এখনও সম্পদের হিসেব দেননি মন্ত্রী এমপিরা- সরকারের এক বছর by তপন বিশ্বাস

মহাজোট সরকারের এক বছর পূর্ণ হলেও এখনও সম্পদের হিসাব দেননি মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা। সম্পদের বিবরণীর প্রদানের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি ছকও তৈরি করা হয়। এতে মন্ত্রীদের দায়িত্ব গ্রহণের আগে এবং দায়িত্ব ছাড়ার সময় সম্পদের হিসাব দেয়ার কথা বলা হয়।


একই সঙ্গে প্রতিবছর মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেছিলেন।
মহাজোট সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের সম্পদের হিসাব প্রকাশের ঘোষণা দেন। সরকারের এই ঘোষণায় দেশবাসী স্বাগত জানায়। এতে দুর্নীতি কমবে বলেও দেশবাসী ধারণা করে। সরকারের এক বছর পূর্ণ হলেও তেমন কোন দুর্নীতির অভিযোগ এখনও পাওয়া যায়নি। তবে সম্পদের হিসাব প্রদান না করায় নিন্দুকেরা সরকারের দিকে তীর তাক করে রেখেছে।
সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়, সম্পদের হিসাব প্রদান শুরম্ন করার লৰ্যে বিগত বছর ১৪ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দেয়। এই চিঠিতে বলা হয়, আগে যে নিয়মে সম্পদের হিসাব জমা নেয়া হয়েছে সেই অনুসারে বা ছক ও প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জমা দিতে হবে। চিঠি পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে এনবিআর একটি ছক তৈরি করে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। অর্থ মন্ত্রণালয় খসড়া ওই ছক মন্ত্রিপরিষদে পাঠায়।
সূত্র জানায়, এনবিআরের এ সংক্রানত্ম প্রসত্মাবে সংসদ নির্বাচনের আগে হলফনামায় দেয়া আয়-ব্যয়ের তথ্য, আয়কর রিটার্ন, দুদকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দাখিলকৃত বিবরণীর বাইরে এই নতুন হিসাব বিবরণী জমা নেয়ার কথা বলা হয়। মন্ত্রী-সংসদ সদস্য হবার পর ফরমের মাধ্যমে সম্পদের প্রদত্ত তথ্য নির্বাচন কমিশন, এনবিআর ও দুদকে ইতোপূর্বে দেয়া হিসাবের সঙ্গে সমন্বয় করার কথা বলা হয়।
১৩ জানুয়ারি এনবিআরের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে ফেব্রম্নয়ারি মাস থেকে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সম্পদের হিসাব গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরম্ন করার ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তখন তিনি বলেন, সংগৃহীত ওই সম্পদের বিবরণ সরকারের পৰ থেকে জনগণকে জানানো হবে। পরবর্তীতে ৩০ জুনের মধ্যে মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদের বিররণ জমা দিতে বলা হয়। এরপর বলা হয়, আগস্ট মাসের মধ্যে এই হিসাব জমা দিতে হবে। সম্পদের বিবরণীতে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরম্ন করে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের পরিবারের সম্পদসহ ব্যক্তিমালিকানাধীন বা অংশিদারী ব্যবসার পুঁজির পরিমাণ বিসত্মারিত উলেস্নখ করার দিকনির্দেশনা ছিল। কিন্তু এখন পর্যনত্ম মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা তাঁদের সম্পদের বিবরণ জমা দেননি।
অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সম্পদের হিসাব সংক্রানত্ম কোন আইন করা হচ্ছে না। তবে এ ব্যাপারে এক ধরনের নীতিমালা করা হতে পারে। বিধান অনুযায়ী মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা যখন দায়িত্ব নেবেন তখন সম্পদের হিসাব দেবেন। আর দায়িত্ব ছাড়ার সময় আর একবার হিসাব দেবেন। পাশাপাশি তাঁদের প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, সম্পদের হিসাব প্রদানের ফলে মন্ত্রী-সংসদ সদস্য হয়ে কেউ ১০ টাকা থেকে কোটি টাকার মালিক হয়ে যায় কিনা জনগণ তা বিচার করতে পারবে।
জানা গেছে, এনবিআর নিজস্ব বিবেচনায় বা মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনা অনুযায়ী মন্ত্রী-এমপি কতর্ৃক প্রদত্ত সম্পদের হিসাব সন্দেহজনক হলে তা খতিয়ে দেখতে পারে।
বিগত আওয়ামী লীগ আমলে (১৯৯৬-২০০১) মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সম্পদের হিসাব গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হলেও তখন জনসমৰে তা প্রকাশ করা হয়নি। এদিকে ওয়ান ইলেভেনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের সম্পদের হিসাব বিবরণী প্রকাশের কথা উঠলেও শেষ পর্যনত্ম তা বাসত্মবায়নের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে ওই সময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সরকারের কিছু গুরম্নত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে সম্পদের হিসাব দুদকের পৰ থেকে জনসমৰে প্রকাশ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.