সাঁকোর জনপদ

এ যেন এক বাঁশের সাঁকোর জনপদ। মাত্র দশ কিলোমিটার সড়কে সাতবার বাঁশের তৈরি সাঁকো পাড়ি দিতে হয়। কাঁচা মাটির পিচ্ছিল সড়ক, খানাখন্দ আর বাঁশের সাঁকো পাড়ি দিতে নিতে হয় মরণঝুঁকি। নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা সদর থেকে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মহিষখলা পর্যন্ত সীমান্ত সড়ক দিয়ে প্রতিদিন এভাবেই চলাচল করতে হয় হাজার হাজার পথচারীর।


অথচ তাদের দুর্ভোগ দেখার যেন নেই কেউ।
জানা গেছে, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ জেলার সংযোগ স্থাপনকারী একমাত্র সড়কটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও টেকেরঘাট উপজেলার লোকজন এ সড়ক দিয়েই নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করেন। অন্যদিকে নেত্রকোনারও অনেক এলাকার মানুষজন বৃহত্তর সিলেটে যাতায়াত করেন এ সড়ক দিয়ে। সড়কের দু’পাশে অবস্থিত প্রায় ১৫টি গ্রামের বাসিন্দারও একমাত্র ভরসা সড়কটি। এছাড়া কলমাকান্দার রংছাতি ইউনিয়নের রামনাথপুর এলাকায় প্রস্তাবিত স্থলবন্দর নির্মাণ এবং গারোপাহাড় সংলগ্ন সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা রক্ষায়ও সড়কটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুই জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও সড়কটি আজও পাকা করা হয়নি। নির্মাণ করা হয়নি সাতটি ছোট সেতু। সেতু না থাকায় সড়কটিতে কোন ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারে না। যানবাহন বলতে চলে কেবল ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল ও রিক্সা। তাও সারা বছর সম্ভব হয় না ভাঙ্গাচোরা রাস্তা ও দুর্বল সেতুর কারণে।
সরজমিনে দেখা গেছে, কাঁচা মাটির সড়কটি বিভিন্ন স্থানে মারাত্মকভাবে ভেঙ্গে গেছে। সংস্কারের অভাবে অসংখ্য গর্ত ও খানাখন্দে সয়লাব হয়ে আছে বৃষ্টির পানিতে। কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল হয়ে গেছে গোটা সড়ক। সড়কের সাতটি বাঁশের সাঁকোও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। ছোট ছোট পাহাড়ী ছড়ার (ঝরনার মতো সরু“ খাল) ওপর নির্মিত প্রতিটি সাঁকো পারাপার বাবদ ইজারাদাররা প্রতি মোটরসাইকেল বা রিক্সাবাবদ ৫ টাকা করে ভাড়া আদায় করে, যাত্রীদের কাছ থেকেও নেয় আলাদা ভাড়া। কিন্তু নিয়মিত সেগুলো মেরামত করা হয় না। স্থানীয় এলজিইডিও এ ব্যাপারে উদাসীন। ফলে যখনতখন ঘটে দুর্ঘটনা। আর জনদুর্ভোগ তো আছেই।
কলমাকান্দা-দুর্গাপুর আসনের সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদ রুহী জানান, কলমাকান্দা থেকে রামনাথপুরের প্রস্তবিত স্থলবন্দর পর্যন্ত ওই সড়ক ও সেতুগুলো নির্মাণের জন্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সহায়তায় ২২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প-প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। আরটিআইপি প্রকল্পের আওতাধীন ওই প্রস্তাবনাটি প্রি-একনেকে অনুমোদনের পর এখন একনেকের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়। অনুমোদন পেলেই সড়কটির উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।
Ñসঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা

No comments

Powered by Blogger.