউ ঘুষ নিয়ে থাকলে দায়দায়িত্ব তাঁদেরই নিতে হবে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
যশোর খাদ্য বিভাগের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, জেলার আট উপজেলার ৮ থেকে ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাধ্যমে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি-ফুড) টাকা আদায় করছেন। সরকারের একাধিক সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি তদন্ত করে তারা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে।
যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার আট উপজেলা থেকে ১৮ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন চাল ও চার হাজার ৮৩৩ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। ২৭ মে থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৬ হাজার ৬২৯ মেট্রিক টন ৮৯৫ কেজি চাল ও এক হাজার ২৩ মেট্রিক টন ৫০ কেজি ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। চাল ২৮ টাকা ও ধান ১৮ টাকা কেজি দরে সংগ্রহ করা হচ্ছে।
ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান মনিটরিং কমিটির উপদেষ্টা স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। জেলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক। উপজেলা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। সদস্যসচিবের দায়িত্বে রয়েছেন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা।
সূত্রমতে, এই ধান-চাল সরকারি খাদ্যগুদামে সরবরাহের জন্য চুক্তি করার সময়ই জেলার ৩৯০ জন চালকল-মালিকের কাছ থেকে টনপ্রতি ৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এ হিসাবে খাদ্য বিভাগকে দিতে হয়েছে ৮৩ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টাকা।
সূত্র বলছে, খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে কার্যাদেশ নেওয়ার পর সরকারি বস্তা সংগ্রহের সময় দুই শতাধিক চালকল-মালিককে আবার টনপ্রতি এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়েছে। তবে এই পর্যায়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থক চালকল-মালিকদের অনেককে ছাড় দেওয়া হয় বলে সাধারণ চালকল-মালিকেরা দাবি করেছেন। তাঁদের হিসাবে দুই শতাধিক চালকল-মালিককে এই টাকা দিতে হয়েছে। এই হিসাবে তাঁদের কাছ থেকে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করা হয়েছে। (চুক্তিবদ্ধ অর্ধেক চালকল-মালিক সরবরাহ করা মোট চালের অর্ধেক দিয়েছেন ধরে টনপ্রতি গড়ে এক হাজার ৪৫০ টাকা করে আনুমানিক এই হিসাব বের করা হয়েছে)। ফলে দুই দফায় চালকল-মালিকদের দিতে হয়েছে দুই কোটি টাকার বেশি।
সূত্র জানায়, যশোর সদর উপজেলায় ঘুষের এই অর্থ সংগ্রহ করছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের দারোয়ান সত্যেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। দীর্ঘদিন ধরে তিনি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সেকশন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
সদর উপজেলার বারীনগর গ্রামের একতা রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী তবিবর রহমান বলেন, ‘এই মৌসুমে ৪৬ টন চাল খাদ্যগুদামে সরবরাহ করেছি। টনপ্রতি এক হাজার ৪০০ টাকা করে ৬৪ হাজার ৪০০ টাকা ঘুষ নির্ধারণ করা হয়। দারোয়ান সত্যেনের কাছে ৬৪ হাজার টাকা দিয়ে রফা করেছি।’
সূত্র জানায়, জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের বারীনগর গ্রামের ভাই ভাই রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী আবু সাঈদ ৪১ টন চাল খাদ্যগুদামে সরবরাহের জন্য কার্যাদেশ আনতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে যান। দারোয়ান সত্যেন্দ্রনাথ সাঈদকে জানিয়ে দেন, প্রতি টনে এক হাজার ৪০০ টাকা করে দিতে হবে। সে হিসাবে ৪১ টন চাল সরবরাহের জন্য তাঁকে দিতে হয়েছে ৫৭ হাজার ৪০০ টাকা। আবু সাঈদ ৫৭ হাজার টাকা দারোয়ানের হাতে দিয়ে বলেন, ‘ভাই, বাকি ৪০০ টাকা মাফ করে দেন।’ দারোয়ান সত্যেন্দ্রনাথ বলে ওঠেন, ‘৪০০ টাকা কি আমি নিজের পকেট থেকে দেব? ৪০০ টাকা না দেওয়া পর্যন্ত বস্তা দেওয়া হবে না।’
আবু সাঈদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি সদর আসনের সাংসদ খালেদুর রহমান টিটোকে জানাই। সাংসদ মুঠোফোনে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে এ বিষয়ে ভৎর্সনা করেন।’
তবে সাংসদ খালেদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘না, আমাকে তো কেউ কিছু বলেনি! মিলমালিকদের কাছ থেকে টনপ্রতি ঘুষের টাকা লেনদেনের ব্যাপারে আমার কিছুই জানা নেই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দারোয়ান সত্যেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, ‘আমি ক্ষুদ্র চাকরি করি। কিছু জানার থাকলে আপনি ডিসি-ফুডের সঙ্গে কথা বলেন।’
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘টাকা আদায়ের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।’ তবে তিনি বলেন, লোকবলসংকটের কারণে দারোয়ান সত্যেনকে দিয়ে সেকশনের কাজ করানো হচ্ছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এই টাকা খাদ্য কর্মকর্তাদের বাইরেও কিছু লোকের মধ্যে বণ্টন করা হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব পালন করছেন যশোর সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেলিম সরদার। তিনি মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকেরও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে সেলিম সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে তেমন কিছু জানি না। তবে ডিসি-ফুডের নেতৃত্বে দারোয়ান সত্যেনের মাধ্যমে টাকা আদায় ও বণ্টন করা হচ্ছে বলে শুনেছি। আমাকে কর্নার (কোণঠাসা) করে তাঁরা ঘুষ-বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। আমি ওই টাকার কোনো ভাগ পাইনি।’
খাদ্য বিভাগের সূত্র বলছে, মনিরামপুর উপজেলায় টাকা সংগ্রহের দায়িত্বে আছেন উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজউদ্দীন ও ঝাড়ুদার মোক্তার হোসেন। অন্য ছয় উপজেলায় একজন করে কর্মচারীকে টাকা তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মনিরামপুর উপজেলার একজন চালকল-মালিক বলেন, তিনি ১৬৪ টন চাল মনিরামপুর খাদ্যগুদামে সরবরাহ করেছেন। টনপ্রতি দেড় হাজার টাকা হিসাবে দুই লাখ ৪৬ হাজার টাকা ঝাড়ুদার মোক্তার হোসেনের কাছে দিয়েছেন।
তবে বিএনপির রাজনীতি করায় একই উপজেলার আরেক চালকল-মালিককে টনপ্রতি দুই হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অন্যদের কাছ থেকে টনপ্রতি দেড় হাজার টাকা করে ঘুষ নিলেও আমি বিএনপির লোক বলে আমার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। ৭১ টন চালের বিপরীতে এক লাখ ৪২ হাজার টাকা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজউদ্দীনের কাছে জমা দিতে হয়েছে।’
তাজউদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এভাবে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। তবে যেটা ওরা দিয়েছে, সেটা লেবার (শ্রমিক) খরচ।’ অপর অভিযুক্ত মোক্তার হোসেনের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ঝিকরগাছা উপজেলার আরেকজন মিলমালিক প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, চাল সরবরাহ চুক্তির সময়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে টনপ্রতি ৫০০ টাকা করে দিতে হয়েছে। ওই কার্যালয়ের এক নারী কর্মচারী ওই টাকা আদায়ের দায়িত্বে ছিলেন। টাকা নিয়ে প্রকাশ্যে একটি চটের বস্তায় রাখা হচ্ছিল।
ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের নামে কেউ ঘুষ নিয়ে থাকলে দায়দায়িত্ব তাঁদেরই নিতে হবে। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
No comments