দাদনের ফাঁদে কৃষক-ব্যাংকিং সেবা সহজলভ্য হোক
'দাদনে নিঃস্ব উত্তরের হাজারো কৃষক' শিরোনামে গত শনিবার সমকালের তৃতীয় পৃষ্ঠায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাদনের ফাঁদে পড়ে কীভাবে উৎপাদক কৃষক সর্বস্বান্ত হচ্ছেন, তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। অথচ তফসিলি ব্যাংকগুলোকে কৃষকদের নাগালের মধ্যে নিয়ে যাওয়া এবং কৃষকদের নামমাত্র টাকায় অ্যাকাউন্ট খোলা ও উৎপাদক কৃষকদের সহজশর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। তারপরও কেন কৃষকরা ব্যাংক ঋণের বদলে মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে দাদন গ্রহণে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন? প্রতিবেদনেই দেখা যায়, তফসিলি ব্যাংকের ঋণ পেতে কৃষকদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। দিতে হয় ঘাটে ঘাটে ঘুষ। তাছাড়া দালালদের মর্জির ওপর নির্ভর করতে হয়। এতে দেখা যায়, দাদনদারের ঋণের সুদ আর ব্যাংকের সুদের সঙ্গে নানাজনকে দেয় ঘুষ হিসাব কষলে দুটির মধ্যে পার্থক্য থাকে না। মহাজনরা দাদন প্রদানের জন্য কৃষকের দোরগোড়ায় উপস্থিত হয় এবং তাদের কাছ থেকে সময়মতো ঋণ মেলার নিশ্চয়তা রয়েছে। এ প্রবণতা দেশের কৃষি উৎপাদনে প্রত্যাশিত সাফল্যের অন্তরায়। কৃষকের দাদনদারের ঋণের অর্থ শোধ করতেই যদি উৎপাদিত ফসলের বিরাট অংশ চলে যায়, তাহলে তার পারিবারিক স্থিতিশীলতা থাকবে কী করে! এতে কৃষক আরও নিঃস্ব হওয়া এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতেও চাপ সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। আমরা মনে করি, তফসিলি ব্যাংকগুলোর ঋণ যাতে প্রকৃত উৎপাদক কৃষকের হাতে বিনা ঝক্কিতে পেঁৗছায় তার দায়িত্ব প্রধানত সরকারের। স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। এক্ষেত্রে এমন মেকানিজম উদ্ভাবন করতে হবে যাতে ক্ষমতাবান লোক ও দালালরা উৎপাদক কৃষকের ঋণের ওপর ভাগ বসাতে না পারে। তফসিলি ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে উৎপাদক কৃষকদের সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রয়োজনের মুহূর্তে এই ব্যাংকিং সংযোগ ব্যবহার করে কৃষকরা নিজেরাই অনায়াসে যাতে ঋণ পেতে পারেন তার ব্যবস্থা নিতে হবে। এভাবে দাদন ব্যবসায়ী ও গ্রামীণ দালালদের হাত থেকে উৎপাদক কৃষকের স্থায়ী মুক্তি মিলতে পারে।
No comments