জাবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের পদত্যাগের দাবিতে এবার আন্দোলনে নেমেছেন সাংস্কৃতিক জোটের নেতা-কর্মীরা। গতকাল রবিবার তাঁরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। সেই সঙ্গে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে লাগাতার অবস্থান শুরু করেছেন তাঁরা।


আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে সাংস্কৃতিক জোট ও ছাত্র ইউনিয়ন। গতকাল থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সংহতি মঞ্চের ব্যানারে তাঁরাও আন্দোলন শুরু করেছেন। এর ফলে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা।
সাংস্কৃতিককর্মীদের মারপিটের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গতকাল সন্ধ্যায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শিক্ষক সমাজের ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা উপাচার্যের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছেন। বুধবার রাত থেকে উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটকে শুরু হওয়া অবরোধ কর্মসূচি আজ সোমবার পর্যন্ত চলবে। আজ আবার আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক সামছুল আলম সেলিম।
অন্যদিকে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতিকে মারপিটের ঘটনার বিচার দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের দুই নম্বর ফটকে অবস্থান গ্রহণ করে গত শুক্রবার থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন উপাচার্যের পক্ষের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা। ফলে ক্রমেই সংকটের দিকে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভূত সংকট সমাধানে গঠিত সংলাপ কমিটিও উভয় পক্ষের শিক্ষকদের কোনো সমঝোতায় পেঁৗছাতে পারেনি। ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ।
উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষক অধ্যাপক ড. নাসিম আক্তার হোসাইন বলেন, উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তাঁর পদত্যাগের মধ্য দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সংকট উত্তরণ সম্ভব।
উপাচার্যের পক্ষের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবুল খায়ের বলেন, 'কিছু শিক্ষক আন্দোলনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জিম্মি করছেন। এর প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি।'
সাংস্কৃতিককর্মীদের মারপিটের ঘটনায় দোষীদের বিচার দাবিতে গতকাল দিনভর আন্দোলন করেছেন সাংস্কৃতিক নেতা-কর্মীরা। সকালে শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে সাংস্কৃতিক জোটের ব্যানারে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে দুই দফা দাবিতে দিনভর প্রতিবাদী গানের মাধ্যমে আন্দোলন করেন।
সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শাকিলা শারমিন বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করায় সাংস্কৃতিককর্মীদের নির্মমভাবে মারপিট করেছে ছাত্রলীগ। এর দায়ভার উপাচার্যকে নিয়ে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে।
তদন্ত কমিটি : সাংস্কৃতিককর্মীদের মারপিটের ঘটনায় গতকাল নাটক ও নাট্টতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক লুৎফর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন_অধ্যাপক আহমেদ রেজা ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলী। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
মামলা নেয়নি পুলিশ : ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ছয় সাংস্কৃতিককর্মীকে মারপিট করার ঘটনায় আশুলিয়া থানা পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি তমাল। তিনি বলেন, এ ঘটনায় মামলা নেওয়া নিষেধ আছে বলে জানিয়েছে আশুলিয়া থানা পুলিশ। তবে এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে পুলিশ।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বদরুল আলম বলেন, 'মামলা করতে হলে বাদী লাগে। মারার জায়গা উল্লেখ থাকতে হয়। কিন্তু এসব বিষয়ে অসংগতি থাকায় মামলা না নিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করে রেখেছি।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে গঠিত সংলাপ কমিটির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. সৈয়দ সফিউল্লাহ বলেন, উভয় পক্ষের শিক্ষকদের মধ্যে সমঝোতাও প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে এসেছিল। তবে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতিকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা সংলাপের প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এখনো আলোচনার পথ বন্ধ হয়ে যায়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির বলেন, কিছু শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কল্যাণ চান না বলেই আন্দোলনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করছেন। মুষ্টিমেয় শিক্ষকের কথায় পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ইংরেজি বিভাগের মেধাবী ছাত্র জুবায়ের আহমেদের ওপর গত ৮ জানুয়ারি ছাত্রলীগ হামলা চালায়। ৯ জানুয়ারি জুবায়ের মারা যান। এরপর থেকে হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্তসাপেক্ষে সাত ছাত্রকে স্থায়ী ও ছয় ছাত্রকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করে। তখন আন্দোলন স্থগিত করে গত ৩০ জানুয়ারি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আট দফা দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন বিএনপিপন্থী ও প্রগতিশীল শিক্ষকরা। পরে ১০ মার্চ এক সিন্ডিকেটে শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষকরা।

No comments

Powered by Blogger.