সাঈদীর দাখিল পাস- জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ

মাত্র ১০ বছর বয়সে দাখিল পাস করার ৫১ বছর পর নিয়ম বহির্ভূতভাবে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নাম ও বয়স পরিবর্তনের অভিযোগ স্বীকার করেছে মাদ্রাসা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। তবে সংশ্লিষ্টরা নিজেদের রক্ষা করতে একটি খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে সকল নথিপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে।


এদিকে এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি গঠন করা নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
জামায়াত নেতা ও যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত আসামির দাখিল পাস নিয়ে গত মাসের শেষের দিকে দৈনিক জনকণ্ঠ এবং ডেইলি এডুকেশন ডট নেটে অনুসন্ধানমূলক সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদে বলা হয়, সাঈদী মাত্র ১০ বছর বয়সে দাখিল পাস করেন। পাসের ৫১ বছর পর ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৪ ঘণ্টায় নাম ও বয়স পরিবর্তন করেন। সংবাদ প্রচারের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে মাদ্রাসা বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান তৎকালীন সময়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবদুর নূর এ খবর ডাহা মিথ্যা বলে দাবি করেন। দু’একদিন পরে সুর পাল্টিয়ে বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ ইউসুফ ও উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ছালেহ আহমেদ সাঈদীকে মাত্র ৪ ঘণ্টায় নাম ও বয়স পাল্টাতে সহায়তা করেছে। তিনি নির্দোষ। চেয়ারম্যানের বক্তব্য রহস্যজনক মনে হওয়ায় এ সংক্রান্ত সকল নথিপত্র তলব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর প্রেক্ষিতে মাদ্রাসা বোর্ড থেকে নথিপত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া নথিতে মাদ্রাসা বোর্ড সাঈদীর ১০ বছরের দাখিল পাসের একটি খোঁড়া যুক্তি দেখিয়েছেন। ওই যুক্তি হচ্ছে যখন জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী দাখিল পাস করেন তখন দাখিল ছিল তখনকার সাধারণ শিক্ষার চতুর্থ শ্রেণীর সমমান। আর আলিম ছিল ৮ম শ্রেণীর সমমান। কিন্তু এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, মান চতুর্থ শ্রেণীর সমান হলেও তাকে ১০ বছর লেখাপড়া করে দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হতো। আর ৪ অথবা ৬ বছর আগে সাঈদী মাদ্রাসায় যাওয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই।
শিক্ষামন্ত্রণালয়ে যে কাগজ-পত্র জমা দিয়েছে সেখানে সংশ্লিষ্টরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। কিন্তু এর পক্ষে কোন নথিপত্র জমা দিতে পারেননি। বোর্ডের আইন অনুযায়ী পাবলিক পরীক্ষায় পাস করার ২ বছরের মধ্যে এফিডেভিট করে যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে বয়স পাল্টানো যায়, কিন্তু দাখিল পাস করার ৫১ বছর পরে কেন বোর্ড কর্তৃপক্ষ সাঈদীর নাম ও বয়স পাল্টিয়ে নিতে অনুমতি দিল তার কোন ব্যাখ্যা দেননি। বরং বলেছেন, ওই সময়ের চেয়ারম্যানসহ সবাই মিলেই কাজটা করেছিলেন।
জমা দেয়া কাগজপত্রে মাদ্রাসা বোর্ড চেয়ারম্যান মোঃ আবদুন নূর আরও দাবি করেন, বাংলাদেশ মাদ্রাসা এডুকেশন অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৮-এর আলোকে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের কার্যক্রম শুরু হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং শাঃ ১৪/৮/রবি-৯/৮৯/১০৪। তারপর ১৯৮৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে দাখিল পাস সার্টিফিকেটকে সরকারী চাকরির ক্ষেত্রে এসএসসি সমমান মূল্যায়ন করা হয়। আবার আলিম পাসকে ১৯৮৭ সাল থেকে এইচএসসি সমমান ধরা হয়।
শিক্ষা সচিবের কাছে জমা দেয়া কাগজে চেয়ারম্যান আরও বলেছেন, জামায়াত নেতা সাঈদী যখন [১৯৫৭] দাখিল পাস করেন তখন দাখিল ছিল সাধারণ শিক্ষার চতুর্থ শ্রেণীর সমমানের আর আলিম ছিল অষ্টম শ্রেণীর সমমান। ফাজিল ছিল দশম শ্রেণীর সমমান। সুতরাং সাঈদী সাহেবের দশ বছর বয়সে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াটা অযৌক্তিক নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলেছে, শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ দেখার পরপরই শিক্ষা সচিবকে তদন্ত করতে বলেন। এমনকি এ বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন উচ্চমহল থেকেও তদন্তের নির্দেশ আসে। চলতি সপ্তাহে কমিটি গঠন করা হবে বলে সূত্রটি জানান।

No comments

Powered by Blogger.