বৃহৎ পরিবর্তনের জন্য বৃহৎ বলের আবশ্যক by শেখর ইমতিয়াজ
খুবই সুন্দর উপদেশ ছিল! তবে সবটুকু নয়। দুটো বাক্যে কেমন যেন জট পাকানোর ইঙ্গিত ল্য করা গিয়েছিল_ ছ'মাসের মধ্যেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠল। গত বছরের ১২ আগস্ট রাতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার গুলশান কার্যালয়ে ছাত্রদলের নেতাদের উদ্দেশে বলেছিলেন, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজির পরিবর্তে যথাযথ
শিতি হতে হবে। দেশের কল্যাণে কাজ করার জন্য ছাত্রদলের নেতাদের উপযুক্ত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ছাত্রদলের নেতাদের কিছু পাওয়ার পরিবর্তে নীতি ও আদর্শ নিয়ে কাজ করতে হবে এবং ছাত্রদলকে মেধাবী ছাত্রদের সংগঠনে পরিণত করতে হবে। নেতা-কর্মীদের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করার কথা বলেছিলেন খালেদা জিয়া। অবশ্যই সুন্দর কথা। বাকি দুটো বাক্য উল্লেখ করা যাক। _ তিনি বলেছিলেন, তারেক রহমান ছাত্রদলকে দেখাশোনা করেছেন। এবং ভবিষ্যতেও তারেক রহমান ছাত্রদলকে দেখাশোনা করবেন। মন্তব্য নি্#৬৩৭৪৩;্রয়োজন। ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি এবং বঞ্চিতদের চালচিত্র ও কর্মকান্ড দেখলেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। মূলত বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেশ ও পরামর্শ কখনওই ছাত্রদল কিংবা বিএনপির কাছে গুরুত্ব বহন করেনি। তবে তার একগুঁয়েমিপনাকে সমীহ করলেও বেশিরভাগ েেত্র সমালোচনার ঝড় তুলেছে_ লাভ তাতে তার পরিবারের হলেও ছাত্রদল-বিএনপির জন্য বিভক্তির পরিমাণ বেড়েছে। দলছুটের সংখ্যাও কম নয়। ২০০৯ সালের জুলাই মাসে ঘোষিত ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পাওয়াদের বেশিরভাগই ছিল অছাত্র। কমিটিতে স্থান পেয়েছিল শিবির, ছিনতাইকারী, টেন্ডারবাজ, মাদকসেবী এবং মাদকব্যবসায়ীরাও। খোদ আহ্বায়কের বিরুদ্ধে ছিল শিবির করার অভিযোগ। কমিটিতে স্থান পাওয়া অনেকেই ছিল বিবাহিত, সন্তানের জনক, ব্যবসায়ী। আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পাওয়া অনেকেই অভিযোগ তুলেছিলেন আহ্বায়কের বিরুদ্ধে। তিনি ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র থাকাকালে শিবির কর্মী ছিলেন। জনতা ব্যাংকের ঋণ খেলাপী হওয়ায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার প্রার্থিতার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। ১৯৯১-১৯৯২ শিাবর্ষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি রাজনীতিতে ছিলেন নিষ্ক্রিয়। নজর দিয়েছিলেন সংসার ও ব্যবসার প্রতি। গাজীপুরে তার গার্মেন্টস ব্যবসা আছে। এক যুগ্ম আহ্বায়ক পরিচিত মাদকসেবী ও মাদকব্যবসায়ী হিসেবে। তিনি ছিনতাইয়ের চক্রের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। ২০০৪ সালে ছিনতাই করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরাও পড়েন।আবদুর রহিম নামে ফাইন্যান্স বিভাগের ছাত্র ছিলেন। দ্বিতীয় বর্ষেই তার ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যায়। এমনতর উদ্ভট এবং বিচিত্র ঘটনার রেশ আরও বেশি স্পষ্ট সদ্য ঘোষিত ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটিতে। ছাত্রদলে নিশ্চয়ই মেধাবী এবং নিবেদিতপ্রাণ ছাত্র আছে, তাদের বাদ দিয়ে উদ্ভট এবং অছাত্রদের কমিটিতে রাখায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিএনপিতেও যে এমনটি ঘটেনি, তা নয়। চেয়ারপারসনের সদুপদেশ মূল্য পেল না। এটাও হাত পাবে, তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে পরামর্শ বা উপদেশ দিতে জানেন না।
বিএনপির সহসম্পাদক হলেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি। আর সাধারণ সম্পাদক হলেন তিনি যিনি বিএনপির সদস্য। এদের ছাত্রত্ব নেই এবং এরা বিবাহিত। চমৎকার এক চিরতারুণ্যের মেলা বসানো হলো। বিএনপির সোনার ছেলেদের সংগঠনে ৯০ ভাগই অছাত্র। অছাত্ররা কী হতে পারে? হতে পারে বিবাহিত, সন্তানের পিতা, সন্ত্রাসী, ঠিকাদার, গার্মেন্টস শ্রমিক এবং ব্যবসায়ী। তারা সকলে মিলে 'চাঁদের হাট' বসিয়েছেন। গঠন করা হয়েছে জালিয়াতির মাধ্যমে। মোটা অঙ্কের চাঁদার বিনিময়ে অনেকে কমিটিতে স্থান করে নিয়েছেন এমন অভিযোগও শোনা যায়। বাদ পড়েছেন মেধাবীরা, পরিশ্রমী ছাত্রনেতারা। এই কমিটিকে দেখাশোনা করবেন খালেদা জিয়া তনয় তারেক রহমান? পিছিয়ে পড়া তারেক রহমান কি এসব অছাত্রকে নিয়ে অগ্রসর হতে পারবেন? অছাত্র ও অসমর্থিতদের নিয়ে কমিটি ঘোঘণার পর ুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্রদলের নিবেদিতপ্রাণ নেতা কর্মীরা। কমিটি ঘোষণার পরবর্তী দিনেই কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। শুধু তাই নয়, সভাপতির কুশপুত্তলিকা দাহও করে ছাত্রদলেরই নেতা-কর্মীরা। ফুলের মালার বদলে হামলার শিকার হয়েছেন নতুন কমিটির তিন নেতা। সহযোদ্ধাদের হাতে ধাওয়া খেয়েছেন অনেকে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর ছাত্রদল এখন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তিন ভাগে বিভক্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘর্ষ হতে পারে। জনগণ চায় না একটি ছাত্র সংঘঠন অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়ুক। মাননীয় চেয়ারপারসন, আপনার ছাত্রদলের মধ্যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলুন, অন্যের পথে কাঁটা বিছিয়ে লাভ নেই _নিজের ঘর সামলানো জরুরী।
বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, তারপরও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্য অভিযোগ এমন_ ছাত্রদল সভাপতি ও বিএনপির ছাত্র বিষয়ক এক সম্পাদক জালিয়াতির মাধ্যমে এ কমিটি গঠন করেছে। মূল যে কমিটি করা হয়েছিল তা পাশ কাটিয়ে কৌশলে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অছাত্র এবং পছন্দের লোকদের কমিটিতে ঢোকানো হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটির পাঁচ পাতার তালিকায় শুধু প্রথম পাতায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বার আছে, বাকি কোন পাতায় তার স্বার নেই। নিয়মানুযায়ী সব পাতাতেই খালেদা জিয়ার স্বার থাকার কথা। তারা অভিযোগ করেন, কৌশলে দ্বিতীয় পাতা থেকে ইচ্ছে মতো নাম ওলট পালট করেছেন।
এ কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছেন তাদের সিংহভাগ বিবাহিত এবং সন্তানের পিতা। পূর্ণঙ্গ কমিটিতে স্থান পাওয়া ১৬ জন সহসভাপতির সবাই অছাত্র এবং বিবাহিত। শোনা যায়, এক সহসভাপতি ফেনসিডিলের ব্যবসায়ী। ৫ যুগ্ম সম্পাদকও বিবাহিত এবং সন্তানের পিতা। একজন ঠিকাদার। ১০ জন সহসাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ৯ জনেরই ছাত্রত্ব নেই। এদের মধ্যে একজন গার্মেন্টস শ্রমিক, একজন দর্জি ব্যবসায়ী, একজন চাকরিজীবী, একজন রিজভীর এপিএস, একজন আইনজীবী, তিনজন ব্যবসায়ী, একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর ভাই। চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে করা হয়েছে সদস্য। কমিটিতে গণতন্ত্রমনা ও শান্তিকামী কয়েকজন এমন কথাও বলেছেন যে, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে প্রায় ৯০ ভাগই অছাত্র। এখানেই তাদের দুঃখ।
এটাও ঐতিহাসিক সত্য যে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পুরো ষাটের দশকের তুমুল দিনগুলোতে, সত্তরের নির্বাচনে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে, নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতনে ছাত্ররাজনীতি জাতির কল্যাণের জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। জাতির দুঃসময়ে প্রথমে ছাত্ররাই গর্জে উঠেছে। ছাত্ররাজনীতির প-েবিপ েঅনেক কথাই বলা যেতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশ নামক দেশটির জন্ম এবং এগিয়ে চলার পেছনে ছাত্র সংগঠনগুলোর ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না। বিএনপিতে অধিকাংশ নেতাই লুটেরা, খুন-ধর্ষণ-সম্পদ পাচারে বেশ পারঙ্গম হলেও গুটি কয়েকজন আছেন যাঁরা ছাত্র রাজনীতি করতেন এবং মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন। পরবর্তীকালে তাঁরা কামনা-বাসনায় অন্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হারিয়ে ফেলেন। যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলার ইতিহাসকে কলঙ্কিত করে তোলেন। বীভৎসতম হত্যাকাণ্ড ঘটে পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট। পুরো বাংলাদেশ হয়ে যায় একটি ক্যান্টনমেন্ট। সেখান থেকে উদ্ধার পেতে ছাত্রদের অবদান অনস্বীকার্য। পরিমাণে সামান্য হলেও ছাত্রদলেরও অবদান আছে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু বেশিরভাগ সময় এই সংগঠনটিকে ভুল পথে চালিয়েছেন বিএনপির কতিপয় পাকিস্তানপ্রেমী নেতা। তাঁরা বার বার এই অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে নস্যাৎ করতে চেয়েছেন। কিন্তু পারেননি; পারবেনও না। কারণ বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ অনেকের চেয়ে অগ্রসর _চেতনায়, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে এবং দেশপ্রেমে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 'সমাপ্তি' শীর্ষক ছোটগল্পে একটি বাক্য ব্যবহার করেছেন, তা হচ্ছে : বৃহৎ পরিবর্তনের জন্য বৃহৎ বলের আবশ্যক। এই বৃহৎ বলটি হচ্ছে নিতান্তই মানসিক শক্তি _যে শক্তি মূল্যবোধকে বিকশিত করে, জনগণের প্রতি মমত্ববোধকে করে উদ্দীপ্ত। তা থাকলেই বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তনের সুযোগ আসে। ছাত্ররা সেটি পারে, তা দেখিয়েছে বার বার। ছাত্রদল নামক সংগঠনটি বিভ্রান্ত হোক, অছাত্র এবং সন্ত্রাসীদের হাতের খেলনা হোক _এটা কেউ চায় না। আর যদি হয়ই তাহলে ছাত্রদল সম্ভাবনার রাঙা প্রভাত আনতে পারবে না, রক্তপাতের আশঙ্কার মধ্যে পড়ে যেতে পারে। মাননীয় চেয়ারপারসন, বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনা করুন। মেধাবী এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছাত্রদের দ্বারা ছাত্রদল গঠন করুন। সুফল অন্তত আপনি পাবেন। আপনার বিএনপিতে গড়ে উঠবে সুস্থ রাজনীতির সংস্কৃতিচর্চা। দেশপ্রেমিক প্রধানমন্ত্রীর পথে কাঁটা বিছাতে যাবেন কেন? নিজের অঙুলেও যে কাঁটা বিঁধে যেতে পারে। আপনার চারপাশের কণ্টকাকীর্ণ ঝোপঝাড় পরিষ্কার রাখুন। তাহলে ছাত্রদলে প্রাণ ফিরে আসবে, কারোর পণ্য হবে না। বৃহৎ শক্তির অধিকারী ছাত্রদলের প্রয়োজন আপনারই বেশি। আপনার তো আমও গেছে, ছালাও গেছে_ আছে শুধু আমগাছটি। পরিচর্যা করুন, আগামীতে ফল দিতে পারে।
পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট থেকে যে রক্তপাত শুরু হয়েছিল তা ২০০৯ সালে এসে থেমে গেছে। বিএনপি-জামায়াত অনেক রক্তপাত ঘটিয়েছে। সেই রক্তপিপাসুদের নিয়ে বিএনপি কমিটি গঠন করা থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি। কী দরকার ছিল এ ঘৃণ্যদের নিয়ে রাজনীতির মাঠে নামতে? যদি ছাত্রদল ছাত্রদের হয়, গণতন্ত্রের হয়, দেশপ্রেমের হয় তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি হবে সংহতি ও সম্প্রীতির; খুনী ও লুটেরাদের কাছে দেশটি আর কখনও জিম্মি হয়ে পড়বে না।
বিএনপির সহসম্পাদক হলেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি। আর সাধারণ সম্পাদক হলেন তিনি যিনি বিএনপির সদস্য। এদের ছাত্রত্ব নেই এবং এরা বিবাহিত। চমৎকার এক চিরতারুণ্যের মেলা বসানো হলো। বিএনপির সোনার ছেলেদের সংগঠনে ৯০ ভাগই অছাত্র। অছাত্ররা কী হতে পারে? হতে পারে বিবাহিত, সন্তানের পিতা, সন্ত্রাসী, ঠিকাদার, গার্মেন্টস শ্রমিক এবং ব্যবসায়ী। তারা সকলে মিলে 'চাঁদের হাট' বসিয়েছেন। গঠন করা হয়েছে জালিয়াতির মাধ্যমে। মোটা অঙ্কের চাঁদার বিনিময়ে অনেকে কমিটিতে স্থান করে নিয়েছেন এমন অভিযোগও শোনা যায়। বাদ পড়েছেন মেধাবীরা, পরিশ্রমী ছাত্রনেতারা। এই কমিটিকে দেখাশোনা করবেন খালেদা জিয়া তনয় তারেক রহমান? পিছিয়ে পড়া তারেক রহমান কি এসব অছাত্রকে নিয়ে অগ্রসর হতে পারবেন? অছাত্র ও অসমর্থিতদের নিয়ে কমিটি ঘোঘণার পর ুব্ধ হয়ে ওঠে ছাত্রদলের নিবেদিতপ্রাণ নেতা কর্মীরা। কমিটি ঘোষণার পরবর্তী দিনেই কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। শুধু তাই নয়, সভাপতির কুশপুত্তলিকা দাহও করে ছাত্রদলেরই নেতা-কর্মীরা। ফুলের মালার বদলে হামলার শিকার হয়েছেন নতুন কমিটির তিন নেতা। সহযোদ্ধাদের হাতে ধাওয়া খেয়েছেন অনেকে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর ছাত্রদল এখন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তিন ভাগে বিভক্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘর্ষ হতে পারে। জনগণ চায় না একটি ছাত্র সংঘঠন অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়ুক। মাননীয় চেয়ারপারসন, আপনার ছাত্রদলের মধ্যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলুন, অন্যের পথে কাঁটা বিছিয়ে লাভ নেই _নিজের ঘর সামলানো জরুরী।
বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, তারপরও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্য অভিযোগ এমন_ ছাত্রদল সভাপতি ও বিএনপির ছাত্র বিষয়ক এক সম্পাদক জালিয়াতির মাধ্যমে এ কমিটি গঠন করেছে। মূল যে কমিটি করা হয়েছিল তা পাশ কাটিয়ে কৌশলে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অছাত্র এবং পছন্দের লোকদের কমিটিতে ঢোকানো হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটির পাঁচ পাতার তালিকায় শুধু প্রথম পাতায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বার আছে, বাকি কোন পাতায় তার স্বার নেই। নিয়মানুযায়ী সব পাতাতেই খালেদা জিয়ার স্বার থাকার কথা। তারা অভিযোগ করেন, কৌশলে দ্বিতীয় পাতা থেকে ইচ্ছে মতো নাম ওলট পালট করেছেন।
এ কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছেন তাদের সিংহভাগ বিবাহিত এবং সন্তানের পিতা। পূর্ণঙ্গ কমিটিতে স্থান পাওয়া ১৬ জন সহসভাপতির সবাই অছাত্র এবং বিবাহিত। শোনা যায়, এক সহসভাপতি ফেনসিডিলের ব্যবসায়ী। ৫ যুগ্ম সম্পাদকও বিবাহিত এবং সন্তানের পিতা। একজন ঠিকাদার। ১০ জন সহসাধারণ সম্পাদকের মধ্যে ৯ জনেরই ছাত্রত্ব নেই। এদের মধ্যে একজন গার্মেন্টস শ্রমিক, একজন দর্জি ব্যবসায়ী, একজন চাকরিজীবী, একজন রিজভীর এপিএস, একজন আইনজীবী, তিনজন ব্যবসায়ী, একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর ভাই। চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে করা হয়েছে সদস্য। কমিটিতে গণতন্ত্রমনা ও শান্তিকামী কয়েকজন এমন কথাও বলেছেন যে, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে প্রায় ৯০ ভাগই অছাত্র। এখানেই তাদের দুঃখ।
এটাও ঐতিহাসিক সত্য যে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পুরো ষাটের দশকের তুমুল দিনগুলোতে, সত্তরের নির্বাচনে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে, নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতনে ছাত্ররাজনীতি জাতির কল্যাণের জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। জাতির দুঃসময়ে প্রথমে ছাত্ররাই গর্জে উঠেছে। ছাত্ররাজনীতির প-েবিপ েঅনেক কথাই বলা যেতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশ নামক দেশটির জন্ম এবং এগিয়ে চলার পেছনে ছাত্র সংগঠনগুলোর ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না। বিএনপিতে অধিকাংশ নেতাই লুটেরা, খুন-ধর্ষণ-সম্পদ পাচারে বেশ পারঙ্গম হলেও গুটি কয়েকজন আছেন যাঁরা ছাত্র রাজনীতি করতেন এবং মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন। পরবর্তীকালে তাঁরা কামনা-বাসনায় অন্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হারিয়ে ফেলেন। যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলার ইতিহাসকে কলঙ্কিত করে তোলেন। বীভৎসতম হত্যাকাণ্ড ঘটে পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট। পুরো বাংলাদেশ হয়ে যায় একটি ক্যান্টনমেন্ট। সেখান থেকে উদ্ধার পেতে ছাত্রদের অবদান অনস্বীকার্য। পরিমাণে সামান্য হলেও ছাত্রদলেরও অবদান আছে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু বেশিরভাগ সময় এই সংগঠনটিকে ভুল পথে চালিয়েছেন বিএনপির কতিপয় পাকিস্তানপ্রেমী নেতা। তাঁরা বার বার এই অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে নস্যাৎ করতে চেয়েছেন। কিন্তু পারেননি; পারবেনও না। কারণ বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ অনেকের চেয়ে অগ্রসর _চেতনায়, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে এবং দেশপ্রেমে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 'সমাপ্তি' শীর্ষক ছোটগল্পে একটি বাক্য ব্যবহার করেছেন, তা হচ্ছে : বৃহৎ পরিবর্তনের জন্য বৃহৎ বলের আবশ্যক। এই বৃহৎ বলটি হচ্ছে নিতান্তই মানসিক শক্তি _যে শক্তি মূল্যবোধকে বিকশিত করে, জনগণের প্রতি মমত্ববোধকে করে উদ্দীপ্ত। তা থাকলেই বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তনের সুযোগ আসে। ছাত্ররা সেটি পারে, তা দেখিয়েছে বার বার। ছাত্রদল নামক সংগঠনটি বিভ্রান্ত হোক, অছাত্র এবং সন্ত্রাসীদের হাতের খেলনা হোক _এটা কেউ চায় না। আর যদি হয়ই তাহলে ছাত্রদল সম্ভাবনার রাঙা প্রভাত আনতে পারবে না, রক্তপাতের আশঙ্কার মধ্যে পড়ে যেতে পারে। মাননীয় চেয়ারপারসন, বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনা করুন। মেধাবী এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ছাত্রদের দ্বারা ছাত্রদল গঠন করুন। সুফল অন্তত আপনি পাবেন। আপনার বিএনপিতে গড়ে উঠবে সুস্থ রাজনীতির সংস্কৃতিচর্চা। দেশপ্রেমিক প্রধানমন্ত্রীর পথে কাঁটা বিছাতে যাবেন কেন? নিজের অঙুলেও যে কাঁটা বিঁধে যেতে পারে। আপনার চারপাশের কণ্টকাকীর্ণ ঝোপঝাড় পরিষ্কার রাখুন। তাহলে ছাত্রদলে প্রাণ ফিরে আসবে, কারোর পণ্য হবে না। বৃহৎ শক্তির অধিকারী ছাত্রদলের প্রয়োজন আপনারই বেশি। আপনার তো আমও গেছে, ছালাও গেছে_ আছে শুধু আমগাছটি। পরিচর্যা করুন, আগামীতে ফল দিতে পারে।
পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট থেকে যে রক্তপাত শুরু হয়েছিল তা ২০০৯ সালে এসে থেমে গেছে। বিএনপি-জামায়াত অনেক রক্তপাত ঘটিয়েছে। সেই রক্তপিপাসুদের নিয়ে বিএনপি কমিটি গঠন করা থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি। কী দরকার ছিল এ ঘৃণ্যদের নিয়ে রাজনীতির মাঠে নামতে? যদি ছাত্রদল ছাত্রদের হয়, গণতন্ত্রের হয়, দেশপ্রেমের হয় তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি হবে সংহতি ও সম্প্রীতির; খুনী ও লুটেরাদের কাছে দেশটি আর কখনও জিম্মি হয়ে পড়বে না।
No comments