জাবি বন্ধ ঘোষণা-শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করুন

নানামুখী সংকট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে। উপাচার্য নিয়ে যে সংকট ছিল, তা কোনোভাবে কাটতে না কাটতেই আবার নতুন সংকট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্র অসন্তোষ থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ করেছেন।


যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র অসন্তোষ, সহিংসতা ও সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে, তেমন পরিস্থিতির উদ্ভব এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আগেও হয়েছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, গত বুধবার ছাত্রলীগের এক কর্মীকে আটক করতে গিয়ে পুলিশ মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রদের ওপর রাবার বুলেট ছুড়লে পাঁচ ছাত্র আহত হন। এ থেকেই পরবর্তী ঘটনা ও সহিংসতার সূত্রপাত। বুধবার রাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেন ছাত্ররা। তাঁরা রাত ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় তাঁরা শতাধিক যানবাহনে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের একটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। রাস্তা অবরোধের কারণে ঢাকা-পাটুরিয়া মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেওয়ার আগ পর্যন্ত ১৫ ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় যাত্রীদের। পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্গতি। ছাত্রদের শান্ত করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। ছাত্ররা তাঁর গাড়িও ভাঙচুর করেন। পরে পরিস্থিতি আরো বেগতিক হলে উপাচার্যের বাসভবনে দুপুরে আবারও সিন্ডিকেট সভা বসে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈদুল ফিতরের ছুটি সাত দিন এগিয়ে এনে বৃহস্পতিবার থেকে ছুটি ঘোষণা এবং আগামী ২৫ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত ওই সভায় গৃহীত হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা দুঃখজনক। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বারবার কেন নষ্ট হবে? নেপথ্যে কোন শক্তি কোন উদ্দেশ্যে কলকাঠি নাড়ছে, সেটা খতিয়ে দেখা উচিত। আন্দোলনকারী ছাত্ররা প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ চেয়েছেন। মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্টের পদত্যাগও দাবি করেছেন। গুলি ছোড়ার ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার চাওয়া হয়েছে। বিবেচনার বিষয় হচ্ছে, সেখানে গুলি ছোড়ার মতো পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল কি না? যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ কয়েক দিন আগেও স্থিতিশীল ছিল না, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটানা আন্দোলন হয়েছে, সেখানে একটি আবাসিক হলে পুলিশের গুলি ছোড়া কতটা বিবেচনাপ্রসূত কাজ হয়েছে, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। পুলিশ অবশ্য আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছে, আত্মরক্ষার্থে তাদের গুলি ছুড়তে হয়েছে। পুলিশের এ ভাষ্য কতটা যৌক্তিক, সেটা বিবেচনার দাবি রাখে।
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। এতে নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে মূল্যবান সময় ঝরে যাচ্ছে। আমরা আশা করব, ঈদের ছুটির পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় খুললে শিক্ষার পরিবেশ বজায় থাকবে। শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে মূল্যবান সময় নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। শিক্ষার্থীদের যেমন পাঠে মনোনিবেশ করতে হবে, তেমনি শিক্ষকরাও বিভেদ ভুলে পাঠদানে মনোযোগী হবেন বলে আমরা আশা করি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা-সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর সমানভাবে বর্তায়।

No comments

Powered by Blogger.