ঈদের আগে গার্মেন্টসে ফেয়ার প্রাইস কার্ডে চাল দেয়া হচ্ছে না- তালিকা না পাওয়া ও প্রশাসনিক জটিলতা by তৌহিদুর রহমান

ঈদের আগে পোশাক শিল্প শ্রমিকদের জন্য ফেয়ার প্রাইস কার্ডের মাধ্যমে চাল সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শ্রমিকদের হালনাগাদ তালিকা না পাওয়া ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে ঈদের আগে ফেয়ার প্রাইস কার্ডের মাধ্যমে চাল সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। তবে ঈদের পরে এই কর্মসূচী চালু হতে পারে।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মিকাইল শিপার জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদের আগে পোশাক শিল্প শ্রমিকদের ফেয়ার প্রাইস কার্ডের মাধ্যমে চাল সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমান ওএমএসের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কিছুটা কম মূল্যে ফেয়ার প্রাইস কার্ডের মাধ্যমে চাল সরবরাহ করতে হলে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। তবে এই অনুমোদনের জন্য সময় লাগবে। সে কারণে ঈদের আগে আর ফেয়ার প্রাইস কার্ডের মাধ্যমে চাল সরবরাহ সম্ভব হবে না। তবে ঈদের পরে সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পোশাক শিল্প শ্রমিকদের জন্য রোজার শুরু থেকেই ফেয়ার প্রাইস কার্ডের মাধ্যমে কম মূল্যে চাল বিতরণ করার লক্ষ্যে গত ১০ জুলাই খাদ্য মন্ত্রণালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মিকাইল শিপার, এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ, বিজিএমইএ সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিকেএমইএ সভাপতি এ কেএম সেলিম ওসমান, খাদ্য অধিফতরের মহাপরিচালক আহমদ হোসেন খান উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, পোশাক শিল্প শ্রমিকদের আইডি কার্ডের মাধ্যমে খাদ্যশস্য বিতরণ করা হবে। ঈদের আগেই রোজার প্রথম সপ্তাহ থেকে এই কার্যক্রম শুরু করা হবে। এই লক্ষ্যে বিজিএমইএ ও বিকেএমই-এর সঙ্গে খাদ্য অধিদফতরের একটি চুক্তি করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে বৃহস্পতিবার খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, খাদ্যশস্য বিতরণের কার্যক্রম শুরু করা হলেও চূড়ান্ত করা হয়নি। কবে নাগাদ ফেয়ার প্রাইসের মাধ্যমে শ্রমিকদের জন্য খাদ্যশস্য বিতরণ করা সম্ভব তাও নির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেনি মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পোশাক শিল্প শ্রমিকদের জন্য খাদ্যশস্য বিতরণের জন্য মূল্যই নির্ধারণ করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। বিক্রয় করা চালের কেজি কত হবে, সেটা নির্ধারিত হয়নি। এ ছাড়া ওএমএসের র্নিধারিত দামের চেয়ে কম মূল্যে চাল বিক্রি করলে অর্থ মন্ত্রণালয়েরও অনুমোদন নিতে হবে। আর ওএমএসের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে চাল বিক্রি করতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠক করতে হবে। অথবা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। তবে এই বৈঠক আহ্বান অথবা অনুমোদন সময় সাপেক্ষ। অপরদিকে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ শ্রমিকদের হালনাগাদ তালিকা এখনও খাদ্য মন্ত্রণালয়ে সরবরাহ করতে পারেনি। যে কারণে ঈদের আগে আর ফেয়ার প্রাইস কার্ডের মাধ্যমে পোশাক শিল্প শ্রমিকদের কম মূল্যে চাল সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে সাধারণ জনগণের জন্য ওএমএস ও ফেয়ার প্রাইস কার্ডের মাধ্যমে প্রতিকেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ২৪ টাকা। তবে পোশাক শিল্প শ্রমিকদের জন্য ফেয়ার প্রাইস কার্ডে চাল বিক্রি করতে হলে আরও তিন থেকে চার টাকা কম নির্ধারণ করতে হবে। সে কারণে এখানে সরকারের বড় অঙ্কের অর্থের ভর্তুকি দিতে হবে। এ জন্য এখানে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের মতামত নিতে হবে।
পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রির বিষয়ে টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসাইন বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠকে বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সরকার গঠনের সাড়ে তিন বছর পার হলেও তা কার্যকর হয়নি। গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হলেও দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির কারণে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, সরকারের উচিত ঈদের আগেই বিশেষ মূল্যে পোশাক শিল্প শ্রমিকদের মাঝে চাল বিক্রি করা। সেটা হলে শ্রমিকদের অনেক উপকার হবে।
এর আগে বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে গত ১১ জুন থেকে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে। প্রতিদিন সড়ক অবরোধ করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় শ্রমিকরা। এ সময় বেশ কয়েকটি কারখানা ভাংচুর করে শ্রমিকরা। এরপর সরকার কারখানা মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে শ্রমিকদের কাজে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানালেও অস্থিরতা চলতে থাকে।

No comments

Powered by Blogger.