শিক্ষার্থীরাই সব সময় ক্ষতির শিকার-জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

গত বুধবার রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে এক শিক্ষার্থীকে পুলিশ আটক করলে অন্য শিক্ষার্থীরা তাঁকে ছাড়িয়ে নেন। তারপর তাঁরা ওই হলের প্রাধ্যক্ষের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর বিক্ষোভস্থলে পুলিশ আসে।


বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা পুলিশকে ধাওয়া করেন, পুলিশ পাল্টা ছররা গুলি চালায়। আহত হন পাঁচ শিক্ষার্থী। তারপর উত্তেজনা ও নৈরাজ্য। অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ; শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ।
কিন্তু কেন এমন হলো? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন এমন হয়? এসবের ফলে কার কী লাভ হয়? কারা কত ক্ষতিগ্রস্ত হয়?
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেছেন, বুধবার রাতে পুলিশ সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই এক শিক্ষার্থীকে আটক করেছিল। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই রাতেই আরও আগের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তাহমিদুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থীকে অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় রাত ১১টার দিকে মীর মশাররফ হোসেন হলের সাদেকুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছিল, যাঁকে অন্য শিক্ষার্থীরা ছাড়িয়ে নিয়েছেন। শুধু ছাড়িয়ে নিয়েই তাঁরা ক্ষ্যান্ত হননি, হলের প্রাধ্যক্ষের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেছেন; এবং আবারও পুলিশ বাহিনীকে আসতে হয়েছে।
প্রথমত, পরিষ্কার হওয়া উচিত বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব প্রশাসনিক নিয়ম অনুযায়ী চলবে; আবার এটাও বুঝতে হবে, ক্যাম্পাসের ভেতরে ‘অজ্ঞাত ব্যক্তিরা’ এসে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম করলে যে ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয়, তার ফলে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া অনিবার্য হয়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় তো দেশের আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে; তারা উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণ অনুসন্ধান করবে, জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবে। কিন্তু সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন, শক্তি প্রদর্শন ও নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রবণতা পরিহার করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্থানে এমন কোনো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে না, যা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান করা যায় না। মর্মান্তিক সত্য হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিভঙ্গ হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন শিক্ষার্থীরাই।

No comments

Powered by Blogger.