সংলাপে মধ্যস্থতা-স্পিকারের প্রস্তাবে সাড়া দিন

আগামী নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে সংলাপে জাতীয় সংসদের স্পিকার মধ্যস্থতা করতে রাজি_ রোববার সংসদ অধিবেশনে এমন অবস্থান ব্যক্ত হয়েছে। চলমান সংকট এবং এটা নিয়ে দেশবাসীর উদ্বেগ নিরসনে এ উদ্যোগ ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।


দুর্ভাগ্যজনক যে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এমনকি ভালোভাবে পর্যালোচনা না করেই তাৎক্ষণিকভাবে প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে। এ অবস্থান কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আগামী নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে সরকার ও বিরোধী পক্ষ কয়েক মাস ধরেই মুখোমুখি অবস্থানে। সরকারি দল বলছে, নির্বাচিত সরকারের অধীনেই পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে বিরোধী দল দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যেতে রাজি নয়। এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যেই কিন্তু সুশীল সমাজ এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা সংলাপের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য তাগিদ দিয়ে চলেছেন। স্পিকারের মধ্যস্থতার প্রস্তাবকে আমরা এ আলোকেই মূল্যায়ন করতে চাই। একে অপরের কথা শুনব না, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। জনগণ আর অস্থিরতা চায় না। বরং সব দল মিলেমিশে একটি গ্রহণযোগ্য ফর্মুলা বের করুক, সেটাই কামনা করে। বিশ্বব্যাপীই এখন বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা উজ্জ্বল। ভৌগোলিক অবস্থানের সুবিধা কাজে লাগাতে পারলে এক সময়ে বাস্কেট কেস হিসেবে চিহ্নিত দেশটি দ্রুত মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বড় বাধা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। হরতাল-অবরোধের মতো নেতিবাচক কর্মসূচি এবং তার বিপরীতে সরকারের হার্ডলাইন হচ্ছে সর্বনাশা পথ। স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ এ কানাগলি থেকে দেশকে বের করে আনতে চাইছেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং তাদের মহাজোটের শরিকদেরও মধ্যস্থতার উদ্যোগ সফল করায় ভূমিকা রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে দ্বিধাদ্বন্দ্ব বা দোটানার অবকাশ নেই। রোববার সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে গুরুতর কিছু সংকট চিহ্নিত। দ্রব্যমূল্যের চাপ রয়েছে আমজনতার ওপর। এ অবস্থায় বিরোধী পক্ষ সংসদ অধিবেশনে নিয়মিত হাজির থেকে কথা বলবে এবং সরকার তা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে, সেটাই প্রত্যাশিত। বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা ১১ জুনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের আলটিমেটাম দিয়ে রেখেছে। এটা পূরণ না হলে 'কঠোর আন্দোলনে' যাবে, এমনই সংকল্প। অন্যদিকে এর 'মোকাবেলায়' ক্ষমতাসীনদের পক্ষেও ব্যক্ত হচ্ছে অঙ্গীকার। কিন্তু এ পথ তো সংঘাতের। এ অনিশ্চয়তা থেকে বের হয়ে আসতেই হবে। স্পিকার মধ্যস্থতার যে প্রস্তাব দিয়েছেন আমরা তা আন্তরিক বলেই ধরে নিতে চাই। সংসদীয় গণতন্ত্রে স্পিকারের আসন নিরপেক্ষ। কিন্তু বিরোধীরা তাকে শাসক জোটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করে থাকে এবং এটাই বাস্তব। তিনি যে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে পারেন সেটা প্রমাণের চমৎকার সুযোগ এসেছে। সবার ওপরে দেশ_ সব পক্ষকে এটা বিবেচনায় নিতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে একটি ফয়সালার পরিবর্তে সংঘাতের পথে দেশ নিক্ষিপ্ত হলে তার দায়দায়িত্ব সরকার ও বিরোধী পক্ষ উভয়ের ওপরই বর্তাবে। বিরোধী পক্ষ যদি সবকিছুতেই তাৎক্ষণিক 'না' বলে দেয় তাহলে জনগণ ধরে নেবে যে তারা শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি চায় না। আশা করব, রাজনৈতিক অঙ্গনের কালো মেঘ দ্রুত কেটে যাবে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে স্পিকারের মধ্যস্থতার চেষ্টা সফল হলে সেটা কিন্তু ভবিষ্যতের জন্যও দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
 

No comments

Powered by Blogger.