হিলারির সফরে নতুন মাত্রার প্রত্যাশা-আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ তিন সফর
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ঢাকা সফর সন্ত্রাসবাদ দমন, গণতন্ত্র বিকাশ ও ধর্মীয় সহনশীলতায় বাংলাদেশের অর্জনের স্বীকৃতি পাচ্ছে। আর এ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কে যুক্ত হবে নতুন মাত্রা।
হিলারি ক্লিনটনের আসন্ন সফর নিয়ে এমন আশাবাদ রয়েছে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের।
হিলারি ক্লিনটনের আসন্ন সফর নিয়ে এমন আশাবাদ রয়েছে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের।
মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারাও মনে করেন, আগামী ৫ মে থেকে অনুষ্ঠেয় এ সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে।
জানতে চাইলে কলকাতা সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি গতকাল রোববার টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন সফর দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের তাৎপর্য বহন করছে। আসন্ন এ সফরে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা-সহযোগিতাসহ দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। আর অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে আমাদের পক্ষ থেকে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া হবে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, গত বছরের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা হিলারির চিঠির প্রেক্ষাপটে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, গত ২৬ অক্টোবর লেখা ওই চিঠিতে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির বেশ কিছু প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি উদ্বেগ জানিয়েছিলেন। ওই চিঠিতে তিনি ’৯৫ সালে বাংলাদেশ সফরের স্মৃতি উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘উন্নততর পরিস্থিতিই ভবিষ্যতে আমার বাংলাদেশ সফরের পথ সুগম করবে।’
হিলারির চিঠিতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনে অগ্রগতির পাশাপাশি সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দমনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হতাশা প্রকাশ পেয়েছিল। নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতি সরকারের বৈরী আচরণ নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছিলেন হিলারি। ওই চিঠি লেখার ছয় মাসের মাথায়, বিশেষ করে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশে আসাটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কসহ আঞ্চলিক শান্তি ও উন্নয়নে বাংলাদেশের ভূমিকা, মিয়ানমারের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশের বিজয়সহ পরিবর্তিত পরিস্থিতি হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশ আসাটাকে ত্বরান্বিত করেছে।
কাকতালীয়ভাবে হলেও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিন প্রভাবশালী দেশের গুরুত্বপূর্ণ তিন ব্যক্তি ঢাকায় আসছেন। তাঁদের মধ্যে জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী কাতসুইয়া ওকাদা আগামী ৩ মে দুই দিনের সফরে এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি আগামী ৫ মে দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন।
নতুন মাত্রা হিলারির সফরে: হিলারির সফরের আলোচ্যসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখনো আলোচ্যসূচি চূড়ান্ত হয়নি। তবে নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা, উন্নয়ন ও পরিবেশসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
এদিকে মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র প্যাট্রিসিয়া হিল গতকাল রোববার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘হিলারি ক্লিনটন দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসবেন। তাঁর সফরসূচি এবং আলোচ্যসূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রস্তাবিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা রূপরেখা চুক্তি (টিআইসিএফএ) সই হবে কি না জানতে চাইলে, মন্ত্রণালয়ের আমেরিকা বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, চুক্তিটি নিয়ে আলোচনা চলছে। শ্রম অধিকার সুরক্ষা নিয়ে এখনো দুই দেশের মতপার্থক্য দূর হয়নি। তাই এত কম সময়ের মধ্যে এটি চূড়ান্ত হবে কি না সেটি নিশ্চিত নয়। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রূপরেখা চুক্তির একটি সারসংক্ষেপ অনুমোদনের জন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় দেশের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে কয়েকটি অস্বস্তিকর প্রসঙ্গে আলোচনা আসতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর গুম হওয়া আর পোশাকশ্রমিক অধিকার সংগঠন বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) সংগঠক আমিনুল ইসলামের হত্যাকাণ্ড। বিশেষ করে বিসিডব্লিউএস বেশ কিছুদিন ধরে তাদের ওপর সরকারের নিপীড়নের ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়ে আসছিল। আমিনুলের হত্যাকাণ্ডের পর সংগঠনটির অভিযোগ জোরালো হয়েছে। কাজেই এসব বিষয় হিলারির সফরের সময় আলোচনায় এলে সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
জানা গেছে, হিলারি তাঁর সফরের প্রথম দিন অর্থাৎ ৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ওই দিনই তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। এরপর রাতে তাঁর সৌজন্যে দীপু মনির দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেবেন হিলারি ক্লিনটন। সফরের দ্বিতীয় দিনে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
দুই দিনের ঢাকা সফরের সময় হোটেল রেডিসনে অবস্থান করবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিন অগ্রাধিকার বাংলাদেশের: ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির দুই দিনের সফরের সময় তিনি ৬ মে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকীর সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ওই দিন তিনি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন এবং মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে তিনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। প্রণব মুখার্জি বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পারেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের অর্থমন্ত্রীর আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনা করা হবে। খুব সংগতভাবেই বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের প্রসঙ্গ দ্রুত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই, সীমান্ত প্রটোকল অনুস্বাক্ষর ও টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে যৌথ সমীক্ষা শুরু—এ বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, প্রণব মুখার্জি দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করবেন।
জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী সফর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টোকিও সফরের ফিরতি সফরে ঢাকায় আসছেন জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী কাতসুইয়া ওকাদা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দূরপ্রাচ্য বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, আগামী ৩ মে দুপুরে ঢাকায় আসছেন কাতসুইয়া ওকাদা। সফরের প্রথম দিনেই তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ওই কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলসহ বাংলাদেশের বৃহদায়তন অবকাঠামো প্রকল্পে জাপানের সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। এর পাশাপাশি জাপানি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ-সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি নিয়ে আলোচনা হবে।
জানতে চাইলে কলকাতা সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি গতকাল রোববার টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন সফর দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের তাৎপর্য বহন করছে। আসন্ন এ সফরে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা-সহযোগিতাসহ দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। আর অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে আমাদের পক্ষ থেকে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া হবে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, গত বছরের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা হিলারির চিঠির প্রেক্ষাপটে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, গত ২৬ অক্টোবর লেখা ওই চিঠিতে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির বেশ কিছু প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি উদ্বেগ জানিয়েছিলেন। ওই চিঠিতে তিনি ’৯৫ সালে বাংলাদেশ সফরের স্মৃতি উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘উন্নততর পরিস্থিতিই ভবিষ্যতে আমার বাংলাদেশ সফরের পথ সুগম করবে।’
হিলারির চিঠিতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনে অগ্রগতির পাশাপাশি সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দমনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হতাশা প্রকাশ পেয়েছিল। নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতি সরকারের বৈরী আচরণ নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছিলেন হিলারি। ওই চিঠি লেখার ছয় মাসের মাথায়, বিশেষ করে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশে আসাটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কসহ আঞ্চলিক শান্তি ও উন্নয়নে বাংলাদেশের ভূমিকা, মিয়ানমারের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশের বিজয়সহ পরিবর্তিত পরিস্থিতি হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশ আসাটাকে ত্বরান্বিত করেছে।
কাকতালীয়ভাবে হলেও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিন প্রভাবশালী দেশের গুরুত্বপূর্ণ তিন ব্যক্তি ঢাকায় আসছেন। তাঁদের মধ্যে জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী কাতসুইয়া ওকাদা আগামী ৩ মে দুই দিনের সফরে এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি আগামী ৫ মে দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন।
নতুন মাত্রা হিলারির সফরে: হিলারির সফরের আলোচ্যসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখনো আলোচ্যসূচি চূড়ান্ত হয়নি। তবে নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা, উন্নয়ন ও পরিবেশসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
এদিকে মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র প্যাট্রিসিয়া হিল গতকাল রোববার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘হিলারি ক্লিনটন দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসবেন। তাঁর সফরসূচি এবং আলোচ্যসূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রস্তাবিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা রূপরেখা চুক্তি (টিআইসিএফএ) সই হবে কি না জানতে চাইলে, মন্ত্রণালয়ের আমেরিকা বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, চুক্তিটি নিয়ে আলোচনা চলছে। শ্রম অধিকার সুরক্ষা নিয়ে এখনো দুই দেশের মতপার্থক্য দূর হয়নি। তাই এত কম সময়ের মধ্যে এটি চূড়ান্ত হবে কি না সেটি নিশ্চিত নয়। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রূপরেখা চুক্তির একটি সারসংক্ষেপ অনুমোদনের জন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় দেশের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে কয়েকটি অস্বস্তিকর প্রসঙ্গে আলোচনা আসতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর গুম হওয়া আর পোশাকশ্রমিক অধিকার সংগঠন বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) সংগঠক আমিনুল ইসলামের হত্যাকাণ্ড। বিশেষ করে বিসিডব্লিউএস বেশ কিছুদিন ধরে তাদের ওপর সরকারের নিপীড়নের ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়ে আসছিল। আমিনুলের হত্যাকাণ্ডের পর সংগঠনটির অভিযোগ জোরালো হয়েছে। কাজেই এসব বিষয় হিলারির সফরের সময় আলোচনায় এলে সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
জানা গেছে, হিলারি তাঁর সফরের প্রথম দিন অর্থাৎ ৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ওই দিনই তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। এরপর রাতে তাঁর সৌজন্যে দীপু মনির দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেবেন হিলারি ক্লিনটন। সফরের দ্বিতীয় দিনে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
দুই দিনের ঢাকা সফরের সময় হোটেল রেডিসনে অবস্থান করবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিন অগ্রাধিকার বাংলাদেশের: ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির দুই দিনের সফরের সময় তিনি ৬ মে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকীর সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ওই দিন তিনি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন এবং মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে তিনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। প্রণব মুখার্জি বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পারেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের অর্থমন্ত্রীর আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনা করা হবে। খুব সংগতভাবেই বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের প্রসঙ্গ দ্রুত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই, সীমান্ত প্রটোকল অনুস্বাক্ষর ও টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে যৌথ সমীক্ষা শুরু—এ বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, প্রণব মুখার্জি দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করবেন।
জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী সফর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টোকিও সফরের ফিরতি সফরে ঢাকায় আসছেন জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী কাতসুইয়া ওকাদা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দূরপ্রাচ্য বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, আগামী ৩ মে দুপুরে ঢাকায় আসছেন কাতসুইয়া ওকাদা। সফরের প্রথম দিনেই তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। ওই কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলসহ বাংলাদেশের বৃহদায়তন অবকাঠামো প্রকল্পে জাপানের সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। এর পাশাপাশি জাপানি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ-সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি নিয়ে আলোচনা হবে।
No comments