গুলশানের ভেতর-বাহির-শেষ-রাজধানীর সবচেয়ে বড় বস্তিটিও এখানেই! by আপেল মাহমুদ
সুরম্য অট্টালিকায় সুশোভিত, অভিজাত গুলশানেই রয়েছে ঢাকার সবচেয়ে বড় বস্তিটি, যেখানে প্রায় তিন লাখ মানুষের বসবাস। এ যেন প্রদীপের নিচে অন্ধকার। সরকারি জমির ওপর গড়ে উঠেছে এই বস্তি। বাসিন্দারা মূলত নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূল মানুষ। কড়াইল মৌজায় অবস্থান হওয়ায় এটি কড়াইল বস্তি নামে পরিচিত।
গুলশানের অভিজাত পরিবেশ নষ্ট করার পেছনে এই বস্তিকে দায়ী করেন অনেকে। তাঁদের অভিযোগ, মাদক ব্যবসায়ী, ভিক্ষুক, চোর, ডাকাত, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, অজ্ঞান পার্টিসহ বিভিন্ন শ্রেণীর অপরাধীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল এই বস্তি। কারো মতে, এই বস্তি গুলশানের বিষফোঁড়া। কেউবা বলেন, গুলশানের দুঃখ। অন্যদিকে বস্তিবাসীর বক্তব্য, কিছু অপরাধী হয়তো এই বস্তিকে ব্যবহার করছে; কিন্তু এর জন্য সাধারণ বাসিন্দাদের দায়ী করা যাবে না। বাঁচার তাগিদেই তাঁরা কম ভাড়ায় এই বস্তিতে থাকেন।
১৯৫৭ সালে ১৭ নম্বর এলএ কেইসের মাধ্যমে কড়াইল মৌজার প্রায় ১১৬ দশমিক ৭৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। এর মধ্যে ৯০ একর জমি বর্তমানে বস্তির আওতায়। স্থানীয়রা জানান, ব্যক্তিমালিকানাধীন অনেক জমিতেও বস্তি বানিয়ে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে কড়াইল বস্তিই বর্তমানে ঢাকা নগরীর সবচেয়ে বড় বস্তি। গুলশানের বাসিন্দা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং গুলশান সোসাইটির সাবেক সভাপতি ড. সি এম শফি সামী বলেন, কড়াইল বস্তিটি গুলশান আবাসিক এলাকার পরিবেশের জন্য হুমকি। তবে সরকারের উচিত এই বস্তিবাসীদের যথাযথভাবে পুনর্বাসন করে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি উদ্ধার করা।
গুলশানে প্রায়ই চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে গুলশান সোসাইটির নির্বাহী সম্পাদক মো. শফিকুর রহমান বলেন, গুলশানের বিভিন্ন অপরাধের অন্যতম কারণ হলো কড়াইল বস্তি। অপরাধীরা নির্বিঘ্নে বস্তিতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। অথচ এই বস্তির ব্যাপারে কোনো কিছু করা হচ্ছে না। সরকার যদি র্যাংগস ভবন ভাঙার মতো কাজ করতে পারে তাহলে কেন কড়াইল বস্তি উচ্ছেদ করতে পারছে না?
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডিসিসির ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন কড়াইল বস্তিতে কমপক্ষে তিন লাখ মানুষ বাস করছে। পিডাবি্লউডি, বিটিসিএল এবং বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন ১১৬ দশমিক ৭৭ একর জমি সরকারি সম্পত্তি। কিন্তু অধিগ্রহণের পর থেকেই জমিগুলো সরকারের হাতছাড়া। এমনকি বিভিন্ন জরিপেও জমির মালিকানা সরকারের নামে রেকর্ড হয়নি। এ সুযোগে একাধিক ব্যক্তি হাজার হাজার কোটি টাকার জমি নিজেদের নামে রেকর্ড করে মালিক দাবি করে বসেন। কড়াইল বস্তির আদি বাসিন্দা নিজামউদ্দিন বলেন, তাঁর দাদা আবদুস সোবহানের সাত বিঘা জমি কড়াইল মৌজায় ছিল। ১৯৫৭ সালে সরকার তা অধিগ্রহণ করে। কিন্তু ক্ষতিপূরণের কোনো টাকা তাঁরা পাননি।
একাধিক বস্তিবাসী কালের কণ্ঠকে বলেন, মাথা গোঁজার জন্যই তাঁরা কম ভাড়ায় কড়াইলে থাকছেন। বস্তির জমির প্রকৃত মালিক কে বা কারা তা নিয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে বস্তির বেশির ভাগ মানুষ শ্রমজীবী বলে দাবি করেন সুফিয়া বেগম নামে এক বাসিন্দা। তাঁর মতে, কিছু অপরাধী হয়তো বস্তিকে ব্যবহার করছে; কিন্তু বস্তির তিন লাখ মানুষকে উচ্ছেদ করা হলে গুলশান-বনানী-বারিধারায় কোনো কাজের লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। মহাখালীর গার্মেন্ট কারখানায় শ্রমিক সংকট দেখা দেবে। কুলির অভাবে কাঁচাবাজার নিজেদেরই মাথায় নিয়ে বাসায় ফিরতে হবে।
নগরবিদ ও এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি ড. নজরুল ইসলাম বলেন, বস্তিবাসী অভিজাত এলাকার পরিবেশ নষ্ট করে এ কথা ঠিক। কিন্তু নগরীর চাকা সচল রাখার ক্ষেত্রেও তাদের বিশাল অবদান রয়েছে। তাই তাদের থাকা-খাওয়ার পরিবেশ উন্নত করার জন্য সরকারকে বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে।
কড়াইল বস্তির প্রবীণ বাসিন্দা শাকের আলী মণ্ডল বলেন, ৩৭ বছর ধরে তিনি এখানে বসবাস করছেন। সে সুবাদে এখানকার অনেক ঘটনারই সাক্ষী তিনি। সরকারি জমিতে বস্তি গড়ে উঠলেও বেশির ভাগ বাসিন্দাই ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন। আগুন, পানি, বিদ্যুৎ সবকিছু তাঁদেরকে কিনে ব্যবহার করতে হয়। তা ছাড়া বিভিন্ন সময় বস্তি রক্ষার জন্য চাঁদা দিতে হয় আপৎকালীন ফান্ডে। সবকিছু হিসাব করলে দেখা যায়, বস্তিতে থাকলেও মাস শেষে বাসা ভাড়া বাবদ খরচ কিছু একটা কমও পড়ে না তাঁদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, বস্তির বিশাল একটি অংশ রয়েছে বিটিআরসি, পিডাবি্লউডি ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা। তাঁরা নিজেদের জায়গা দাবি করে শত শত ঘর তুলে ভাড়া তুলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে জানান ভাড়াটিয়া সালমা বেগম, রহমতউল্লাহ ও ইজ্জত আলীসহ আরো অনেকে।
ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা কালের কণ্ঠকে বলেন, গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় কড়াইল বস্তি একেবারে বেমানান। কিন্তু কেউ তো আর বস্তি হোক সেটা চায় না। তবে হঠাৎ করে উচ্ছেদ করতে গেলে সমাজে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে। সরকারের উচিত হবে বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে কড়াইল বস্তি নিয়ে সমস্যার সমাধান করা।
১৯৫৭ সালে ১৭ নম্বর এলএ কেইসের মাধ্যমে কড়াইল মৌজার প্রায় ১১৬ দশমিক ৭৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। এর মধ্যে ৯০ একর জমি বর্তমানে বস্তির আওতায়। স্থানীয়রা জানান, ব্যক্তিমালিকানাধীন অনেক জমিতেও বস্তি বানিয়ে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে কড়াইল বস্তিই বর্তমানে ঢাকা নগরীর সবচেয়ে বড় বস্তি। গুলশানের বাসিন্দা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং গুলশান সোসাইটির সাবেক সভাপতি ড. সি এম শফি সামী বলেন, কড়াইল বস্তিটি গুলশান আবাসিক এলাকার পরিবেশের জন্য হুমকি। তবে সরকারের উচিত এই বস্তিবাসীদের যথাযথভাবে পুনর্বাসন করে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি উদ্ধার করা।
গুলশানে প্রায়ই চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে গুলশান সোসাইটির নির্বাহী সম্পাদক মো. শফিকুর রহমান বলেন, গুলশানের বিভিন্ন অপরাধের অন্যতম কারণ হলো কড়াইল বস্তি। অপরাধীরা নির্বিঘ্নে বস্তিতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। অথচ এই বস্তির ব্যাপারে কোনো কিছু করা হচ্ছে না। সরকার যদি র্যাংগস ভবন ভাঙার মতো কাজ করতে পারে তাহলে কেন কড়াইল বস্তি উচ্ছেদ করতে পারছে না?
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডিসিসির ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন কড়াইল বস্তিতে কমপক্ষে তিন লাখ মানুষ বাস করছে। পিডাবি্লউডি, বিটিসিএল এবং বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন ১১৬ দশমিক ৭৭ একর জমি সরকারি সম্পত্তি। কিন্তু অধিগ্রহণের পর থেকেই জমিগুলো সরকারের হাতছাড়া। এমনকি বিভিন্ন জরিপেও জমির মালিকানা সরকারের নামে রেকর্ড হয়নি। এ সুযোগে একাধিক ব্যক্তি হাজার হাজার কোটি টাকার জমি নিজেদের নামে রেকর্ড করে মালিক দাবি করে বসেন। কড়াইল বস্তির আদি বাসিন্দা নিজামউদ্দিন বলেন, তাঁর দাদা আবদুস সোবহানের সাত বিঘা জমি কড়াইল মৌজায় ছিল। ১৯৫৭ সালে সরকার তা অধিগ্রহণ করে। কিন্তু ক্ষতিপূরণের কোনো টাকা তাঁরা পাননি।
একাধিক বস্তিবাসী কালের কণ্ঠকে বলেন, মাথা গোঁজার জন্যই তাঁরা কম ভাড়ায় কড়াইলে থাকছেন। বস্তির জমির প্রকৃত মালিক কে বা কারা তা নিয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে বস্তির বেশির ভাগ মানুষ শ্রমজীবী বলে দাবি করেন সুফিয়া বেগম নামে এক বাসিন্দা। তাঁর মতে, কিছু অপরাধী হয়তো বস্তিকে ব্যবহার করছে; কিন্তু বস্তির তিন লাখ মানুষকে উচ্ছেদ করা হলে গুলশান-বনানী-বারিধারায় কোনো কাজের লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। মহাখালীর গার্মেন্ট কারখানায় শ্রমিক সংকট দেখা দেবে। কুলির অভাবে কাঁচাবাজার নিজেদেরই মাথায় নিয়ে বাসায় ফিরতে হবে।
নগরবিদ ও এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি ড. নজরুল ইসলাম বলেন, বস্তিবাসী অভিজাত এলাকার পরিবেশ নষ্ট করে এ কথা ঠিক। কিন্তু নগরীর চাকা সচল রাখার ক্ষেত্রেও তাদের বিশাল অবদান রয়েছে। তাই তাদের থাকা-খাওয়ার পরিবেশ উন্নত করার জন্য সরকারকে বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে।
কড়াইল বস্তির প্রবীণ বাসিন্দা শাকের আলী মণ্ডল বলেন, ৩৭ বছর ধরে তিনি এখানে বসবাস করছেন। সে সুবাদে এখানকার অনেক ঘটনারই সাক্ষী তিনি। সরকারি জমিতে বস্তি গড়ে উঠলেও বেশির ভাগ বাসিন্দাই ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন। আগুন, পানি, বিদ্যুৎ সবকিছু তাঁদেরকে কিনে ব্যবহার করতে হয়। তা ছাড়া বিভিন্ন সময় বস্তি রক্ষার জন্য চাঁদা দিতে হয় আপৎকালীন ফান্ডে। সবকিছু হিসাব করলে দেখা যায়, বস্তিতে থাকলেও মাস শেষে বাসা ভাড়া বাবদ খরচ কিছু একটা কমও পড়ে না তাঁদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, বস্তির বিশাল একটি অংশ রয়েছে বিটিআরসি, পিডাবি্লউডি ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা। তাঁরা নিজেদের জায়গা দাবি করে শত শত ঘর তুলে ভাড়া তুলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে জানান ভাড়াটিয়া সালমা বেগম, রহমতউল্লাহ ও ইজ্জত আলীসহ আরো অনেকে।
ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা কালের কণ্ঠকে বলেন, গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় কড়াইল বস্তি একেবারে বেমানান। কিন্তু কেউ তো আর বস্তি হোক সেটা চায় না। তবে হঠাৎ করে উচ্ছেদ করতে গেলে সমাজে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে। সরকারের উচিত হবে বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে কড়াইল বস্তি নিয়ে সমস্যার সমাধান করা।
No comments