খোলা মাঠে ক্লাস-বিদ্যার্জনের বিপজ্জনক আয়োজন
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সিকদারচর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কতটা দুর্ভোগের শিকার, তা মঙ্গলবারের সমকালে প্রকাশিত আলোকচিত্রটিতেই স্পষ্ট। চরের তপ্ত বালিতে মাদুর বিছিয়ে এভাবে পাঠগ্রহণ যে প্রতিদিন কাউকে না কাউকে অসুস্থ করে তুলবে, সে ধারণা পেতে প্রতিবেদনটি পড়া পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন হয় না।
আক্ষরিক অর্থেই মাটি কামড়ে পড়ে থাকা বাকি কোমলমতিদের জন্য কেবল রোদ-গরম নয়, ঝড়-বৃষ্টিও বৈরী হয়ে দেখা দেবে। এমন একটি ঝড়েই কিন্তু দুই মাস আগে বিদ্যালয়টির টিনশেড ভবন উড়ে গেছে। আমাদের এ-ও ভুলে যাওয়া উচিত হবে না যে, দেশে বজ্রপাতের হার বাড়ছে। অস্বীকার করা যাবে না, বিদ্যালয় ভবনের অভাবে গাছতলায় পাঠদানের খবর টানাটানির এই দেশে মাঝে মধ্যেই সংবাদপত্রের শিরোনাম নয়। কেবল বিদ্যার জন্য কিছু মানবশিশু এভাবে আসমান ও জমিনের জীবন্ত ভেদরেখা হয়ে বসে রয়েছে_ এমন দৃশ্য আমরা আগে কখনও দেখিনি। এই আশঙ্কা অমূলক নয় যে, গৃহহীন এই বিদ্যালয় অচিরেই শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে পড়বে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা সে পর্যন্ত কি অপেক্ষা করব? তীব্র তাপদাহে যখন জগৎসংসার পুড়ছে, তখন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আচ্ছাদনহীন বসিয়ে রাখা আর যা-ই হোক মানবিক হতে পারে না। দারিদ্র্যপীড়িত একটি অঞ্চলে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংকটের বিষয়টিও আমরা বুঝি। এলাকাবাসী সাধ্যমতো সহায়তা দিয়ে টিনশেডটি তুলেছিল। আরেকটি টিনশেড খাড়া করা খেটে খাওয়া মানুষের জন্য কঠিনই বটে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মাথার ওপর খড়-বাঁশের কাঠামো তোলাও কি খুবই কঠিন? নিদেনপক্ষে যতদিন ঘর না হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা কারও বাড়ির দাওয়ায় বসে পড়াশোনা করতে পারে। এভাবে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষা অর্জন কতখানি হবে জানা নেই; স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা যে বিসর্জনে যাবে, তাতে সন্দেহ নেই। বিদ্যাশিক্ষার এমন বিপজ্জনক আয়োজন স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের জন্য সবচেয়ে লজ্জাজনক। আমরা চাই অবিলম্বে তারা এগিয়ে আসবেন। অন্তত একটি টিনের দোচালার ব্যবস্থা করা তাদের জন্য কঠিন নয় বলে আমরা বিশ্বাস করি
No comments