ঈদের পরের আন্দোলন কর্মসূচী ঠিক করতে পারেনি বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কেউ কোন প্রস্তাব করেননি by শরীফুল ইসলাম

দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ঈদের পর সরকারবিরোধী আন্দোলনের কর্মসূচী ঠিক করতে পারেনি বিএনপি। তবে ঈদের পর আবার বৈঠক করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থার দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এ বৈঠকে।


সূত্র জানায়, দলের নীতিনির্ধারণী বৈঠকে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ স্থায়ী সকল সদস্যই নির্দলীয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার বিষয়ে একমত পোষণ করেন। তবে ঈদের পর কিভাবে এবং কী কী আন্দোলন করা হবে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন প্রস্তাব কেউ দেননি। ঈদের পর থেকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা উচিত বলে সকল স্থায়ী কমিটির সদস্যই মত প্রকাশ করেন।
বৈঠকে এ ছাড়াও দলের পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিল, নেতাকর্মীদের মামলা মোকাবেলা, খালেদা জিয়ার সৌদি আরব সফর, গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ, অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্য এবং বিএনপির বিভিন্ন শাখা ও বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এ বৈঠকে হরতালে গাড়ি পোড়ানো মামলায় ১৮ দলীয় জোট নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এর পর শুক্রবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৮ দলীয় জোটের শরিক দলের মহাসচিবদের সঙ্গে বৈঠক করে রবিবার ঢাকায় ও সোমবার সারাদেশের সকল জেলা, উপজেলা ও মহানগর সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দেন।
উল্লেখ্য, গত বছর ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর বিএনপি তাদের সমমনা দলগুলোকে নিয়ে রাজপথে দুর্বার আন্দোলন করে সরকার পতনের হুঙ্কার দিতে থাকে। কিন্তু ক’টি হরতালসহ বছরব্যাপী আন্দোলন কর্মসূচীর কোনটিই কার্যত: সাধারণ মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলতে পারেনি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট আয়োজিত ১১ জুনের গণসমাবেশ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচী দেয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবতার আলোকে খালেদা জিয়া গতানুগতিক ৫ দিনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচী ঘোষণা করে আগামী ঈদের পর হরতাল, অবরোধ ও অবস্থান কর্মসূচীসহ আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচী দেয়ার কথা জানান। কিন্তু এটাও খালেদা জিয়ার একটি কৌশল ছিল বলে জানা যায়। কারণ কঠোর আন্দোলন দিয়ে তা সফল করতে না পারলে নাজুক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে এমন আশঙ্কা থেকেই তিনি কৌশলে তা এড়িয়ে গিয়ে স্বাভাবিক আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করেন।
রোজা শুরুর আগেই খালেদা জিয়াসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা জোরগলায় বলতে থাকে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় না হলে ঈদের পর দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটানো হবে। কিন্তু কোন নেতাই সুনির্দিষ্ট করে বলছেন না ঈদের পর কী আন্দোলন হবে এবং কিভাবে হবে। এ পরিস্থিতিতে দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা ধরে নিয়েছিল স্থায়ী কমিটির বৈঠকে হয়ত আন্দোলনের কর্মসূচী ঠিক করা হবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আন্দোলনের বিষয়টি নামকাওয়াস্তা আলোচনা হলেও কার্যত এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা বা সুনির্দিষ্ট কোন প্রস্তাব ঠিক করা হয়নি।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সুনির্দিষ্ট কোন রূপরেখা ঠিক না করার বিষয়টি জানতে পেরে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা জানান, আমরা আশা করেছিলাম বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আন্দোলন কর্মসূচী ঠিক করা হবে। কিন্তু তা হলো না। ঈদের আর বেশি দিন বাকি নেই। এরই মধ্যে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ওমরাহ করতে সৌদি আরব চলে যাবেন। তাই ঈদের পর কী আন্দোলন হবে তা বুঝতে পারছি না।
দেশের রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র ঢাকা মহানগরে বিএনপির কমিটি নেই দীর্ঘ দিন ধরে। ২১ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার দ্বন্দ্বে এ কমিটি কাজ করতে পারছে না। বিএনপির আন্দোলনে এক সময় সাহসী ভূমিকা পালন করত ছাত্রদল। এই ছাত্রদলও এখন প্রায় অচল। পুরনো কমিটির নেতারা নিষ্ক্রিয় থাকায় এবং নতুন কমিটি না হওয়ায় ছাত্রদল নেতারা হতাশ হয়ে পড়েছে। বিএনপির বিভিন্ন জেলা কমিটিও কোন্দলের কারণে এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। এসব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বিএনপি হাইকমান্ড এখনই সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নেই বলে মনে করছে। তবে কঠোর আন্দোলনের আগে দলের জাতীয় কাউন্সিল ও সারাদেশের সকল পর্যায়ে দল গোছানোর কর্মপরিকল্পনা বিএনপি হাইকমান্ডের রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত গত বছর রোজার ঈদের আগেও খালেদা জিয়াসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা হুঙ্কার দিয়ে উচ্চারণ করতেন ঈদের পর সরকার পতনের কঠোর আন্দোলন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল ঈদের পর কোন আন্দোলন কর্মসূচী দেয়া হয়নি। এর পর কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে আবারও তারা বক্তব্য দিতে শুরু করে ঈদের পর কঠোর আন্দোলন। কিন্তু কোরবানি ঈদের পরও আন্দোলন হয়নি। বছর পার করে এ বছরের প্রথমদিকে এসে বিএনপি কিছু আন্দোলন কর্মসূচী পালন করেছে। এ বছরও বিএনপি নেতারা ঈদের পর আন্দোলনের কথা জোরেশোরে উচ্চারণ করলেও বাস্তবে গত বছরের মতো এবারও বিএনপি ঈদের পর সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলন করতে পারবে না বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে ঈদের পর সরকারবিরোধী কি ধরনের আন্দোলন হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে রবি ও সোমবারের বিক্ষোভ কর্মসূচী নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, ঈদের পর কী আন্দোলন হবে তা নিয়ে আমরা এবারের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করিনি।

No comments

Powered by Blogger.