দেহের জাকাত হচ্ছে সিয়াম by সৈয়দ গোলাম মোরশেদ
হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'প্রতিটি বিষয়বস্তুর একেকটা জাকাত আছে (অর্থাৎ শুদ্ধিক্রিয়া), সেরূপ দেহের জাকাত হচ্ছে সিয়াম (ইবনে মাজা)।' 'রমজান' শব্দের অর্থ হচ্ছে বিদগ্ধ করা। আরবি রমাদু থেকে রমজান, যার অর্থ জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেওয়া। কোনো জিনিসকে বিদগ্ধ করতে হলে তাপের প্রয়োজন।
আর তাপ সৃষ্টি করতে সংঘর্ষের প্রয়োজন। সিয়াম দর্শন হচ্ছে যুদ্ধ, সংঘর্ষ ও সংঘাত। এ যুদ্ধ বা সংঘাত হচ্ছে রুহানিয়াত ও নফসানিয়াতের মধ্যে। শয়তানি মনোবৃত্তি বা কু-প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে ইমান ও তাকওয়ার সংঘাত। এ সংঘাতের ফলে কলবে আত্মায় খোদার প্রেমাগ্নি সৃষ্টি হয়। আর এ প্রেমাগ্নিতে বিদগ্ধ হয় যত সব অনিত্য অসত্য। এ যুদ্ধে নফস বা কু-প্রবৃত্তি পরাজিত হলেই 'সিয়াম' কার্যকর হয়। রমজান মাসে নফস অত্যন্ত বেয়াড়া হয়ে রুহের ওপর আক্রমণ চালায়। তাকওয়া বা খোদানির্ভরশীলতা বলে রুহকে শক্তিশালী করতে না পারলে এ আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। শয়তান তখন বিভিন্নভাবে রুহকে প্ররোচিত করে তার কাছে বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করে। বস্তুপ্রাপ্তি ও ভোগে আসক্ত না হয়ে তাকে শৃঙ্খলিত এবং নিয়ন্ত্রিত করে আল্লাহ প্রদত্ত বিধানমতো আল্লাহর নেয়ামতকে উপভোগ করার কৃচ্ছ্রসাধনার নামই হচ্ছে সিয়াম।
আবদ্ধ অবস্থায় মানবতা নানা রকম কলুষ কালিমায় পতিত হয়। দেহের চাহিদা থেকেই মানবমনে ষড়রিপু তথা কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য ইত্যাদির উৎপত্তি হয়। সুতরাং দেহকে বেশি ভালোবাসা ভালো নয়। মানুষের কাছে দেহের চেয়েও রুহের গুরুত্ব বেশি হওয়া উচিত। দেহ ধ্বংসশীল আর আত্মা বা রুহ চিরঞ্জীব। শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমরা ডাক্তার-কবিরাজ নিয়ে কতই না ব্যস্ত হয়ে পড়ি। অথচ আত্মার অসুস্থতা সম্পর্কে আমরা কতই না বেখবর! হজরত আলী (রা.) বলেন, মূল্যবান কোনো জিনিস হারিয়ে ফেললে মানুষ কত অস্থির হয়েই না তা খোঁজাখুঁজি করে; অথচ তার আত্মা কোথায়, কোন অবস্থায় আছে তার দিকে সে মোটেই আগ্রহান্বিত নয়।
মৃত্যুর পর দেহ ধ্বংস হয়ে যাবে; অথচ রুহ ধ্বংস হবে না। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয় মাত্র। এ অবিনশ্বর সত্তার সুস্থতা সম্পর্কে আমাদের নেই কোনো মাথাব্যথা। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, 'নিষ্কলঙ্ক আত্মা সহকারে আগমনকারী ছাড়া কেউই মুক্তি পাবে না' (সুরা-সোয়ারা : ৮৮-৮৯)। সুতরাং রুহকে সুস্থ, তাজা ও নিষ্কলঙ্ক করতে হলে নফসের তেষ্টাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আধ্যাত্মিক পরিভাষায় যাকে বলে নফসের এসলা। সিয়াম এ রকমই একটি সাধনক্রিয়া। সিয়াম দেহের প্রতি মনের আকর্ষণকে কমিয়ে দেয় এবং তার কলুষ কালিমা দূর করে শুদ্ধ ও পবিত্র করে তোলে। এভাবেই দেহের জাকাত হচ্ছে সিয়াম।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
আবদ্ধ অবস্থায় মানবতা নানা রকম কলুষ কালিমায় পতিত হয়। দেহের চাহিদা থেকেই মানবমনে ষড়রিপু তথা কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য ইত্যাদির উৎপত্তি হয়। সুতরাং দেহকে বেশি ভালোবাসা ভালো নয়। মানুষের কাছে দেহের চেয়েও রুহের গুরুত্ব বেশি হওয়া উচিত। দেহ ধ্বংসশীল আর আত্মা বা রুহ চিরঞ্জীব। শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমরা ডাক্তার-কবিরাজ নিয়ে কতই না ব্যস্ত হয়ে পড়ি। অথচ আত্মার অসুস্থতা সম্পর্কে আমরা কতই না বেখবর! হজরত আলী (রা.) বলেন, মূল্যবান কোনো জিনিস হারিয়ে ফেললে মানুষ কত অস্থির হয়েই না তা খোঁজাখুঁজি করে; অথচ তার আত্মা কোথায়, কোন অবস্থায় আছে তার দিকে সে মোটেই আগ্রহান্বিত নয়।
মৃত্যুর পর দেহ ধ্বংস হয়ে যাবে; অথচ রুহ ধ্বংস হবে না। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয় মাত্র। এ অবিনশ্বর সত্তার সুস্থতা সম্পর্কে আমাদের নেই কোনো মাথাব্যথা। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, 'নিষ্কলঙ্ক আত্মা সহকারে আগমনকারী ছাড়া কেউই মুক্তি পাবে না' (সুরা-সোয়ারা : ৮৮-৮৯)। সুতরাং রুহকে সুস্থ, তাজা ও নিষ্কলঙ্ক করতে হলে নফসের তেষ্টাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আধ্যাত্মিক পরিভাষায় যাকে বলে নফসের এসলা। সিয়াম এ রকমই একটি সাধনক্রিয়া। সিয়াম দেহের প্রতি মনের আকর্ষণকে কমিয়ে দেয় এবং তার কলুষ কালিমা দূর করে শুদ্ধ ও পবিত্র করে তোলে। এভাবেই দেহের জাকাত হচ্ছে সিয়াম।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
No comments