সামাজিক উদ্যোক্তা ড. ইউনূসের নতুন প্রস্তাব by ড. এম এম আকাশ

(শেষাংশ) অনেক েেত্রই এসব কোম্পানির আনুষ্ঠানিক মালিকানা সমাজের শোষিত-বঞ্চিত অংশের হাতে থাকলেও প্রকৃত কতর্ৃত্ব ও মালিকানা অল্প কয়েকজন ব্যক্তি বা একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত হাতেই রয়ে যেতে পারে। তখন ব্যক্তির ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যর ওপর সমগ্র ব্যাপারটি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।


আমরা তখন ভাগ্য ভাল থাকলে একজন ঈণভমশমফণর্ভ ঊধর্ডর্টমর (দয়ালু এক নায়ক) উপহার পেতে পারি আর ভাগ্য খারাপ থাকলে একজন বিশ্বাসঘাতক তথাকথিত সামাজিক উদ্যোক্তাকেও উপহার হিসেবে পেতে পারি।
বর্তমান বাংলাদেশ বিদেশী অর্থনির্ভর বিশাল এনজিও খাতটি এ ধরনেরই একটি বিপরীত সম্ভাবনাবিশিষ্ট কর্পোরেট খাত হিসেবে আবিভর্ূত হয়েছে। এই খাতে ব্যবসা এবং সমাজকল্যাণ জড়াজড়ি করে একসঙ্গে এগোচ্ছে সমষ্টির স্বার্থ এবং ব্যক্তির স্বার্থের মধ্যে কোনটি কখন কোথায় প্রধান হয়ে যায় তা এসব প্রতিষ্ঠানের েেত্র সর্বদা স্বচ্ছ নয়। ঐতিহাসিকভাবে এ যাবৎ এসব প্রতিষ্ঠানের মূল ব্যক্তি উদ্যোক্তারাও নানা বিপরীত ধরনের মিশ্র চারিত্রিক গুণাবলী প্রদর্শন করে আসছেন। অধ্যাপক রেহমান সোবহানের মতে তাই যতদিন এসব প্রতিষ্ঠান প্রত্যভাবে তাদের দরিদ্র সদস্যদের যৌথ মালিকানাধীন না হচ্ছে এবং এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় দরিদ্রদের গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে ততদিন এগুলোকে যথার্থ সামাজিক উদ্যোগ বলা যাবে না। এ প্রসঙ্গে তাঁর অন্যতম সংস্কার প্রস্তাবটি হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানকে "দরিদ্রদের মালিকানাধীন কর্পোরেশনে পরিণত করা হোক যদিও এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আশানুরূপ সাড়া তিনি এদের কাছ থেকে এখনও পাননি।" স্মর্তব্য যে, ড. ইউনূসের পরিচালিত 'গ্রামীণ ব্যাংকের' মালিকানার ৯০ শতাংশ এখন গ্রামের দরিদ্র মহিলাদের হাতে ন্যস্ত। যদিও গ্রামীণ নাম বহনকারী অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানা কিন্তু তাদের হাতে নেই। অবশ্য বহুজাতিক কোম্পানি গ্রামীণ টেলিফোনে গ্রামীণ ফান্ডের ৩৫ শতাংশ শেয়ার আছে বলে আমরা শুনেছি। প্রথমে অবশ্য একশতভাগ মালিকানার কথাই শুনেছিলাম। ড. ইউনূস এই প্রসঙ্গে পরবর্তীতে দাবি করেছেন যে, 'টেলিনর কোম্পানি' তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করে প্রতিশ্রুতি রা করেনি। তিনি মামলাও করতে চেয়েছিলেন। যদিও এ ব্যাপারে আর কিছু পরবর্তীতে জানা যায় না। যে প্রশ্নটি এদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের েেত্র ইতোমধ্যেই উত্থাপিত হয়েছে তা হচ্ছে দরিদ্রদের ৯০ শতাংশ মালিকানার কথা বলা হয় তা কি একটা নিছক 'আনুষ্ঠানিক মালিকানা' (তমরবটফ) যেমনটি আমরা প্রায়ই বলি শাসনতন্ত্র অনুযায়ী 'জনগণই রাষ্ট্রের মালিক' কিন্তু আসলে রাষ্ট্রের মালিক কারা তা সেটা তো আমরা সবাই বুঝি। ব্যাপারটি কি সেরকমই একটা কিছু? আবার এ কথাও পাল্টা যুক্তি হিসেবে ড. ইউনূস দাবি করতে পারেন যে গ্রামীণ দরিদ্রদের নির্বাচিত সদস্যরাই যেহেতু গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের অধিকাংশ সদস্য সুতরাং তাঁরাই তো প্রধান মালিক বটে। যদিও এ কথাও সত্য যে এই দরিদ্র স্বল্প শিতি প্রতিনিধিদের সংখ্যা বেশি হলেও জটিল ব্যবসা প্রণালী বোঝার মতা এদের প্রত্যেকেরই এতই কম যে, তাদেরকে হয়ত 'সামাজিক উদ্যোক্তা' ড. ইউনূসের সিদ্ধান্তের ওপরেই সবকিছু ছেড়ে দিতে হবে বা হয়েছে। তাহলে শেষ বিচারে এখানেও দেখা যাচ্ছে যে, 'ড. ইউনূস' বা এই ধরনের কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত সদিচ্ছার বা চরিত্রই সমগ্র সামাজিক উদ্যোক্তা মডেলটির নিয়ামক বিষয়ে পরিণত হচ্ছে তবে এ কথা সত্য যে রাষ্ট্রীয় মালিকানা বজায় রেখে যদি 'সামাজিক উদ্যোক্তাদের' খুঁজে বের করে তাদের ব্যক্তিগত দতা উদ্যোগ ও স্বাধীনতাকে উপযুক্ত জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার কাঠামোর মধ্যে এনে পরিচালিত করা যেত তাহলে চিরাচরিত রাষ্ট্রীয় কেন্দ্রীভূত মালিকানার ভতর্ুকীময় ও অদতাময় পরিণতি থেকে ধ্রুপদী সমাজতন্ত্র হয়ত রা পেত। কিন্তু ধ্রুপদী সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার এই ত্রিেট দূর করার জন্য সামাজিক রাষ্ট্রীয় মালিকানার মার্কসীয় মূল প্রতিপাদ্য থেকে সরে আসার প্রয়োজন নেই। বরং সেখান থেকে সরে আসলে তার পরিণতি দাঁড়াবে ব্যক্তির ব্যক্তিগত সদিচ্ছার হাতে সামাজিক মঙ্গলকে জিম্মি করে দেয়া। যেটা বরং করা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় মালিকানা বজায় রেখে বাজার ও ব্যক্তি উদ্যোগকে দতার সঙ্গে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সংস্কার সাধন। তাই ধ্রুপদী সমাজতন্ত্র যদি নিজেকে রা করতে চায় তাহলে তাকে দ্রুত বিকেন্দ্রীভূত এবং অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এজন্য রাষ্ট্রকে সম্পদের মালিকানা অুণ্ন রেখে 'ম্যানেজমেন্টকে' সামাজিক উদ্যোক্তাদের বা সমবায়ের হাতে চুক্তিতে ছেড়ে দিতে হবে। ড. ইউনূস কিন্তু পুঁজিপতিদের প্রত্যাখ্যান করেননি বরং পুঁজির নিয়ন্ত্রক রাষ্ট্রকেই প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেজন্য আসলে তিনি এদের কাউকেই এড়াতে পারবেন না। এদের উভয়ের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে তিনি সামাজিক উদ্যোক্তার উদ্যোগের মডেলটি নির্মাণ করতে চেয়েছেন কিন্তু বাহ্মত্মবে শূন্য থেকে যেহেতু কোন মডেল তৈরি করা সম্ভব নয় সেহেতু শেষ পর্যন্ত তিনি ব্যক্তিমালিকানাভিত্তিক বাজার ব্যবস্থাকে ভিত্তি করেই তার 'সামাজিক উদ্যোগের' স্বপ্নটি নির্মাণ করতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে প্রতিকূল সমাজে এটি বিচ্ছিন্ন একটি স্বপ্ন বা ব্যক্তিনির্ভর মডেলের সীমা অতিক্রম করতে পারেনি। আর সামাজিক উদ্যোক্তাটি যদি ছদ্মবেশী হয় তাহলে এর পরিণতি হবে সাম্প্রতিক স্টক মার্কেটের পরিণতির অনুরূপ! তাই আমার মনে হয় ড. ইউনূসের জন্য ভবিষ্যতে হয়ত বড় একটি ধাক্কা অপো করে আছে। যখন তিনি গ্রামীণ ব্যাংক ত্যাগ করে রাজনীতিতে নাম লেখাবেন তখনই প্রকৃতপ েশুর েহবে তার 'মডেলের' এসিড টেস্ট। 'গ্রামীণ ব্যাংক' যদি আমাদের কথামতো কোন ব্যক্তিনির্ভর মডেল হয় তাহলে ড. ইউনূসের বহির্গমনের পর তাঁর চরিত্র বদলে যাবে বা তা আদৌ টিকবে না। অথবা ড. ইউনূস যেহেতু একজন নশ্বর মানুষ সেহেতু তিনি নিজেও বদলে যেতে পারেন!

No comments

Powered by Blogger.