দিন বদলের জন্য পাড়ি দিতে হবে দুর্গম পথ বছর শেষে সরকার- ০ সাফল্যের পালস্না ভারি- ০ প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেনি- ০ সমালোচিত হয়েছে টেন্ডারবাজি নিয়ে by উত্তম চক্রবতর্ী
কঠিন বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে এক বছর পূর্ণ করল ৰমতাসীন মহাজোট সরকার। সাফল্যের এক বছরের গ-ি পেরিয়ে মহাবিজয় নিয়ে ৰমতায় আসা এই সরকার মেয়াদের দ্বিতীয় বর্ষে পা রাখল। সাফল্য-ব্যর্থতার বিচারে একটি নির্বাচিত সরকারের এক বছর বেশি সময় না হলেও পার্থক্য হচ্ছে অতীত কোন সরকারকে মধুচন্দ্রিমাকালে এমন ক্রানত্মিকাল মোকাবেলা করতে হয়নি।
গণতান্ত্রিক নবযাত্রায় বিগত একটি বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের জন্য সবটুকু পথ কুসুমাসত্মীর্ণ ছিল না, বরং ছিল অত্যনত্ম ঝঞ্ঝাবিৰুব্ধ। এ সময়ে মহাজোট সরকারকে হতে হয়েছে অপ্রত্যাশিত নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। বিডিআর বিদ্রোহ, বিশ্বমন্দা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের ঝড়ের মুখেই বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার অগি্নপরীৰায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার মাত্র এক বছরেই ধ্বংসস্তুপ থেকে দেশকে টেনে তুলে প্রগতি ও অগ্রগতির মিছিলে শামিল করতে সৰম হয়েছে।
অতীত সরকারগুলোর এক বছর পূর্তিতে ব্যর্থতা ও অভিযোগের ঝাঁপি খুলে বিরোধী পৰ ও সচেতন মহল দেশব্যাপী ঝড় তুললেও এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। মহাজোট সরকারের এক বছরের হিসাব মেলাতে গিয়ে চরম বৈরী বিরোধী পৰও বড় ধরনের কোন ব্যর্থতার দালিলিক প্রমাণ হাজির করতে পারেনি দেশবাসীর সামনে। বরং অধিকাংশ মানুষের মূল্যায়নে বেরিয়ে এসেছে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমান সরকার প্রথম থেকেই সঠিক পথে এগোচ্ছে। এক বছরে ব্যর্থতার চেয়ে সরকারের সাফল্যের পালস্না কয়েকগুণ ভারী। জনগণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধানও কমেছে উলেস্নখযোগ্য হারে। এক বছর পূর্তিতে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাবের খেরো খাতায় সাফল্যের পালস্না ভারী হলেও ক্রসফায়ার, ছাত্রলীগসহ দলীয় কিছু নেতাকমর্ীর টেন্ডার সন্ত্রাস, বৃৰনিধন আর দ্রব্যমূল্যের ওঠানামায় মহাজোট সরকারকে অনেক সমালোচনা হজম করতে হয়েছে।
এ দেশে সাধ ও সাধ্য, চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা খুব সহজ নয়। তবুও দেশবাসী খোলামনে প্রথম বছরের ভাল কাজের প্রশংসা এবং মন্দ কাজের সমালোচনা করলেও সরকারের ওপর তাদের আস্থা এতটুকুও কমেনি, বরং বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসম সাহস, দৰতা, দূরদৃষ্টি ও অসীম ধৈর্যের সঙ্গে দেশ পরিচালনার প্রতিটি পদৰেপকে যেমন দেশের মানুষ এখনও অধিকমাত্রায় সমর্থন করছেন, ঠিক তেমনি এক বছরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার সম্পন্ন হওয়া, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীসহ সকল রাজনৈতিক হত্যাকা-ের বিচারের কঠোর পদৰেপকেও নিরঙ্কুশভাবেই অনুমোদন দিয়েছেন। প্রথম থেকেই সঠিক পথে চলায় মহাজোট সরকারের কাছ থেকে মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছে কয়েকগুণ। বাকি চার বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে দেয়া সকল প্রতিশ্রম্নতি বাসত্মবায়ন করে দেশকে বিশ্বসভায় ৰুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ শানত্মিময় দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন- এমন আশায় বুক বেঁধেছেন দেশের মানুষ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই তাঁর সরকারের এক বছরের সফলতা-ব্যর্থতা সম্পর্কে বলেছেন, বর্তমান সরকার হত্যা, লুটপাট, হত্যা ও সীমাহীন দুনর্ীতি ছাড়া আর সকল ৰেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে। বিরোধী পৰকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার একটি ৰেত্রে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আর তা হলো লুটপাট, হত্যা ও সীমাহীন দুনর্ীতির আশ্রয় নেয়া, যা বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ব্যাপকভাবে করেছে।
আজ মহাজোট সরকার মেয়াদের এক বছর পূর্ণ করে দ্বিতীয় বছরে পা রাখল। বর্ষপূর্তির দিন আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির সামনে ঘোষণা করবেন পরবতর্ী বছরের কর্মপরিকল্পনা। আওয়ামী লীগ সারাদেশেই আজ বছরপূর্তি দিবস উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করবে। ২০০৯ সালের এই দিনে দীর্ঘ দু'বছরের অসাংবিধানিক-অগণতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে জনগণের নিরঙ্কুশ সমর্থন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার শপথ গ্রহণ করেন। আর এই শপথ গ্রহণের মাধ্যমেই অন্ধকারাচ্ছন্ন ও অনিশ্চয়তার ধূম্রজাল ছিন্ন করে আলোর পথে, গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করে বাংলাদেশ। দিন বদলের প্রতিশ্রম্নতির প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে শুধু সাধারণ বিজয় নয়, রেকর্ড ভঙ্গকারী মহাবিজয় দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে পাঁচ বছরের জন্য দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেয় দেশের মানুষ। চরমভাবে প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি-জামায়াত জোটকে।
জনগণের বিশাল ম্যান্ডেট নিয়ে ৰমতা গ্রহণের সময় কেমন ছিল বাংলাদেশ? বছরপূর্তির সালতামামি করতে গিয়ে এমন প্রশ্নও দেশবাসীর সামনে। বিএনপি-জামায়াত জোটের বল্গাহীন দুঃশাসন-দুনর্ীতি ও নগ্ন দলীয়করণ, আর পরবতর্ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু'বছরের অগণতান্ত্রিক শাসনে অর্থনীতি, প্রশাসন, বিচার বিভাগ থেকে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান প্রায় ধ্বংসস্তুপ। অন্যদিকে ভঙ্গুর অর্থনীতি, বিশৃঙ্খল প্রশাসন, আকাশচুম্বী দ্রব্যমূল্য, বিদু্যত-গ্যাসের তীব্র সঙ্কট এবং বিএনপি-জামায়াত জোটের চরম দলীয়করণের অভিশাপ মাথায় নিয়েই দিন বদলের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ৰমতা গ্রহণ করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। দলবাজ প্রশাসন নানাভাবেই সরকারের অগ্রগতির চাকা সত্মব্ধ এবং বিপথে চালিত করার চেষ্টা করলেও সময় ও কানত্মিকে তুচ্ছজ্ঞান করে প্রধানমন্ত্রীর দিনরাত পরিশ্রম ও একাগ্রতার কাছে ষড়যন্ত্রকারীদের বার বার পরাজিত হতে হয়েছে।
তবে ৰমতায় এসেই দেশবাসীকে চমকে দেন শেখ হাসিনা। নির্বাচনপূর্ব বিশাল প্রতিশ্রম্নতি ও দিন বদলের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার শপথ নিয়েই প্রথমে প্রথাগত সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী। দলের অভিজ্ঞ ও বাঘা বাঘা নেতাকে সাইড লাইনে বসিয়ে অপেৰাকৃত নতুনদের নিয়ে চমকের মন্ত্রিসভা গঠন করেন তিনি। ওই সময় আনকোরা ও অনভিজ্ঞ নতুন মন্ত্রীদের নিয়ে চলা মহাজোট সরকারের সফলতার ব্যাপারে জনমনে ব্যাপক সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করলেও এক বছর পূর্তির খেরো খাতা খুলে সবাই এখন এক বাক্যে স্বীকার করছেন, সফলভাবেই এক বছর পূর্ণ করেছেন মহাজোট সরকারের চমকের মন্ত্রিসভা। দু'একজনকে দৰতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও এই এক বছরে একজন মনী্ত্র বা প্রতিমন্ত্রীর বিরম্নদ্ধেও ওঠেনি দুনর্ীতি, স্বজনপ্রীতি বা ৰমতার অপব্যবহারের মোটা দাগের কোন অভিযোগ। এসব বিষয় ছাড়াও বিএনপি-জামায়াত সরকারের প্রথম বছর আর মহাজোট সরকারের প্রথম বছরের কর্মকা-ও বিচার করতে শুরম্ন করেছেন সচেতন দেশবাসী।
এক বছর সরকারের জন্য বেশি সময় নয়। ছয় মাস তো থাকে মধুচন্দ্রিমা পিরিয়ড হিসেবে। তাও এ সরকার কাটাতে পারেনি। পরে মাত্র ছয় মাস গেল। অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের করা বাজেটের শেষ ছয় মাসও পড়েছে বর্তমান মহাজোট সরকারের ঘাড়ে। মহাজোট সরকারের ঘোষিত বাজেটের মধ্যে মাত্র ছয় মাস অতিবাহিত হয়েছে। সরকারের বয়স এক বছর, কিন্তু অর্থবছরের মাত্র ছয় মাস পেয়েছে। আগামী জুন মাসে মহাজোট সরকারের করা অর্থবছরের এক বছর পূর্ণ হবে। আর এই ছয় মাসেই গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নসহ বিশ্বমন্দা মোকাবেলা করে চাঙ্গা অর্থনীতি উপহার দেয়া বর্তমান সরকারের প্রধান সাফল্যে হিসেবেই দেখছেন দেশবাসী।
আওয়ামী লীগ সরকার ৰমতায় এক বছর। বিপুল ভোটাধিক্যে এ সরকার ৰমতায় এসেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অবস্থানের কারণে দলটির কেউ কোথাও কোন প্রতিশোধ নিতে পারেনি। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোটের ৰমতায় আসার প্রথম বছরে আওয়ামী লীগের নেতাকমর্ী, সমর্থকদের ওপর কী ভয়াল ও বীভৎস নির্যাতনের বিভীষিকা দেশের জনগণ ভুলে যায়নি। ওই এক বছরে আওয়ামী লীগ সমর্থক আর ধমর্ীয় সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে অত্যাচার-নির্যাতন, লুটপাট, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগ, সম্পত্তি দখল, খুন, জখমের ঘটনা মনে পড়লে এখনও অনেকে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। শেখ হাসিনাসহ বিরোধী পৰকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করতেও চালানো হয়েছে নানা সময় ভয়াল হামলা। মুক্তিবুদ্ধির চর্চা করে এমন কোন শ্রেণী-পেশার মানুষ নেই যে ওই সময় ৰমতাসীনদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতে হয়নি। এসব ঘটনার নিরিখে ২০০৯ সাল অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম বছরে এমনকি কোন ঘটনা ঘটেছে? পাঁচটি বছর ধরে চলা নির্মম নিপীড়ন-নির্যাতন, হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছে বিরোধী দলের ওপর? বিএনপির নেতাকমর্ীরা কি বাড়িঘরছাড়া হয়েছে? তারা কি দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছে? তাদের সহায়-সম্পত্তি কি লুণ্ঠিত হয়েছে?
এক বছরে সালতামামিতে এর সবকিছুই নেতিবাচক উত্তর উঠে আসছে। নির্যাতনের ৰতচিহ্ন, স্বজন হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে প্রতিশোধের আগুন জ্বললেও প্রধানমন্ত্রীর সহনশীল ও গণতান্ত্রিক মুক্তচিনত্মা-চেতনার কারণে আওয়ামী লীগের কোন নেতাকমর্ী বা সমর্থক দেশের কোথাও বিরোধী পৰকে সামান্যটুকুও জবাব দিতে পারেনি। দু'চার জায়গায় কিছু ঘটনা ঘটলেও জড়িত যেই হোক তাকে শক্ত হাতে দমন করা দেখে আর কেউ-ই সাহস দেখাতে পারেনি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে পাঁচটি বছর মুক্তভাবে মিছিল, সভা-সমাবেশ করার তো দূরের কথা ঘরে থাকতে পারেনি বিরোধী দলের নেতাকমর্ীরা। কিন্তু মহাজোট সরকারের এক বছরে প্রথম দিক থেকে শেষ দিন পর্যনত্ম বিনা বাধায়, বরং সরকারের পূর্ণ সহযোগিতায় মুক্ত রাজনৈতিক চর্চা করে যাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট। এসব বিবেচনায় হিংসা-হানাহানি বা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অপসংস্কৃতির পরিবর্তে এক বছরে সহনশীলতা, সহমর্মিতা আর গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখাকেই শেখ হাসিনার সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশেস্নষকরা।
এক বছরের পথচলা
সরকারের এক বছরে শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের জন্য সবটুকু পথ কুসুমাসত্মীর্ণ ছিল না, বরং ছিল অত্যনত্ম ঝঞ্ঝাবিৰুব্ধ। দিন বদলের প্রতিশ্রম্নতি নিয়ে গত বছরের এই দিনে ৰমতা গ্রহণের পর এতটুকু স্বসত্মি পায়নি মহাজোট সরকার। চমক সৃষ্টি করে গঠিত সরকারের মধুচন্দ্রিমা কাটতে না কাটতেই অপ্রত্যাশিত কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়তে হয়। বিডিআর বিদ্রোহের মতো একটি ষড়যন্ত্র আর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দা মহাজোট সরকারকে শুরম্নতেই এক বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়।
পিলখানা ষড়যন্ত্রের মতো রক্তাক্ত অভু্যত্থানে সরকার পতনের আশঙ্কায় মুখোমুখি দাঁড়ানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা ও বাসত্মবমুখী দূরদর্শিতায় মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে রৰা পায় দেশ। উদ্ভূত পরিস্থিতির শানত্মিপূর্ণ সমাধান করে অনিবার্য গৃহযুদ্ধের হাত থেকে দেশকে রৰা করতে সৰম হন তিনি। এই মহাট্র্যাজেডি সামলাতে না সামলাতেই প্রাকৃতিক বিপর্যয় আইলার বিধ্বংসী আঘাতে ল-ভ- হয়ে যায় দেশের দৰিণাঞ্চল। এমন ভয়াল কিছু ষড়যন্ত্র-চক্রানত্মের বেড়াজাল ছিন্ন করে অগি্নপরীৰায় যাত্রা শুরম্ন করা মহাজোট সরকার এই এক বছরে সাফল্যের সঙ্গেই বাকি পথ পাড়ি দিয়েছে। সরকারের প্রথম বছরে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু'বছরের নানা কর্মকা- সম্পর্কেও গুরম্নত্বপূর্ণ সিদ্ধানত্ম নিতে হয়েছে এই সরকারকে। আনত্মর্জাতিক পরিম-লেও বেশ কয়েকটি গুরম্নত্বপূর্ণ পদৰেপে প্রশংসা কুড়িয়েছেন শেখ হাসিনার সরকার।
এক বছরের সরকার পরিচালনায় গর্বের সঙ্গেই বেশকিছু সাফল্যের কথা বলতেই পারে। প্রধান নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে প্রথম বছরেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন করা, জেল হত্যাকা-, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলাসহ স্পর্শকাতর সব হত্যাকা-ের বিচারের উদ্যোগ, কৃষি, শিৰা, কূটনীতি, খাদ্য, অর্থনীতিতে অভাবনীয় সাফল্য, বিশ্বমন্দার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সর্বকালের রেকর্ড রিজার্ভ সৃষ্টি, রেমিটেন্স অভাবনীয় বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারে গতি, বাণিজ্য বৃদ্ধি, শিল্পায়নের বন্ধ্যত্ব কাটানো, নতুন শিৰানীতি প্রণয়ন, বছরের শুরম্নতেই বিনামূল্যে নতুন বই শিৰাথর্ীদের হাতে পৌঁছে দেয়া, প্রাইমারী পরীৰার আয়োজন, মন্ত্রী-নেতাদের দুনর্ীতিমুক্ত রাখা, বিশ্বসভায় বাংলাদেশের হারানো গৌরব পুনরম্নদ্ধার, বিশ্বের জঙ্গীবাদী-সন্ত্রাসী দেশ হিসেবে তালিকায় থাকা বাংলাদেশের নাম প্রত্যাহার, প্রতিবছরে দুনর্ীতির বিশ্বচ্যাম্পিয়নের কালো খাতা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ ইত্যাদি অসংখ্য সাফল্যে মাত্র এক বছরেই অর্জন করতে পেরেছে শেখ হাসিনার সরকার। এসব কর্মকা-ে সর্বমহলেই নিঃশর্ত প্রশংসা অর্জন করেছে এই সরকার।
গত এক বছরে গ্রামীণ অর্থনীতির প্রতি সরকারে বিশেষ মনোযোগ ছিল স্পষ্ট। কৃষক ও কৃষি বাঁচলে দেশ বাঁচবে_ অতীতের মতো এবারও এই নীতিতে অগ্রসর হয়েছে তারা। প্রথম থেকেই সারের দাম অর্ধেকে নামিয়ে আনা, জ্বালানি তেলসহ কৃষি উপকরণের দাম হ্রাস এবং ইতিহাসের প্রথম কৃষকদের আইডি কার্ড করে কৃষিঋণসহ কৃষি ভতর্ুকি পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ সর্বমহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। আগে সারের জন্য কৃষককে গুলি খেয়ে মরতে হলেও এবার পুরো বছর ধরেই সারই কৃষকের পিছনে ছুটেছে। ফলে বাম্পার ফলে দেশ আবার খাদ্য স্বয়ম্ভরতার দ্বারপ্রানত্মে।
তবে ব্যর্থতা যে একেবারেই নেই তা বলা যাবে না। শক্তহাতে লাগাম টেনে ধরে রাখলেও পুরো বছর ধরেই দ্রব্যমূল্যের ওঠানামা ভুগিয়েছে এ সরকারকে। বিচারবহিভর্ূত 'ক্রসফায়ার' নিয়ে কঠোর সমালোচনা হজম করতে হয়েছে সরকারকে। ছাত্রলীগসহ দলের মুষ্টিমেয় কিছু সুযোগসন্ধানী নেতার টেন্ডার সন্ত্রাসে সরকারের অনেক অর্জনকেও মস্নান করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দলীয় টেন্ডার সন্ত্রাসে জড়িতদের শক্তহাতে দমনের নির্দেশ দিলে তা কমছে তবে একেবারে বন্ধ হয়নি। বিদু্যত ও জ্বালানি খাতে এই একটি বছরে খরা এখনও কাটেনি। বরং বিদু্যত ও গ্যাসের অভাবে শিল্পায়ন প্রায় সত্মব্ধ। বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগ গতি পায়নি, প্রতিশ্রম্নতি থাকলেও বেকারত্বের অভিশাপে কিষ্ট যুবসমাজের ব্যাপক কর্মসংস্থান এখনও হয়নি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য নিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ এখনও কাটেনি। রাজধানীর দুঃসহ যানজট নিরসনে বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা বলা হলেও বছরপূর্তির শেষ দিনেও ভয়াবহ যানজটে নগরজীবন ছিল প্রায় সত্মব্ধ। ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগোনো-পেছানোর ঘটনায় সরকারকে অনেক সমালোচনা সইতে হয়েছে।
এক বছরের হতাশার মূর্তপ্রতীক সংসদ। সরকারী দল সংসদে যাচ্ছে, বিল পাস হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দিচ্ছেন। নেই শুধু বিরোধী দল। সামনের সারির মাত্র একটি আসনের ঠুনকো দাবিতে বিরোধী দল সংসদ বর্জন অব্যাহত রেখেছে। সংসদকে অকার্যকর করতে বিরোধী দলের দাবির পরিধি সময়ের ব্যবধানে বেড়েই চলেছে। পুরো এক বছর মিডিয়া কঠোর নজর রেখেছে সরকারের কর্মকা-ের ওপর। মিডিয়াতেও এক বছরের সাফল্যের সালতামামিতে ব্যর্থতার চেয়ে সাফল্যের পালস্নাই ভারি। ব্রিটিশ কবি জন মিল্টনের একটি বিখ্যাত উদ্ধৃতি আছে। তা হলো- 'মর্নিং সোজ দ্য ডে'_ সকাল দেখলেই বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে। তেমনি মহাজোট সরকারের প্রথম বছরের সাফল্যই জানিয়ে দিচ্ছে, আগামী চার বছরে তারা সত্যিই দেশকে বদলে দেবে। দেশবাসীরও প্রত্যাশা_ এই সরকার তাঁর মেয়াদপূর্তির আগেই জনগণকে দেয়া সব প্রতিশ্রম্নতি বাসত্মবায়ন করে দেশবাসীকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা উপহার দেবে।
অতীত সরকারগুলোর এক বছর পূর্তিতে ব্যর্থতা ও অভিযোগের ঝাঁপি খুলে বিরোধী পৰ ও সচেতন মহল দেশব্যাপী ঝড় তুললেও এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। মহাজোট সরকারের এক বছরের হিসাব মেলাতে গিয়ে চরম বৈরী বিরোধী পৰও বড় ধরনের কোন ব্যর্থতার দালিলিক প্রমাণ হাজির করতে পারেনি দেশবাসীর সামনে। বরং অধিকাংশ মানুষের মূল্যায়নে বেরিয়ে এসেছে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমান সরকার প্রথম থেকেই সঠিক পথে এগোচ্ছে। এক বছরে ব্যর্থতার চেয়ে সরকারের সাফল্যের পালস্না কয়েকগুণ ভারী। জনগণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধানও কমেছে উলেস্নখযোগ্য হারে। এক বছর পূর্তিতে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাবের খেরো খাতায় সাফল্যের পালস্না ভারী হলেও ক্রসফায়ার, ছাত্রলীগসহ দলীয় কিছু নেতাকমর্ীর টেন্ডার সন্ত্রাস, বৃৰনিধন আর দ্রব্যমূল্যের ওঠানামায় মহাজোট সরকারকে অনেক সমালোচনা হজম করতে হয়েছে।
এ দেশে সাধ ও সাধ্য, চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা খুব সহজ নয়। তবুও দেশবাসী খোলামনে প্রথম বছরের ভাল কাজের প্রশংসা এবং মন্দ কাজের সমালোচনা করলেও সরকারের ওপর তাদের আস্থা এতটুকুও কমেনি, বরং বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসম সাহস, দৰতা, দূরদৃষ্টি ও অসীম ধৈর্যের সঙ্গে দেশ পরিচালনার প্রতিটি পদৰেপকে যেমন দেশের মানুষ এখনও অধিকমাত্রায় সমর্থন করছেন, ঠিক তেমনি এক বছরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার সম্পন্ন হওয়া, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীসহ সকল রাজনৈতিক হত্যাকা-ের বিচারের কঠোর পদৰেপকেও নিরঙ্কুশভাবেই অনুমোদন দিয়েছেন। প্রথম থেকেই সঠিক পথে চলায় মহাজোট সরকারের কাছ থেকে মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছে কয়েকগুণ। বাকি চার বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে দেয়া সকল প্রতিশ্রম্নতি বাসত্মবায়ন করে দেশকে বিশ্বসভায় ৰুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ শানত্মিময় দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন- এমন আশায় বুক বেঁধেছেন দেশের মানুষ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই তাঁর সরকারের এক বছরের সফলতা-ব্যর্থতা সম্পর্কে বলেছেন, বর্তমান সরকার হত্যা, লুটপাট, হত্যা ও সীমাহীন দুনর্ীতি ছাড়া আর সকল ৰেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে। বিরোধী পৰকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার একটি ৰেত্রে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আর তা হলো লুটপাট, হত্যা ও সীমাহীন দুনর্ীতির আশ্রয় নেয়া, যা বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ব্যাপকভাবে করেছে।
আজ মহাজোট সরকার মেয়াদের এক বছর পূর্ণ করে দ্বিতীয় বছরে পা রাখল। বর্ষপূর্তির দিন আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির সামনে ঘোষণা করবেন পরবতর্ী বছরের কর্মপরিকল্পনা। আওয়ামী লীগ সারাদেশেই আজ বছরপূর্তি দিবস উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করবে। ২০০৯ সালের এই দিনে দীর্ঘ দু'বছরের অসাংবিধানিক-অগণতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে জনগণের নিরঙ্কুশ সমর্থন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার শপথ গ্রহণ করেন। আর এই শপথ গ্রহণের মাধ্যমেই অন্ধকারাচ্ছন্ন ও অনিশ্চয়তার ধূম্রজাল ছিন্ন করে আলোর পথে, গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করে বাংলাদেশ। দিন বদলের প্রতিশ্রম্নতির প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে শুধু সাধারণ বিজয় নয়, রেকর্ড ভঙ্গকারী মহাবিজয় দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে পাঁচ বছরের জন্য দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেয় দেশের মানুষ। চরমভাবে প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি-জামায়াত জোটকে।
জনগণের বিশাল ম্যান্ডেট নিয়ে ৰমতা গ্রহণের সময় কেমন ছিল বাংলাদেশ? বছরপূর্তির সালতামামি করতে গিয়ে এমন প্রশ্নও দেশবাসীর সামনে। বিএনপি-জামায়াত জোটের বল্গাহীন দুঃশাসন-দুনর্ীতি ও নগ্ন দলীয়করণ, আর পরবতর্ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু'বছরের অগণতান্ত্রিক শাসনে অর্থনীতি, প্রশাসন, বিচার বিভাগ থেকে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান প্রায় ধ্বংসস্তুপ। অন্যদিকে ভঙ্গুর অর্থনীতি, বিশৃঙ্খল প্রশাসন, আকাশচুম্বী দ্রব্যমূল্য, বিদু্যত-গ্যাসের তীব্র সঙ্কট এবং বিএনপি-জামায়াত জোটের চরম দলীয়করণের অভিশাপ মাথায় নিয়েই দিন বদলের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ৰমতা গ্রহণ করেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। দলবাজ প্রশাসন নানাভাবেই সরকারের অগ্রগতির চাকা সত্মব্ধ এবং বিপথে চালিত করার চেষ্টা করলেও সময় ও কানত্মিকে তুচ্ছজ্ঞান করে প্রধানমন্ত্রীর দিনরাত পরিশ্রম ও একাগ্রতার কাছে ষড়যন্ত্রকারীদের বার বার পরাজিত হতে হয়েছে।
তবে ৰমতায় এসেই দেশবাসীকে চমকে দেন শেখ হাসিনা। নির্বাচনপূর্ব বিশাল প্রতিশ্রম্নতি ও দিন বদলের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার শপথ নিয়েই প্রথমে প্রথাগত সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী। দলের অভিজ্ঞ ও বাঘা বাঘা নেতাকে সাইড লাইনে বসিয়ে অপেৰাকৃত নতুনদের নিয়ে চমকের মন্ত্রিসভা গঠন করেন তিনি। ওই সময় আনকোরা ও অনভিজ্ঞ নতুন মন্ত্রীদের নিয়ে চলা মহাজোট সরকারের সফলতার ব্যাপারে জনমনে ব্যাপক সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করলেও এক বছর পূর্তির খেরো খাতা খুলে সবাই এখন এক বাক্যে স্বীকার করছেন, সফলভাবেই এক বছর পূর্ণ করেছেন মহাজোট সরকারের চমকের মন্ত্রিসভা। দু'একজনকে দৰতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও এই এক বছরে একজন মনী্ত্র বা প্রতিমন্ত্রীর বিরম্নদ্ধেও ওঠেনি দুনর্ীতি, স্বজনপ্রীতি বা ৰমতার অপব্যবহারের মোটা দাগের কোন অভিযোগ। এসব বিষয় ছাড়াও বিএনপি-জামায়াত সরকারের প্রথম বছর আর মহাজোট সরকারের প্রথম বছরের কর্মকা-ও বিচার করতে শুরম্ন করেছেন সচেতন দেশবাসী।
এক বছর সরকারের জন্য বেশি সময় নয়। ছয় মাস তো থাকে মধুচন্দ্রিমা পিরিয়ড হিসেবে। তাও এ সরকার কাটাতে পারেনি। পরে মাত্র ছয় মাস গেল। অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের করা বাজেটের শেষ ছয় মাসও পড়েছে বর্তমান মহাজোট সরকারের ঘাড়ে। মহাজোট সরকারের ঘোষিত বাজেটের মধ্যে মাত্র ছয় মাস অতিবাহিত হয়েছে। সরকারের বয়স এক বছর, কিন্তু অর্থবছরের মাত্র ছয় মাস পেয়েছে। আগামী জুন মাসে মহাজোট সরকারের করা অর্থবছরের এক বছর পূর্ণ হবে। আর এই ছয় মাসেই গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নসহ বিশ্বমন্দা মোকাবেলা করে চাঙ্গা অর্থনীতি উপহার দেয়া বর্তমান সরকারের প্রধান সাফল্যে হিসেবেই দেখছেন দেশবাসী।
আওয়ামী লীগ সরকার ৰমতায় এক বছর। বিপুল ভোটাধিক্যে এ সরকার ৰমতায় এসেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অবস্থানের কারণে দলটির কেউ কোথাও কোন প্রতিশোধ নিতে পারেনি। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোটের ৰমতায় আসার প্রথম বছরে আওয়ামী লীগের নেতাকমর্ী, সমর্থকদের ওপর কী ভয়াল ও বীভৎস নির্যাতনের বিভীষিকা দেশের জনগণ ভুলে যায়নি। ওই এক বছরে আওয়ামী লীগ সমর্থক আর ধমর্ীয় সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে অত্যাচার-নির্যাতন, লুটপাট, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগ, সম্পত্তি দখল, খুন, জখমের ঘটনা মনে পড়লে এখনও অনেকে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। শেখ হাসিনাসহ বিরোধী পৰকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করতেও চালানো হয়েছে নানা সময় ভয়াল হামলা। মুক্তিবুদ্ধির চর্চা করে এমন কোন শ্রেণী-পেশার মানুষ নেই যে ওই সময় ৰমতাসীনদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতে হয়নি। এসব ঘটনার নিরিখে ২০০৯ সাল অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম বছরে এমনকি কোন ঘটনা ঘটেছে? পাঁচটি বছর ধরে চলা নির্মম নিপীড়ন-নির্যাতন, হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছে বিরোধী দলের ওপর? বিএনপির নেতাকমর্ীরা কি বাড়িঘরছাড়া হয়েছে? তারা কি দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছে? তাদের সহায়-সম্পত্তি কি লুণ্ঠিত হয়েছে?
এক বছরে সালতামামিতে এর সবকিছুই নেতিবাচক উত্তর উঠে আসছে। নির্যাতনের ৰতচিহ্ন, স্বজন হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে প্রতিশোধের আগুন জ্বললেও প্রধানমন্ত্রীর সহনশীল ও গণতান্ত্রিক মুক্তচিনত্মা-চেতনার কারণে আওয়ামী লীগের কোন নেতাকমর্ী বা সমর্থক দেশের কোথাও বিরোধী পৰকে সামান্যটুকুও জবাব দিতে পারেনি। দু'চার জায়গায় কিছু ঘটনা ঘটলেও জড়িত যেই হোক তাকে শক্ত হাতে দমন করা দেখে আর কেউ-ই সাহস দেখাতে পারেনি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে পাঁচটি বছর মুক্তভাবে মিছিল, সভা-সমাবেশ করার তো দূরের কথা ঘরে থাকতে পারেনি বিরোধী দলের নেতাকমর্ীরা। কিন্তু মহাজোট সরকারের এক বছরে প্রথম দিক থেকে শেষ দিন পর্যনত্ম বিনা বাধায়, বরং সরকারের পূর্ণ সহযোগিতায় মুক্ত রাজনৈতিক চর্চা করে যাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট। এসব বিবেচনায় হিংসা-হানাহানি বা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অপসংস্কৃতির পরিবর্তে এক বছরে সহনশীলতা, সহমর্মিতা আর গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখাকেই শেখ হাসিনার সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশেস্নষকরা।
এক বছরের পথচলা
সরকারের এক বছরে শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের জন্য সবটুকু পথ কুসুমাসত্মীর্ণ ছিল না, বরং ছিল অত্যনত্ম ঝঞ্ঝাবিৰুব্ধ। দিন বদলের প্রতিশ্রম্নতি নিয়ে গত বছরের এই দিনে ৰমতা গ্রহণের পর এতটুকু স্বসত্মি পায়নি মহাজোট সরকার। চমক সৃষ্টি করে গঠিত সরকারের মধুচন্দ্রিমা কাটতে না কাটতেই অপ্রত্যাশিত কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়তে হয়। বিডিআর বিদ্রোহের মতো একটি ষড়যন্ত্র আর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দা মহাজোট সরকারকে শুরম্নতেই এক বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়।
পিলখানা ষড়যন্ত্রের মতো রক্তাক্ত অভু্যত্থানে সরকার পতনের আশঙ্কায় মুখোমুখি দাঁড়ানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা ও বাসত্মবমুখী দূরদর্শিতায় মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে রৰা পায় দেশ। উদ্ভূত পরিস্থিতির শানত্মিপূর্ণ সমাধান করে অনিবার্য গৃহযুদ্ধের হাত থেকে দেশকে রৰা করতে সৰম হন তিনি। এই মহাট্র্যাজেডি সামলাতে না সামলাতেই প্রাকৃতিক বিপর্যয় আইলার বিধ্বংসী আঘাতে ল-ভ- হয়ে যায় দেশের দৰিণাঞ্চল। এমন ভয়াল কিছু ষড়যন্ত্র-চক্রানত্মের বেড়াজাল ছিন্ন করে অগি্নপরীৰায় যাত্রা শুরম্ন করা মহাজোট সরকার এই এক বছরে সাফল্যের সঙ্গেই বাকি পথ পাড়ি দিয়েছে। সরকারের প্রথম বছরে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু'বছরের নানা কর্মকা- সম্পর্কেও গুরম্নত্বপূর্ণ সিদ্ধানত্ম নিতে হয়েছে এই সরকারকে। আনত্মর্জাতিক পরিম-লেও বেশ কয়েকটি গুরম্নত্বপূর্ণ পদৰেপে প্রশংসা কুড়িয়েছেন শেখ হাসিনার সরকার।
এক বছরের সরকার পরিচালনায় গর্বের সঙ্গেই বেশকিছু সাফল্যের কথা বলতেই পারে। প্রধান নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে প্রথম বছরেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার সম্পন্ন করা, জেল হত্যাকা-, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলাসহ স্পর্শকাতর সব হত্যাকা-ের বিচারের উদ্যোগ, কৃষি, শিৰা, কূটনীতি, খাদ্য, অর্থনীতিতে অভাবনীয় সাফল্য, বিশ্বমন্দার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সর্বকালের রেকর্ড রিজার্ভ সৃষ্টি, রেমিটেন্স অভাবনীয় বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারে গতি, বাণিজ্য বৃদ্ধি, শিল্পায়নের বন্ধ্যত্ব কাটানো, নতুন শিৰানীতি প্রণয়ন, বছরের শুরম্নতেই বিনামূল্যে নতুন বই শিৰাথর্ীদের হাতে পৌঁছে দেয়া, প্রাইমারী পরীৰার আয়োজন, মন্ত্রী-নেতাদের দুনর্ীতিমুক্ত রাখা, বিশ্বসভায় বাংলাদেশের হারানো গৌরব পুনরম্নদ্ধার, বিশ্বের জঙ্গীবাদী-সন্ত্রাসী দেশ হিসেবে তালিকায় থাকা বাংলাদেশের নাম প্রত্যাহার, প্রতিবছরে দুনর্ীতির বিশ্বচ্যাম্পিয়নের কালো খাতা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ ইত্যাদি অসংখ্য সাফল্যে মাত্র এক বছরেই অর্জন করতে পেরেছে শেখ হাসিনার সরকার। এসব কর্মকা-ে সর্বমহলেই নিঃশর্ত প্রশংসা অর্জন করেছে এই সরকার।
গত এক বছরে গ্রামীণ অর্থনীতির প্রতি সরকারে বিশেষ মনোযোগ ছিল স্পষ্ট। কৃষক ও কৃষি বাঁচলে দেশ বাঁচবে_ অতীতের মতো এবারও এই নীতিতে অগ্রসর হয়েছে তারা। প্রথম থেকেই সারের দাম অর্ধেকে নামিয়ে আনা, জ্বালানি তেলসহ কৃষি উপকরণের দাম হ্রাস এবং ইতিহাসের প্রথম কৃষকদের আইডি কার্ড করে কৃষিঋণসহ কৃষি ভতর্ুকি পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ সর্বমহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। আগে সারের জন্য কৃষককে গুলি খেয়ে মরতে হলেও এবার পুরো বছর ধরেই সারই কৃষকের পিছনে ছুটেছে। ফলে বাম্পার ফলে দেশ আবার খাদ্য স্বয়ম্ভরতার দ্বারপ্রানত্মে।
তবে ব্যর্থতা যে একেবারেই নেই তা বলা যাবে না। শক্তহাতে লাগাম টেনে ধরে রাখলেও পুরো বছর ধরেই দ্রব্যমূল্যের ওঠানামা ভুগিয়েছে এ সরকারকে। বিচারবহিভর্ূত 'ক্রসফায়ার' নিয়ে কঠোর সমালোচনা হজম করতে হয়েছে সরকারকে। ছাত্রলীগসহ দলের মুষ্টিমেয় কিছু সুযোগসন্ধানী নেতার টেন্ডার সন্ত্রাসে সরকারের অনেক অর্জনকেও মস্নান করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দলীয় টেন্ডার সন্ত্রাসে জড়িতদের শক্তহাতে দমনের নির্দেশ দিলে তা কমছে তবে একেবারে বন্ধ হয়নি। বিদু্যত ও জ্বালানি খাতে এই একটি বছরে খরা এখনও কাটেনি। বরং বিদু্যত ও গ্যাসের অভাবে শিল্পায়ন প্রায় সত্মব্ধ। বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগ গতি পায়নি, প্রতিশ্রম্নতি থাকলেও বেকারত্বের অভিশাপে কিষ্ট যুবসমাজের ব্যাপক কর্মসংস্থান এখনও হয়নি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য নিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ এখনও কাটেনি। রাজধানীর দুঃসহ যানজট নিরসনে বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা বলা হলেও বছরপূর্তির শেষ দিনেও ভয়াবহ যানজটে নগরজীবন ছিল প্রায় সত্মব্ধ। ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগোনো-পেছানোর ঘটনায় সরকারকে অনেক সমালোচনা সইতে হয়েছে।
এক বছরের হতাশার মূর্তপ্রতীক সংসদ। সরকারী দল সংসদে যাচ্ছে, বিল পাস হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দিচ্ছেন। নেই শুধু বিরোধী দল। সামনের সারির মাত্র একটি আসনের ঠুনকো দাবিতে বিরোধী দল সংসদ বর্জন অব্যাহত রেখেছে। সংসদকে অকার্যকর করতে বিরোধী দলের দাবির পরিধি সময়ের ব্যবধানে বেড়েই চলেছে। পুরো এক বছর মিডিয়া কঠোর নজর রেখেছে সরকারের কর্মকা-ের ওপর। মিডিয়াতেও এক বছরের সাফল্যের সালতামামিতে ব্যর্থতার চেয়ে সাফল্যের পালস্নাই ভারি। ব্রিটিশ কবি জন মিল্টনের একটি বিখ্যাত উদ্ধৃতি আছে। তা হলো- 'মর্নিং সোজ দ্য ডে'_ সকাল দেখলেই বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে। তেমনি মহাজোট সরকারের প্রথম বছরের সাফল্যই জানিয়ে দিচ্ছে, আগামী চার বছরে তারা সত্যিই দেশকে বদলে দেবে। দেশবাসীরও প্রত্যাশা_ এই সরকার তাঁর মেয়াদপূর্তির আগেই জনগণকে দেয়া সব প্রতিশ্রম্নতি বাসত্মবায়ন করে দেশবাসীকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা উপহার দেবে।
No comments