ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রীয় নৌযান-আপনি আচরি ধর্ম পরকে শেখাও
বিআইডবি্লউটিসি স্টিমার সার্ভিসের পাঁচটি নৌযানের তিনটিই সার্ভে সনদবিহীন অবস্থায় থাকার যে খবর শনিবারের সমকালে প্রকাশিত হয়েছে তা কেবল হতাশাজনক নয়, যথেষ্ট কৌতূহলোদ্দীপকও। আমরা জানি, নৌ-দুর্ঘটনা দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য স্থায়ী আহাজারিতে পরিণত হয়েছে।
তা নিয়ন্ত্রণে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পক্ষ নানাভাবে প্রচেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে। সভা-সমাবেশ, লেখালেখি-আলোচনাও কম হচ্ছে না; কিন্তু কেবল নৌযানের ফিটনেস নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার কারণেই কাজ হচ্ছে না। এও প্রতিষ্ঠিত যে, ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচল বন্ধ করা গেলেই নৌ-দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে কমানো সম্ভব। কিন্তু ব্যক্তিমালিকানাধীন নৌযানের এক শ্রেণীর মালিকের নানা কারসাজিতে প্রয়োজনীয় কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন দেখা যাচ্ছে, খোদ রাষ্ট্রীয় সংস্থার মালিকানাধীন নৌযান বেআইনিভাবে ও চরম ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করছে! ওই তিন নৌযানের একটিকে ডকইয়ার্ডে পাঠানো হলেও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে তিন মাসেও মেরামত কাজ শুরু করা যায়নি বলে যে তথ্য জানা যাচ্ছে, তা আমাদের কেবল বিস্মিতই করে। সংশ্লিষ্টরা তাহলে করছে কী? রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন স্টিমার সার্ভিসের এ দশা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতারই প্রমাণ। এর ফলে বিপুলসংখ্যক যাত্রী যে দুর্ভোগে পড়ছেন, তার দায়ও তারা এড়াতে পারেন না। অস্বীকার করা যাবে না, ঔপনিবেশিক আমল থেকে চলে আসা স্টিমার সার্ভিসের প্যাডেলচালিত যানগুলো এখন বিরল। এটাও ঠিক, এগুলো জাতীয় তথা বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। কিন্তু সে জন্য মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এগুলোকে চালু রাখার যে যুক্তি বিআইডবি্লউটিসির পক্ষ থেকে দেখানো হচ্ছে তা আমাদের কাছে খোঁড়াই মনে হয়। যাত্রীর জীবন বাজি রেখে ঐতিহ্য রক্ষার এমন আয়োজন আত্মঘাতী ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। আর ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মিশ্রণ কি খুবই কঠিন? ফিটনেসের প্রশ্নে ছাড় দেওয়ার অবকাশ নেই।
No comments