অমর দুটি হাত by এনায়েত রসুল
১৪৮০ সালের একটি সত্য ঘটনা। জার্মানির ন্যুরেমবার্গের এক গ্রামে বাস করতো কার্ল আর আলব্রেট নামে দুই কিশোর। দুই জনের মধ্যে ছিল গভীর বন্ধুত্ব। ওরা এতো নিখুঁত ছবি আঁকতে পারতো যে, সেই ছবি যে দেখতো সেই মুগ্ধ হয়ে যেতো। মুগ্ধ হলেন সেই গ্রামের পুরোহিতও।
তিনি দু’বন্ধুকে ডেকে বললেন, আমি কিছু পথ খরচ দিই, তোমরা বার্লিনে চলে যাও। সেখানে গিয়ে আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়ে ভালোমতো ছবি আঁকা শিখে এসো। তাহলে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। পুরোহিতের কথায় উৎসাহিত হয়ে দু’বন্ধু বার্লিন শহরে গেল।
বার্লিনে তো কেউ চেনাজানা ছিল না। তাই এ বাড়ি সে বাড়ি ঢুকে অনুনয় বিনয় করার পর এক বুড়ি শুধু তাদের থাকার জন্য একটা ঘর ছেড়ে দিলো।
দু’বন্ধু তখন কাজের খোঁজে বের হলো। অচেনা ছেলেদের কে কাজ দেবে? যা হোক, ছয়-সাতদিন ঘোরাঘুরির পর এক মহিলা কাজ দিতে রাজি হলেন। তবে একজনকে। তিনি বললেন, সকাল-বিকাল আমার ঘরদোর ঝাড়পোছ করতে হবে। ইচ্ছে হলে কাজ করতে পারো।
ইচ্ছে অনিচ্ছের তো প্রশ্নই ওঠে না। ওরা দু’বন্ধু একসঙ্গে জবাব দিলো। কাজ করবো।
কিন্তু কে কাজ করবে আর কে আর্ট স্কুলে ভর্তি হবে? দু’জন দু’জনকে স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য অনুরোধ করতে লাগলো। শেষে ঠিক হলো আপাতত কার্ল কাজ করবে আর আলব্রেট আর্ট স্কুলে ভর্তি হবে। এ সময় তার যাবতীয় খরচও চালাবে কার্ল। তারপর আলব্রেট পাস করে চাকরি নেবে। কার্ল তখন আর্ট স্কুলে ভর্তি হবে। আলব্রেট তখন কার্লের খরচ চালাবে। তো সিদ্ধান্ত মতোই দিন গড়িয়ে যেতে লাগলো। সারাটি দিন কঠোর পরিশ্রম করে কার্ল রোজগার করে আলব্রেটের রঙ, তুলি, কাগজ, পেন্সিলের খরচ জোগাতে লাগলো আর আলব্রেট মনোযোগ দিয়ে ছবি আঁকা শিখে চললো। এক সময় সে আর্ট স্কুল থেকে স্নাতক হয়ে বের হলো। সঙ্গে সঙ্গে গহনার ডিজাইনার হিসেবে ভালো চাকরিও পেয়ে গেলো। তখন সে কার্লকে বললো, বন্ধু! এবার তোমার পালা। আজই তুমি আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়ে যাও।
কার্ল সঙ্গে সঙ্গে আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়ে গেল। কিন্তু ফিরে এলো মন খারাপ করে।
বিকেলে কাজ থেকে ফিরে আলব্রেচ দেখতে পেল কার্ল মাথা নিচু করে বসে আছে। বোঝাই যাচ্ছে মন খারাপ। আলব্রেট কার্লের মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো, কী বন্ধু, মন খারাপ কেন?
কার্ল বললো, আমার আর ছবি আঁকার উপায় নেই। ঘর মোছার কাজ করতে করতে আমার আঙুলের নিচের মাংস শক্ত হয়ে গেছে। এ আঙুল দিয়ে তুলি ধরা সম্ভব হবে না। আর্ট স্কুল থেকে আমার নাম কেটে দেয়া হয়েছে।
কার্ল ছবি আঁকতে পারবে না শুনে আলব্রেট ভীষণ দুঃখ পেলো। সে বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে অঝোর ধারায় কাঁদলো। তারপর বললো, তুমি আমাকে তিলতিল করে শিল্পী হিসেবে গড়ে তুলেছো। আমার পড়ার খরচ জোগাতে গিয়ে তোমার হাত অকেজো করেছো। এ হাত তো আমি ফিরিয়ে দিতে পারবো না। তবে এ হাতের ছবি আঁকব আমি। তুমি হাত দুটো তুলে ধরো।
বন্ধুর অনুরোধে কার্ল প্রার্থনার ভঙ্গিতে তার হাত তুলে ধরলো। আলব্রেট নিখুঁতভাবে সেই হাতের ছবি আঁকলো। এতো অপূর্ব আর ডিটেইল ছবি হলো যে প্রার্থনারত সেই হাতের ছবি নিয়ে সারা পৃথিবীতে হইচই পড়ে গেলো। দেশে দেশে মূল ছবির প্রদর্শনী হতে লাগলো।
আলব্রেট ছিলেন বিখ্যাত জার্মান চিত্রশিল্পী আলব্রেট ডুরার (অষনৎবপযঃ উঁৎবৎ, ১৪৭১Ñ১৫২৮)। আর কার্লের হাত নিয়ে আঁকা তার বিখ্যাত ছবিটির নাম ছিল ঞযব চৎধুরহম ঐধহফং. আঁকা হয়েছিল ১৪৮৬ সালে কোন এক সময়। কী অপূর্ব সত্যÑশিল্পীর জন্ম দিলেন কার্ল আর কার্লের দুটি অকেজো হাতকে অমর করে রাখলেন শিল্পী! দু’জনের ত্যাগই তুলনাহীন।
বার্লিনে তো কেউ চেনাজানা ছিল না। তাই এ বাড়ি সে বাড়ি ঢুকে অনুনয় বিনয় করার পর এক বুড়ি শুধু তাদের থাকার জন্য একটা ঘর ছেড়ে দিলো।
দু’বন্ধু তখন কাজের খোঁজে বের হলো। অচেনা ছেলেদের কে কাজ দেবে? যা হোক, ছয়-সাতদিন ঘোরাঘুরির পর এক মহিলা কাজ দিতে রাজি হলেন। তবে একজনকে। তিনি বললেন, সকাল-বিকাল আমার ঘরদোর ঝাড়পোছ করতে হবে। ইচ্ছে হলে কাজ করতে পারো।
ইচ্ছে অনিচ্ছের তো প্রশ্নই ওঠে না। ওরা দু’বন্ধু একসঙ্গে জবাব দিলো। কাজ করবো।
কিন্তু কে কাজ করবে আর কে আর্ট স্কুলে ভর্তি হবে? দু’জন দু’জনকে স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য অনুরোধ করতে লাগলো। শেষে ঠিক হলো আপাতত কার্ল কাজ করবে আর আলব্রেট আর্ট স্কুলে ভর্তি হবে। এ সময় তার যাবতীয় খরচও চালাবে কার্ল। তারপর আলব্রেট পাস করে চাকরি নেবে। কার্ল তখন আর্ট স্কুলে ভর্তি হবে। আলব্রেট তখন কার্লের খরচ চালাবে। তো সিদ্ধান্ত মতোই দিন গড়িয়ে যেতে লাগলো। সারাটি দিন কঠোর পরিশ্রম করে কার্ল রোজগার করে আলব্রেটের রঙ, তুলি, কাগজ, পেন্সিলের খরচ জোগাতে লাগলো আর আলব্রেট মনোযোগ দিয়ে ছবি আঁকা শিখে চললো। এক সময় সে আর্ট স্কুল থেকে স্নাতক হয়ে বের হলো। সঙ্গে সঙ্গে গহনার ডিজাইনার হিসেবে ভালো চাকরিও পেয়ে গেলো। তখন সে কার্লকে বললো, বন্ধু! এবার তোমার পালা। আজই তুমি আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়ে যাও।
কার্ল সঙ্গে সঙ্গে আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়ে গেল। কিন্তু ফিরে এলো মন খারাপ করে।
বিকেলে কাজ থেকে ফিরে আলব্রেচ দেখতে পেল কার্ল মাথা নিচু করে বসে আছে। বোঝাই যাচ্ছে মন খারাপ। আলব্রেট কার্লের মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো, কী বন্ধু, মন খারাপ কেন?
কার্ল বললো, আমার আর ছবি আঁকার উপায় নেই। ঘর মোছার কাজ করতে করতে আমার আঙুলের নিচের মাংস শক্ত হয়ে গেছে। এ আঙুল দিয়ে তুলি ধরা সম্ভব হবে না। আর্ট স্কুল থেকে আমার নাম কেটে দেয়া হয়েছে।
কার্ল ছবি আঁকতে পারবে না শুনে আলব্রেট ভীষণ দুঃখ পেলো। সে বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে অঝোর ধারায় কাঁদলো। তারপর বললো, তুমি আমাকে তিলতিল করে শিল্পী হিসেবে গড়ে তুলেছো। আমার পড়ার খরচ জোগাতে গিয়ে তোমার হাত অকেজো করেছো। এ হাত তো আমি ফিরিয়ে দিতে পারবো না। তবে এ হাতের ছবি আঁকব আমি। তুমি হাত দুটো তুলে ধরো।
বন্ধুর অনুরোধে কার্ল প্রার্থনার ভঙ্গিতে তার হাত তুলে ধরলো। আলব্রেট নিখুঁতভাবে সেই হাতের ছবি আঁকলো। এতো অপূর্ব আর ডিটেইল ছবি হলো যে প্রার্থনারত সেই হাতের ছবি নিয়ে সারা পৃথিবীতে হইচই পড়ে গেলো। দেশে দেশে মূল ছবির প্রদর্শনী হতে লাগলো।
আলব্রেট ছিলেন বিখ্যাত জার্মান চিত্রশিল্পী আলব্রেট ডুরার (অষনৎবপযঃ উঁৎবৎ, ১৪৭১Ñ১৫২৮)। আর কার্লের হাত নিয়ে আঁকা তার বিখ্যাত ছবিটির নাম ছিল ঞযব চৎধুরহম ঐধহফং. আঁকা হয়েছিল ১৪৮৬ সালে কোন এক সময়। কী অপূর্ব সত্যÑশিল্পীর জন্ম দিলেন কার্ল আর কার্লের দুটি অকেজো হাতকে অমর করে রাখলেন শিল্পী! দু’জনের ত্যাগই তুলনাহীন।
No comments