ছয় সড়কে যানবাহন চলছে না by পার্থ সারথি দাস

এবার বন্যা ও বর্ষণে দেশের বিভিন্ন জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৬টি সড়ক। আর এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮৪ কোটি টাকা। কোনো কোনো স্থানে জোড়াতালি দিয়ে সড়ক যোগাযোগ চালু রাখা হয়েছে। বন্যার পর মাসখানেক পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত এই ২৬টি সড়কের মধ্যে এখনো যান চলাচল বন্ধ আছে ছয়টি সড়কে।


ঈদের আগে ছয় সড়ক চালু হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বন্যা ও বর্ষণে সড়কে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের একটি প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ প্রতিবেদনটি গত ৩১ জুলাই সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) থেকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সওজের প্রধান প্রকৌশলী আমিনুর রহমান লস্কর বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি-সংক্রান্ত এ প্রতিবেদনটি পাঠান যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিকের কাছে।
সওজের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এ বছরের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সমুদ্রতীরের জেলা কক্সবাজারের রাস্তাঘাট। যান চলাচল বন্ধ থাকা ছয়টি সড়কের মধ্যে পাঁচটিই কক্সবাজারের। অন্যটি কুড়িগ্রামের। বিচ্ছিন্ন সড়কগুলো চালু না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কক্সবাজার ও কুড়িগ্রামের জনসাধারণকে। বৃষ্টিপাত চলতে থাকায় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সড়ক সংস্কার করেও চালু রাখতে পারছে না কক্সবাজারের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
রামুর বাসিন্দা ও কক্সবাজার পোস্ট অফিসের হিসাবরক্ষক মমতাজুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, বন্যা হওয়ার পর রামু-ফতেহখাঁর পুল মরিচা সড়কের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। এ কারণে এলাকার বহু মানুষ বিপদে আছে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা কষ্টে আছে।
কক্সবাজারের এসব সড়কের বর্তমান অবস্থার ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কক্সবাজার সড়ক বিভাগে ৯টি সড়ক মাসখানেকের বেশি সময় বিচ্ছিন্ন ছিল। বর্ষণ চলতে থাকায় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সড়ক চালু করার চেষ্টা করলেও কোনো ফল মিলছে না। সড়ক সংস্কারে জরুরি ভিত্তিতে ১০ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে মনে করছি। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সড়ক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা নিয়ে আমরা বিপাকে আছি।'
প্রতিবেদনে বলা হয়, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতায় বিভিন্ন সড়ক বিভাগ থেকে এবারের অতিবৃষ্টি, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির হালনাগাদ বিবরণী পাওয়া গেছে। গত ২৯ জুলাই পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সড়কের বর্ণনা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বন্যা ও বর্ষণে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কসহ ২৬টি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ছয়টি জেলার। কিন্তু এখনো কক্সবাজারের জনতাবাজার-গোরাকঘাটা সড়ক বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গত ২৬ জুন এই সড়কের তৃতীয়, চতুর্থ ও অষ্টম থেকে ১৮তম কিলোমিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া একই জেলায় লক্ষ্যারচর-বেতুয়ারবাজার-বাগগুজারা সড়কটি ২৯টি স্থানে ভেঙে যায়। এটি এখনো চালু হয়নি। মাসখানেক ধরে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে কুতুবদিয়া-আজম সড়কটি। টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কটি ২৬ জুলাই বিচ্ছিন্ন হলে এটি চালুর চেষ্টা করেও পারা যায়নি। এ ছাড়াও রামু-ফতেহখাঁর পুল মরিচা সড়কটি ২৬ জুন থেকেই বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
সওজের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কুড়িগ্রামে গত ২৯ জুন থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে জামালপুর-ধানুয়া-কামারপুর-রাজিবপুর-রৌমারী-দাঁতভাঙ্গা সড়ক। এই সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তৈরি করা হয়েছে বিকল্প বাঁশের সাঁকো।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, এই সড়ক নির্মাণের জন্য গত ২৪ জুলাই দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্র গ্রহণ করা হবে ৮ আগস্ট। এর পরই কাজ আরম্ভ হবে। তবে ঈদের আগে কাজ শুরু করা যাবে কি না এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। এই সড়ক প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ লাখ টাকা।
কক্সবাজার ও কুড়িগ্রাম ছাড়াও সিলেট, সুনামগঞ্জ, বান্দরবানের বিভিন্ন সড়ক বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়ে বলে সওজের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে সওজ বন্যা বিধ্বস্ত সড়ক মেরামতে ১১৮ কোটি টাকা চেয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে তাদের জানানো হয়েছে, এসব সড়ক নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের খাত থেকে মেরামত করা যায়।

No comments

Powered by Blogger.