রেলের বরখাস্ত হওয়া দুই কর্মকর্তা ও স্ত্রীদের সম্পদের হিসাব জমা-সরকারি চাকরি করেও একাধিক প্লট-বাড়ি
রাজধানীর পীরেরবাগে পাঁচ কাঠা প্লটের ওপর বাড়ি, পূর্বাচলে পাঁচ কাঠার সরকারি প্লট, চট্টগ্রামেও সাড়ে তিন কাঠার আরেকটি সরকারি প্লট, মাদারীপুরে গ্রামের বাড়িতে তিন একর কৃষিজমি। আরও আছে ১০ লাখ টাকার স্থায়ী সঞ্চয়ী আমানত (এফডিআর) ও নগদ এক লাখ ২৫ হাজার টাকা।
এই সম্পদের মালিক অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ আলী মৃধা। গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সম্পদের হিসাব জমা দেন তিনি। সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের চাকরিচ্যুত সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ওমর ফারুক তালুকদার, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ড্যান্ট এনামুল হক এবং তাঁর স্ত্রীও দুদকে তাঁদের সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন।
মৃধার স্ত্রী জাকিয়া ইউসুফও গতকাল দুদকে তাঁর সম্পদ বিবরণী জমা দেন। বিবরণী অনুযায়ী, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পাঁচ কাঠার প্লট, মাদারীপুরে ৫৮ শতক কৃষিজমি, মানিকগঞ্জে ৯০ শতক কৃষিজমি, ২০ লাখ টাকার এফডিআর এবং এক লাখ ৩৫ হাজার টাকার স্বর্ণালংকার রয়েছে তাঁর।
মৃধার স্ত্রী গৃহিণী। মৃধা ১৯৮০ সালে চাকরিতে যোগ দেন ৭৫০ টাকার স্কেলে। তখন তিনি বেতন পেতেন সাকল্যে এক হাজার ২০০ টাকা। বরখাস্ত হওয়ার আগে তিনি বেতন পেতেন বাড়িভাড়া বাদে ৩০ হাজার টাকা। এই বেতনে সংসারের খরচ চালানোর পর কীভাবে মৃধা এত সম্পদের মালিক হলেন, দুদকের কর্মকর্তারা তা খোঁজার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে রেলওয়ে সূত্র জানায়, রাজধানীর বনানীতে ফ্ল্যাটসহ একটি আবাসন কোম্পানিতে মৃধার ব্যবসায়িক অংশীদার আছে। এটা হিসাব বিবরণীতে উল্লেখ নেই।
জানতে চাইলে ইউসুফ আলী মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সব সম্পদ সাদাটাকায় কেনা। বিন্দু বিন্দু জল জমা করার মতো এই সম্পদ করেছি। এসব সম্পদের করও দেওয়া আছে।’ তিনি জানান, পূর্বাচলেও তিনি সরকারি প্লট পেয়েছেন। টাকা এখনো শোধ হয়নি। তাঁর সম্পদের মধ্যে সিডিএর প্লটটিই মূল্যবান। এটিরও টাকা বাকি আছে। আর বসুন্ধরার প্লটটি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে শ্যালকেরও মালিকানা আছে। পীরেরবাগের বাড়িটির জন্য তিনি ১৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, মৃধা চাকরিজীবনের বেশির ভাগ সময়ই সরকারি কেনাকাটার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। শেষের দিকে এসে কেনাকাটার পাশাপাশি নিয়োগ-প্রক্রিয়ায়ও যুক্ত হন। তাঁর বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। রেলওয়ের তদন্ত কমিটি এ অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে।
দুদকের কমিশনার বদিউজ্জামান গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সবার সম্পদ বিবরণী হাতে পেয়েছি। এখন খতিয়ে দেখব। প্রয়োজনে তাঁদের আবারও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে।’
অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় গত ১৪ মে ওমর ফারুক, ইউসুফ মৃধা ও তাঁর স্ত্রী এবং এনামুল হক ও তাঁর স্ত্রীর সম্পত্তির হিসাব চেয়ে চিঠি পাঠায় দুদক।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপপরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, দুদকের প্রাথমিক তদন্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পত্তি থাকার আভাস পাওয়া গেছে।
ওমর ফারুকের সম্পদ: ওমর ফারুক তাঁর সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে তাঁর ৯১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা, নেত্রকোনায় ১৮ একর জমি, মোহাম্মদপুর পিসি কালচারে ১১০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট ও একটি টয়োটা গাড়ি রয়েছে। দুদকের কার্যালয় থেকে বেরোনোর সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জমা দেওয়া হিসাবের মধ্যে মধ্যরাতে ধরা পড়া সেই ৭০ লাখ টাকার হিসাবও রয়েছে।
ফারুকের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পর ফারুক একটি হোটেলে চাকরি করেন। এরপর কিছু দিন বেকার ছিলেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস হওয়ার পর থেকেই তাঁর উত্থান শুরু হয়।
এনামুল হকের সম্পদ: নিরাপত্তা কামান্ড্যান্ট এনামুল হকের সম্পদ আরও বেশি। ১৯৭৬ সালে চাকরিতে যোগ দেন ২৫০ টাকা বেতনে। সম্প্রতি চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার আগে বেতন পেতেন ২০ হাজার টাকার কম। সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন, নারায়ণগঞ্জে তাঁর সাড়ে পাঁচ কাঠার প্লট, কিশোরগঞ্জে ৯০ শতাংশ জমি, ব্যাংকে জমা আছে এক কোটি ১৩ লাখ টাকা।
সম্পদের বিবরণী অনুযায়ী, এনামুলের স্ত্রী রাহাত আরা দিবার গুলশান নিকেতনে ১৫৬৪ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও গুলশান ভাটারায় ১৫১০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট এবং একটি টয়োটা গাড়ি আছে। এ ছাড়া উত্তর বাড্ডায় দিবা প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর বিনিয়োগ ২০ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। তাঁর দাবি, দুটি ব্যাংক থেকে তিনি ২৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, রেলে চোরাচালানের মূল পথ হচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চল। রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে চোরাচালানে মদদ দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এনামুল চাকরিজীবনের বেশির ভাগ সময় ঢাকা ও চট্টগ্রামে কাটিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধেও নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। এর আগে গঠিত তদন্ত কমিটি এ অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে।
গত ৯ এপ্রিল মধ্যরাতে ওমর ফারুকের গাড়িচালক আলী আজম খান মাইক্রোবাস নিয়ে বিজিবির প্রধান কার্যালয় পিলখানায় ঢুকে পড়েন এবং গাড়িতে অনেক টাকা আছে বলে চিৎকার শুরু করেন। ওই গাড়িতে ফারুক ছাড়াও ইউসুফ আলী মৃধা ও এনামুল হক ছিলেন। পরে বিজিবি সদস্যরা তাঁদের সবাইকে আটক করে সকালে ছেড়ে দেন। আজম এখনো নিখোঁজ। এ ঘটনার পর রেলমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি এখন দপ্তরবিহীন মন্ত্রী।
মৃধার স্ত্রী জাকিয়া ইউসুফও গতকাল দুদকে তাঁর সম্পদ বিবরণী জমা দেন। বিবরণী অনুযায়ী, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পাঁচ কাঠার প্লট, মাদারীপুরে ৫৮ শতক কৃষিজমি, মানিকগঞ্জে ৯০ শতক কৃষিজমি, ২০ লাখ টাকার এফডিআর এবং এক লাখ ৩৫ হাজার টাকার স্বর্ণালংকার রয়েছে তাঁর।
মৃধার স্ত্রী গৃহিণী। মৃধা ১৯৮০ সালে চাকরিতে যোগ দেন ৭৫০ টাকার স্কেলে। তখন তিনি বেতন পেতেন সাকল্যে এক হাজার ২০০ টাকা। বরখাস্ত হওয়ার আগে তিনি বেতন পেতেন বাড়িভাড়া বাদে ৩০ হাজার টাকা। এই বেতনে সংসারের খরচ চালানোর পর কীভাবে মৃধা এত সম্পদের মালিক হলেন, দুদকের কর্মকর্তারা তা খোঁজার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে রেলওয়ে সূত্র জানায়, রাজধানীর বনানীতে ফ্ল্যাটসহ একটি আবাসন কোম্পানিতে মৃধার ব্যবসায়িক অংশীদার আছে। এটা হিসাব বিবরণীতে উল্লেখ নেই।
জানতে চাইলে ইউসুফ আলী মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সব সম্পদ সাদাটাকায় কেনা। বিন্দু বিন্দু জল জমা করার মতো এই সম্পদ করেছি। এসব সম্পদের করও দেওয়া আছে।’ তিনি জানান, পূর্বাচলেও তিনি সরকারি প্লট পেয়েছেন। টাকা এখনো শোধ হয়নি। তাঁর সম্পদের মধ্যে সিডিএর প্লটটিই মূল্যবান। এটিরও টাকা বাকি আছে। আর বসুন্ধরার প্লটটি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে শ্যালকেরও মালিকানা আছে। পীরেরবাগের বাড়িটির জন্য তিনি ১৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, মৃধা চাকরিজীবনের বেশির ভাগ সময়ই সরকারি কেনাকাটার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। শেষের দিকে এসে কেনাকাটার পাশাপাশি নিয়োগ-প্রক্রিয়ায়ও যুক্ত হন। তাঁর বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। রেলওয়ের তদন্ত কমিটি এ অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে।
দুদকের কমিশনার বদিউজ্জামান গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সবার সম্পদ বিবরণী হাতে পেয়েছি। এখন খতিয়ে দেখব। প্রয়োজনে তাঁদের আবারও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে।’
অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় গত ১৪ মে ওমর ফারুক, ইউসুফ মৃধা ও তাঁর স্ত্রী এবং এনামুল হক ও তাঁর স্ত্রীর সম্পত্তির হিসাব চেয়ে চিঠি পাঠায় দুদক।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপপরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, দুদকের প্রাথমিক তদন্তে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পত্তি থাকার আভাস পাওয়া গেছে।
ওমর ফারুকের সম্পদ: ওমর ফারুক তাঁর সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে তাঁর ৯১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা, নেত্রকোনায় ১৮ একর জমি, মোহাম্মদপুর পিসি কালচারে ১১০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট ও একটি টয়োটা গাড়ি রয়েছে। দুদকের কার্যালয় থেকে বেরোনোর সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জমা দেওয়া হিসাবের মধ্যে মধ্যরাতে ধরা পড়া সেই ৭০ লাখ টাকার হিসাবও রয়েছে।
ফারুকের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পর ফারুক একটি হোটেলে চাকরি করেন। এরপর কিছু দিন বেকার ছিলেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস হওয়ার পর থেকেই তাঁর উত্থান শুরু হয়।
এনামুল হকের সম্পদ: নিরাপত্তা কামান্ড্যান্ট এনামুল হকের সম্পদ আরও বেশি। ১৯৭৬ সালে চাকরিতে যোগ দেন ২৫০ টাকা বেতনে। সম্প্রতি চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার আগে বেতন পেতেন ২০ হাজার টাকার কম। সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন, নারায়ণগঞ্জে তাঁর সাড়ে পাঁচ কাঠার প্লট, কিশোরগঞ্জে ৯০ শতাংশ জমি, ব্যাংকে জমা আছে এক কোটি ১৩ লাখ টাকা।
সম্পদের বিবরণী অনুযায়ী, এনামুলের স্ত্রী রাহাত আরা দিবার গুলশান নিকেতনে ১৫৬৪ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও গুলশান ভাটারায় ১৫১০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট এবং একটি টয়োটা গাড়ি আছে। এ ছাড়া উত্তর বাড্ডায় দিবা প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর বিনিয়োগ ২০ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। তাঁর দাবি, দুটি ব্যাংক থেকে তিনি ২৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, রেলে চোরাচালানের মূল পথ হচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চল। রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে চোরাচালানে মদদ দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এনামুল চাকরিজীবনের বেশির ভাগ সময় ঢাকা ও চট্টগ্রামে কাটিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধেও নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। এর আগে গঠিত তদন্ত কমিটি এ অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে।
গত ৯ এপ্রিল মধ্যরাতে ওমর ফারুকের গাড়িচালক আলী আজম খান মাইক্রোবাস নিয়ে বিজিবির প্রধান কার্যালয় পিলখানায় ঢুকে পড়েন এবং গাড়িতে অনেক টাকা আছে বলে চিৎকার শুরু করেন। ওই গাড়িতে ফারুক ছাড়াও ইউসুফ আলী মৃধা ও এনামুল হক ছিলেন। পরে বিজিবি সদস্যরা তাঁদের সবাইকে আটক করে সকালে ছেড়ে দেন। আজম এখনো নিখোঁজ। এ ঘটনার পর রেলমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি এখন দপ্তরবিহীন মন্ত্রী।
No comments