কৃষকেরা দাম পান না, ক্রেতারাও ঠকছেন by শওকত হোসেন
উচ্চ চাহিদা ও সরবরাহ-সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী চালের দাম বাড়লেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন। এখানে চালের দাম বাড়ছে বণ্টন-সমস্যার কারণে। এতে লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। কৃষকেরা কম দামে চাল বিক্রি করছেন, কিন্তু ক্রেতারা কিনছেন বেশি দামে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) গবেষণা করে বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় এমন পরিস্থিতি কেবল বাংলাদেশেই। আবার বাংলাদেশ ও ভারতে খাদ্যের দাম বাড়লে দরিদ্র মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানেই খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি বেশিসংখ্যক মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচে নিয়ে যায়।
এ রকম এক পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে খাদ্যের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। গত তিন মাসে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৮ শতাংশ। মূলত জ্বালানি তেলের দাম এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে খাদ্যের দাম বাড়ছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা মনে করছে, সামনের দিনগুলোতে বিশ্বে খাদ্যের দাম আরও বাড়বে। বিশ্বব্যাংক এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, নতুন করে খাদ্যের দাম বাড়ায় লাখ লাখ মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়েছে। মার্কিন কৃষি বিভাগও (ইউএসডিএ) বলছে, ২০১২ সালে খাদ্যের দাম বেশি থাকবে।
বাংলাদেশে গত ১২ মাসে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে রয়েছে। যেকোনো বিচারে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি থাকা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতে, ৮ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি থাকাটাই বিপজ্জনক। সুতরাং, বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম বাড়ার খবরে আশঙ্কা বাড়ছে বাংলাদেশ নিয়েও।
দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে উদ্বেগ: এডিবির গবেষণাটির নাম ‘দক্ষিণ এশিয়ায় খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি: একটি গভীর এবং ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ’। গত মাসে প্রকাশিত এ গবেষণায় বলা হয়েছে, গত বছর বিশ্বে খাদ্যের দাম বেড়েছে ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে মাথাপিছু আয় বাড়ায় খাদ্যের চাহিদা বেড়েছে। ফলে দামও বাড়ছে। সেই তুলনায় খাদ্যপণ্যের উৎপাদন বাড়েনি। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে একরপ্রতি চালের উৎপাদনক্ষমতা অন্য দেশের তুলনায় এখনো অনেক কম।
বিশ্বে হেক্টরপ্রতি সবচেয়ে বেশি চাল উৎপাদিত হয় মিসরে, প্রায় ১০ টন। আর বিশ্বব্যাপী গড় হচ্ছে ৪ দশমিক ১ টন। শীর্ষ ১০ চাল উৎপাদকের মধ্যে চীন ও জাপানে হেক্টরপ্রতি উৎপাদিত হয় প্রায় সাত টন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে প্রায় পাঁচ টন, বাংলাদেশ, ফিলিপাইন ও ব্রাজিলে প্রায় চার টন এবং ভারত ও পাকিস্তানে তিন টনের কিছু বেশি। এডিবি মনে করে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উৎপাদন বাড়ানোর এখনো যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের ভিন্ন চিত্র: এডিবি গবেষণা করে বলছে, চালের দাম বাড়ার অনেকগুলো কারণ থাকলেও বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে ভিন্ন একটি চিত্র, আর সেটি হচ্ছে বণ্টনজনিত সমস্যা। এ কারণে সংস্থাটি আলাদা করে বাংলাদেশের সমীক্ষা করেছে। এডিবি বলছে, বণ্টন-সমস্যা বেশি প্রকট হয়েছে ২০১১ সালে। যেমন, ওই বছর কৃষকেরা চাল বিক্রি করেছেন কেজিপ্রতি ২৩ টাকা ৫২ পয়সায়। আর পাইকারি বাজারে সেই চালের দর ছিল ৩০ টাকা ৯৯ পয়সা এবং ক্রেতাদের কিনতে হয়েছে ৩২ টাকা ৫৭ পয়সায়। অর্থাৎ খুচরা আর কৃষক পর্যায়ের মধ্যে মূল্য পার্থক্য হয়েছে ৩৯ শতাংশ। অথচ ২০০৭ সালে মূল্যের পার্থক্য ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০০৮ সালে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে কৃষকেরা উৎপাদিত পণ্যের দাম পাচ্ছেন না, কিন্তু ক্রেতাদের বেশি দামেই বাজার থেকে চাল কিনে খেতে হচ্ছে।
বাংলাদেশেরই ক্ষতি বেশি: এডিবির গবেষণা অনুযায়ী, খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশ ও ভারত। ১০ শতাংশ দাম বাড়লে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে আড়াই শতাংশ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যায়, আর ৩০ শতাংশ দাম বাড়লে দারিদ্র্যসীমার নিচে নামে সাড়ে ৭ শতাংশ মানুষ। ভারতে এই হার যথাক্রমে ২ দশমিক ৭ শতাংশ ও ৮ দশমিক ১ শতাংশ।
এডিবি মনে করে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে খাদ্যের দাম বাড়লে দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। এ কারণে সরকারগুলোর উচিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বা খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া।
এ রকম এক পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে খাদ্যের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। গত তিন মাসে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৮ শতাংশ। মূলত জ্বালানি তেলের দাম এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে খাদ্যের দাম বাড়ছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা মনে করছে, সামনের দিনগুলোতে বিশ্বে খাদ্যের দাম আরও বাড়বে। বিশ্বব্যাংক এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, নতুন করে খাদ্যের দাম বাড়ায় লাখ লাখ মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়েছে। মার্কিন কৃষি বিভাগও (ইউএসডিএ) বলছে, ২০১২ সালে খাদ্যের দাম বেশি থাকবে।
বাংলাদেশে গত ১২ মাসে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে রয়েছে। যেকোনো বিচারে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি থাকা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতে, ৮ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি থাকাটাই বিপজ্জনক। সুতরাং, বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম বাড়ার খবরে আশঙ্কা বাড়ছে বাংলাদেশ নিয়েও।
দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে উদ্বেগ: এডিবির গবেষণাটির নাম ‘দক্ষিণ এশিয়ায় খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি: একটি গভীর এবং ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ’। গত মাসে প্রকাশিত এ গবেষণায় বলা হয়েছে, গত বছর বিশ্বে খাদ্যের দাম বেড়েছে ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে মাথাপিছু আয় বাড়ায় খাদ্যের চাহিদা বেড়েছে। ফলে দামও বাড়ছে। সেই তুলনায় খাদ্যপণ্যের উৎপাদন বাড়েনি। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে একরপ্রতি চালের উৎপাদনক্ষমতা অন্য দেশের তুলনায় এখনো অনেক কম।
বিশ্বে হেক্টরপ্রতি সবচেয়ে বেশি চাল উৎপাদিত হয় মিসরে, প্রায় ১০ টন। আর বিশ্বব্যাপী গড় হচ্ছে ৪ দশমিক ১ টন। শীর্ষ ১০ চাল উৎপাদকের মধ্যে চীন ও জাপানে হেক্টরপ্রতি উৎপাদিত হয় প্রায় সাত টন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে প্রায় পাঁচ টন, বাংলাদেশ, ফিলিপাইন ও ব্রাজিলে প্রায় চার টন এবং ভারত ও পাকিস্তানে তিন টনের কিছু বেশি। এডিবি মনে করে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উৎপাদন বাড়ানোর এখনো যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের ভিন্ন চিত্র: এডিবি গবেষণা করে বলছে, চালের দাম বাড়ার অনেকগুলো কারণ থাকলেও বাংলাদেশে পাওয়া যাচ্ছে ভিন্ন একটি চিত্র, আর সেটি হচ্ছে বণ্টনজনিত সমস্যা। এ কারণে সংস্থাটি আলাদা করে বাংলাদেশের সমীক্ষা করেছে। এডিবি বলছে, বণ্টন-সমস্যা বেশি প্রকট হয়েছে ২০১১ সালে। যেমন, ওই বছর কৃষকেরা চাল বিক্রি করেছেন কেজিপ্রতি ২৩ টাকা ৫২ পয়সায়। আর পাইকারি বাজারে সেই চালের দর ছিল ৩০ টাকা ৯৯ পয়সা এবং ক্রেতাদের কিনতে হয়েছে ৩২ টাকা ৫৭ পয়সায়। অর্থাৎ খুচরা আর কৃষক পর্যায়ের মধ্যে মূল্য পার্থক্য হয়েছে ৩৯ শতাংশ। অথচ ২০০৭ সালে মূল্যের পার্থক্য ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০০৮ সালে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০০৯ সালে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে কৃষকেরা উৎপাদিত পণ্যের দাম পাচ্ছেন না, কিন্তু ক্রেতাদের বেশি দামেই বাজার থেকে চাল কিনে খেতে হচ্ছে।
বাংলাদেশেরই ক্ষতি বেশি: এডিবির গবেষণা অনুযায়ী, খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশ ও ভারত। ১০ শতাংশ দাম বাড়লে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে আড়াই শতাংশ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যায়, আর ৩০ শতাংশ দাম বাড়লে দারিদ্র্যসীমার নিচে নামে সাড়ে ৭ শতাংশ মানুষ। ভারতে এই হার যথাক্রমে ২ দশমিক ৭ শতাংশ ও ৮ দশমিক ১ শতাংশ।
এডিবি মনে করে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে খাদ্যের দাম বাড়লে দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। এ কারণে সরকারগুলোর উচিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বা খাদ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া।
No comments